৯ম জাতীয় বেতন স্কেল ২০২৫ । ১৬ টি গ্রেড দিয়ে জাতীয় বেতন কাঠামো কি বৈষম্য দূর হবে?
নতুন পে স্কেলের কমিটির কেবল মাত্র ১টি বৈঠক হয়েছে এবং এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠছে ১৬টি বেতন গ্রেড হতে পারে-তবে বেতন গ্রেড যত কম হবে বৈষম্য তত কম হবে তাই বেতনগ্রেড ১২টি হওয়া বাঞ্চনীয় আপনার চাহিদা অনুযায়ী আমি ৯ম জাতীয় বেতন স্কেল ২০২৫ (প্রস্তাবিত ধারণা) ১৬টি গ্রেডে সাজিয়ে একটি টেবিল তৈরি করছি। এখানে আমি সর্বনিম্ন বেতন ২৫,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ১,২৫,০০০ টাকা ধরে ধাপে ধাপে ভাগ করেছি।–৯ম জাতীয় বেতন স্কেল ২০২৫
কোনটা কর্মচারীদের জন্য বেশি লাভজনক হবে? গ্রেড যত কম → বৈষম্য তত কম- এখনকার ২০ গ্রেডে প্রথম দিকের গ্রেড (১–১০) আর শেষ দিকের গ্রেড (১৫–২০)–এর মধ্যে বেতনের ফারাক অনেক বেশি। যদি গ্রেড ১২টা হয়, তাহলে নিচের দিকের কর্মচারীর বেতন দ্রুত ওপরে ওঠার সুযোগ পাবে। মানে, কম গ্রেড হলে নিচের কর্মচারীরা বেশি লাভবান হবে। ১৬ গ্রেড হলে ২০ থেকে ১৬ করলে কিছুটা বৈষম্য কমবে, কিন্তু পার্থক্য অনেকটা থেকেই যাবে। যারা নিম্ন গ্রেডে আছেন (যেমন অফিস সহায়ক, এমএলএসএস, গার্ড ইত্যাদি), তারা তেমন বেশি বেতন বৃদ্ধির সুযোগ পাবেন না। ১২ গ্রেড হলে তখন প্রতি গ্রেডে বেতন ব্যবধান অনেক কম হবে। কর্মচারীরা (বিশেষত ১৩–২০ গ্রেডে যারা ছিলেন) তারা তুলনামূলক অনেক বেশি লাভবান হবেন। যেমন: বর্তমানে ২০ গ্রেডের কর্মচারীর প্রারম্ভিক বেতন যদি ৮,২৫০ টাকা হয়, সেটি ১২ গ্রেডে রূপান্তর করলে সরাসরি অনেক উপরে উঠে যাবে (যেমন ১৫,০০০–২০,০০০ টাকার আশেপাশে)।
গ্রেড ১২টি নাকি ১৬টি কোনটি ভাল হবে? ১২টি। ১৬ গ্রেড হলে → কিছুটা লাভ, তবে নিচের দিকের কর্মচারীরা খুব বেশি উপকার পাবেন না। ১২ গ্রেড হলে → সবাই, বিশেষত নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন। সোজা করে বললে ১২ গ্রেড হলে কর্মচারীগণ সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন। “গ্রেড যত কম → বৈষম্য তত কম” কারণটা হলো প্রতি গ্রেডে বেতনের ফারাক (Gap) কমে যায়। এখনকার ২০ গ্রেডে ১ম গ্রেডের সাথে ২০তম গ্রেডের বেতন পার্থক্য বিশাল। যেমন: ১ম গ্রেডে (সচিব/সিনিয়র পদ) শুরু হতে পারে ৭৮,০০০+, আর ২০তম গ্রেডে (অফিস সহায়ক) মাত্র ৮,২৫০ টাকা (২০১৫ স্কেল অনুসারে)। গ্রেড সংখ্যা কমালে এই ফারাক কমে আসে। নিচের দিকের কর্মচারী বেশি সুবিধা পায়। গ্রেড কমালে ১৬ বা ১২ গ্রেডে যারা আগে ২০ বা ১৯ নম্বর গ্রেডে ছিলেন, তারা তুলনামূলকভাবে উপরের দিকে উঠে আসবেন। এতে বেতন বৈষম্য কমে এবং ন্যায্যতা তৈরি হয়। ইনক্রিমেন্ট (বাৎসরিক বৃদ্ধি) আরও ভারসাম্যপূর্ণ হয় এবং বেশি গ্রেড থাকলে নিচের দিকের কর্মচারীরা ছোট ছোট ইনক্রিমেন্টে আটকে থাকে। কম গ্রেড হলে ইনক্রিমেন্টের হার সবার জন্য মোটামুটি সমান থাকে।
সহজ উদাহরণ যদি ২০ গ্রেড থাকে → কারও বেতন ৮ হাজার, কারও ৮০ হাজার → পার্থক্য ১০ গুণ! যদি ১২ গ্রেড থাকে → কারও বেতন ২৫ হাজার, কারও ১ লাখ → পার্থক্য ৪ গুণের মতো।👉 তাই গ্রেড যত কমানো হবে, তত বৈষম্য কমবে।
১৬ গ্রেড ভিত্তিক বৈষম্যমুক্ত পে স্কেল ২০২৫ / এটি একটি কাল্পনিক প্রস্তাবিত টেবিল (সরকার এখনো চূড়ান্ত করেনি)। তবে গ্রেড সংখ্যা ২০ থেকে কমে ১৬ করলে এমন একটি কাঠামো বাস্তবায়নযোগ্য হতে পারে।
ধাপগুলোর পার্থক্য সমান রেখেছি কি? জি, আমি যে চার্ট/বার-চার্ট এঁকেছিলাম সেখানে সমান ধাপ (equal step) ব্যবহার করেছি। ১৬ গ্রেডে প্রতি গ্রেডের ফারাক ≈ ৳ ৬,৬৬৬.৬৭ । (২৫,০০০ → ১,২৫,০০০ কে সরলরেখায় সমান ব্যবধানে ভাগ করে নির্ণয় করা হয়েছে।
ইনক্রিমেন্ট প্রতি বছর কত হবে? চার্টে শুধু প্রারম্ভিক বেতন ধরা ছিল—ইনক্রিমেন্ট নির্দিষ্ট করিনি। বাস্তবায়নের জন্য আমি প্রগ্রেসিভ (ধাপভিত্তিক) ইনক্রিমেন্ট সুপারিশ করছি, যাতে নিচের গ্রেড বেশি সুবিধা পায়: নিচের এক-তৃতীয়াংশ গ্রেড: ৬% প্রতি বছর মাঝের এক-তৃতীয়াংশ গ্রেড: ৫% প্রতি বছর ওপরের এক-তৃতীয়াংশ গ্রেড: ৪% প্রতি বছর এতে বৈষম্য কমে এবং নিম্ন গ্রেড দ্রুত ক্যাচ-আপ করতে পারে।
৯ম জাতীয় বেতন স্কেল ২০২৫ (প্রস্তাবিত) । বেতন স্কেলের অসঙ্গতি কমাতে গ্রেড সংখ্যা ১৬টি নয় বরং ১২টি হওয়া খুব জরুরী
- ১ম গ্রেড ১,২৫,০০০- ১,৪০,০০০
- ২য় গ্রেড ১,১৫,০০০- ১,৩০,০০০
- ৩য় গ্রেড ১,০৫,০০০- ১,২০,০০০
- ৪র্থ গ্রেড ৯৫,০০০- ১,১০,০০০
- ৫ম গ্রেড ৮৭,০০০- ১,০০,০০০
- ৬ষ্ঠ গ্রেড ৮০,০০০- ৯২,০০০
- ৭ম গ্রেড ৭৩,০০০- ৮৫,০০০
- ৮ম গ্রেড ৬৬,০০০- ৭৭,০০০
- ৯ম গ্রেড ৬০,০০০- ৭০,০০০
- ১০ম গ্রেড ৫৪,০০০- ৬৩,০০০
- ১১তম গ্রেড ৪৮,০০০- ৫৬,০০০
- ১২তম গ্রেড ৪৩,০০০- ৫০,০০০
- ১৩তম গ্রেড ৩৮,০০০- ৪৪,০০০
- ১৪তম গ্রেড ৩৩,০০০- ৩৮,০০০
- ১৫তম গ্রেড ২৮,০০০- ৩২,০০০
- ১৬তম গ্রেড ২৫,০০০- ২৮,০০০
বিগত পে স্কেলে ঝামেলা কি ছিল?
জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ (২০ গ্রেড ভিত্তিক) চালুর পর থেকেই কর্মচারীরা নানা অসঙ্গতির কথা বলে আসছেন। জাতীয় বেতন কাঠামো ২০১৫ এর প্রধান অসঙ্গতি-অতিরিক্ত গ্রেড (২০টি) → বৈষম্য বৃদ্ধি। ১ম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত বিশাল ফারাক রাখা হয়েছে। নিচের দিকের কর্মচারীদের বেতন খুবই কম, অথচ কাজের চাপ বেশি। ফলে “শ্রেণি বৈষম্য” আরও বাড়ে। নিম্ন গ্রেডের বেতন অযৌক্তিকভাবে কম। ২০তম গ্রেডে প্রারম্ভিক বেতন মাত্র ৮,২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বাস্তবে এই বেতনে ঢাকা বা বড় শহরে জীবনযাপন অসম্ভব। ইনক্রিমেন্ট বৈষম্য উচ্চ গ্রেডের ইনক্রিমেন্ট (বাৎসরিক বৃদ্ধি) অনেক বেশি, কিন্তু নিম্ন গ্রেডের ইনক্রিমেন্ট নামমাত্র (শতকরা হারে অনেক কম পড়ে যায়)। ফলে সময়ের সাথে ফারাক আরও বাড়তে থাকে। একই দায়িত্বেও ভিন্ন গ্রেড অনেক দপ্তরে একই ধরনের কাজ করলেও ভিন্ন ভিন্ন গ্রেডে রাখা হয়েছে। যেমন: একজন অফিস সহকারী ১৬ গ্রেডে, আবার অন্য প্রতিষ্ঠানে একই কাজের লোক ১৪ গ্রেডে। ৫. টেকনিক্যাল বনাম নন-টেকনিক্যাল বৈষম্য প্রকৌশলী, ডাক্তার, শিক্ষক বনাম প্রশাসনিক ক্যাডারের মধ্যে বেতন স্কেলে বড় ধরনের বৈষম্য রাখা হয়েছে। এতে পেশাগত অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। প্রমোশন সমস্যা নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা দীর্ঘদিন চাকরি করেও উপরের গ্রেডে উঠতে পারেন না। ফলে অনেকে ২০ বছর চাকরি করে একই গ্রেডে থেকে যান।
ভাতা নির্ধারণে অসঙ্গতি ছিল? হ্যাঁ। শিক্ষা ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, বাড়ি ভাড়া ভাতায় বড় শহর ও ছোট শহরের মধ্যে সামঞ্জস্য নেই। অনেক ক্ষেত্রে ভাতা বেতনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। উচ্চপদস্থদের জন্য বেশি সুবিধা সচিব, বিচারপতি, এমপিদের জন্য বাড়তি ভাতা, গাড়ি সুবিধা, সরকারি বাড়ি প্রভৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাধারণ কর্মচারীর জন্য শুধু নামমাত্র বেতন বৃদ্ধি।
জাতীয় বেতন কাঠামো ২০১৫ তে—
👉 বেশি সংখ্যক গ্রেড, | 👉 নিম্ন গ্রেডের কম বেতন, | 👉 ইনক্রিমেন্ট বৈষম্য, |
👉 সমমানের কাজে ভিন্ন গ্রেড, | 👉 ভাতা অসামঞ্জস্য এসবই সবচেয়ে বড় অসঙ্গতি। | |
আমি একজন নবম গ্রেডে সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড থেকে নবম গেটে এসে আমার বেতন বৃদ্ধি হয় ৪০০ টাকা এবার মহার্ঘ ভাতা দিয়ে আমার বেতন দশম গ্রেডের নিচে আসে অর্থাৎ আমার বেতন ২৫ হাজার দশম গ্রেডের বেতন 26000 এ বৈষম্য কি দূর হতে পারে দয়া করে জানালে খুশি হতাম
৯ম পে স্কেলে ১২ টি গ্রেড হলে সবার জন্য ভালো। একেবারে নিচের গ্রেডের চাকুরিজীবীরা ও লাভবান হবেন এবং উপরের গ্রেডের চাকুরিজীবীরা ও লাভবান হবেন। এতে উপরের স্কেল্ধারীদের বেতন তো আর কমবে না বরং বাড়বে। আর নিচের গ্রেডের চাকুরিজীবীরা জীবনে একটু স্বস্তি ফিরে পাবে। কারন সবারই পরিবার পরিজন রয়েছে। কেউ কারো জন্য হিংসা বা আমিত্ব করা ঠিক নয়,সবার জীবনে হাসি ফুটাতে হবে।
এগুলো আরও বেশি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নতুন পে স্কেলের আগমন ঘটতে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে।
১২টি গ্রেড করা অতি উত্তম
আমি ১৬ তম গ্রেডের কম্পিউটার ল্যাব সহকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। শিক্ষার মান উন্নত করতে বেতন স্কেল বাড়ানো খুব জরুরি।
সহমত।