সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য শ্রান্তিবিনোদন ছুটি ও ভাতা: বিস্তারিত প্রতিবেদন
সরকারি চাকরিজীবীগণ তার চাকরি যোগদানের তারিখ হতে প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর ১৫ দিনের জন্য ছুটি পেয়ে থাকেন এবং সাথে এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ভাতা পাওয়া যায়। এটি সাধারণত বিশ্রাম বা রিল্যাক্স করার ছুটি প্রদান করা হয় ব্যয়ভার সহ। বাংলাদেশ চাকরি (বিনোদন ভাতা) বিধিমালা, ১৯৭৯ অনুসারে এ ছুটি ও ভাতা চালু হয়েছে।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য শ্রান্তিবিনোদন ছুটি ও ভাতা প্রদানের ব্যবস্থাটি বাংলাদেশ চাকরি (বিনোদন ভাতা) বিধিমালা, ১৯৭৯ অনুসারে পরিচালিত হয়। এই বিধিমালাটি ১লা জুলাই, ১৯৭৯ তারিখে কার্যকর করা হয়। এর পূর্বেও এক মাসের ছুটি বলবৎ ছিল। ছুটি ও ভাতা পাওয়ার শর্ত-একজন সরকারি কর্মচারী তার চাকরির যোগদানের তারিখ থেকে প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর ১৫ দিনের জন্য এই ছুটি এবং সাথে এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ভাতা পেয়ে থাকেন। তবে এটি পেতে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়:
- চাকরির মেয়াদ: কর্মচারীকে অবশ্যই কমপক্ষে তিন বছর সন্তোষজনকভাবে চাকরি করতে হবে।
- আবেদন: নির্দিষ্ট সময়ে ছুটির জন্য আবেদন করতে হবে।
- বাজেট বরাদ্দ: সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ ছুটির জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে।
কারা এ সুবিধা প্রাপ্য নয়? সব সরকারি কর্মচারী এই সুবিধা পান না। ওয়ার্কচার্জড, কন্টিনজেন্ট বা চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা এই ছুটির জন্য যোগ্য নন।
ছুটি মঞ্জুরের নিয়ম কি? অর্জিত ছুটি থেকে কর্তন: এই ১৫ দিনের ছুটি কর্মচারীর প্রাপ্য অর্জিত ছুটি থেকে বিয়োগ করা হয়। তাই, গড় বেতনে ছুটি জমা না থাকলে এই ছুটি পাওয়া যাবে না। এমনকি আংশিক ছুটি জমা থাকলেও এই ছুটি মঞ্জুর করা হয় না। একাধিক কর্মচারী একই সময়ে শ্রান্তিবিনোদন ভাতা প্রাপ্য হলে এবং বাজেট বরাদ্দ পর্যাপ্ত না থাকলে, পিআরএল (Post-Retirement Leave) ভোগে যাবেন এমন কর্মচারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালীন কোনো কর্মচারী এই ছুটি পাবেন না, এবং এটি পরবর্তীতে বকেয়া হিসাবেও নিতে পারবেন না। অবসর উত্তর ছুটিতে থাকা কোনো কর্মচারী শ্রান্তিবিনোদন ছুটি পাবেন না। যদি কোনো কর্মচারীকে জনস্বার্থে সময়মতো ছুটি দেওয়া সম্ভব না হয়, তবে পরবর্তীতে যখনই এই ছুটি মঞ্জুর করা হোক না কেন, তা সেই সময়ের মূল বেতন অনুসারে দেওয়া হবে। তবে, তার পরবর্তী ছুটির প্রাপ্যতার তারিখ পরিবর্তন হবে না।
বেতন ও ভাতা হিসাব-যে বছরে কোনো কর্মচারী শ্রান্তিবিনোদন ছুটিতে যান, সেই বছর তিনি ১২ মাসের মূল বেতনের সাথে অতিরিক্ত আরও এক মাসের মূল বেতনের সমান ভাতা পাবেন, অর্থাৎ এক বছরে ১৩ মাসের বেতন পাবেন। পূর্ববর্তী বিধিমালা: ১৯৮৩ সালের পূর্বে এই ছুটি এক মাস ছিল, যা পরবর্তীতে ১৫ দিনে রূপান্তরিত করা হয়। পদোন্নতি: পদোন্নতি হলেও এই নিয়মের কোনো পরিবর্তন হয় না। যোগদানের তারিখ অনুসারে প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর এই ছুটি প্রাপ্য হয়।আবেদন বাধ্যতামূলক: এই ছুটি পেতে হলে অবশ্যই নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হয়। আবেদন না করলে কর্তৃপক্ষ ছুটি মঞ্জুর না করার ক্ষমতা রাখেন।এই প্রতিবেদনটি সরকারি চাকরিজীবীদের শ্রান্তিবিনোদন ছুটি সংক্রান্ত বিধিমালা, প্রাপ্যতার শর্ত এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলি সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দেয়।
১। বিধিমালা: বাংলাদেশ চাকরি (বিনোদন ভাতা) বিধিমালা, ১৯৭৯
২। কার্যকর: ১লা জুলাই ১৯৭৯ তারিখে কার্যকর করা হয়। অর্থাৎ এ বিধিমালা জারির পর এটি চালু হয়। তার পূর্বে এ সংক্রান্ত আদেশে ১ মাস ছুটি বলবৎ ছিল।
৩। প্রাপ্যতার শর্ত: প্রথমত সরকারি চাকরিজীবী হিসাবে কর্মরত থাকতে হবে, ০৩ বছর সন্তোষজনকভাবে চাকরি করতে হবে, সময়মত আবেদন করতে হবে, সংশিষ্ট দপ্তরে বাজেট বরাদ্দ অবশিষ্ট থাকতে হবে।
৪। কারা প্রাপ্য নয়: ওয়ার্কচার্জড, কন্টিনজেন্ট বা চুক্তি ভিত্তিক কর্মচারী এটি প্রাপ্য হয় না।
৫। অগ্রাধিকার: পিআরএল ভোগে যাবে এমণ কর্মচারীদের এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। অর্থাৎ একই সময়ে একাধিক কর্মচারী শ্রান্তিবিনোদন ভাতা প্রাপ্য হলে উক্ত সময়ে বাজেট বরাদ্দ পর্যাপ্ত না থাকলে এ ক্ষেত্রে পিআরএল কর্মচারী অগ্রাধিকার পাইবে।
৬। কোন ছুটি হতে বিয়োগ করা হয়: এটি অর্জিত ছুটি হতে কর্তন করা হয়। অবশ্যই গড় বেতনে ছুটি প্রাপ্যতা থাকতে হবে। গড় বেতনে ছুটি জমা না থাকলে এ ছুটি পাবেন না। আংশিক জমা থাকলেও তিনি এ ছুটি প্রাপ্য হবেন না।
- শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের ফেসবুক ব্যবহারে মাউশির কঠোর সতর্কতা
- জানুয়ারিতেই জমা হতে পারে ৯ম পে-স্কেলের সুপারিশ: তিন ধাপে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা
- ১ জুলাই থেকে সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো : ইনক্রিমেন্ট ও বিশেষ প্রণোদনায় নীট বেতন কত?
- ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: মনোনয়ন ফরমের জটিলতা কাটাতে ইসির স্পষ্টীকরণ
- ব্যক্তি করদাতাদের জন্য সুখবর: আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ল ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত
৭। বাজেট বরাদ্দ: এ ছুটি কেবল পাওনা থাকলেই মঞ্জুর হবে তা নয়, এক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ থাকা আবশ্যক। বাজেট বরাদ্দ না থাকলে তাৎক্ষনিক এ ছুটি মঞ্জুর করা যায় না, পরবর্তীতে বাজেট বরাদ্দ পেলে এ ছুটি মঞ্জুর করা যায়।
০৮। পূর্বে এ ছুটি কত দিন ছিল: ১৯৮৩ সালের পূর্বে এ ছুটি একমাস ছিল পরবর্তীতে এ ছুটি ১৫ দিনে রূপান্ত করা হয়।
০৯। বেতনের অতিরিক্ততে হিসাবে প্রাপ্য: যে বছরে ছুটিতে যাবে সে বছর তিনি ১২ মাসে ১৩টি বেতন পাবেন। অর্থাৎ মূল বেতনের অতিরিক্ত হিসাবে এ ভাতা পাবেন।
হিসাব রক্ষণ অফিসের কিছু মতামত তুলে ধরা হলো:
ক) সাময়িক বরখাস্ত: সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালীন কোন কর্মচারী এ শ্রান্তি বিনোদন ছুটি পাবেন না। এটি পরবর্তীতে বকেয়া হিসাবেও নিতে পারবে না। এ সময় কোন ছুটিই মঞ্জুর করা যায় না।
খ) পিআরএল: অবসর উত্তর ছুটিতে থাকাকালীন কোন কর্মচারী এ শ্রান্তি বিনোদন ছুটি পাবেন না।
গ) পদোন্নতি: পদোন্নতি হোক বা না হোক এখানে সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়। তার যোগদানের তারিখ অনুসারে প্রতি ০৩ বছর অন্তর অন্তর এ ছুটি প্রাপ্য হবেন।
ঘ) জনস্বার্থে: কোন কর্মচারীকে জনস্বার্থে সময়মত ছুটি নাও যেতে পারে। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে ৩/৬ মাস পর যখনই তাকে এ ছুটি প্রদান করা হোক না কেন, তখনকার মূল বেতন অনুসারে তার শ্রান্তি বিনোদন ভাতা মঞ্জুর করতে হবে। এক্ষেত্রে তার ছুটি এবং ভাতা প্রাপ্যতা দেরিতে হলেও পরবর্তী ছুটি প্রাপ্যতার তারিখ কিন্তু পরিবর্তন হবে না।
ঙ) আবেদন করা কি বাধ্যতামূলক: শ্রান্তি বিনোদন ছুটি পেতে হলে অবশ্যই তাকে শ্রান্তি ও বিনোদন ছুটির আবেদন করতে হবে, এক্ষেত্রে সময় মত আবেদন না করলে কর্তৃপক্ষ শ্রান্তি বিনোদন ছুটি মঞ্জুর না করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।
বাংলাদেশ চাকরি (বিনোদন ভাতা) বিধিমালা, ১৯৭৯ মূল বিধি ইংরেজী ভার্সন দেখে নিতে পারেন: ডাউনলোড




Like!! Great article post.Really thank you! Really Cool.
মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকা অবস্থায় শ্রান্তি বিনোদন ছুটির সময় হলে বিধান কি?
ছুটি শেষে যোগদান করে ভোগ করবেন। শ্রান্তি ও বিনোদন ছুটি পেছানোর সুযোগ রয়েছে।