বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

বিভিন্ন দেশের পে স্কেল ২০২৫ । বাংলাদেশসহ ৫টি দেশের পে-স্কেলের তুলনামূলক আলোচনা

সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে অনেকেরই জানতে আগ্রহ রয়েছে। আমাদের দেশের পে স্কেলে বেতন গ্রেড সংখ্যা ২০টি। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে তাদের বেতন স্কেল গ্রেড ও সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের পরিমাণ কত? আজ আমি তুলে ধরবো অন্য পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে আমাদের দেশের পে স্কেলের কি পার্থক্য রয়েছে সেগুলো-বিভিন্ন দেশের পে স্কেল ২০২৫

জাতীয় পে স্কেল কি? জাতীয় পে স্কেল হচ্ছে কোন দেশের সরকারী কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সংক্রান্ত নীতিমালা। বাংলাদেশের পে-স্কেল ও  অন্যান্য দেশের পে-স্কেলের সাথে তুলনামূলক আলোচনা নিচে তুলে ধরা হলো। সাথে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করার চেষ্ট করা হলো। আজকের বৈষম্য মূলক পে-স্কেলের পেছনের ইতিহাস।

আন্তর্জাতিক পে স্কেল- গ্রেড সংখ্যা দেখে নিন

  • বাংলাদেশের পে স্কেলে গ্রেড সংখ্যা-২০ টি।
  • পাকিস্তানের পে স্কেলে গ্রেড সংখ্যা-২২ টি।
  • ভারতের পে স্কেলে গ্রেড সংখ্যা-১৮ টি।
  • যুক্তরাষ্ট্রের পে স্কেলে গ্রেড সংখ্যা-১৫ টি।
  • ফিলিপাইনের পে স্কেলে গ্রেড সংখ্যা-৩৩ টি।
  • কেনিয়ার পে স্কেলে গ্রেড সংখ্যা-১৮ টি।

এখান থেকে ধারণা নিতে পারি আমাদের দেশের পে স্কেল কতটা আন্তর্জাতিক মানের। 

সর্বনিম্ন মূল বেতন: নিজ নিজ দেশের মুদ্রায় দেখে নিন

  • বাংলাদেশের পে স্কেল ২০১৫ তে সর্বনিম্ন মূল বেতন ধরা হয়েছে- ৮,২৫০ টাকা ।
  • পাকিস্তানের পে স্কেল ২০১৮ তে সর্বনিম্ন মূল বেতন ধরা হয়েছে- ৯,১৩০ রুপি।
  • ভারতের পে স্কেল ২০১৮ তে সর্বনিম্ন মূল বেতন ধরা হয়েছে- ১৮,০০০ রুপি।
  • যুক্তরাষ্ট্রের পে স্কেল ২০১৯ তে সর্বনিম্ন মূল বেতন ধরা হয়েছে- ১৮,৭৮৫ ডলার।
  • ফিলিপাইনের পে স্কেল ২০১৮ তে সর্বনিম্ন মূল বেতন ধরা হয়েছে – ১০,৫১০ পেসো।
  • কেনিয়ার পে স্কেল ২০১৯ তে সর্বনিম্ন মূল বেতন ধরা হয়েছে- ১১,৫৫৩ শিলিং। 

সর্বোচ্চ মূল বেতন: নিজ নিজ দেশের মুদ্রায়

  • বাংলাদেশের পে স্কেল ২০১৫ তে সর্বোচ্চ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ৭৮,০০০ টাকা ।
  • পাকিস্তানের পে স্কেল ২০১৮ তে সর্বোচ্চ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ৮৫,৭০০ রুপি।
  • ভারতের পে স্কেল ২০১৮ তে সর্বোচ্চ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ২,৫০,০০০ রুপি।
  • যুক্তরাষ্ট্রের পে স্কেল ২০১৯ তে সর্বোচ্চ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ১,০৫,১২৩ ডলার।
  • ফিলিপাইনের পে স্কেল ২০১৮ তে সর্বোচ্চ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ২,৮৯,৪০১ পেসো।
  • কেনিয়ার পে স্কেল ২০১৯ তে সর্বোচ্চ মূল বেতন ধরা হয়েছে- ২,৯২,৭৬৫ শিলিং। 

সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতন দেখে আপত মনে হচ্ছে বাংলাদেশের পে স্কেল ঠিকই আছে বোধ হয়। ভুলটা আমরা এখানেই করি।

বাংলাদেশের পে স্কেলে মধ্যে এবং অন্যান্য দেশের পে স্কেলের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে কোথায় সেটা বুঝাতে পারলে অবাক হয়ে যাবেন।  বাংলাদেশের ২০টি গ্রেডের মধ্যে ১-১০তম গ্রেডে প্রতি ধাপে পার্থক্য রাখা হয়েছে গড়ে ২০% সেখানে ১১-২০ তম গ্রেডে পার্থক্য রাখা হয়েছে গড়ে ৪% । যা কোন দেশে রাখা হয়নি। আপনি রিসার্চ করলে দেখতে পাবেন যে এটি একটি বড় ফারাক। বাংলাদেশ সরকার যদি ১১-২০ তম গ্রেডে ২০% বার্ষিক ইনক্রিমেন্টও ধরিয়ে দেয় তবুও এই বৈষম্য দূর হবে না। সরকারি চাকরির বেতন ও ভাতা ও অন্যান্য সকল সুযোগ সুবিধা ২০২২

শতাংশে দেখলে বুঝা যায় বৈষম্যটা- কর্মকর্তাদের জন্য ১৬০০০ থেকে ৭৮ হাজার পর্যন্ত শুধুমাত্র মূল বেতনে ১০তম -১ম গ্রেডে প্রতি ধাপে প্রায় ২০.৪ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল বেতনে ২০.০৪% বেতন প্রতি প্রমোশন এ বৃদ্ধি পায়। গ্রেডে বেতন বৃদ্ধি ২০% এর অধিক হওয়ায় বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট বা যে কোন প্রকার ফিক্সেশনের তাদের আর্থিক সুবিধা বেশি হয়ে থাকে ফলে তারা প্রমোশনে অনুপ্রাণিত হন। কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বাসা ভাড়ায় পার্থক্য ৩৩,৪০০ টাকা!

কর্মচারীদের জন্য ৮২৫০ থেকে ১২৫০০ হাজার পর্যন্ত শুধুমাত্র মূল বেতনে ১১তম -২০তম গ্রেডে প্রতি ধাপে প্রায় গড়ে ৪.২৮ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল বেতনে ৪.২৮% বেতন প্রতি প্রমোশন এ বৃদ্ধি পায়। গ্রেডে বেতন বৃদ্ধি ৪.২৮% এর অধিক হওয়ায় বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট বা যে কোন প্রকার ফিক্সেশনের তাদের আর্থিক সুবিধা খুবই নগন্য ফলে তারা প্রমোশনে অনুপ্রাণিত হন না বরং বদলিজনিত বিড়ম্বনায় পড়ে। জাতীয় বেতন কাঠামো সংস্কার ও বেতন বৈষম্য দূরীকরণ এখন প্রাণের দাবী।

আপনি চাইলে একটি তথ্য চিত্র দেখে নিতে পারেন: ডাউনলোড

আপনি চাইলে নিচের লিংক গুলোতে ক্লিক করে প্রতিটি পে স্কেল যাচাই করে দেখতে পারেন। ধন্যবাদ ধর্য্য ধরে পড়ার জন্য।

সূত্র: বাংলাদেশভারতযুক্তরাষ্ট্রফিলিপাইনকেনিয়া,  পাকিস্তান

বাংলাদেশসহ ৫ দেশের পে-স্কেলের পার্থক্য কি?

বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের পে-স্কেলের একটি তুলনামূলক আলোচনা নিচে দেওয়া হলো: বাংলাদেশ: বেতন গ্রেড: ২০টি, সর্বনিম্ন বেতন: ৮২৫০ টাকা, সর্বোচ্চ বেতন: ৭৮০০০ টাকা। ভারত: সর্বোচ্চ বেতন: ২,৫০,০০০ রুপি (২০১৮)। যুক্তরাষ্ট্র: সর্বোচ্চ বেতন: ১,০৫,১২৩ ডলার (২০১৯)। ফিলিপাইন: সর্বোচ্চ বেতন: ২,৮৯,৪০১ পেসো (২০১৮)। কেনিয়া: সর্বোচ্চ বেতন: ২,৯২,৭৬৫ শিলিং (২০১৯)। তুলনামূলক আলোচনা: অন্যান্য দেশগুলোতে বেতন গ্রেড সংখ্যা বেশি এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের পার্থক্য বেশি হলেও গ্রেডের এক ধাপ থেকে অন্য ধাপের দূরত্ব কাছাকাছি হওয়ায় বেতন বৈষম্য তেমন চোখে পড়ে না। বাংলাদেশের পে-স্কেলে গ্রেড সংখ্যা ২০টি এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের পার্থক্য ৪৮ গুণ। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেতন তুলনামূলকভাবে কম, তবে বৈষম্য তেমন চোখে পড়ে না। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন এবং কেনিয়ার সাথে বাংলাদেশের পে-স্কেলের তুলনা করলে দেখা যায় যে, তাদের সর্বোচ্চ বেতন অনেক বেশি।

বেতন বৈষম্য কি? বেতন বৈষম্য বলতে বোঝায় একই কাজের জন্য বা একই ধরনের কাজের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে বেতন বা মজুরির পার্থক্য। অন্য কথায়, একই যোগ্যতা, দক্ষতা, এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিভিন্ন ব্যক্তির বেতন যদি ভিন্ন হয়, তাহলে তা বেতন বৈষম্য হিসেবে গণ্য করা হয়। সাধারণত, বেতন বৈষম্য বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন: লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, বয়স, এবং সামাজিক অবস্থান। এছাড়াও, কোনো ব্যক্তির কাজের সুযোগ বা কাজের ক্ষেত্রভেদেও বেতন বৈষম্য দেখা যায়। বেতন বৈষম্য সমাজে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করতে পারে, কাজের পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে, এবং কর্মীদের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও, বেতন বৈষম্য সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। বেতন বৈষম্য দূর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন: সম-মূল্যায়ন, বেতন কাঠামো পর্যালোচনা, এবং কর্মীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা। বিশেষ করে, সরকারি খাতে বেতন বৈষম্য একটি গুরুতর সমস্যা। কারণ, সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো সাধারণত গ্রেড ভিত্তিক হয়, যেখানে উপরের গ্রেডের কর্মকর্তাদের বেতন অনেক বেশি থাকে, যা নিচের গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন থেকে অনেক বেশি। এই বৈষম্য দূর করার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে, যেমন: বেতন স্কেল সংশোধন, এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান।

বেতন বৈষম্য তীব্রতর ২০২৩ । দ্রব্যমূল্যের চাপে কর্মচারীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে alaminmia.tangail@gmail.com ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

6 thoughts on “বিভিন্ন দেশের পে স্কেল ২০২৫ । বাংলাদেশসহ ৫টি দেশের পে-স্কেলের তুলনামূলক আলোচনা

  • Rocket number.017387962095

  • ধন্যবাদ। ভালো লাগলো। আজ গুগলে সার্চ দিয়ে আমার মনে হল সরকারি কর্মচারী হিসাবে নিজের দেশের সাথে পার্শ্ববর্তী এবং উন্নত দেশগুলোর বেতন কাঠামোর তুলনামূলক পর্যালোচনার প্রয়োজন। আপনার মাধ্যমে সহজে বুঝতে পারলাম।২৬বছর চাকুরী করে ১০ম গ্রেড পেলাম। কিন্ত বাজার মুল্য বেড়ে গছে অনেক বেশি। তাই হিমশিম খেতে হচ্ছে

  • ধন্যবাদ। কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি পুন:মুল্যায়ন করা উচিৎ।

  • মহান রব্বুল আলামীন এর দরবারে আন্তরিকতার সাথে প্রার্থনাসহ সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বৈষম্যহীন ৯ম পে স্কেলের (১২টি গ্রেড সংখ্যা) পূর্বের ন্যায় তিনটি টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার চেষ্টা করা।

  • ২০১৫ বেতন স্কেল এ জুনিয়র ও সিনিয়র এর মধ্যে বেতন বৈষম্য দূরীকরণের প্রস্তাব রাখা হয় নাই।
    এতে এখনো অনেক সিনিয়র জুনিয়র থেকে কম বেতনে আছেন।
    ২০২৪ এ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে এ ধরনের বৈষম্য দূরীকরণের ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ব্যবস্হা নেওয়া উচিত।

  • সহমত। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *