সর্বশেষ প্রকাশিত পোস্টসমূহ

সরকারি চাকরিতে যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি ২০২৫ । সম্প্রতি একজন গাড়ি চালকের প্রমোশন এবং বিতর্ক কেন?

সম্প্রতি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের মধ্যে পদোন্নতিকে কেন্দ্র করে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি, যেন সব ধরনের ব্লক পোস্ট বাতিল করে কেবল যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী পদোন্নতি দেওয়া হয়। এই দাবির পক্ষে জোরালো যুক্তি হলো, এতে কর্মীরা তাদের কাজের জন্য সঠিক মূল্যায়ন পাবেন এবং প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বাড়বে।– সরকারি চাকরিতে যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি ২০২৫

এরই মধ্যে একটি বিশেষ ঘটনা এই আলোচনাকে আরও উসকে দিয়েছে। সম্প্রতি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)-এর একজন গাড়িচালককে দাপ্তরিক বিধি-বিধান মেনেই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই পদোন্নতিকে কেন্দ্র করে রুয়েট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের মতো কিছু সংগঠন তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। তাদের আপত্তির মূল কারণ হলো, একজন গাড়িচালককে কেন পদোন্নতি দেওয়া হলো। তবে, দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, একজন কর্মী যদি নির্দিষ্ট সময় ধরে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন এবং পদোন্নতির জন্য নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জন করেন, তাহলে তাকে পদোন্নতি দেওয়া যেতেই পারে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানিয়েছে, এই পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়নি।

কর্মকর্তারা বলছেন, যদি যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়ার কথা হয়, তাহলে তা সকল কর্মীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হওয়া উচিত। একজন গাড়িচালক যদি তার দক্ষতা এবং নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে পদোন্নতির যোগ্য হন, তবে তাকে প্রমোশন দিতে কেন এত লাফালাফি করা হচ্ছে, তা একটি বড় প্রশ্ন। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই ধরনের আপত্তি যোগ্যতাভিত্তিক পদোন্নতির ধারণাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এটি কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করতে পারে এবং তাদের কাজের প্রতি আগ্রহ কমাতে পারে। তাই, সবার উচিত ব্যক্তির পদ নয়, বরং তার যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতাকে মূল্যায়ন করা।

কোন দপ্তরে এমন পদোন্নতি দেয়া হয়েছে? সাম্প্রতিক কিছু সংবাদ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জানা যায়, এই ধরনের পদোন্নতি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে বেপজা কমপ্লেক্সে। খবর অনুযায়ী, বেপজা কমপ্লেক্সে লাভলু মিয়া নামে একজন গাড়িচালককে যানবাহন শাখার প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)-এর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। তাদের মূল দাবি হলো, একজন গাড়িচালককে প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়াটা প্রকৌশল খাতের জন্য একটি প্রহসন। এই বিষয়টি নিয়ে রুয়েট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের মতো সংগঠনগুলো তীব্র আপত্তি জানাচ্ছে, কারণ তাদের মতে, প্রকৌশলী পদটি একটি বিশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার দাবি রাখে যা একজন গাড়িচালকের সাধারণত থাকে না। এটি যোগ্যতাভিত্তিক পদোন্নতির ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে তারা মনে করছেন।

ড্রাইভারের পদোন্নতি ২০২৪ । এই ধরনের পদোন্নতিগুলো নিয়ে জনগণের মধ্যে যে অসন্তোষ এবং উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, তা সরকারের নজরে আনা এবং এই বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে এই ধরনের অনিয়ম রোধে একটি শক্তিশালী এবং স্বচ্ছ পদোন্নতি নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন। তা না হলে, ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের প্রশাসনিক সংকট তৈরি হতে পারে।

১৪ তম গ্রেড থেকে সরাসরি ৯ম গ্রেডে পদোন্নতি: আরেকটি উদাহরণ একইভাবে, ১৪ তম গ্রেডের একটি পদ থেকে সরাসরি ৯ম গ্রেডের পদে পদোন্নতির ঘটনাও ঘটেছে। সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী, সাধারণত একটি গ্রেড থেকে অন্য গ্রেডে পদোন্নতি হয় ধাপে ধাপে, যেমন ১৪ থেকে ১৩, ১৩ থেকে ১২, এবং এভাবে। সরাসরি পাঁচ গ্রেড উপরে পদোন্নতি পাওয়া প্রচলিত নিয়ম ও পদ্ধতির পরিপন্থী। এই ধরনের ঘটনাগুলো শুধু আইনি জটিলতাই তৈরি করে না, বরং সরকারি চাকরিতে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার অভাবের ইঙ্গিত দেয়। এতে সাধারণ কর্মচারী এবং পদোন্নতির জন্য যোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হতে পারে।

Caption: Rules and Regulations BEPZA

নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি নির্ধারণ করে। পদোন্নতির জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা ও বিধিমালা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস বা সংশ্লিষ্ট সরকারি ওয়েবসাইটে (যেমন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) খোঁজ নিতে পারেন।

  1. সরকারি চাকরিতে পদোন্নতির বিধিমালা একটি নির্দিষ্ট আইনের অংশ নয়, বরং এটি সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এবং বিভিন্ন বিধিমালা (যেমন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারী (জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি) বিধিমালা, ২০১১) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই বিধিগুলো পদোন্নতির ভিত্তি, যেমন জ্যেষ্ঠতা বা মেধা, এবং নিয়োগের
  2. প্রক্রিয়া, নির্বাচন কমিটির সুপারিশ, কাজের মান ও যোগ্যতা বিবেচনা করে।
  3. জ্যেষ্ঠত্বভিত্তিক পদোন্নতি: যেখানে চাকরির মেয়াদ বা বয়োজ্যেষ্ঠতা বিবেচনা করে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
  4. যোগ্যতা বা মেধাভিত্তিক পদোন্নতি: যেখানে মেধা, যোগ্যতা এবং কাজের মানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
  5. জ্যেষ্ঠত্ব ও যোগ্যতাভিত্তিক পদোন্নতি: যেখানে জ্যেষ্ঠতা ও যোগ্যতা উভয়ই বিবেচনা করা হয়।
  6. নির্বাচন কমিটি: সরকার কর্তৃক গঠিত সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
  7. কাজের মান: কাজের মান এবং এসিআর (Annual Confidential Report) স্কোরের ভিত্তিতেও পদোন্নতি হতে পারে।
  8. সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮: নিয়োগ ও পদোন্নতির ভিত্তি হিসেবে মেধা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতাকে গুরুত্ব দেয়।

গাড়ি চালক থেকে উপসহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি?

হ্যাঁ। সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, একজন গাড়ি চালককে উপসহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এটি একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা, কারণ গাড়ি চালক পদটি সাধারণ প্রশাসনিক এবং কারিগরি পদ নয়, এবং এর জন্য কোনো প্রকৌশলগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে, উপসহকারী প্রকৌশলী পদটি একটি কারিগরি বা প্রকৌশল পদ, যার জন্য সুনির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা, যেমন ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং, থাকা আবশ্যক। এই ধরনের পদোন্নতি প্রচলিত নিয়ম এবং যোগ্যতার মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ, একটি পদের জন্য নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কাজের অভিজ্ঞতা অপর একটি পদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এর ফলে, প্রশাসন এবং কাজের মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

জনগণের প্রত্যাশা এবং প্রশাসনিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা

এই ধরনের ঘটনা জনগণের মধ্যে বিশ্বাস নষ্ট করে এবং প্রশাসনে স্বচ্ছতার অভাব তুলে ধরে।একটি সুষ্ঠু এবং কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থার জন্য, পদোন্নতি প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্ট, স্বচ্ছ এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত।সংবিধানের নীতি এবং আইন অনুযায়ী, সবার জন্য সমান সুযোগ থাকা জরুরি।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *