বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

পে কমিশনের সর্বশেষ খবর ২০২৫ । জাতীয় বেতন কমিশন সর্বশেষ কবে বৈঠক করেছে?

অষ্টম জাতীয় পে কমিশনের অনেক অসংগতি এবং বৈষম্য রয়েছে। পে কমিশন গঠন।অবশেষে গঠিত হলো নতুন পে কমিশন। দীর্ঘ সময় ধরে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে যে অসুবিধা হচ্ছিল, তা লাঘবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ-সর্বশেষ দুটি সভা করেছে পে কমিশন- পে কমিশনের সর্বশেষ খবর ২০২৫

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫ এর সর্বশেষ বৈঠক ১৪ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি ছিল কমিশনের প্রথম আনুষ্ঠানিক সভা, যা সচিবালয়ের একটি কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভার সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সভাপতি ও সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খান। এই বৈঠকে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে একটি সময়োপযোগী সুপারিশ জমা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে, পে স্কেল নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা যেমন গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে ১২টি করা এবং সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা নির্ধারণের বিষয়গুলি এখনো আলোচনাধীন আছে এবং এগুলি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়।

পে স্কেলে বেতন কত শতাংশ বাড়তে পারে? বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হলো নতুন পে-কমিশন। সম্প্রতি এই কমিশনের চতুর্থ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যাশা, বর্তমান সরকার তাদের জন্য এমন একটি সিদ্ধান্ত নেবে যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করবে। কর্মচারীদের মূল দাবি হলো, গত ১০ বছরে দুটি পে স্কেল (Pay Scale) কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। সাধারণত প্রতি ৫ বছর পরপর নতুন পে স্কেল ঘোষণার নিয়ম থাকলেও বিগত সরকার তা রহিত করে দেয়। এর ফলে কর্মচারীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে কর্মচারীরা মনে করছেন, ২০২০ এবং ২০২৫ সালের পে স্কেল একসঙ্গে কার্যকর করা হলে তাদের বেতন প্রায় ২০০% বৃদ্ধি করা উচিত। তাদের যুক্তি হলো, যদি এটি করা হয়, তাহলে তারা বিগত বছরগুলোতে বঞ্চিত হওয়ার ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন এবং তাদের প্রতি সুবিচার করা হবে। সরকারি কর্মচারীদের আশা, পে-কমিশনের সভায় তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। তারা বিশ্বাস করেন, বর্তমান সরকার তাদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এটি বাস্তবায়িত হলে শুধু কর্মচারীরাই নন, বরং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তারা মনে করেন।

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কত দিন পর পে স্কেল জারি হয়? প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর নতুন পে স্কেল জারি হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। এটি নির্ভর করে সরকারের সিদ্ধান্ত এবং আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর। অতীতে দেখা গেছে:

সপ্তম পে কমিশন: এটি ২০০৮ সালের ৭ জুন প্রতিবেদন জমা দেয় এবং ২০০৯ সালের ১ জুলাই নতুন পে স্কেল কার্যকর করা হয়। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর প্রায় এক বছর সময় লেগেছিল গেজেট জারি হতে।

অষ্টম পে কমিশন: এই কমিশন ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর প্রতিবেদন জমা দেয় এবং সরকার নতুন পে স্কেলটি একই তারিখ থেকে কার্যকর করে। এক্ষেত্রে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর কিছু দিনের মধ্যেই নতুন পে স্কেল গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

অর্থাৎ, নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হতে কয়েক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে, পে কমিশন সাধারণত সুপারিশ করে যে, নতুন পে স্কেল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন থেকেই কার্যকর করা হোক। এখন এই সুপারিশ গ্রহণ করা হবে কিনা, তা নির্ভর করবে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

নতুন পে কমিশন গঠন ২০২৫ । পে কমিশন নিয়মিত বৈঠক করছে

পে কমিশন কি? পে কমিশন হলো সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, পেনশন, এবং অন্যান্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণের জন্য সরকার কর্তৃক গঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি বা কমিশন। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, মুদ্রাস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি যুক্তিসঙ্গত ও আধুনিক বেতন কাঠামো সুপারিশ করে থাকে।

পে কমিশন ২০২৫

প্রস্তাবিত গ্রেডভিত্তিক বেতন কাঠামো ২০২৫ । এটি কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয় ফেডারেশন সংশোধন করে পেশ করবে

  • ১ম গ্রেড – ১,৪০,০০০ টাকা
  • ২য় গ্রেড – ১,২৫,০০০ টাকা
  • ৩য় গ্রেড – ১,১০,০০০ টাকা
  • ৪র্থ গ্রেড – ৯৫,০০০ টাকা
  • ৫ম গ্রেড – ৮০,০০০ টাকা
  • ৬ষ্ঠ গ্রেড – ৭৫,০০০ টাকা
  • ৭ম গ্রেড – ৭০,০০০ টাকা
  • ৮ম গ্রেড – ৬৫,০০০ টাকা
  • ৯ম গ্রেড – ৬০,০০০ টাকা
  • ১০ম গ্রেড – ৫০,০০০ টাকা
  • ১১তম গ্রেড – ৪২,০০০ টাকা
  • ১২তম গ্রেড – ৩৫,০০০ টাকা

পে কমিশনের মূল কাজ কি?

  • বেতন কাঠামো সুপারিশ: সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন স্কেল বা গ্রেডভিত্তিক বেতন কাঠামো তৈরি করা।
  • ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা: বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা, এবং পেনশন ব্যবস্থার মতো বিভিন্ন আর্থিক সুবিধার বিষয়ে সুপারিশ করা।
  • বৈষম্য দূরীকরণ: বিভিন্ন পদের মধ্যে বেতন বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া।
  • আর্থিক বিশ্লেষণ: দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সরকারি রাজস্ব এবং মুদ্রাস্ফীতির হার বিশ্লেষণ করে একটি কার্যকর ও টেকসই বেতন কাঠামো প্রস্তাব করা।
  • পে কমিশন সাধারণত নির্দিষ্ট সময় পর পর গঠিত হয় (যেমন, প্রতি ৫ বা ৭ বছর পর)। তারা বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, কর্মচারী সংগঠন এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারের কাছে জমা দেয়। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই সরকার নতুন বেতন স্কেল বা বেতন কাঠামো ঘোষণা করে।

বেতন কাঠামোতে পরিবর্তন কি চাওয়া হয়েছে? ফেডারেশন ২০টি গ্রেড থেকে কমিয়ে ১২টি গ্রেডে বেতন কাঠামো নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে। তাদের প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী, সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ১,৪০,০০০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে । এই বেতন ১:৪ অনুপাতে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে । বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধির দাবি করা হয়েছে । যেমন- বাড়ি ভাড়া ভাতা ঢাকা মহানগরে মূল বেতনের ৮০%, বিভাগীয় শহরে ৭০%, জেলা শহরে ৬৫% এবং উপজেলা/থানা শহরে ৬০% করার দাবি করা হয়েছে ।

চিকিৎসা ভাতা কত দাবী করা হয়েছে? বর্তমানের চিকিৎসা ফি এবং পরীক্ষার খরচ বিবেচনা করে চিকিৎসা ভাতা ১০,০০০ টাকা করার দাবি করা হয়েছে । শিক্ষা ভাতা এক সন্তানের জন্য ৩,০০০ টাকা এবং দুই সন্তানের জন্য ৬,০০০ টাকা শিক্ষা ভাতা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে । যাতায়াত ভাতা ৩,০০০ টাকা, টিফিন/লাঞ্চ ভাতা প্রতিদিন ১৫০ টাকা, এবং ধোলাই ভাতা ৬০০ টাকা করার দাবি জানানো হয়েছে । পেনশনের হার ৯০% থেকে বাড়িয়ে ১০০% এবং আনুতোষিকের হার ২৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করার দাবি করা হয়েছে ।

ইনক্রিমেন্ট কত শতাংশ দাবী? অবসরের বয়সসীমা চাকরির বয়সসীমা ৫৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬২ বছর করার দাবি জানানো হয়েছে। এর কারণ হিসেবে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে । বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ৫% এর পরিবর্তে ২০% করার প্রস্তাব করা হয়েছে । গৃহ ঋণ ফ্ল্যাট ক্রয় বা গৃহ নির্মাণের জন্য সহজ শর্তে ০২% সুদে গ্রেডভিত্তিক ৪০-৮০ লক্ষ টাকা গৃহ ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করার দাবি করা হয়েছে । ফেডারেশন তাদের এই দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

12 thoughts on “পে কমিশনের সর্বশেষ খবর ২০২৫ । জাতীয় বেতন কমিশন সর্বশেষ কবে বৈঠক করেছে?

  • মুন্না খান

    এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে দ্রব্য মূল্য ৩৭-৪০% বেড়েছে। এই তথ্যটি সঠিক নয়। দ্রব্য মূল্য বেড়েছে ১০০-১৫০%। মিলিয়ে দেখুন প্রতিটি জিনিসের বর্তমান দামের সাথে ২০১৫ এর দামের।

  • কোন পত্রিকায় প্রকাশিত রেফারেন্স দিন।

  • মোক্তার আহমেদ

    সয়াবিন তেলের দা ছিল লিটার প্রতি ৯০/৯৫টাকা বর্তমানে ১৯৫/-টাকা, মসুর ডক মোটা দানা ৬০/- বর্তমানে ১২০/-টাকা

  • a.m. shahabuddin khan

    চাকুরিরতরা সব সময়ই নিজেদের স্বার্থ দেখে, অথচ কেউ কিন্তু অতি পুরাতন পেনশনভোগী দের কথা বলেনা।
    ১৯৭৭ পে স্কেল সন্মন্ধে অনেকেরই কোনো ধারনা নাই। ১৯৮৫ সালে এরশাদের পে স্কেল বেতন প্রায় দুই গুন করে দেয়।
    ১৯৭৭ সালের পেস্কেলে যারা অবসরে গেছেন তাদের পেনশন বর্তমান স্কেলের/গ্রেডের অন্ততঃ অর্ধেক করা উচিত।
    সবচেয়ে ভালো হয় যদি এক গ্রেড এক পেনশন চালু হতে পারে।

  • ঠিকই বলেছেন কিন্তু এমন হওয়া বা করার সময় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোথায়? তবে পেনশনারদের পেনশন অবশ্যই পুন:নির্ধারণ করা হবে।

  • মোঃ সেলিম হোসেন

    আমাদের দেশের কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও অধিদপ্তরাধীন প্রতিষ্ঠান সহ অন্যান্য প্রশাসনিক দপ্তর সমূহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি পে-স্কেল (বিশেষ করে ৩য় শ্রেণীর ক্যাটাগরীর পদগুলির জন্য) জনস্বার্থে জারী করা উচিত। কারণ বেতন বৈষম্যের পাশাপাশি পদ বৈষম্যও দিন দিন বেড়েই চলছে। যা আদৌ কাম্য নয়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সকল নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

  • Md. Ashraful Hasan

    I totally agree with this statement: সবচেয়ে ভালো হয় যদি এক গ্রেড এক পেনশন চালু হতে পারে।

  • 1 theke 10 grade e jara ase tara ki kisu pabe na???vaisha ashse naki?

  • বরাবরই পে স্কেলে তাই নিচের গ্রেড থেকে ভাল কিছুই পায়। বাস্তবায়নের সময় ঠিকই পাবে।

  • সরকার শুধু সরকারি চাকরি জীবিদের জন্য করছে,যারা বেসরকারি চাকরি করে তাদের জন্য কিছুই করে না

  • বেসরকারিদের জন্য কিছু করতে গেলে তারা মানবে না। আপনার মনে আছে কিনা গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে চেষ্টা করতে গেলে ব্যবসায়ীরা বাধা হয়ে দাড়ায়। এখনও মজুরি বোর্ডের শ্রমিকের মূল বেতন ৬৭০০ টাকা। গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে পাঁচটি গ্রেড রয়েছে। গ্রেড-১ এর মূল বেতন ৮২০০ টাকা এবং মোট বেতন ১৪,৭৫০ টাকা। অন্যান্য গ্রেডের বেতন গ্রেড-১ এর চেয়ে কম। ২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের শ্রমিকদের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি প্রতি মাসে ১২,৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। https://bdservicerules.info/garment-worker-daily-allowance-bd/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *