বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

সরকারি কর্মচারীদের ৬ দফা দাবী ২০২৪ । সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি কেন বৃদ্ধি করা জরুরি?

সরকারি কর্মচারীরা তাদের ৬ দফা দাবী আদায়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। সরকারের সাথে আলোচনা চলছে। এখনও পর্যন্ত কোনও সমাধান হয়নি। আশা করা যায়, সরকার কর্মচারীদের দাবীগুলি বিবেচনা করবে এবং একটি ন্যায্য সমাধানে পৌঁছাবে- সরকারি কর্মচারীদের ৬ দফা দাবী ২০২৪

সরকারি কর্মচারীদের বেতন কি বৃদ্ধি করা উচিৎ? অবশ্যই। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করা উচিত কিনা, এটি একটি জটিল প্রশ্ন কিন্তু উত্তর খুবই সহজ। বর্তমান বেতন কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে না। বেসরকারি খাত এবং অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতনের সাথে তুলনা করলেই বুঝা যায়।  বেতন বৃদ্ধির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হবে, যেমন মূল্যস্ফীতি এবং সরকারের ঋণের  পড়বে কিন্তু কর্মচারীগণ কোনভাবেই আর চলতে পারছে না।

বেতন বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি কি? বর্তমান বেতন অনেক কর্মচারীর জন্য জীবিকা নির্বাহে অপর্যাপ্ত। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে বেতন বৃদ্ধি করা উচিত। বেতন বৃদ্ধি করলে কর্মচারীদের মনোবল ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এটি অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি করে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়মিত আলোচিত হয়। বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি এই বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করে। সরকার সকল মতামত বিবেচনা করে একটি ন্যায্য সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করা যায়।

কেন সরকার বেতন বৃদ্ধি করছে না? বর্তমানে সরকারের বাজেটে বেতন বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নেই। বেতন বৃদ্ধি করলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেতে পারে। সরকারের ঋণের পরিমান বৃদ্ধি পাবে। এটি বেসরকারি খাতের কর্মচারীদের সাথে বেতন বৈষম্য বৃদ্ধি করবে। সরকার সকল দিক বিবেচনা করে বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কর্মচারীদের চাওয়া পাওয়া এবং বৈষম্য নিরসনে কাগজপত্রাদি উপস্থাপন করা হয়েছে কিন্তু এখনও কোন মতামত বা সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

সরকারি কর্মচারীদের ৬ দফা দাবী ২০২৪ । শুধু বেতন বৃদ্ধি কি একমাত্র সমাধান?

বিভিন্ন গ্রেডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বেতনের পার্থক্য। একই গ্রেডের বিভিন্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বেতনের পার্থক্য। বর্তমান সরকার বৈষম্য বিরোধী অন্দোলন হতে প্রতিষ্ঠিত এবং তারা বিষয়টি গভীরভাবে ভাববেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীগণ ১৪-১৫ হাজার টাকা দিয়ে চলতে পারছে না। বড় ফ্যামিলির জন্য ঋণের বোঝা বাড়ছে।

সরকারি কর্মচারীদের ৬ দফা দাবী ২০২৪ । দাবীগুলোর যৌক্তিকতা ও দাবী গুলো কি কি?

  1. নবম পে-কমিশন গঠন ও বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কমপক্ষে ২০% বেতন বৃদ্ধি: বর্তমান বেতন-ভাতা দ্রব্যমূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে না। কর্মচারীরা জীবিকা নির্বাহে সমস্যায় পড়ছেন।
  2. সচিবালয়ের ন্যায় সচিবালয়ের বাইরে কর্মরত সব পর্যায়ের কর্মচারীদের পদবী ও বেতন বৈষম্য দূর করা: সচিবালয়ের কর্মচারীদের তুলনায় সচিবালয়ের বাইরে কর্মরত কর্মচারীদের বেতন অনেক কম। এটি বৈষম্য সৃষ্টি করে এবং কর্মচারীদের মনোবল নষ্ট করে।
  3. বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির হার ১০% উন্নীত করা: বর্তমানে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির হার ৫%। এটি দ্রব্যমূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে না।
  4. ১-৬ গ্রেডের কর্মকর্তাদের মতো ১১-২০ গ্রেড পর্যন্ত কর্মচারীদের ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা বিনা সুদে গৃহনির্মাণ সুবিধা প্রদান: বর্তমানে ১-৬ গ্রেডের কর্মকর্তারা ৩০ লাখ টাকা বিনা সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ পান। ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য এই সুবিধা নেই।
  5. রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত কর্মচারীদের চাকরি গণনা, অযাচিত ২০% পেনশন কর্তনের হয়রানি বন্ধ করা: রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত কর্মচারীদের চাকরি গণনা করা হয় না। তাদের পেনশনের ২০% কর্তন করা হয়। এটি কর্মচারীদের জন্য অন্যায়।
  6. কল্যাণ তহবিলের অর্থ লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে কর্মচারী সন্তানদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা: সরকারি কর্মচারী কল্যাণ তহবিলে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা আছে। এই অর্থ লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে কর্মচারী সন্তানদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

বাংলাদেশে মূল্যস্ফিতির হার কেমন?

বাংলাদেশে মূল্যস্ফিতির হার বর্তমানে (নভেম্বর ২০২৪) বেশ উচ্চ হারে দৌড়াচ্ছে। অক্টোবর ২০২৪ মূল্যস্ফিতির হার ১০.১৭%। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করছে প্রতিমাসেই। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব এখনও আছে এবং টাকা পাচারের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। টাকার পূর্বের অবমূল্যায়ন এবং ব্যাংকগুলোর নাজুক অবস্থায় ভোক্তা ও নাগরিক খারাপ অবস্থায় আছে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে মূল্যস্ফিতি বাড়ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। মূল্যস্ফীতির হার কমাতে সরকারের পদক্ষেপের সাফল্যের উপর নির্ভর করবে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্যের দামের ওঠানামা মূল্যস্ফীতির হারকে প্রভাবিত করবে।

সূত্র: কালেরকন্ঠ

কর্মকর্তা ও কর্মচারী বেতন রেশিও কত হওয়া উচিৎ?

জাতীয় পে স্কেল ২০১৫ একটি কর্মকর্তা ও কর্মচারী বৈষম্যমূলক পে স্কেল-যেখানে ১১-২০ তম গ্রেডে প্রতিটি স্কেলের ধাপ দূরত্ব গড়ে ৪% অপর দিকে ১-১০ নম্বর গ্রেডে প্রতিটি স্কেলে ধাপ দূরত্ব গড়ে ২০% । যা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোন দেশে এ চরম বৈষম্য দেখা যায় না। কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে এত ফারাক পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের পে স্কেল ঘাটলে এমন বৈষম্য খুজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ বলেই এ বৈষম্য সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের বর্তমান পে স্কেলে রয়েছে মোট ২০টি গ্রেড, যেখানে সর্বনিম্ন গ্রেডে বেতন ধরা হয়েছে ৮২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ গ্রেডে বেতন ধরা হয়েছে ৭৮০০০ টাকা নির্ধারিত। সে হিসাবে এ পে স্কেল কে ১:১০ মাত্রার পে স্কেল বলা যায়। যেখানে আন্তর্জাতিক মান ১:৪ নির্ধারিত রয়েছে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে admin@bdservicerules.info ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *