অর্থ আইন ২০২২ অনুসারে ব্যাংক ঋণ, সঞ্চয়পত্র ক্রয় ও ক্রেডিট কার্ড বিক্রিতে রিটার্ণ দাখিলের প্রমানপত্র জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে – এখন তা আগামী ৯ মাসের জন্য শিথিল করা হল– ব্যাংক ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডে রিটার্ন দাখিলের শর্ত শিথিল ২০২২
রিটার্ণ দাখিল ছাড়াই ঋণ ২০২২ –নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ এবং ক্রেডিট কার্ড এ লেনদেনের ক্ষেত্রে তফসিলী ব্যাংকসমূহে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করে এনবিআর বিশেষ আদেশ জারি করেছে। মূলত ব্যাংক ঋণ ও ক্রেডিট কার্ড বিক্রিতে ভাটা পড়ায় এমন উদ্যোগ নেয়া হল।
রিটার্ন জমা না দিলে ক্রেডিট কার্ড নয় – নতুন এ বিধান চালুর ফলে ক্রেডিট কার্ড নেওয়া কিছুটা কঠিন হতে পারে। কারণ, অনেক করদাতার টিআইএন থাকলেও নিয়মিত রিটার্ন দেন না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে টিআইএনধারীর সংখ্যা ৭৫ লাখের বেশি। তবে এর মধ্যে নিয়মিতভাবে বার্ষিক রিটার্ন দেন ২৫ লাখের মতো। রিটার্ণ দাখিলের উৎসে আয়কর কর্তনের ম্যানুয়াল সনদের নমুনা ২০২২
বাকি ৫০ লাখের বেশি টিআইএনধারী নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করেন না। ফলে যেসব টিআইএনধারী রিটার্ন দেন না, তাঁরা এখন ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন না। তবে বর্তমানে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা 184A এর উপধারা (4) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে করারােপযােগ্য আয় না থাকা সাপেক্ষে ২০ লক্ষ টাকা সীমা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ এবং শিক্ষার্থী ক্যাটাগরিতে ২ লক্ষ টাকা সীমা পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের ক্ষেত্রে তফসিলী ব্যাংকসমূহে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা এতদ্বারা প্রত্যাহার করা হল। আয়কর রিটার্ন যাচাই ২০২২ । আপনার রিটার্ন দাখিল হয়েছে কিনা অনলাইনে চেক করা যাবে
২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত শিথিল করা হলেও উর্ধ্ব ঋণের জন্য রিটার্ণ দাখিলের প্রমানক দাখিল করতে হবে / শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত শিথিল করা হলেও বেশি লিমিটের ক্ষেত্রে রিটার্ণ রশিদ লাগবে।
নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ এবং ক্রেডিট কার্ড এ লেনদেনের ক্ষেত্রে তফসিলী ব্যাংকসমূহে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করা হল। কিছু সেবায় TIN নয় রিটার্ন জমার প্রমাণক জমা দিতে হবে।
এ আদেশ ৩০ জুন, ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
যে ৩৮ ধরনের সেবায় রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । তার মধ্যে দুটি ক্ষেত্রে শিথিল করা হল ৩০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত।
- পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বা পোস্টাল সেভিংস কিনতে হলে আয়কর জমার প্রমাণ দেখাতে হবে। যেখানে তিনি সঞ্চয়পত্র কেনার আবেদন করবেন, সেখানেই প্রমাণ জমা দিতে হবে।
- পাঁচ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ নেয়ার আবেদন করলে;
- ব্যাংক জমার সুদ আয় থেকে উৎস কর কর্তনে রিটার্ণ সনদ থাকলে ১০ শতাংশ কাটা হবে অন্যথায় ১৫%;
- ১০ লাখ টাকা বেশি মূল্যের জমি বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি, বিক্রি, দলিল হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে হলে ক্রেতাকে রেজিস্ট্রি অফিসে রিটার্ন জমার স্লিপ জমা দিতে হবে।
- যেকোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে হলে;
- দুই বা তিন চাকা ছাড়া যেকোনো মোটরগাড়ি নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়ন করতে;
- সিটি করপোরেশন বা জেলা সদর, পৌরসভায় সন্তান বা পোষ্যদের আন্তর্জাতিক পাঠ্যক্রমের আওতায় ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল বা জাতীয় পাঠ্যক্রমের আওতায় ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি করাতে;
- দেশের যেকোনো স্থানে বাণিজ্যিক বা শিল্প কারখানায় গ্যাসের সংযোগ নিতে হলে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় বাসা বাড়ির গ্যাসের সংযোগ নিতে বা আগের সংযোগ বজায় রাখতে;
- সিটি করপোরেশন বা সেনানিবাস এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হলে;
- জমি বা বাড়ি ভাড়া আয়ের ক্ষেত্রে;
- সরকার বা সরকারি কোনো সংস্থা, করপোরেশন থেকে বেতন হিসেবে মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা বা বেশি হলেই;
- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন নেয়ার সময়;
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি অংশ বা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আয় মাসে ১৬ হাজার টাকার বেশি হলেই;
- ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী শহরে ভবন নির্মাণের অনুমোদন চাইলে;
- জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলায় কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে;
- পেনশন ফান্ড, অনুমোদিত গ্র্যাচুইটি ফান্ড, স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড, অনুমোদিত সুপারএন্যুয়েশন ফান্ড এবং শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ছাড়া অন্যান্য ফান্ডের রিটার্ন;
- সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন করতে হলে;
- ডিজিটাল প্লাটফর্মে কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে হলে;
- মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অথবা ইলেকট্রনিক উপায়ে অর্থ হস্তান্তরে কমিশন, ফি জাতীয় অর্থ পেতে হলে;
- সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের আওতায় কোন সমিতি বা ক্লাব গঠিত হলে বা এ ধরনের ক্লাবের সদস্য হলে;
- ডাক্তার, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি ইত্যাদি পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য হলে বা সদস্য হতে চাইলে;
- পরামর্শক, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জনবল বা নিরাপত্তা সেবা দিয়ে অর্থ গ্রহণ করতে;
- বিবাহ নিবন্ধক বা কাজী হিসেবে লাইসেন্স পেতে চাইলে;
- আমদানি-রফতানির সনদ পেতে চাইলে;
- আমদানির এলসি খুলতে চাইলে;
- কোম্পানি পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার পদ পেতে হলে;
- ব্যবসা বা বাণিজ্য সংগঠনের বা সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ;
- বীমা কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে তালিকাভুক্তি বা নবায়ন করতে হলে;
- বীমা বা সার্ভেয়ার হিসেবে নিবন্ধন নিতে হলে;
- অস্ত্রের লাইসেন্স নেয়ার আবেদন করলে;
- ওষুধ ব্যবসার জন্য ড্রাগ লাইসেন্স থাকলে বা করাতে চাইলে, অগ্নি-নিরাপত্তা লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স পেতে চাইলে;
- লঞ্চ, স্টিমার, ট্রলার, কার্গো, বার্জ ইত্যাদি নৌযানের সার্ভে সার্টিফিকেটের জন্য;
- ইটভাটার অনুমোদন নিতে হলে;
- পরিবহন সেবার ব্যবসা করলে;
- কোনো কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর বা এজেন্টশিপ চাইলে;
- পণ্য সরবরাহের ঠিকাদারি কাজে টেন্ডার জমা দিতে হলে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ দিতে হবে। তাতে ব্যর্থ হলে ৫০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করার প্রস্তাব করা হয়েছে;
- এনজিও বা মাইক্রো ক্রেডিট সংস্থার জন্য বিদেশি অনুদানের ছাড় দেয়ার ক্ষেত্রে;
- টিআইএন থাকলেই রিটার্ণ দাখিল করতে হবে।
সঞ্চয়পত্রে কি ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত টিআইএন লাগবে?
না। Income Tax Ordinance, 1984 এর প্রতিস্থাপিত Section 184A এর Sub-Section 9 অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়ােগের ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্রের পরিবর্তে TIN দাখিল করতে হবে। বিদ্যমান Section 184A অর্থ আইন, ২০২২ এর Section 184A দ্বারা প্রতিস্থাপিত হওয়ায় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র/ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাবে বিনিয়ােগের ক্ষেত্রে TIN দাখিলের বাধ্যবাধকতা রহিত হয়েছে।
পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক।