প্রশাসন I একাউন্টস I অডিট আপত্তি

সার্ভিস বুক লেখার নিয়ম ২০২৫ । চাকরির খতিয়ান বইয়ের কোন কলামে কি লিখতে হয়?

সরকারি কর্মচারীদের জন্য খুব শিগ্রই ই চাকরি বৃত্তান্ত চালু হবে বলে ২০২০ সালে সরকার ঘোষনা দিলেও বর্তমানে চলমান রয়েছে হাতে লেখা চাকরির খতিয়ান বা সার্ভিস বুক। সার্ভিস বুক লিখন বা ছুটি হিসাব এ পার্ট দুটি একটু জটিল মনে হতে পারে। আজ আমি চেষ্ট করবো কিছু টার্ম সহজভাবে বুঝোতে। আসুন জেনে নেয়া যাক প্রথমে সার্ভিস বুক কিভাবে প্রস্তুত করা হয়।

সার্ভিস বই তৈরির নিয়ম

চাকরির খতিয়ান বই বা সার্ভিসবুক সেগুনবাগিচা, ঢাকায় বিভিন্ন বইয়ে দোকানে পাওয়া যায়। তবে মহাহিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, ঢাকার সামনের দোকানগুলোতে এ সার্ভিস বুক মাত্র ২টি টাকায় পাওয়া যায়। তবে একাধিক বই একত্র করে খাতার মত বাধাই করে নিলে সুবিধা হয়। তাই একাধিক সার্ভিসবুক ক্রয় করে বাঁধাইয়ের দোকান থেকে বাঁধাই করে নিতে হবে। সার্ভিস বুক দু’কপি সংগ্রহ করতে হয়। একটি দপ্তরে জমা দিতে হবে যা দপ্তর প্রধানের তত্বাবধানে মেইনটেইন করা হবে এবং অপরটি কর্মচারীর নিজের কাছে জমা থাকবে। প্রতি বছর একই ভাবে দুটি সার্ভিস বই আপডেট করতে হবে।

Service book writing process

অসাধারণ ছুটি ছুটির হিসাব হতে বাদ যায় না

সার্ভিস বুক বা খতিয়ান বহিতে অসাধারণ ছুটি এন্ট্রি করতে হবে। কিন্তু মোট অর্জিত ছুটি তা গড় বেতনে বা অর্ধ গড় বেতনে যে ছুটিই থাকুক না কেন তা হতে এ ছুটি বিয়োগ হবে না। অর্জিত ছুটি মূলত জমা না থাকলে অসাধারণ ছুটি বা বিনা বেতনে ছুটির আবেদন করে মঞ্জুর করা যায়। অন্য দিকে শাস্তি স্বরপ অন্য ছুটি জমা থাকা সত্বেও নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে কর্তৃপক্ষ অসাধারণ ছুটি মঞ্জুর করতে পারে। অসাধারণ ছুটি অবশ্যই নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ মঞ্জুর করবে। অসাধারণ ছুটির কারণে পেনশযোগ্য চাকরিকাল পিছিয়ে যায় কিন্তু এতে জেষ্ঠ্যতা ক্ষুন্ন হয় না। উপরের চিত্রে দেখুন অসাধারণ ছুটি এন্ট্রি করা হয়েছে কিন্তু কোন প্রকার ছুটি হতে বাদ যায়নি। এ ছুটি এন্ট্রি না করলেও চলবে।

গড় বেতনে অর্জিত ছুটি কিভাবে এন্ট্রি করতে হয় দেখুন

ধাপ-১। কলাম ২ ও ৩ এ কর্মকাল লিখতে হবে। যেমন ৫-৪-২০১৩ হইতে ১৬-০৪-২০১৩ পর্যন্ত লেখা হয়েছে। ১৬-০৪-২০১৩ তারিখ হতে ৫-৪-২০১৩ তারিখ বিয়োগ করে ১১ দিন কর্মকাল পাওয়া গেছে যা ৪ নম্বর কলামে ব-ম-দি তে দিনের ঘরে লেখা হয়েছে।

ধাপ-২। কলম-৫ ও ৬ তে কলাম ৪ এ পাওয়া দিনকে ভাগ করে গড় বেতনে ছুটি ও অর্ধ গড় বেতনে ছুটি বের করে লিখতে হবে। যেমন এখানে ১১ দিনকে ১১ দিয়ে ভাগ করে গড় বেতনে ছুটি এবং ১২ দিয়ে ভাগ করে অর্ধ গড় বেতনে ছুটি বের করতে হবে। এখানে গড় বেতনে ছুটি ১ দিন পাওয়া গেছে যা ৫ নম্বর কলাম এবং ১২ দিয়ে ভাগ করে ১ এর কম পাওয়া গেছে তবু ১ লেখা হয়েছে। মনে রাখবেন ০.৫ বা অর্ধাংশ বা তার উপরে আসলে ১ দিন ধরার নিয়ম রয়েছে।

ধাপ-৩। কলাম ৯ ও ১০ এ পূর্বের জের বা ব্যালেন্স ছুটির সাথে ৫ ও ৬ কলামের ছুটি যোগ হয়ে দেখাতে হবে। যেমন ১ বছর ৯মাস ৫ দিনের সাথে ১ দিন যোগ হয়ে ১ বছর ৯ মাস ৬ দিন লেখা হয়েছে ৯ নম্বর কলামে এবং অর্ধ গড় বেতনে জমা ১ বছর ১০ মাস ২১ দিনের সাথে ১ দিন যোগ হয়ে ১ বছর ১০ মাস ২২ দিন লেখা হয়েছে ১০ নম্বর কলামে।

ধাপ-৪। কোন প্রকার ছুটি কাটিয়ে থাকলে তা ১১ নম্বর কলামে লিখতে হয়। যেমন-এখানে ১৭-০৪-২০১৩ তারিখ হতে ১২-০৫-২০১৩ তারিখ পর্যন্ত ২৬ দিন গড় বেতনে অর্জিত ছুটি কাটানো হয়েছে তা লিখে ১২ নম্বর কলামে ২৬ দিন দেখানো হয়েছে। যদি ৪০ দিন কাটানো হত তবে মাসের ঘরে ১ মাস দিনের ঘরে ১০ দিন লিখতে হতো। মোট কথা ১১ ও ১২ কলামে ছুটি দেখাতে হবে। যে প্রকার ছুটি এখানে দেখানো হবে সেই প্রকার ছুটি হতে এ ছুটি বাদ যাইবে।

ধাপ-৫। কলাম ১৪ থেকে ২০ কলামের আগ পর্যন্ত ছুটির ধরন বড় করে লিখবেন। যে সকল ছুটি (Leave) ছুটি হিসাবে ডেবিট হয় না।

ধাপ-৬। কলাম ২১ ও ২২ এ গড় বেতনে ছুটি ও অর্ধ গড় বেতনে ছুটির ব্যালেন্স দেখাতে হয়। এখানে ৯ ও ১০ নম্বর কলামে দেখনো ছুটির ব্যালেন্স হতে কাটানো ২৬ দিন ছুটি বাদ দিবো। যেহেতু গড় বেতনে ছুটি তাই ৯ নম্বর কলামে দেখানো ছুটি হতে বাদ দিবো। যে প্রকার ছুটি কাটানো হবে সেই প্রকার ছুটি হতে বাদ দেওয়া হবে। ৯ নম্বর কলাম হতে ২৬ দিন ছুটি বাদ দিয়ে ২১ নম্বর কলামে ১ বছর ৮ মাস ৯ দিন ছুটি দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে ১০ নম্বর কলামের অর্ধ গড় বেতনে ছুটি বা মেডিকেল ছুটি যেমন আছে ২২ নম্বর কলামে তেমনই বসানো হয়েছে অর্থাৎ ১ বছর ১০ মাস ২২ দিন।

 উপরের লেখাগুলো থেকে ছুটির হিসাব বুঝতে সমস্যা হলে ভিডিও দেখে নিন।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে পোস্টের নিচে কমেন্টে করুন অথবা alaminmia.tangail@gmail.com ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

8 thoughts on “সার্ভিস বুক লেখার নিয়ম ২০২৫ । চাকরির খতিয়ান বইয়ের কোন কলামে কি লিখতে হয়?

  • Md. Abdul Jalil.

    ১৫-১১ গ্রেডের সিভিল কর্মচারীদের ড্রেস কোড আছে কিনা? থাকলে তাহা কি?

  • না। তবে অবশ্যই ভদ্র এবং মার্জিত হতে হবে।

  • Rakibul Islam

    ১০ম গ্রেডের চাকুরিজীবিদের কি অফিসে সারভিস বুক জমা দিতে হবে

  • হ্যাঁ। গেজেটেড হলে আর লিখতে হবে না। পরবর্তী চাকরির বিবরণী হিসাবরক্ষণ অফিস মেইনটেইন্স করবে।

  • চাকুরিতে প্রবেশের সাথে সাথে কি সার্ভিস বহি লিখতে হয়,নাকি স্থায়ীকরণ হওয়ার পর হতে?
    .

  • সাথে সাথে লিখতে হয়। স্থায়ীকরণ হলে স্থায়ীকরণ অর্ডার এন্ট্রি করলেই হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *