সরকারি অফিস গুলোতে কিছু শব্দের প্রতিনিয়ত ব্যবহার হয় তা ডকুমেন্টের ক্ষেত্রে বা বিধিমালা ব্যবহার করা হয়। সেসব জটিল এবং দুর্বোধ্য শব্দগুলোর অর্থ আমরা জানবো। চলুন একে একে জেনে নেয়া যাক।
আইন: আইনটির অনেক স্থানে ‘আইন’ শব্দটি এবং অনেক স্থানে এই আইন’ শব্দদ্বয় ব্যবহৃত হইয়াছে। এই আইন শব্দদ্বয় দ্বারা সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ বুঝানাে হইয়াছে এবং আইন’ শব্দ দ্বারা সংবিধানে ১৫২ অনুচ্ছেদে সংজ্ঞায়িত ‘আইন’ কে বুঝানাে হইয়াছে। সংবিধানের সংজ্ঞা অনুযায়ী “আইন” অর্থ কোন আইন, অধ্যাদেশ, আদেশ, বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন, বিজ্ঞপ্তি ও অন্যান্য আইনগত দলিল এবং বাংলাদেশে আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন যে কোন প্রথা বা রীতি।
হায়ী পদ : স্থায়ী পদের সংজ্ঞাটি সুস্পষ্ট নয়। কারণ কোন কোন পদ স্থায়ী করার উদ্দেশ্যে রাজস্থাতে অস্থায়ীভাবে সজন করা হইয়াছে, তাহা নির্ধারণে জটিলতা দেখা দিবে বিধায় পদ অস্থায়ীভাবে সৃষ্ট করার সময় পদ সৃষ্টির আদেশে তাহা উল্লেখের প্রয়োজন হইবে এবং এইরূপ ভবিষ্যতে আইনগত জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। আদেশে উদ্দেশ্যের উল্লেখ না করা হইলে অস্থায়ীভাবে সৃষ্ট সকল পদই স্থায়ী পদের অন্তর্ভুক্ত হিসাবে দাবি উঠার সম্ভাব দেখা দিতে পারে এবং আইনগত জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। ইহাছাড়া অস্থায়ীভাবে সৃষ্ট পদকে স্থায়ী দের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি সরকারের অস্থায়ীভাবে পদ সৃষ্টির ধারণার সহিত সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
স্থায়ী করার উদ্দেশ্যে রাজস্বখাতে সৃষ্ট অস্থায়ী পদকে স্থায়ী পদের অন্তর্ভুক্ত করার ফলে নিম্নোক্ত জটিলতা দেখা দিতে পারে; যথা:
(ক) অস্থায়ীভাবে সৃষ্ট পদ স্থায়ী পদ হিসাবে গণ্য হওয়ার ক্ষেত্রে উক্ত পদে নিয়ােজিত কর্মচারীকে শিক্ষানবিস হিসাবে গণ্য করা হইবে অথবা অস্থায়ী হিসাবে গণ্য করা হইবে, এই বিষয়ে জটিলতাসহ শিক্ষানবিস কাল গণনা ও স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
(খ) দফা (১২) তে উল্লেখিত ‘লিয়েন নির্ধারণেও জটিলতা সৃষ্টি হইতে পারে;
(গ) অস্থায়ী পদের বিলুপ্তি, উদ্ধৃত ঘােষণা বিষয়ে আইনগত জটিলতার সৃষ্টি করিতে পারে।
(৩) প্রজাতন্ত্রের কর্মবিভাগ: রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান প্রজাতন্ত্রের কর্ম বিভাগের আওতাভুক্ত নয়।
(৪) সরকারি কর্মচারী : সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারী কর্মচারী” অর্থ প্রজাতন্ত্রের কর্মে বেতনাদিযুক্ত পদে অধিষ্ঠিত বা কর্মরত কোন ব্যক্তি। অর্থাৎ সংবিধানের সংজ্ঞা অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সামরিক ও অসামরিক কর্মে নিযুক্ত সকল ব্যক্তিই সরকারি কর্মচারী। উক্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী জাতীয় সংসদ সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যগণ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের কর্মচারীগণ সরকারি কর্মচারী হিসাবে গণ্য হইলেও এই আইনের উদ্দেশ্যে তাহারা সরকারি কর্মচারী নয় । ইহাছাড়া স্ব-শাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের অর্থাৎ বিধিবদ্ধ সংস্থাসমূহের কর্মচারীগণ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসাবে গণ্য নয় [.Jamuna (Dil (Company Limited and another Vs. S.K. Dey’ and another’; 12BLD (AD) 140]। যার কারণে বিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মচারীগণ সরকারি কর্মচারীর আওতাভুক্ত নয়।
(৫) অফিসিয়েটিং : দফা (৮) তে অফিসিয়েটিং শব্দটি ব্যবহার করা হইলেও শব্দটির কোন সংজ্ঞা দেওয়া হয় নাই। বর্তমানে অফিসিয়েটিং নিয়ােগের বিধান প্রচলিত নাই। বর্তমানে অফিসিয়েটিং এর পরিবর্তে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ডিকশনারীতে officiating /adjective/ স্থানাপন্ন অর্থ অস্থায়ী।
(৬) শিক্ষানবিস: অর্থ কোনাে স্থায়ী পদে সরাসরি বা পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়ােজিত ব্যক্তি যাহাকে এখনাে স্থায়ী করা হয় নাই। কিন্তু দফা (২০) অনুযায়ী স্থায়ী করিবার উদ্দেশ্যে রাজস্বখাতে অস্থায়ীভাবে সৃষ্ট পদকেও স্থায়ী পদের অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছে। যাহার কারণে উক্তরূপ অস্থায়ীভাবে সৃষ্ট পদে নিয়ােগকৃত বা পদোন্নতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি শিক্ষানবিস হিসাবে গণ্য হইবে এবং জটিলতার সৃষ্টি করিবে। কেননা অস্থায়ী পদে অস্থায়ীভাবে নিয়ােগ বা পদোন্নতি প্রদান করিতে হয়, শিক্ষানবিস হিসাবে নিয়ােগ বা পদোন্নতির সুযােগ নাই। ইহাছাড়া অস্থায়ীভাবে সৃষ্ট পদে নিয়ােগকৃত ব্যক্তি পদটি স্থায়ী হওয়ার পূর্বেই শিক্ষানবিসকাল সাফল্যজনকভাবে সমাপ্ত করিলে তাহার স্থায়ীকরণ বিষয়ে জটিলতার সৃষ্টি হইবে। কারণ অস্থায়। পদে স্থায়ী করার বা লিয়েন সৃষ্টির কোনাে বাস্তব সুযােগ নাই।
(৭) “বেতন” অর্থ একজন কর্মচারী প্রতি মাসে বেতন, ওভারসিজ পে, বিশেষ বেতন, ব্যক্তিগত বেতন বা সরকার কর্তৃক বেতন হিসাবে বিশেষভাবে শ্রেণিভুক্ত অন্য যে কোনো প্রকার আয় বাবদ যে অর্থ প্রাপ্য হন; তবে কোনো পদে স্থায়ীভাবে বা অফিসিয়েটিং হিসাবে অধিষ্ঠিত থাকিবার কারণে বা কোনো কর্মবিভাগে তাহার অবস্থানের কারণে বিশেষ বেতন বা তাহার ব্যক্তিগত যোগ্যতার কারণে মঞ্জুরিকৃত বেতন ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে না।
সূত্র: সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮