২০২৬ সালের মাদরাসার ছুটির খসড়া তালিকা প্রকাশ: মোট ছুটি ৭০ দিন
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য সরকারি ও বেসরকারি (এমপিওভুক্ত) ইবতেদায়ী মাদরাসার খসড়া ছুটির তালিকা এবং পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করেছে। নতুন এই তালিকায় সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্রবার ও শনিবার) ব্যতিরেকে বিভিন্ন উৎসব ও দিবস উপলক্ষে সর্বমোট ৭০ দিন ছুটি রাখা হয়েছে।
দীর্ঘ ছুটির তালিকায় রমজান ও ঈদ
খসড়া তালিকা অনুযায়ী, ২০২৬ সালে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ছুটি থাকবে পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস এবং ঈদুল ফিতর উপলক্ষে। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত টানা ৩০ দিন মাদরাসা বন্ধ থাকবে। এছাড়া দ্বিতীয় দীর্ঘতম ছুটি থাকবে পবিত্র ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশ উপলক্ষে, যা ২৪ মে থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ১৫ দিন স্থায়ী হবে।
উল্লেখযোগ্য ছুটির দিনসমূহ:
তালিকায় থাকা অন্যান্য প্রধান ছুটির মধ্যে রয়েছে:
শবে মেরাজ: ১৭ জানুয়ারি (১ দিন)
শবে বরাত: ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি (২ দিন)
বাংলা নববর্ষ: ১৪ এপ্রিল (১ দিন)
মে দিবস ও বুদ্ধ পূর্ণিমা: ১ মে (১ দিন)
হিজরী নববর্ষ: ১৬ জুন (১ দিন)
আশুরা: ২৬ জুন (১ দিন)
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস: ৫ আগস্ট (১ দিন)
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.): ২৬ ও ২৭ আগস্ট (২ দিন)
শারদীয় দুর্গাপূজা: ২০ থেকে ২২ অক্টোবর (৩ দিন)
বিজয় দিবস ও শীতকালীন অবকাশ: ১৪ থেকে ২৮ ডিসেম্বর (১১ দিন)
এছাড়াও, মাদরাসা প্রধানের হাতে সংরক্ষিত ৩ দিনের বিশেষ ছুটি রাখা হয়েছে, যা প্রয়োজন অনুযায়ী তারা ব্যবহার করতে পারবেন।
২০২৬ সালের পরীক্ষার সময়সূচি
ছুটির তালিকার পাশাপাশি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে:
অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা: ২৫ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত।
দাখিল নির্বাচনী পরীক্ষা: ১১ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত।
বার্ষিক পরীক্ষা ও আলিম নির্বাচনী পরীক্ষা: ১৯ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে ধর্মীয় উৎসবের ছুটির তারিখ পরিবর্তিত হতে পারে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের সকল আয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা প্রদান এবং শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি সম্বলিত বিশেষ বার্তাও এই তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।

মাদ্রাসায় এত ছু্টি কেন?
মাদরাসায় ছুটির তালিকা দেখে অনেকের কাছেই এটি বেশি মনে হতে পারে। তবে বাস্তবধর্মী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সাধারণ স্কুল-কলেজের তুলনায় মাদরাসার ছুটির ধরনে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও মোট দিনের সংখ্যায় খুব বড় পার্থক্য নেই।
মাদরাসায় ছুটির আধিক্য মনে হওয়ার প্রধান কারণগুলো নিচে দেওয়া হলো:
১. রমজান ও ঈদের দীর্ঘ ছুটি
মাদরাসা শিক্ষার মূল কেন্দ্রবিন্দু ধর্মীয় আমল। রমজান মাসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তারাবিহ নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত এবং ইবাদতে মগ্ন থাকেন। এছাড়া অধিকাংশ মাদরাসা আবাসিক হওয়ায় দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীদের বাড়ি যাওয়ার সুবিধার্থে রমজান ও ঈদুল ফিতর মিলিয়ে একনাগাড়ে ৩০ দিনের মতো ছুটি দেওয়া হয়। এটিই মূলত ছুটির তালিকাকে বড় করে দেখায়।
২. ধর্মীয় ও জাতীয় দিবসের সমন্বয়
মাদরাসাগুলোতে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার মতো সকল জাতীয় দিবস (যেমন: ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বর) পালন করা হয়। এর পাশাপাশি ধর্মীয় বিশেষ দিনগুলো (যেমন: শবে বরাত, শবে মেরাজ, ঈদে মিলাদুন্নবী, ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম) উপলক্ষেও ছুটি থাকে। আবার অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে অন্যান্য ধর্মের (দুর্গাপূজা, বুদ্ধ পূর্ণিমা, বড়দিন) বড় উৎসবগুলোতেও মাদরাসা বন্ধ থাকে।
৩. গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন অবকাশের একীভূতকরণ
সাধারণ স্কুলে অনেক সময় আলাদাভাবে ১৫-২০ দিন গ্রীষ্মকালীন ছুটি থাকে। মাদরাসাগুলোতে প্রায়ই এই গ্রীষ্মকালীন ছুটি আলাদা না দিয়ে ঈদুল আজহার ছুটির সাথে সমন্বয় করে দেওয়া হয়। আপনার দেওয়া ছবিতেও দেখা যাচ্ছে, ২৪ মে থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ১৫ দিনের ছুটির মধ্যে ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশ একসাথে রাখা হয়েছে।
৪. দ্বিমুখী পাঠ্যক্রমের চাপ
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সাধারণ ধারার বিষয়গুলোর (বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান) পাশাপাশি কঠিন সব আরবি ব্যাকরণ, ফিকহ ও হাদিস পড়তে হয়। এই বাড়তি পড়াশোনার চাপ থেকে শিক্ষার্থীদের মানসিক সতেজতা দিতেই নির্দিষ্ট বিরতিতে ছুটির ব্যবস্থা করা হয়।
৫. তুলনামূলক পরিসংখ্যান
বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ছুটির তালিকা সাধারণত ৭৫ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে। সেই তুলনায় ২০২৬ সালের মাদরাসার এই ৭০ দিনের ছুটি আসলে খুব বেশি নয়, বরং গড় সীমার মধ্যেই রয়েছে।
সারকথা: মাদরাসায় একনাগাড়ে (যেমন রমজানে ৩০ দিন) বড় ছুটি থাকায় এটি নজরে আসে বেশি, কিন্তু বছরের মোট হিসাব করলে তা সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সমান।



