সর্বশেষ প্রকাশিত পোস্টসমূহ

১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের পদোন্নতি বৈষম্য নিরসনের দাবি ২০২৫ । পে-কমিশন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা?

সরকারি চাকরিতে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের পদোন্নতি বঞ্চনার বিষয়টি চরম বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে এর দ্রুত নিরসনের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদের যুগ্মমহাসচিব আশিকুল ইসলাম সম্প্রতি এক বিবৃতিতে এই বৈষম্য দূরীকরণে জাতীয় পে-কমিশন চেয়ারম্যান এবং নতুন জনপ্রশাসন সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

আশিকুল ইসলাম তার বিবৃতিতে বলেন, “বাস্তব কথা বলতে ১১-২০ গ্রেডের অধিকাংশ কর্মচারীদের সমস্ত চাকরিজীবনে কোনো পদোন্নতি নেই। এটা চরম বৈষম্য। যে পদে চাকরিতে ঢুকে, সেই পদ থেকেই তাদের চলে যেতে হয়।” তিনি এই দীর্ঘদিনের বঞ্চনা নিরসনে পে-কমিশন চেয়ারম্যানের হাত ধরে পদোন্নতির পথ সুগম করার আবেদন জানান।

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের উচ্চমান সহকারী এবং প্রধান সহকারীরা দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে পদবী বৈষম্যের শিকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটি তিনবার সুপারিশ করা সত্ত্বেও তাদের পদোন্নতি হয়নি। বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। তবে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিষয়টি বারবার মিটিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে এবং এখনো কোনো আলোর মুখ দেখেনি।

আশিকুল ইসলাম প্রশ্ন তোলেন, “যুগের পর যুগ তাদের কোনো পদোন্নতি নেই। এটা কি বৈষম্য নয়?” তিনি আরও জানান যে, শুধু ১১-২০ গ্রেড নয়, অনেক দপ্তরের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদেরও কোনো পদোন্নতি নেই। এসকল বিষয় দ্রুত নিরসন করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

তাই, তিনি মাননীয় নতুন জনপ্রশাসন সচিব মহোদয়ের নিকট জোর আবেদন জানিয়েছেন যে, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের কর্মচারীদের পদোন্নতির বিষয়ে যেন তিনি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই দীর্ঘদিনের বৈষম্য দূর করে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে কাজের উদ্দীপনা ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদ।

নতুন পে স্কেলে গ্রেড সংখ্যা কমাতে হলে পদ কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে?

হ্যাঁ, নতুন পে স্কেলে গ্রেড সংখ্যা কমাতে হলে পদ কাঠামোতে পরিবর্তন আনা অপরিহার্য।

এর কয়েকটি প্রধান কারণ আছে:

  1. পদবিন্যাসের সাথে গ্রেডের সম্পর্ক: বর্তমান পদ কাঠামো গ্রেড সংখ্যার উপর ভিত্তি করে তৈরি। প্রতিটি পদের একটি নির্দিষ্ট গ্রেড থাকে, যা তার দায়িত্ব, যোগ্যতা এবং বেতনক্রম নির্ধারণ করে। যদি গ্রেড সংখ্যা কমানো হয়, তাহলে একাধিক বর্তমান গ্রেডের পদগুলোকে নতুন, কম সংখ্যক গ্রেডের অধীনে আনতে হবে। এর অর্থ হলো কিছু পদের মর্যাদা, দায়িত্ব বা বেতন কাঠামো নতুন গ্রেডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে।
  2. সুপারিশ ও বাস্তবায়ন: সাধারণত, গ্রেড সংখ্যা কমানোর সুপারিশগুলো আসে বিভিন্ন সংস্কার কমিটি বা পে-কমিশন থেকে। তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে কাঠামোগত সরলীকরণ, বেতন বৈষম্য কমানো এবং ক্যারিয়ার পাথের উন্নতি। এই উদ্দেশ্যগুলো পূরণের জন্য কেবল গ্রেড সংখ্যা কমালেই হবে না, বরং পদের দায়িত্ব ও যোগ্যতার পুনর্মূল্যায়ন করে সেগুলোকে নতুন গ্রেড কাঠামোর সাথে সংগতিপূর্ণ করতে হবে।
  3. পদোন্নতি ও ক্যারিয়ার পথ: যদি গ্রেড সংখ্যা কমে যায়, তাহলে বর্তমান পদোন্নতির ধাপগুলোও পরিবর্তিত হবে। যেমন, যদি ১৯টি গ্রেডকে ১০টিতে নামিয়ে আনা হয়, তাহলে পদোন্নতির জন্য কর্মচারীদেরকে কয়েকটি গ্রেড ‘লাফিয়ে’ উপরে উঠতে হতে পারে, অথবা কিছু বিদ্যমান পদ বিলুপ্ত হয়ে নতুন পদ তৈরি হতে পারে, যা নতুন গ্রেডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে। এর ফলে পুরো পদসোপান (Hierarchy) পুনর্গঠন করতে হবে।
  4. যোগ্যতা ও দায়িত্বের পুনর্নির্ধারণ: কম সংখ্যক গ্রেড থাকলে প্রতিটি গ্রেডের অধীনে পদের দায়িত্ব ও যোগ্যতা আরও সুনির্দিষ্ট এবং বিস্তৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পূর্বে যে কাজ দুটি ভিন্ন গ্রেডের পদে বিভক্ত ছিল, সেগুলো এখন একটি নতুন গ্রেডের একক পদের দায়িত্বে চলে আসতে পারে। এর জন্য বিদ্যমান পদের দায়িত্ব ও কার্যপরিধি পুনর্নির্ধারণের প্রয়োজন হবে।
  5. প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা: গ্রেড সংখ্যা কমানো হলে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও ব্যবস্থাপনা সহজ হবে বলে আশা করা হয়। কিন্তু এর জন্য প্রতিটি দপ্তরের বিদ্যমান জনবল কাঠামো, পদের বিবরণ (Job Description) এবং কার্যপ্রবাহ (Workflow) নতুন গ্রেড কাঠামোর সাথে মিলিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে।

সংক্ষেপে, গ্রেড সংখ্যা কমানো কেবল একটি সংখ্যাগত পরিবর্তন নয়, এটি পুরো সরকারি চাকরি কাঠামোর একটি মৌলিক সংস্কার। এই সংস্কার সফল করতে হলে পদসোপান, পদের দায়িত্ব, যোগ্যতা এবং পদোন্নতির প্রক্রিয়া—সবকিছুতেই সমন্বিত পরিবর্তন আনতে হবে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *