সরকারি কর্মচারীদের প্রতিবাদ কর্মসূচি ২০২৫ । চাকরি অধ্যাদেশ সংশোধন ও ৫০% মহার্ঘ ভাতার দাবীতে ২০ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবে?
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ কর্তৃক ঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচির মধ্যে ২০ জুন ২০২৫ সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণজমায়েত হবে-দাবী সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুল নিয়ে জাতীয় জাদু ঘরের সামনে মিছিল নিয়ে এসে সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের নিকট দাবীসমূহ তুলে ধরা হবে – সরকারি কর্মচারীদের প্রতিবাদ কর্মসূচি ২০২৫
প্রতিবাদ কর্মসূচী কেন? সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ প্রনয়নের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা, কথায় কথায় হয়রানি ও সভা সমাবেশের মতো সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয়া ও চাহিত ৫০% মহার্ঘভাতার পরিবর্তে ১৫% বিশেষ প্রণোদনার নামে কর্মচারিদের সাথে তামাশা করার বিরুদ্ধে এ প্রতিবাদ কর্মসূচী পালিত হবে।
তাদের মূল মন্তব্য ও কর্মসূচি কি? নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা চাই, আমাদের ৫০ % মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হোক” এবং যদি মাত্রাতিরিক্ত অধ্যাদেশ না বাতিল করা হয়, তাহলে আগামী ২২ জুন থেকে কঠোর আন্দোলনে যাবেন। নিয়মিতভাবে তাদের কর্মসূচিতে উপস্হিত হওয়া কর্মচারীরা মনে করেন, দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ৫০ % মহার্ঘ ভাতা একান্ত প্রয়োজন। ১১–২০ গ্রেডের কর্মচারীরা ৭ দফা দাবির অংশ হিসেবে ৫০ % মহার্ঘ ভাতা সহ নবম পে‑স্কেল বাস্তবায়নও দাবি করেছেন।
বর্তমান সরকারি সিদ্ধান্ত কি কর্মচারীরা নিতে চাচ্ছেনা না? না। তবে ৩ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যেখানে জানানো হয়েছে আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরে মহার্ঘ ভাতা না দিয়ে ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রদান হবে। গ্রেড ১–৯ পর্যন্ত ১০ % এবং গ্রেড ১০–২০ পর্যন্ত ১৫ % উপবেতন প্রণোদনা হিসেবে পাবে, সর্বনিম্ন ১,০০০ টাকা (পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা) অর্থাৎ যে স্কিম আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে, তা ভিন্ন এবং ৫০ % দাবি মেনে নেওয়া হয়নি।
সরকারি কর্মচারীদের নতুন কর্মসূচী ২০২৫/ দাবী আদায়ে লাখো মানুষের ঢল নামতে হবে
সরকার কেন পে স্কেল দিতে চায় না? পে স্কেলে অনেক অসংগতি রয়েছে। টাইমস্কেল বহাল করা উচিত। গ্রেড ব্যবধান ঠিক করা উচিত। পদোন্নতি ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে। এসব বৈষম্য একটি ঠিক করতে গেলে আরেকটির সাথে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার কারণে অন্যটিও ঠিক করতে হবে। মোট কথা পে স্কেল দেওয়া মানে পে কমিশন গঠন করা এবং অনেক ধরনের বিষয় পরিবর্তন করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় কম তাই তারা পে স্কেলের মত বড় ঝামেলায় যেতে চায় না। হ্যাঁ। তারা কিছু সংস্কার বা পরিবর্তন করে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন এবং তারা যে বাজে অবস্থার মধ্যে দিন পার করছেন তা সরকার জানে।
Caption: info source
সরকারি কর্মচারীদের ৭ দফা দাবী ২০২৫ । দাবীগুলোর যৌক্তিকতা ও দাবী গুলো কি কি?
- দাবীনামা ০১: বৈষম্যমুক্ত ৯ম পে-স্কেল প্রদানের লক্ষে পে-কমিশন গঠন করতে হবে। পে-স্কেল বাস্তবায়নের পূর্ব পর্যন্ত অন্তবর্তী সময়ে ৫০% মহার্ঘ ভাতা (১১-২০ গ্রেডের কর্মচারিদের জন্য) জানুয়ারী ২০২৫ থেকে কার্যকর করতে হবে।
- দাবীনামা ০২: যে সকল-কর্মচারিদের মূল বেতন শেষ ধাপে উন্নীত হয়েছে, তাদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে। বৈষম্য নিরসনের জন্য ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণসহ পে-কমিশনে কর্মচারি প্রতিনিধি রাখতে হবে।
- দাবীনামা ০৩: সচিবালয়ের ন্যায় সকল সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের কর্মচারিদের পদ ও পদবী পরিবর্তনসহ এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রনয়ণ করে বৈষম্য দূর করতে হবে।
- দাবীনামা ০৪: ২০১৫ সালে পে-স্কেলে হরণকৃত ৩টি টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড, দক্ষতাজনিত ২টি ইনক্রিমেন্ট ও বেতন জ্যৈষ্ঠতা পূণর্বহাল এবং সকল স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে গ্রাচুইটির পাশাপাশি পেনশন প্রবর্তনসহ বিদ্যমান গ্রাচুইটি/আনুতোষিকের হার ৯০% এর স্থলে ১০০% ও পেনশন গ্রাচুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
- দাবীনামা ০৫: ব্লক পদে কর্মরত কর্মচারিসহ সকল পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা ৫ বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে এবং টেকনিক্যাল কাজে নিয়োজিত কর্মচারিদের টেকনিক্যাল পদ মর্যাদা দিতে হবে। আউট সোর্সিং পদ্ধতিতে কর্মচারি নিয়োগ প্রথা বাতিল করতে হবে।
- দাবীনামা ০৬: বাজারমূল্যের ক্রমাগত উর্দ্ধগতি, জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফতির বিষয়টি বিবেচনা করে সকল ভাতাদি পুনঃনির্ধারণ। ১১-২০ গ্রেড কর্মচারিদের রেশন ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে।
- দাবীনামা-০৭: উন্নয়নখাত হতে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত কর্মচারিদের প্রকল্পের চাকুরীকাল গণনা করে টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড প্রদান করা যাবে না মর্মে নং: অম/আবি(বাস্ত-৪)/বিবিধ-২০ (উঃস্কেলঃ/০৭/৪৭ তারিখঃ ২৪-০৩-২০০৮ খ্রিঃ যোগে অর্থ মন্ত্রণালয় হতে জারীকৃত বৈষম্যমূলক আদেশ বাতিল করতে হবে।
বাংলাদেশে মূল্যস্ফিতির হার কেমন?
বাংলাদেশে মূল্যস্ফিতির হার বর্তমানে বেশ উচ্চ হারে দৌড়াচ্ছে। ২০২৫ সালেও মূল্যস্ফিতির হার ১০ শতাংশের উপরে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করছে প্রতিমাসেই। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব এখনও আছে এবং টাকা পাচারের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। টাকার পূর্বের অবমূল্যায়ন এবং ব্যাংকগুলোর নাজুক অবস্থায় ভোক্তা ও নাগরিক খারাপ অবস্থায় আছে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে মূল্যস্ফিতি বাড়ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। মূল্যস্ফীতির হার কমাতে সরকারের পদক্ষেপের সাফল্যের উপর নির্ভর করবে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্যের দামের ওঠানামা মূল্যস্ফীতির হারকে প্রভাবিত করবে।