এমপিওভুক্ত শিক্ষক নিউজ ২০২৫ । বাড়িভাড়া মূল বেতনের ২০ শতাংশের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রণালয়ে?
এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য বাড়িভাড়া মূল বেতনের ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে চিকিৎসা ভাতাও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।– এমপিওভুক্ত শিক্ষক নিউজ ২০২৫
বাড়ি ভাড়া ৪৫% না করে ২০% কেন? এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের বাড়িভাড়া মূল বেতনের ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই প্রস্তাবের পাশাপাশি চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করারও প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাসিক বাড়িভাড়া বাবদ ১০০০ টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা বাবদ ৫০০ টাকা পান। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকরা তাদের বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়ে আসছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই নতুন প্রস্তাবটি তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
নতুন প্রস্তাবে সরকারের ব্যয় কত হবে? শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, এই প্রস্তাব কার্যকর হলে বাড়িভাড়া খাতে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় ৩,২৫২ কোটি টাকা। বর্তমানে, প্রায় ৫.৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীকে বাড়িভাড়া বাবদ বছরে প্রায় ৬৬০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। নতুন প্রস্তাব কার্যকর হলে বছরে এই খাতে মোট ব্যয় হবে প্রায় ৩,৯১২ কোটি টাকা। প্রস্তাবটি এখনও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে এটি কার্যকর হবে।
এমপিও শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ১০০০ টাকা ছিল? হ্যাঁ। বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মাসিক বাড়ি ভাড়া ১০০০ টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা। তবে, এই ভাতা বৃদ্ধির জন্য একটি প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ২০ শতাংশ। চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হবে। এই প্রস্তাবটি এখনও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। যদি প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়, তাহলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া এবং চিকিৎসা ভাতা বাড়বে। তবে, এখনও পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি।
বাড়ি ভাড়া ২০% দিয়ে প্রস্তাব ২০২৫ / চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করারও প্রস্তাব করা হয়েছে।
এমপিওভুক্তির নীতিমালাটি এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যেখানে নির্দিষ্ট অংকের ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে শিক্ষকদের মূল বেতন বাড়লেও আনুষঙ্গিক ভাতাগুলো বাড়ার সুযোগ সীমিত। এই কারণেই শিক্ষকরা শতাংশের হারে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন, যাতে তাদের বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আনুষঙ্গিক ভাতাও আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়। সর্বোপরি, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া কম হওয়ার মূল কারণ হলো সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে বিদ্যমান নীতিগত বৈষম্য এবং দীর্ঘদিনের পুরোনো নীতিমালা যা বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
Caption: Bangla Tribune
এমপিও শিক্ষকদের দাবী দাওয়া ২০২৫ । এমপিওভূক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের এখন দাবী কি? এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রধান দাবিগুলো হলো
- শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ: এটি তাদের দীর্ঘদিনের এবং প্রধানতম দাবি। তারা চান সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি করে দেওয়া হোক।
- বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি: তারা বর্তমান ১০০০ টাকা বাড়ি ভাতার পরিবর্তে সরকারি শিক্ষকদের মতো মূল বেতনের ২০% হারে বাড়ি ভাড়া প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।
- চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি: বর্তমান ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতার পরিবর্তে ১০০০ টাকা করার দাবি।
- উৎসব ভাতা বৃদ্ধি: শিক্ষকদের জন্য বর্তমান ২৫% উৎসব ভাতার পরিবর্তে ৫০% এবং কর্মচারীদের জন্য ৫০% উৎসব ভাতার পরিবর্তে ৭৫% করার দাবি।
- এই দাবিগুলো নিয়ে তারা সরকারের সাথে আলোচনা করছেন এবং দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া এত কম কেন?
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া কম হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যা মূলত দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ঐতিহাসিক এবং কাঠামোগত বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কিত। এমপিও (Monthly Payment Order) ভুক্তির মূল ধারণাটি হলো, সরকার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের আংশিক বেতন-ভাতা প্রদান করবে। এই নীতিমালায় বাড়ি ভাড়ার পরিমাণটি অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত এবং এটি বেতনের শতকরা হার হিসেবে নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা হিসেবে দেওয়া হয়। যুগের পর যুগ এই ১০০০ টাকা বাড়ি ভাড়াই নির্ধারিত ছিল, যা বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। সরকারি শিক্ষকরা তাদের মূল বেতনের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া পেয়ে থাকেন (যেমন- ঢাকা ও বিভাগীয় শহরে ৫০%, জেলা শহরে ৪৫% এবং অন্যান্য এলাকায় ৪০%), যা তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য পর্যাপ্ত। অন্যদিকে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন এবং তাদের জন্য একটি নামমাত্র অংক নির্ধারিত থাকে। এটি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে একটি বড় বৈষম্য সৃষ্টি করে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রায়শই বলা হয় যে, দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পুরোপুরি সরকারি করা বা সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সরকারি শিক্ষকদের মতো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া আর্থিক দিক থেকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সারাদেশের প্রায় ৫.৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীকে যদি সরকারি শিক্ষকদের মতো বেতন-ভাতা দেওয়া হয়, তবে সরকারের উপর বিরাট আর্থিক চাপ পড়বে। এই কারণে, ধাপে ধাপে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়, যা শিক্ষকদের প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম।
শিক্ষকদের আন্দোলন ও সমঝোতার ইতিহাস- দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করে আসছেন। | তাদের মূল দাবি হলো, শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করা, অর্থাৎ সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি করে দেওয়া। এর বিকল্প হিসেবে তারা বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছেন। | সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়, যেমন- বাড়ি ভাড়া ১০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০০ টাকা করা বা মূল বেতনের ২০% করার প্রস্তাব দেওয়া। কিন্তু এই প্রস্তাবগুলোও শিক্ষকদের সম্পূর্ণ দাবি পূরণ করে না। |
এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ব্যাপারে কি সরকার কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছে?
এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের বিষয়ে সরকার এখনও পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বক্তব্য এবং পদক্ষেপ দেখা গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার সম্প্রতি বলেছেন যে, এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা একটি অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এটি একটি জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং ইস্যু, যা একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারই করতে পারে। জাতীয়করণের দাবির বিকল্প হিসেবে সরকার শিক্ষকদের অন্য কিছু দাবি পূরণের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি। এই বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যেখানে বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ২০% এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। সরকার ২০০৯ সাল থেকে গত ১৫ বছরে ৮২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করেছে। এটি প্রমাণ করে যে সরকার পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের নীতিতে বিশ্বাসী। সংক্ষেপে বলা যায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রধান দাবি শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ হলেও, সরকার এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। বরং, সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া এবং এর পরিবর্তে শিক্ষকদের অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া এবং চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব অন্যতম।