সচিবালয় হলো মন্ত্রণালয়গুলোর সমষ্টি বা প্রাণকেন্দ্র। বাংলাদেশের সমস্ত মন্ত্রণালয় এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা স্নায়ুকেন্দ্র হলো সচিবালয়। অপরপক্ষে, মন্ত্রণালয় হচ্ছে সচিবালয়ের একটি সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক শাখা।
সচিবালয়
সচিবালয় দেশের গোটা প্রশাসন ও সরকারি কর্মকান্ডের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। প্রধানত এখানেই সরকারের সকল নীতি নির্ধারণী সংস্থা অবস্থিত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পূর্ব পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার ছিল কার্যত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারেরই অবিকল প্রতিরূপ। নির্বাচিত সরকার থাকাকালে প্রাদেশিক মন্ত্রীদের অধীনে কয়েকটি বিভাগ সমন্বয়ে গঠিত এর একটি সচিবালয় থাকত। স্বাধীনতা লাভের পর বিদ্যমান প্রাদেশিক প্রশাসনিক কাঠামোটি জাতীয় সরকারের প্রশাসনে রূপান্তরিত হয়।
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল থেকে কার্যকর স্বাধীনতার ঘোষণাবলে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় এবং এই সরকারের সদরদপ্তর ছিল মুজিবনগর। অস্থায়ী সরকারের অধীনে কতগুলি মন্ত্রণালয় ও বিভাগসহ একটি সচিবালয় ছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর স্বাধীন বাংলাদেশে এই সচিবালয়টি ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে আসার পরপরই ১৯৭২ সালের সাময়িক সংবিধানের ভিত্তিতে অস্থায়ী সরকারের বিলুপ্তি ঘটে এবং তাতে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার গঠনের ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়। ১৯৭২ সালের জানুয়ারির শেষ নাগাদ সম্প্রসারিত একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হলে ১৯টি মন্ত্রণালয় সমন্বয়ে সচিবালয়টিও পুনর্গঠিত হয়। ১৯৯৯ সালে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৮ ও ৪৬।
সংবিধানের ৫৫(৬) অনুচ্ছেদে অর্পিত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতির জারি করা আদেশে কার্যবিধি অনুসারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন নিষ্পন্ন হয়। অধিকন্তু, সরকারি কার্যবিধির ৪(১০) ধারার আওতায় প্রস্ত্তত ‘সচিবালয় নির্দেশাবলী’ নামে আরেকটি পৃথক দলিলের মাধ্যমে সচিবালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগে সরকারি কাজকর্ম সম্পাদনের ধরন নির্ধারিত হয়। সচিবালয় কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে- নীতি প্রণয়ন, পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়নাধীন পরিকল্পনাগুলির মূল্যায়ন, জাতীয় সংসদে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের সহায়তা প্রদান, শীর্ষ পর্যায়ে কর্মকর্তা ব্যবস্থাপনা এবং প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত অনুরূপ অন্যান্য কাজকর্ম।
প্রয়োজনবোধে প্রধানমন্ত্রী যেকোন সময় এক বা একাধিক বিভাগের সমন্বয়ে নতুন একটি মন্ত্রণালয় গঠন করতে পারেন। একটি মন্ত্রণালয়/বিভাগের কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য এটিকে বিভিন্ন উইং, শাখা ও সেকশনে বিভক্ত করা হয়। উইং হলো কোনো মন্ত্রণালয়/বিভাগের অধীনে বিশেষ ধরনের নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি উপবিভাগ। এটি একজন যুগ্মসচিব অথবা অতিরিক্ত সচিব পরিচালনা করেন। একটি ব্রাঞ্চ কয়েকটি সেকশন নিয়ে গঠিত হয়, যার প্রধান থাকেন উপসচিব বা সমমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা। পক্ষান্তরে, সেকশন হলো কার্যপরিচালনার মৌলিক একক, যা পরিচালনা করেন একজন সহকারি/ঊর্ধ্বতন সহকারি সচিব।
প্রধানমন্ত্রী নিজে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকেন এবং একজন মন্ত্রী অথবা প্রতিমন্ত্রীর ওপর এক বা একাধিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের দায়িত্ব অর্পণ করেন। ক্ষেত্র বিশেষে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ভিন্নভাবে নির্দেশিত না হলে তিনি তাঁর মন্ত্রণালয়/বিভাগের যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন ছাড়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না।
সচিব হলেন মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রশাসনিক প্রধান। তিনি এর প্রশাসন, নিয়ম-শৃঙ্খলা ও ন্যস্ত যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। তিনি তাঁর মন্ত্রণালয়/বিভাগ, সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও অধীনস্থ অফিসসমূহের কার্যবিধি যথাযথভাবে অনুসৃত হচ্ছে কিনা তাও সতর্কতার সঙ্গে তদারক করেন। তিনি মন্ত্রণালয়/বিভাগের কার্যকলাপ সম্পর্কে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীকে অবহিত রাখেন। সচিব সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও অধীনস্থ অফিসমূহসহ মন্ত্রণালয়/বিভাগের মুখ্য হিসাবরক্ষক এবং এগুলির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে বাজেট ও প্রচলিত হিসাববিধি অনুসারে ব্যয়িত হয় সেটিও নিশ্চিত করেন। প্রয়োজনীয় উপাত্ত, তথ্য ও উদাহরণ সংগ্রহ, পরীক্ষা, বিশেষণ ও সমন্বয়ের দায়িত্বও সচিবের। আর এসবের ভিত্তিতেই মন্ত্রী নীতি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। কোনো নীতি গৃহীত হওয়ার পর সেটি সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে কি না তিনি তা দেখেন এবং নীতিসমূহ বাস্তবায়নকারী সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করেন। মন্ত্রণালয়/বিভাগকে কয়েকটি কার্যনির্বাহী ইউনিটে বিভক্তকরণ এবং তার অধীনস্থ উইং, শাখা ও সেকশনগুলির মধ্যে বিভাগ/মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বণ্টনের দায়িত্বও তার উপর ন্যস্ত। অধীনস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষমতা অর্পণের ধরন ও মাত্রা সচিবই নির্ধারণ করেন। তিনি অধীনস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে অর্পিত ক্ষমতা বণ্টন এবং মন্ত্রণালয়/বিভাগের কার্যসম্পাদনের ধরন সম্পর্কিত সুস্পষ্ট স্থায়ী নির্দেশও জারি করেন।
একজন অতিরিক্ত সচিব/যুগ্মসচিব তার এখতিয়ার অনুযায়ী পূর্ণমাত্রায় দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশের জন্য সকল বিষয় সরাসরি মন্ত্রীর নিকট পেশ করেন। সচিবের মাধ্যমেই এগুলি আবার তার কাছে ফেরত আসে। সচিব বিবেচনার জন্য অতিরিক্ত সচিব/যুগ্মসচিবের কাছ থেকে যেকোন বিষয়ের নথি চেয়ে পাঠাতে পারেন। যেসব বিষয়ে মুখ্য কোনো নীতিগত প্রশ্ন জড়িত নয়, অথবা স্থায়ী আদেশ কিংবা বিদ্যমান বিধিবলে এগুলি নিষ্পত্তির ক্ষমতা তার রয়েছে, একজন উপসচিব সেগুলি মীমাংসা করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নজির থাকলে এবং এ নজিরের কোনো ব্যত্যয় না ঘটিয়ে একজন সহকারি সচিব/ঊর্ধ্বতন সহকারি সচিব তার আওতাধীন সকল বিষয়ই নিষ্পত্তি করতে পারেন। এক্ষেত্রে কোনো সন্দেহ দেখা দিলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরামর্শ চাইতে পারেন। সাধারণত সহকারি সচিব/ঊর্ধ্বতন সহকারি সচিবকে সহায়তার জন্য একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও অন্যান্য কর্মচারী নিয়োজিত থাকেন।
প্রয়োজনবোধে প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগেই একজন যুগ্মসচিব/যুগ্মপ্রধানের অধীনে একটি করে গবেষণা উইং থাকে এবং সাধারণত তাকে সহায়তা প্রদানের জন্য একজন উপপ্রধান, সহকারি প্রধান ও একজন গবেষণা কর্মকর্তা নিযুক্ত হন। পরিকল্পনা উইং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এবং প্রকল্প সংক্রান্ত দলিলপত্র প্রস্ত্তত করে। উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন এবং তদারকিও এই বিভাগের দায়িত্ব। সচিবালয়ের বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারাই সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, উপসচিব পদে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। ১৯৮০ সালের ১ সেপ্টেম্বর সরকার বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বি.সি.এস) নামে মোট ২৮ ক্যাডার ও সহ-ক্যাডারের নতুন একটি সমন্বিত চাকুরি কাঠামো চালু করে। পরবর্তীকালে বি.সি.এস পুনর্গঠিত হয় এবং ক্যাডার বাড়িয়ে সংখ্যা করা হয় ২৯। অবশ্য বি.সি.এস চালু হওয়ার আগে সিনিয়র সার্ভিসেস পুল (এস.এস.পি) নামে একটি নতুন ও উচ্চতর ক্যাডার সার্ভিস ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের উন্মুক্ত সিভিল সার্ভিস পদ্ধতি ধরনের এই ব্যবস্থায় ছিল সচিবালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের প্রশাসনিক পদ তথা বিভিন্ন নির্বাহী বিভাগ, জেলা ও বিভাগীয় সদর দপ্তরের উচ্চতর কিছু প্রশাসনিক পদ। পররাষ্ট্র বিষয়ক এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ছাড়া সচিবালয়ের অবশিষ্ট উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পর্যায়ের সকল পদের জন্য এস.এস.পি কর্মকর্তারা যোগ্য বিবেচিত হতেন। শুরুতেই স্বাভাবিকভাবে সি.এস.পি, ই.পি.সি.এস ও ই.পি.এস.এস কর্মকর্তারা এস.এস.পি হয়ে যান। সচিবালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের প্রশাসনিক পদগুলিতে অন্য সার্ভিসের ক্যাডারদের যোগদানের পথ উন্মুক্ত করার জন্য সরকার ১৯৮৯ সালে এস.এস.পি প্রথা বাতিল করে এবং উপসচিব ও যুগ্মসচিব পদগুলিতে অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিস কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত কোটা পদ্ধতি চালু হয়। সচিব ও অতিরিক্ত সচিবের পদগুলি সকল ক্যাডার সার্ভিস কর্মকর্তাদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। শুরুতে ১৫৯টি যুগ্মসচিবের পদের মধ্যে ৯৫টি এবং ৩৭৭টি উপসচিব পদের মধ্যে ২৪৫টি বি.সি.এস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল। সরকার ১৯৯৮ সালে ৭৫% উপসচিব এবং ৭০% যুগ্মসচিবের পদ বি.সি.এস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত রেখে অবশিষ্ট পদগুলিতে অন্যান্য ক্যডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। উপসচিবের অধঃস্তন পদগুলি, যেমন সহকারি সচিব/ঊর্ধ্বতন সহকারি সচিব প্রধানত বি.সি.এস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দ্বারা পূরণ করার ব্যবস্থা রাখা হয়। সহকারি সচিবের কয়েকটি পদে অবশ্য সচিবালয়ে কর্মরত ক্যাডার সার্ভিস বহির্ভূত কিছু কর্মকর্তাকেও নিয়োগ দেওয়া হয়। উপ-প্রধান, ঊর্ধ্বতন সহকারি প্রধান/সহকারি প্রধান ও গবেষণা কর্মকর্তাদের পদগুলি বি.সি.এস অর্থ-ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সংরিক্ষত থাকে। বি.সি.এস তথ্য-ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। উপরোক্ত সকল কর্মকর্তা ছাড়া প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পারসোনাল কর্মকর্তা, স্টেনোটাইপিস্ট ও বার্তাবহের মতো পদে বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিভাগ/মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত নীতিসমূহ সাধারণত কয়েকটি নির্বাহী সংস্থা কর্তৃক বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। সেগুলি হলো সংযুক্ত অধিদপ্তর ও অধীনস্থ অফিসসমূহ। সংযুক্ত অধিদপ্তর বলতে মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত সংস্থাগুলিই বোঝায়। সংযুক্ত অধিদপ্তরগুলি সাধারণত তাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ কর্তৃক গৃহীত নীতিসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্বাহী নির্দেশনা প্রদান করে। এছাড়া এগুলি নিজস্ব মন্ত্রণালয়/বিভাগকে তাদের পরিচালিত কার্যাদির কৌশলগত দিকগুলি সম্পর্কে টেকনিক্যাল তথ্য-উপদেশ প্রদান করে থাকে। অধীনস্থ অফিস বলতে সরকারের সেসব অফিসকেই বুঝায় যেগুলি সংযুক্ত অধিদপ্তর হিসেবে ঘোষিত হয় নি এবং কার্যসূত্রে মন্ত্রণালয়/বিভাগের সাথে সরাসরি সম্পর্কিতও নয়। অধীনস্থ অফিসসমূহ সাধারণত মাঠপর্যায় সংস্থা হিসেবে সরকারের গৃহীত নীতিসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করে। সাধারণভাবে এগুলি সংযুক্ত বিভাগগুলির সরাসরি নির্দেশে পরিচালিত হয়। তবে নির্বাহী কাজের চাপ অধিক না হলে কিছু কিছু অধীনস্থ অফিস সরাসরি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের অধীনে থেকেই কাজ করে।
আরও কিছু ভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও পাবলিক করপোরেশন, যেগুলি কিছু বিশেষ ধরনের সরকারি কাজ বা সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য গঠিত হয়। সেগুলি বাণিজ্যিক, উদ্যোগমূলক, সমন্বয়মূলক ইত্যাকার বিবিধ ধরনের। এসব সংস্থা ও মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের মধ্যেকার সম্পর্ক সরকার কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। সূত্র
মন্ত্রণালয়
মন্ত্রণালয়/বিভাগ সচিবালয়ের কার্য নির্বাহের জন্য বাংলাদেশ সচিবালয়ের অংশ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে গঠিত প্রশাসনিক ইউনিট। ১৯৯৬ সালের কার্যবিধিতে সুনির্দিষ্ট সরকারি কার্য সম্পাদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও সরকার কর্তৃক ঘোষিত কোন স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রশাসনিক ইউনিটকে বিভাগ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বিভাগ বা কতিপয় বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত মন্ত্রককে মন্ত্রণালয় হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়/বিভাগ সচিবালয়ের কার্য নির্বাহের জন্য বাংলাদেশ সচিবালয়ের অংশ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে গঠিত প্রশাসনিক ইউনিট। ১৯৯৬ সালের কার্যবিধিতে সুনির্দিষ্ট সরকারি কার্য সম্পাদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও সরকার কর্তৃক ঘোষিত কোন স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রশাসনিক ইউনিটকে বিভাগ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বিভাগ বা কতিপয় বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত মন্ত্রককে মন্ত্রণালয় হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সরকারের কার্যাবলি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে বণ্টন করা হয়। সরকারি কার্যবণ্টনের দায়িত্ব কেবিনেট বিভাগের ওপর ন্যস্ত। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অধীনে রয়েছে অধিদপ্তর, অধীনস্থ দপ্তর এবং কতিপয় আধা সরকারি সংস্থা। মন্ত্রণালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কার্য-কাঠামোর বিশদ বর্ণনা নিম্নরূপ:
সচিবের অব্যবহিত অধস্তনরূপে কর্মরত একজন অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্মসচিব সাধারণত মন্ত্রণালয়ের একটি উইং-এর প্রধান থাকেন। মন্ত্রণালয়/বিভাগের ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের জন্য গঠিত স্বয়ংসম্পূর্ণ উপ-বিভাগকে উইং বলা হয়। উইংয়ের নিম্নস্তর হচ্ছে শাখা। কতগুলি উপশাখার সমন্বয়ে শাখা গঠিত এবং এর প্রধান থাকেন উপসচিব বা সমপদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। শাখার অধীনে থাকে উপশাখা। উপশাখা হচ্ছে সহকারী সচিব বা ঊর্ধ্বতন সহকারী সচিবের অধীনে ন্যস্ত মন্ত্রণালয়/বিভাগের মৌলিক কার্যনির্বাহী ইউনিট।
সচিব হচ্ছেন মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রশাসনিক প্রধান। তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রশাসন পরিচালনা, শৃঙ্খলা বিধান এবং এর ওপর অর্পিত কার্যাবলি যথাযথভাবে সম্পাদনের দায়িত্বে নিয়োজিত। তিনি মন্ত্রণালয়/বিভাগ, অধিদপ্তর ও অধীনস্থ দপ্তরগুলোতে বিধিবিধানসমূহ যথাযথভাবে অনুসৃত হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করেন। মন্ত্রণালয়ের/বিভাগের কার্যক্রম সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে অবহিত করার দায়িত্বও সচিবের। একজন সচিব সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও অধীনস্থ দপ্তরসহ মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাপর সংস্থার জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল ঐসময়ে প্রচলিত বিধি/আইন অনুসারে ব্যয় করা হচ্ছে কিনা তাও তাকে নিশ্চিত করতে হয়।
কার্যবিধির আওতায় মন্ত্রণালয়/বিভাগের ভূমিকা হলো: (ক) নীতি নির্ধারণ, (খ) পরিকল্পনা প্রণয়ন, (গ) পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মূল্যায়ন, (ঘ) আইন প্রণয়নের উদ্যোগ, (ঙ) সংসদে দায়িত্ব সম্পাদনে মন্ত্রীকে সহায়তা করা, (চ) উচ্চ পর্যায়ের কর্মচারী ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ সংবিধিবদ্ধ সরকারি সংস্থার সদস্য/পরিচালক পদমর্যাদার নিচে নয় এবং অধিদপ্তর ও অধীনস্থ দপ্তরসমূহের ক্ষেত্রে জাতীয় বেতন স্কেল ৫-এর নিচে নয় এধরনের কর্মচারীদের বিষয় এবং (ছ) সময়ে সময়ে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নির্ধারিত অপরাপর বিষয়/বিষয়সমূহ।
কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে নীতি প্রণয়ন মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কোন বিষয়ে নীতি প্রণয়নের কাজ একাধিক মন্ত্রণালয়ে অর্পিত হলে সেক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শ বাধ্যতামূলক। আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শের পর প্রণীত নীতির খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পেশ করা হয়। পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি করে। সাধারণত এই প্রকল্প দু ধরনের হয়, বৈদেশিক সাহায্যভিত্তিক প্রকল্প এবং সম্পূর্ণভাবে সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্প। এসব প্রকল্পের অনুকূলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন নিতে হয়। এ অনুমোদন প্রক্রিয়ায় পরিকল্পনা কমিশনের প্রাক্-পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। এধরণের প্রত্যেকটি প্রকল্পের মূল্যায়ন ও তদারকি কার্য সম্পন্ন হয় মন্ত্রণালয়ের মাসিক বৈঠকে অগ্রগতি পর্যালোচনার মাধ্যমে। দক্ষতার সঙ্গে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটি ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এন.ই.সি) নিকট জবাবদিহি করতে হয়।
কোনো আইন প্রণয়ন করতে হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রথম ঐ আইনের প্রস্তাব পেশ করে, আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শের ব্যবস্থা করে এবং পরে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে পাঠায়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে খসড়া প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পেশ করা হয়। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর আইন মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটিকে আইনের ছকে বিন্যাস করে সংসদে পেশের উপযোগী করে এবং এটিকে সংসদের সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। স্থায়ী কমিটির মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত আইনের চূড়ান্ত খসড়াটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে জাতীয় সংসদে তার দায়িত্ব সম্পাদনে মন্ত্রীকে সহায়তা করা। মন্ত্রীকে এ ধরণের সহায়তা করার দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কার্যাবলি দেখাশুনার জন্য একটি করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আছে। সংসদে বিভিন্ন দলের নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠিত। মন্ত্রীও এ কমিটির একজন সদস্য। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের কাজ হলো কমিটিতে উত্থাপিত বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনায় মন্ত্রী ও কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সহায়তা করা। দ্বিতীয়ত, সংসদ অধিবেশনকালে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে সংসদ-সদস্যরা প্রশ্ন উত্থাপন করেন। সংসদে এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় মন্ত্রীকে উপাত্ত ও অন্যান্য সম্পূরক তথ্য সরবরাহ করে।
শীর্ষ পর্যায়ে কর্মচারী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ ও শৃঙ্খলা বিধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়সহ কোনো কোনো শ্রেণীর কর্মকর্তার পদায়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এসকল বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সময়ে সময়ে জারিকৃত বিধি ও নির্দেশনা অনুসারে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
সাধারণত বড় মন্ত্রণালয়ের একাধিক বিভাগ থাকে। অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে ৩টি করে বিভাগ। প্রত্যেকটি বিভাগের জন্য রয়েছেন পৃথক পৃথক সচিব এবং এঁরা একই মন্ত্রীর অধীনে কাজ করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজন প্রতিমন্ত্রীও মন্ত্রণালয়ের কোনো বিভাগের প্রধান হতে পারেন। অনুরূপভাবে একজন প্রতিমন্ত্রী একাধিক বিভাগসহ একটি মন্ত্রণালয়ের প্রধানও থাকতে পারেন। মন্ত্রীর অধীনেও কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী থাকতে পারেন।
মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী কে মন্ত্রণালয়ের প্রধান হবেন সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোন বিধান নেই। এটি নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার উপর; কারণ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিয়োগের একক দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর। তিনি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টনেরও চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনা মতে দায়িত্ব বণ্টন পরিবর্তিত হতে পারে। আবার একীভূত বা পৃথকীকরণের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়কে পুনর্গঠিত করার বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার ওপর নির্ভরশীল। সূত্র