শাস্তি । সাময়িক বরখাস্ত । অপসারণ

“আন্দোলন” করলে বাধ্যতামূলক অবসর ২০২৫ । সরকারি চাকরিজীবীগণ কি ন্যায্য দাবি আদায়ে আর রাস্তায় নামতে পারবে না?

হ্যাঁ, ২০২৫ সালে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য “আন্দোলন” করলে বাধ্যতামূলক অবসরের বিধান রাখা হয়েছে। এই কারণে, ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নামতে পারবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বর্তমানে, সরকারি কর্মচারীদের জন্য “আন্দোলন” করার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যদি কোনো কর্মচারী “আন্দোলন”-এ অংশ নেয়, তবে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হতে পারে– “আন্দোলন” করলে বাধ্যতামূলক অবসর ২০২৫

নতুন আইনে কি কর্মচারীরা দাবী আদায়ে রাস্তায় নামতে পারবে না? না। এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে যে, ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য তারা আর রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে পারবে কিনা। তবে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত এবং এর ফলে সরকারি কর্মচারীদের অধিকার খর্ব হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে সরকারি কর্মচারী এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো একত্রিত হয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিছু সংগঠন এই সিদ্ধান্তকে “গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ” হিসেবে অভিহিত করেছে এবং তারা এর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন করার ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, এই সিদ্ধান্ত সরকারি চাকরিজীবীদের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অপরিহার্য এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এটি গ্রহণ করা হয়েছে।

অবিচার হলে আদালতে যেতে পারবেন না? না। সর্বোচ্চ রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত যেতে পারবেন। তবে কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ৩৪। ধারা ৩২ এর অধীন প্রদত্ত আদেশ দ্বারা সংক্ষুব্ধ কোনো কর্মচারী, উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে, এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের নিকট আপিল করিতে পারিবেন এবং আপিল কর্তৃপক্ষ উক্ত আদেশ বহাল রাখিতে, বাতিল বা পরিবর্তন করিতে পারিবে। কর্মকর্তােদর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাইবে না, তবে এইরূপ ক্ষেত্রে দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী দণ্ড আরোপের আদেশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) কার্যদিবসের মধ্যে ধারা ৩৬ অনুযায়ী উক্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার (review) জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট আবেদন করিতে পারিবেন এবং রাষ্ট্রপতি যেরূপ উপযুক্ত মনে করিবেন, সেইরূপ আদেশ প্রদান করিবেন। (১২) উপ-ধারা (১০) ও (১১) এর অধীন, যথাক্রমে, আপিল ও রিভিউ এ প্রদত্ত আদেশ চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।”।

নতুন সরকারি চাকরি আইনে কত দিনের মধ্যে শাস্তি চূড়ান্ত হবে? নতুন সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী, অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীকে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর শাস্তি চূড়ান্ত করার জন্য সাধারণত ১৪ কার্যদিবস সময় দেওয়া হবে। যুক্তিসংগত কারণে এই সময়সীমা একবারের জন্য সর্বোচ্চ ৭ কার্যদিবস বাড়ানো যেতে পারে। যদি কোনো তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে না পারে, তবে তা তাদের অদক্ষতা হিসেবে ধরা হবে।

অস্পষ্টতা সৃষ্টি করা ‘অনানুগত্য’ শব্দটি তুলে দিয়ে ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন অধ্যাদেশে সরকারের ‘বৈধ আদেশ’ অমান্য করাকে ‘সরকারি কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বুধবার রাতে নতুন অধ্যাদেশটি জারি করা হয়েছে, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকবে কি? হ্যাঁ। তদন্তের আদেশ পাওয়ার ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। যদি কোনো কারণে সময় প্রয়োজন হয়, তবে সর্বোচ্চ ৭ কার্যদিবস সময় বাড়ানো যেতে পারে। যদি তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন জমা দিতে না পারে, তবে তা তাদের অদক্ষতা হিসেবে গণ্য করা হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তদন্ত প্রতিবেদনের কপি দেওয়া হবে এবং তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। অভিযুক্ত যদি কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব না দেন বা তার জবাব সন্তোষজনক না হয়, তবে কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে। এই তদন্ত কমিটিও ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেবে। দণ্ড আরোপের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তি আপিল করতে পারবেন।

সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫

সরকারি চাকরি আইন সংশোধন (২য়) ২০২৫ । নতুন আইন অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

  1. ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করেন, আইনসংগত কারণ ব্যতিরেকে সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশ অমান্য করেন বা উহার বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করেন বা এই সকল কার্যে অন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে প্ররোচিত করেন, অথবা
  2. ছুটি বা যুক্তিসংগত কোনো কারণ ব্যতীত অন্যান্য কর্মচারীদের সহিত সমবেতভাবে নিজ কর্ম হইতে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন, অথবা
  3. যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তাহার কর্মে উপস্থিত হইতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহা হইলে উহা হইবে সরকারি কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ এবং তজ্জন্য তিনি উপ-ধারা (২) এ বর্ণিত যেকোনো দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
  4. উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোনো কর্মের জন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে নিম্নবর্ণিত যেকোনো দণ্ড প্রদান করা যাইবে, যথা:— (ক) নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ; (খ) বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান; এবং (গ) চাকরি হইতে বরখাস্ত।

সরকারি কর্মস্থলে কর্মবিরতিতে যাওয়া যাবে না?

না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করেন, আইনসংগত কারণ ব্যতিরেকে সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশ অমান্য করেন বা উহার বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করেন বা এই সকল কার্যে অন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে প্ররোচিত করেন, অথবা (খ) ছুটি বা যুক্তিসংগত কোনো কারণ ব্যতীত অন্যান্য কর্মচারীদের সহিত সমবেতভাবে নিজ কর্ম হইতে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন, অথবা যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তাহার কর্মে উপস্থিত হইতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহা হইলে উহা হইবে সরকারি কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ এবং তজ্জন্য তিনি উপ-ধারা (২) এ বর্ণিত যেকোনো দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন। উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোনো কর্মের জন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে নিম্নবর্ণিত যেকোনো দণ্ড প্রদান করা যাইবে, যথা:—(ক) নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ; (খ) বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান; এবং (গ) চাকরি হইতে বরখাস্ত। তাই চাকরি না খোয়াতে চাইলে সতর্ক হতে হবে।

ঘুষ নেওয়া কি অসদাচরণ?

অবশ্যই। হ্যাঁ, ঘুষ নেওয়া অবশ্যই অসদাচরণ। এটি শুধু নৈতিকভাবে ভুল নয়, বরং আইনতও একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। ঘুষ নেওয়া মানে নিজের দায়িত্ব পালনে পক্ষপাতিত্ব করা, যা সৎ ও ন্যায়ের পরিপন্থী।এটি বিশ্বস্ততা, নিরপেক্ষতা ও মানবিক মূল্যবোধকে লঙ্ঘন করে। আইনগত বিচারে ঘুষ নেওয়া বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এবং দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এটি একটি প্রশাসনিক অসদাচরণ (misconduct) এবং চাকরি থেকেও বরখাস্ত হতে পারেন।
ঘুষ সমাজে বৈষম্য তৈরি করে। সেবা প্রাপ্তি জটিল হয়, দরিদ্র মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রশাসনে অবিশ্বাস তৈরি হয় এবং উন্নয়ন ব্যাহত হয়।✅ ঘুষ নেওয়া = অসদাচরণ + অপরাধ + নৈতিক পতন।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *