প্রশাসন I একাউন্টস I অডিট আপত্তি

সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া শতভাগ অনলাইন ২০২৫ । একই ব্যক্তি এখন বার বার টেন্ডার পাবে না?

নতুন ক্রয় আইন সংশোধনীর ফলে একই ব্যক্তি বার বার টেন্ডার পাবে না এবং টেন্ডার এখন শতভাগ অনলাইন কার্যকর হবে–সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া শতভাগ অনলাইন ২০২৫

সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া পরিবর্তন? হ্যাঁ। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বাড়াতে এবং সিন্ডিকেট ভাঙতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অধ্যাদেশের সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রাক্কলিত মূল্যের ১০ পার্সেন্টের কম হলে টেন্ডার প্রস্তাব বাতিলের যে বিধান তা বাতিল করা হয়েছে। পূর্বের কাজের মূল্যায়নের জন্য যে ম্যাট্রিক্স ছিল, যেটা থাকার কারণে একই প্রতিষ্ঠান বার বার কাজ পেতো, তা বদলে নতুন সক্ষমতা ম্যাট্রিক্স করা হবে। এতে করে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হবে।

ই টেন্ডার কি? ই-টেন্ডার বা ইলেকট্রনিক টেন্ডার হল একটি অনলাইন প্রক্রিয়া, যেখানে সরকারি বা বেসরকারি সংস্থাগুলি তাদের পণ্য বা পরিষেবার জন্য অনলাইনে দরপত্র আহ্বান করে। এই প্রক্রিয়ায়, আগ্রহী সরবরাহকারীরা অনলাইনে তাদের দরপত্র জমা দিতে পারেন এবং দরপত্র মূল্যায়ন ও নির্বাচনও অনলাইনে সম্পন্ন করা হয়। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে দরপত্র প্রক্রিয়াটি আরও স্বচ্ছ হয়, কারণ সমস্ত তথ্য অনলাইনে উপলব্ধ থাকে। এটি একটি দ্রুত এবং দক্ষ প্রক্রিয়া, যা সময় এবং খরচ উভয়ই সাশ্রয় করে। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে আরও বেশি সরবরাহকারী দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারে, যা প্রতিযোগিতা বাড়ায় এবং ভালো মানের পণ্য বা পরিষেবা পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

প্রযুক্তি জ্ঞান থাকতে হবে? হ্যাঁ। যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো সময় দরপত্রে অংশগ্রহণ করা যায়। কাগজের ব্যবহার হ্রাস: এটি পরিবেশবান্ধব, কারণ এটি কাগজের ব্যবহার কমায়। দরপত্রে অংশগ্রহণের জন্য প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। ভালো ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলে দরপত্রে অংশগ্রহণ করা কঠিন হতে পারে। অনলাইন প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকতে পারে, তাই সুরক্ষিত প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা জরুরি। বাংলাদেশে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত ই-টেন্ডারিং প্রক্রিয়াটি ‘ই-জিপি’ (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) নামে পরিচিত।

National e-Government Procurement (e-GP) Portal of the Government of the People’s Republic of Bangladesh

সিপিটিইউ (CPTU) বা সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট বাংলাদেশ সরকারের একটি স্থায়ী সংস্থা। সরকারি ক্রয়ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য এই সংস্থাটি গঠিত হয়েছে। সিপিটিইউ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে অবস্থিত। সিপিটিইউ-এর কাজ: সরকারি ক্রয়ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা, সরকারি ক্রয়ের সংস্কার সাধন করা, সরকারি ক্রয়ের উন্নয়ন করা, সরকারি ক্রয়ের সুশাসন নিশ্চিত করে থাকে।

Caption: eprocure.gov.bd

সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া সাধারণত কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। নিচে এই প্রক্রিয়াটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো:

  1. প্রয়োজন নির্ধারণ: প্রথমে, সরকারি সংস্থা বা বিভাগ তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য বা পরিষেবার তালিকা তৈরি করে। এই তালিকায় পণ্যের গুণমান, পরিমাণ এবং সরবরাহের সময় উল্লেখ করা হয়।
  2. বাজেট অনুমোদন: প্রয়োজনীয় পণ্য বা পরিষেবা ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট অনুমোদন করা হয়। বাজেট অনুমোদনের মাধ্যমে ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি পাওয়া যায়।
  3. দরপত্র আহ্বান: সরকারি সংস্থা বা বিভাগ দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে আগ্রহী সরবরাহকারীদের কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। বর্তমানে, ই-জিপি (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) সিস্টেমের মাধ্যমে অনলাইনে দরপত্র আহ্বান করা হয়।
  4. ৪. দরপত্র মূল্যায়ন: জমা দেওয়া দরপত্রগুলো মূল্যায়ন করা হয়। মূল্যায়নের সময় পণ্যের গুণমান, মূল্য এবং সরবরাহের সময় বিবেচনা করা হয়। মূল্যায়নের মাধ্যমে সবচেয়ে যোগ্য সরবরাহকারীকে নির্বাচন করা হয়।
  5. চুক্তি সম্পাদন: নির্বাচিত সরবরাহকারীর সাথে চুক্তি সম্পাদন করা হয়। চুক্তিতে পণ্যের গুণমান, পরিমাণ, মূল্য এবং সরবরাহের সময় উল্লেখ করা হয়।
  6. পণ্য বা পরিষেবা সরবরাহ: চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহকারী পণ্য বা পরিষেবা সরবরাহ করে। সরবরাহকৃত পণ্য বা পরিষেবা সরকারি সংস্থা বা বিভাগ কর্তৃক যাচাই করা হয়।
  7. পেমেন্ট: সরবরাহকৃত পণ্য বা পরিষেবা যাচাইয়ের পর সরবরাহকারীকে পেমেন্ট করা হয়।
  8. তদারকি ও পর্যবেক্ষণ: সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া তদারকি ও পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মাধ্যমে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হলে তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ই-জিপি সিস্টেমের মাধ্যমে ক্রয় প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করা হয়, যা স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে।

CPTU এর কাজ কি?

CPTU এর পূর্ণরূপ হলো সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (Central Procurement Technical Unit)। এটি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। CPTU সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত আইন, বিধি এবং নীতিমালা প্রণয়ন করে। এর মাধ্যমে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা হয়। CPTU ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) সিস্টেম পরিচালনা করে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করা হয়, যা স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে। CPTU সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় জড়িত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে। এর মাধ্যমে তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়, যা সুষ্ঠু ক্রয় প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে। CPTU সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া তদারকি ও পর্যবেক্ষণ করে। এর মাধ্যমে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হলে তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পেলে CPTU তা নিষ্পত্তি করে। এর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়। CPTU সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করে। এর মাধ্যমে আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারে। সংক্ষেপে, CPTU সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক করার জন্য কাজ করে।

   
   
   

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে admin@bdservicerules.info ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *