সরকারি কর্মচারীগণ (১১-২০ গ্রেড) কোরবানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও একজন ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী কোরবানি দিতে পারে না। আসুন দেখে নেই এই জুলাই মাসের বেসিক অনুযায়ী ঈদুল আযহার বোনাস পাওয়া সত্ত্বেও কেন তার কোনবানিতে শরীক হতে পারে না-সরকারি কর্মচারীদের গ্রেড বৈষম্য ২০২৪
সরকারি চাকরি করেও কোরবানি দেওয়া যায় না? গ্রাম বা শহর যে কোন এরিয়ার লোকজনই সরকারি চাকরি মানে বিশাল কিছু মনে করেন, তারা কোরবানিতে অংশগ্রহণ না করলে তাদের হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়, সমাজের ১০ মানুষের মুখে নানান কথাও শুনতে হয়। কিন্তু এটিতো কেউ জানে না যে, ৮২৫০ টাকা বোনাস পেয়ে সে পরিবার, আত্মীয় স্বজনের জন্য ঐ টাকা কাপড় -চোপর এবং ঈদ সামগ্রী কিভাবে ক্রয় করবে এবং উক্ত অবশিষ্ট টাকায় কিভাবেই বা কোরবানি তে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবেন। একটি দপ্তরে চলতি মাসে বোনাস পাওয়া কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে গ্রেড বৈষম্যের কারণে কিভাবে বোনাস বৈষম্য তৈরি হয়েছে আসুন তা দেখে নেই।
কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন এত ফারাক কেন? বর্তমান পে স্কেল-২০১৫ কার্যকর রয়েছে। জাতীয় পে স্কেল ২০১৫ একটি কর্মকর্তা ও কর্মচারী বৈষম্যমূলক পে স্কেল-যেখানে ১১-২০ তম গ্রেডে প্রতিটি স্কেলের ধাপ দূরত্ব গড়ে ৪% অপর দিকে ১-১০ নম্বর গ্রেডে প্রতিটি স্কেলে ধাপ দূরত্ব গড়ে ২০% । আমাদের বর্তমান পে স্কেলে রয়েছে মোট ২০টি গ্রেড, যেখানে সর্বনিম্ন গ্রেডে বেতন ধরা হয়েছে ৮২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ গ্রেডে বেতন ধরা হয়েছে ৭৮০০০ টাকা নির্ধারিত। সে হিসাবে এ পে স্কেল কে ১:১০ মাত্রার পে স্কেল বলা যায়। যেখানে আন্তর্জাতিক মান ১:৪ নির্ধারিত রয়েছে। আসুন একটি চিত্র দেখি যে, ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারী কত বোনাস পেয়েছেন এবং ১-১০ গ্রেডের কর্মচারী কত বোনাস পেয়েছেন
উৎসব ভাতা ২০২৪ । কর্মচারীদের বোনাস কাঠামো দেখুন যা বর্তমান বছরের ঈদ বোনাস হিসাবে পেয়েছেন।
- ২০ গ্রেডের একজন অফিস সহায়ক ৮৬৭০ টাকা বোনাস পেয়েছেন (চাকরির বয়স ২)।
- ১৯ গ্রেডের একজন গার্ড ১৪৬০০ টাকা বোনাস পেয়েছেন (চাকরির বয়স ২০ বছর)।
- ১৭ গ্রেডের একজন নিরাপত্তা প্রহরী ১৭৯২০ টাকা বোনাস পেয়েছেন (চাকরির বয়স ৩০ বছর)।
- ১৬ গ্রেডের একজন অফিস সহকারী ১১৩২০ টাকা বোনাস পেয়েছেন (চাকরির বয়স ৫ বছর)।
- ১৪ গ্রেডের একজন হিসাব রক্ষক ১৩৭১০ টাকা বোনাস পেয়েছেন (চাকরির বয়স ৭ বছর)।
- ১৩ গ্রেডের একজন প্রধান সহকারী ২১৮৬০ টাকা বোনাস পেয়েছেন (চাকরির বয়স ৩৩ বছর)।
- ১১ গ্রেডের একজন সুপারভাইজার ২৪৮৫০ টাকা বোনাস পেয়েছেন (চাকরির বয়স ২৭ বছর)।
উৎসব ভাতা ২০২৪ । কর্মকর্তাদের বোনাস কাঠামো দেখুন যা বর্তমান বছরের ঈদ বোনাস হিসাবে পেয়েছেন।
- ৯ম গ্রেডের একজন কর্মকর্তা ২৬৭৬০ টাকা বোনাস পেয়েছেন (চাকরির বয়স ৩ বছর)।
- ৮ম গ্রেডের একজন কর্মকর্তা ৩৯৩৯০ টাকা বোনাস পেয়েছেন (চাকরির বয়স ১৫ বছর)।
- ৬ষ্ঠ গ্রেডের একজন কর্মকর্তা ৪৯৯৮০ টাকা বোনাস পেয়েছেন (চাকরির বয়স ৩২ বছর)।
- ৫ম গ্রেডের একজন কর্মকর্তা ৬১২০০ টাকা বোনাস পেয়েছেন (চাকরির বয়স ৫ বছর)।
- ৪র্থ গ্রেডের একজন কর্মকর্তা ৭১২০০ টাকা বোনাস পেয়েছেন (চাকরির বয়স ৩১ বছর)।
উপরোক্ত বেতন কাঠামো গুলো লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন যে, একজন কর্মচারী এই ঈদে সর্বনিম্ন ৮৬৭০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৪৮৫০ টাকা ঈদ বোনাস পেয়েছেন। যদি একজন কর্মচারী ১৫-২০ হাজার টাকার মধ্যে কোরবানিতে শরীক হয় তবে এই টাকায় কিভাবে সে তার পরিবারের ঈদের নতুন জামা কিনবেন এবং কিভাবে আত্মীয় স্বজনদের মন রক্ষা করবেন এবং কিভাবে সে ঈদ সামগ্রী ক্রয় করে খুশিতে ঈদ উদযাপন করবেন? কেউ কি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন? গ্রেড বৈষম্য থাকায় ঈদ বোনাসেও বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এতে ঈদ শব্দটি কর্মচারীদের জন্য খুশি তো বয়ে আনেন কিন্তু পরিবার কর্তাদের জন্য বয়ে আনেন একরাশ টেনশন। এরা না পারে কাঁদতে না পারে ঈদ হতে পিছু হটতে, সরকারি চাকরি বলে কথা বৈকি!
অন্য দিকে খেয়াল করুন সরকারি কর্মকর্তাগণ কিন্তু ১৫-২০ হাজার টাকায় কোরবানিতে অংশ গ্রহণ করে পরিবার পরিজন নিয়ে খুশিতে ঈদ উদযাপন করতে পারেন। সর্বনিম্ন ২৬৭৬০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭১২০০ টাকা দিয়ে তিনি কোরবানিতে অংশগ্রহণ, পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের জন্য নতুন কাপড় এবং ঈদ সামগ্রী ক্রয় করেও কিছু টাকা সেভিং রাখতে পারেন। একদিকে কর্মচারী বোনাস হীনমন্যতায় ভুগে অন্য দিকে আত্মতৃপ্তি এমন কেন?
হ্যাঁ কর্মকর্তা ও কমর্চারীদের মধ্যে বেতনের ফারাক তো থাকবেই, এটি যদি ১:১০ না হয়ে ১:৪ হতো এবং প্রতিটি গ্রেডে সমান দূরত্ব বা গ্যাপ বজায় রেখে পে স্কেল তৈরি করা হতো তাহলে হয়তো ১১-২০ তম গ্রেডের কর্মচারীদের ঈদ উদযাপন করা সম্ভব হতো। এতে করে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে খুশিতে ঈদ উদযাপন করতে পারতো। কোরবানি, কেনা-কাটা, আত্মীস্বজনদের মন রক্ষা করতে তাদের ঋণের দ্বারস্থ হতে হতো না। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে এ সমাস্যা আশু সমাধান করা সম্ভব। পে স্কেলটি সংশোধনের মাধ্যমে কর্মচারীদের ঈদ বোনাস নাম এই লজ্জার হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে সরকার প্রধান। সরকার হস্তক্ষেপ করলেই কেবল আমলাতান্ত্রিক এ জটিল সমস্যার সমাধান হতে পারে।