বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

পে কমিশনের সর্বশেষ খবর ২০২৪ । মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় পে কমিশন গঠনের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ে তাগিদপত্র প্রেরণ?

অষ্টম জাতীয় পে কমিশনের অনেক অসংগতি এবং বৈষম্য রয়েছে। এ সকল বৈষম্য ও অসংগতি দূর করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে একটি কমিটি গঠন করে দেয়া অসংগতি ও বৈষম্যগুলো খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা প্রদান করেন।

মূল্যস্ফিতির চেয়ে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি কম? হ্যাঁ। প্রায় ৫ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও পর্যন্ত সেই কমিটি কোন প্রতিবেদন দাখিল করেনি, এমনকি কোন মিটিং করেছে বলেও জানা যায়নি। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির লাগাম কোন ভাবে টেনে ধরা যাচ্ছে না। সরকারি কর্মচারীগণ জাতীয় পে স্কেল মোতাবেক বার্ষিক প্রায় ৫% হারে ইনক্রিমেন্ট পেয়ে থাকে। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ বেতন বৃদ্ধির ধাপগুলো সেভাবে সাজানো হয়েছে। মোট কথা বাজারে মূল্যস্ফিতির সাথে বেতন বৃদ্ধির সমন্বয় হচ্ছে না। গত ৮ বছরে ৪০% বেতন বৃদ্ধি হলেও মূল্যস্ফিতি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫০-২০০%। গত বছরে আরও ৫০% মূল্য বৃদ্ধির কারণে কোন কোন ক্ষেত্রে ৮ বছরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি দ্বিগুন থেকে ৩ গুন পর্যন্ত হয়েছে কিন্তু সে হারে বেতন ভাতাদি বৃদ্ধি পায়নি। এমতাবস্থায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির ফলে নতুন পে কমিশন গঠনের মাধ্যমে ৯ম পে স্কেল ঘোষণাসহ অন্যান্য বৈষম্য দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

৯ম পে কমিশন আসবে? জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ ঘোষণার সময় স্থায়ী পে কমিশন গঠনের প্রস্তাব থাকলেও সেটি কার্যকর করা হয়নি। কর্মচারীগণ দীর্ঘদিন ধরে ৫ দফা দাবীপূরণের পাশাপাশি ৯ম স্থায়ী পে কমিশন গঠনের দাবী নিয়ে আন্দোলন করে আসছে। নবম পে কমিশন গঠন এবং পে স্কেল বাস্তবায়নের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা প্রদানসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে ১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকুরিজীবী ফোরাম

মূল্যস্ফিতি ও জীবনযাত্রা নিয়ে বেসরকারি সংস্থা কি বলছে? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে স্বৈরশাসন অবসানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত জনতার সরকার সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের জনগণের সেবা প্রদানের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কর্মে নিয়োজিত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরলসভাবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০১৫ সালে ৮ম জাতীয় পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়। ২০১৫ সালে ৮ম জাতীয় পে-স্কেল ঘোষণার পর ইতোমধ্যে ৯ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু, অদ্যাবধি কোন পে-স্কেল প্রদান করা হয়নি। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ১০%। মূল্যস্ফীতির কারণে বাজার মূল্যের সাথে বেতন কাঠামোর ব্যপক ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। ২১ অক্টোবর ২০২২ তারিখ গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কর্তৃক দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ৪ সদস্য বিশিষ্ট্য একটি পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য ন্যূনতম ২২ হাজার টাকা প্রয়োজন। ফলে, বিদ্যমান পে- স্কেল অনুযায়ী প্রাপ্য বেতনে ৪ সদস্য বিশিষ্ট্য একটি পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণ কষ্টসাধ্য। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিকট হতে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাদের জীবনযাত্রার মান, আয়-ব্যয়ের সংগতি ও মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন পে-স্কেল প্রদানের নিমিত্ত পে-কমিশন /সার্ভিস কমিশন গঠন করা জরুরি।

নতুন পে কমিশন গঠন ২০২৪ । পে কমিশন গঠন করলেই কি সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে?

পে কমিশনের কাজ হলো বেতন নির্ধারণ সংক্রান্ত আর সার্ভিস কমিশনের কাজ হলো চাকরিতে নিয়োগ সংক্রান্ত এই দুটোর মাঝে একটি গঠন করলে হবে না বরং বেতন বৃদ্ধির জন্য সরকারের উদ্যোগ নিতে হবে।

৯ম পে স্কেল নিয়ে বেসিক দাবীসমূহ ২০২৪ । গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে নেয়া সহ বেশ কিছু দাবী রেখেছে

  • সংগঠনগুলো বিদ্যমান বেতন কাঠামোতে ২০টি গ্রেডকে ১০টি গ্রেডে রূপান্তর এবং অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা প্রদান।
  • সচিবালয়ের মতো সমকাজে সমমর্যাদা ও পদবি পরিবর্তন ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়ন করতে হবে।
  • টাইমস্কেল সিলেকশন গ্রেড পূনর্বহাল, পূর্বের মতো শতভাগ পেনশন প্রদানসহ পেনশন গ্র্যাচ্যুইটির হার এক টাকায় ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
  • বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট মূল বেতনের ২০ শতাংশ প্রদান এবং দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ন্যায্য মূল্যে মানসম্মত রেশন প্রদান, পাহাড়ি, পর্যটন ও দুর্যোগ ভাতা প্রদান করতে হবে।

বর্তমান সরকার কি পজেটিভ রেসপন্স করবে?

হ্যাঁ। বিষয়টি তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার বক্তব্যে পরিষ্কার হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ বেতন-ভাতা নির্ধারণে পে-কমিশন/সার্ভিস কমিশন গঠনে  অর্থমন্ত্রণালয়ে ১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকুরিজীবী ফোরাম পত্র দিয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের ১১-২০ গ্রেডের আন্দোলনের ফলে সরকারি চাকুরেদের বেতন কাঠামোয় বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারি কর্মচারীগণ বারবার ৫০% মহার্ঘ্য ভাতা চেয়ে আন্দোলন করছে। অতীত ইতিহাস বলছে সর্বোচ্চ ২০% মহার্ঘ ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থ লগ্নী প্রতিষ্ঠানসমূহের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী এবং সামরিক বাহিনীর সকল সদস্যকে অন্তর্ভর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে তাদের মূল বেতনের ২০% (বিশ শতাংশ) হারে মাসিক সর্বনিম্ন ১,৫০০/- (এক হাজার পাঁচশত টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬,০০০/- (ছয় হাজার) টাকা মহার্ঘ ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মহার্ঘ ভাতা ২০২৪

নতুন পে স্কেল কেন এত জরুরি? দ্রব্যমূল্য এত বেশি বাড়ছে যে, কর্মচারীদের যে বেতন ভাতা তা দিয়ে মাস পারি দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। সাধারণত প্রতি বারই কর্মচারীদের বেতন বনাম দ্রব্যমূল্য যখন অসহনীয় হয় ঠিক তখনই নতুন পে স্কেল ঘোষণা করা হয়। তাছাড়া পূর্বে পে স্কেল ঘোষণার সময় পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রায় ৫ বছর পর পর নতুন পে স্কেল ঘোষণা করা হয়েছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বনাম কর্মচারীদের বেতন ভাতা অসহনীয় মাত্রায় পৌছে যাচ্ছে।

পে কমিশনের সর্বশেষ খবর পেতে এই ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে admin@bdservicerules.info ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

10 thoughts on “পে কমিশনের সর্বশেষ খবর ২০২৪ । মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় পে কমিশন গঠনের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ে তাগিদপত্র প্রেরণ?

  • এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে দ্রব্য মূল্য ৩৭-৪০% বেড়েছে। এই তথ্যটি সঠিক নয়। দ্রব্য মূল্য বেড়েছে ১০০-১৫০%। মিলিয়ে দেখুন প্রতিটি জিনিসের বর্তমান দামের সাথে ২০১৫ এর দামের।

  • কোন পত্রিকায় প্রকাশিত রেফারেন্স দিন।

  • সয়াবিন তেলের দা ছিল লিটার প্রতি ৯০/৯৫টাকা বর্তমানে ১৯৫/-টাকা, মসুর ডক মোটা দানা ৬০/- বর্তমানে ১২০/-টাকা

  • চাকুরিরতরা সব সময়ই নিজেদের স্বার্থ দেখে, অথচ কেউ কিন্তু অতি পুরাতন পেনশনভোগী দের কথা বলেনা।
    ১৯৭৭ পে স্কেল সন্মন্ধে অনেকেরই কোনো ধারনা নাই। ১৯৮৫ সালে এরশাদের পে স্কেল বেতন প্রায় দুই গুন করে দেয়।
    ১৯৭৭ সালের পেস্কেলে যারা অবসরে গেছেন তাদের পেনশন বর্তমান স্কেলের/গ্রেডের অন্ততঃ অর্ধেক করা উচিত।
    সবচেয়ে ভালো হয় যদি এক গ্রেড এক পেনশন চালু হতে পারে।

  • ঠিকই বলেছেন কিন্তু এমন হওয়া বা করার সময় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোথায়? তবে পেনশনারদের পেনশন অবশ্যই পুন:নির্ধারণ করা হবে।

  • আমাদের দেশের কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও অধিদপ্তরাধীন প্রতিষ্ঠান সহ অন্যান্য প্রশাসনিক দপ্তর সমূহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি পে-স্কেল (বিশেষ করে ৩য় শ্রেণীর ক্যাটাগরীর পদগুলির জন্য) জনস্বার্থে জারী করা উচিত। কারণ বেতন বৈষম্যের পাশাপাশি পদ বৈষম্যও দিন দিন বেড়েই চলছে। যা আদৌ কাম্য নয়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সকল নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

  • I totally agree with this statement: সবচেয়ে ভালো হয় যদি এক গ্রেড এক পেনশন চালু হতে পারে।

  • 1 theke 10 grade e jara ase tara ki kisu pabe na???vaisha ashse naki?

  • বরাবরই পে স্কেলে তাই নিচের গ্রেড থেকে ভাল কিছুই পায়। বাস্তবায়নের সময় ঠিকই পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *