চলতি বছরেও মূল্যস্ফিতি ৫.৫৬ শতাংশ, বেতন বৃদ্ধি ৫ শতাংশ!
বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচককে ৫ দশমিক ৪ শতাংশে বেঁধে ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে গড় মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশে উঠেছে।
বাজেট বক্তৃতায় মুস্তফা কামাল বলেন, “কোভিড পরবর্তী উত্তরণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে। এসময় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ হবে মর্মে আশা করছি।” সরকারি তথ্য এবং বেসরকারি তথ্য অনুযায়ী মূল্যস্ফিতি যেখানে ৫ শতাংশের বেশি সেখানে কিভাবে নীতি নির্ধারকরা সরকারি কর্মচারীদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ৫% নির্ধারণ করেন আমার বুঝে আসে না।
বেসরকারি খাতগুলোর ক্ষেত্রে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি সর্বনিম্ন ১০% প্রদান করা হয়। হ্যাঁ কোন কোন প্রতিষ্ঠানে হয়তো বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি কোন বছর স্থগিত রাখা হয় কিন্তু ৫% বেতন বৃদ্ধি ধরা হয়না। বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি যদি মূল্য স্ফিতিকে অতিক্রম করতে না পারে তবে সেই বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি কর্মচারীদের জন্য সুখেরতো নয়ই বরং আরও একটি দীর্ঘশ্বাস। ১-১০ গ্রেডের কর্মকর্তাদের এই মূল্য স্ফিতি তেমন স্পর্ষ করতে না পারলেও নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য এটি হাহাকারের আরেক নাম। বেতন বৈষম্যের কারণে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে কিন্তু কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ৪% বেতন বৃদ্ধিতে কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি প্রায় ৩,০০০ টাকা!
গত ৫ বছরের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বনাম মূল্যস্ফিতি
১৪-২০ হাজার টাকায় সাকুল্য বেতনে কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা, খাদ্য যাতায়াত, পোষাক পরিচ্ছেদ সহ ৬ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের ভরণপোষণ করা বর্তমান বাজারে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গত বছর মূল্য স্ফিতি ছিল ৫.৬৯ । যদি আমরা গত পাঁচ বছরের মূল্য স্ফিতি গড়ে ৫.৫% ধরি তবে ৫ বছরে মোট মূল্য স্ফিতি দাড়াবে ৫.৫*৫ = ২৭.৫% অন্য দিকে কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫% । এদিক থেকে ২.৫% ঘাটতি রয়েছে। দূর্মূল্যের বাজারে বার্ষিক মূল্য স্ফিতির সাথে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি যেন পাল্লা দিয়ে হেরেই যাচ্ছে। ফলে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীগণ আর্থিক সংকটে পরিবার ও জীবনের কাছেও হেরে যাচ্ছে, থেতলে যাচ্ছে তাদের জীবন মান ও যাত্রা।
বতর্মান বাজার দরের সাথে বেতন বৃদ্ধির অসামঞ্জস্যতা
বর্তমান বাজার দরের সাথে কোন ভাবেই নিম্নগ্রেডের কর্মচারীদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি মাত্র ৫০০ টাকা খাপ খাচ্ছে না। যে হারের হু হু করে বাজার দর উঠছে তাতে এই বেতনে কর্মচারীদের স্বাভাবিক জীবন মান বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীগণ প্রতিদিনের চাল, ডাল, তেল, মাছ, মাংসসহ দৈনন্দিন পন্য কিনে বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ব্যয় করে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া ও পোশাক পরিচ্ছেদ কেনাকাটা করার জন্য অর্থ সংকটে পড়ছে। বাজার মূল্যের উর্ধ্বগতির সাথে তালমিলিয়ে চলা তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে।
সর্বশেষ কথা হচ্ছে মূল্য স্ফিতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ হওয়া বাঞ্চনীয়। এমনটি করা যেতেই পারে ১-১০ গ্রেডের কর্মচারীদের ৫% এবং নিম্ন গ্রেডের কর্মচারী অর্থাৎ ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের ১০% বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি নির্ধারণ।