২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিচালন বাজেটের অধীন ‘ভূমি অধিগ্রহণ’ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় স্থগিতকরণের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে – ভূমি অধিগ্রহণ ২০২৩
ভূমি অধিগ্রহণে সরকারি পরিপত্র –অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় হতে সূত্রোক্ত পরিপত্রে পরিচালন বাজেটের অধীন ‘৪১৪১১০১-ভূমি অধিগ্রহণ’ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখার প্রেক্ষিতে এ খাতে অর্থ ব্যয়ে মাঠ পর্যায়ে সৃষ্ট অস্পষ্টতা নির্দেশক্রমে নিম্নোক্তভাবে স্পষ্ট করা হলোঃ
(ক) সূত্রোক্ত পরিপত্রটি শুধুমাত্র পরিচালন বাজেটের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। উন্নয়ন বাজেটের আওতায় উন্নয়ন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে উক্ত পরিপত্র প্রযোজ্য হবে না; এবং
(খ) উক্ত পরিপত্র জারীর পূর্বে, অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর ২০২২খ্রি: তারিখের পূর্বে পরিচালন বাজেটের বরাদ্দ হতে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রত্যাশী সংস্থা কর্তৃক জেলা প্রশাসকের অনুকূলে এল.এ কেসের বিপরীতে অর্থ ছাড় হয়ে থাকলে, শুধুমাত্র সেসব এল.এ কেসের বিপরীতে অর্থ ব্যয় চলমান থাকবে।
সরকার কতৃক জমি অধিগ্রহনের নিয়ম কি? দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত উন্নতি সাধনে সরকারপক্ষ তথা ভূমি অধিগ্রহণকারী অফিসার স্থানীয় জমির মালিকের কাছে প্রায়ই প্রথমে নোটিশ দিয়ে জানান দেয় যে তার জমি দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে অধিগ্রহণ করতে হবে, তখন জমির মালিকের মাথায় বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো অবস্থা হয়। অধিকাংশ ভূমি মালিকের ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ক জ্ঞান থাকে না। ফলে তাদের নানা রকম দুশ্চিন্তা ও আইনি ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। নিজের জমি রক্ষার্থে বা অধিকার বুঝে নিতে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পর্কে সাধারণ আইনি জ্ঞান থাকাটা জরুরি।
আমরা সবাই জানি, রাষ্ট্র বা সরকার দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবকাঠামো নির্মাণে দেশে প্রচলিত ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুসারে যে কোনো ব্যক্তির মালিকানাধীন বা দখলাধীন ভূমি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে। সরকার জনস্বার্থে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে যেমন শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেলপথ, সড়ক বা সেতুর প্রবেশ পথ বা এ জাতীয় অন্য কিছুর জন্য দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কারো জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। তবে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৭ ধারা (১৩) অনুসারে ধর্মীয় উপাসনালয়, কবরস্থান ও শ্মশান অধিগ্রহণ করা যাবে না। তবে শর্ত আছে যে, এগুলোও অধিগ্রহণ করা যাবে যদি তা জনস্বার্থে একান্ত অপরিহার্য হয়। সেক্ষেত্রে স্থানান্তর ও পুনঃনির্মাণ করে দিতে হবে। জনস্বার্থে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেলপথ, সড়ক বা সেতুর প্রবেশ পথ বা এ জাতীয় অন্য কিছুর জন্য জমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন পড়লে সরকার দেশের যেকোনো জেলায় যে কারো জমি অধিগ্রহণ করতে পারে।
অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি নিয়ে মামলা করা যাবে কি? অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি নিয়ে প্রদত্ত কোনো আদেশ বা গৃহীত কোনো ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের মামলা বা আবেদন গ্রহণ করার এখতিয়ার রহিত করা হয়েছে। স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭ এর (৪৭) ধারায় অধিগ্রহণ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা না করার বিষয় উল্লেখ রয়েছে। এরপরও ৮ ধারায় নোটিশ জারির পরেও অসাধু চক্রের যোগসাজশে Tittle Suit দায়ের করছে। এতে করে ভূমির মালিকগণ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। সংবিধানের ৪২(২) অনুচ্ছেদেও ক্ষতিপূরণসহ বাধ্যতামূলকভাবে স্থাবর সম্পত্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন বা মামলা না করার বিষয়ে বলা হয়েছে। বর্তমানে ভূমি মন্ত্রণালয় অধিগ্রহণ সম্পর্কিত ভূমি নিয়ে কোনো প্রকার মামলা মোকদ্দমা দায়ের করা নিয়ে পরিপত্র জারি করেছে। তবে সার্ভেয়ার ও কানুনগোর প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জমির মালিকানাকেন্দ্রিক বা অন্য কোনো ধরনের জটিলতা থাকলে ADC রিভিনিউ বরাবর মিস কেসের মাধ্যমে তা সমাধান করা যায়। মিস কেসের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে যেকোনো আরবিট্রেশন সমাধান করার নিয়ম আছে। অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য দণ্ডবিধি ১৮৬০ (ধারা ১৭৫ ও ১৭৬) অনুযায়ী।
১২ ডিসেম্বর বা পরবর্তী সময়ের বরাদ্দ হতে কোন ভাবে ভূমি অধিগ্রহণের বরাদ্দ হতে ব্যয় করা যাবে না / ১২ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখের পূর্বের বরাদ্দ হতে ব্যয় করা যাবে
কোনো প্রকল্পের জন্য আপাতত ভূমি অধিগ্রহণে অর্থ ব্যয় করবে না সরকার। মহামারীর মধ্যে ইউক্রেইন যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাবে সরকারি ব্যয় কমানোর যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তার অংশ হিসেবে এবার ভূমি অধিগ্রহণ ও যন্ত্রপাতি কেনা আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ভূমি অধিগ্রহণে ভূমির বিপরীতে অর্থ নির্ণয় । ক্ষতিপূরণ কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
- জমির উপর দন্ডায়মান যে কোনো ফসল বা বৃক্ষের জন্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ক্ষতি।
- অধিগ্রহণের কারণে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিদ্যমান অপর স্থাবর সম্পত্তি হতে প্রস্তাবিত স্থাবর সম্পত্তি বিভাজনের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি।
- অধিগ্রহণের কারণে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অন্যান্য স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বা উপার্জনের উপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি।
- অধিগ্রহণের কারণে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তার আবাসস্থল বা ব্যবসা কেন্দ্র স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হলে উক্তরূপ স্থানান্তরের জন্য যুক্তিসংগত খরচাদি।
- সরকারি কোনো প্রয়োজনে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বাজারদরের উপর অতিরিক্ত শতকরা ২০০ (দুইশত) ভাগ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। (অর্থাৎ সম্পত্তির মূল্য ২ কোটি হলে আপনাকে আরো ৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে)।
- বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে উক্ত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হবে বাজারদরের উপর অতিরিক্ত শতকরা ৩০০ (তিনশত) ভাগ। (অর্থাৎ সম্পত্তির মূল্য ২ কোটি হলে আপনাকে আরো ৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে)।
- অন্যান্য কারণে সৃষ্ট ক্ষতির জন্য উক্ত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হবে বাজারদরের উপর অতিরিক্ত শতকরা ১০০ (একশত) ভাগ। (অর্থাৎ সম্পত্তির মূল্য ২ কোটি হলে আপনাকে আরো ২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে)।
- উল্লিখিত ক্ষতিপূরণ প্রদান ব্যতীত, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, অধিগ্রহণের কারণে বাস্তচ্যুত পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
- বর্গাদারের আবাদ করা ফসলসহ কোনো স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হলে ফসলের জন্য জেলা প্রশাসক যেমন ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করবেন, একই রকম ক্ষতিপূরণ বর্গাদারকে দিতে হবে।
ক্ষতিপূরণ কিভাবে/কোথায় থেকে নিবেন?
ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ আদায় করা বা হওয়া ভূমি অধিগ্রহণ সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য করতে পারে। তবে মূল সমস্যা ও জটিলতা দেখা দেয় ক্ষতিপূরণ আদায়ের সময়। কারণ অনেকেই জানেন না ক্ষতিপূরণের টাকা কীভাবে আদায় করতে হয় বা ভূমি অধিগ্রহণের পূর্বে যেমন একটি নোটিশ যায় তেমনি জমি অধিগ্রহণের পরে ক্ষতিপূরণের টাকার নোটিশ যায় ডিসি অফিসের রেকর্ড বই অনুযায়ী। যখন ৭ ধারায় নোটিশ জারি করা হয় তখন ভূমির মালিক জেলা প্রশাসক। ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য যেসব প্রমাণাদি প্রয়োজন হয় তার মধ্যে স্থানীয় চেয়ারম্যান কর্তৃক সত্যায়িত ছবি, নাগরিকত্ব সনদ, খতিয়ান মূল/সার্টিফাইড কপি, হাল সনের খাজনা দাখিল, ওয়ারিশ সনদপত্র, রোয়েদাদনামা, ক্ষমতাপত্র (না-দাবিপত্র), বণ্টননামা, হস্তান্তরিত সকল দলিল, ধারা ৭ এর নোটিশে উল্লেখিত ক্ষতিপূরণের প্রমাণাদি।
উপরে উল্লিখিত যাবতীয় ডকুমেন্টসসহ একটি ফাইল প্রস্তুত করে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় বা LA শাখায় জমা দিতে হয়। ফাইলটি জমা হওয়ার পর সেখানকার রেজিস্টার বুকে ক্ষতিপূরণ গ্রহণকারীর নাম, খতিয়ান নম্বর, ৮ ধারা নোটিশের রোয়েদাদ এবং জমির পরিমাণ লিখে একটি নম্বর পড়ে এই সিরিয়াল নম্বর অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
ক্ষতিপূরণ মঞ্জুরির প্রাক্কলিত অর্থ জমা দেওয়ার ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসক ক্ষতিপূরণের অর্থ বুঝিয়ে দেবেন। কোনো ব্যক্তি ক্ষতিপূরণের অর্থ নিতে অসম্মত হলে বা ক্ষতিপূরণ নেওয়ার দাবিদার পাওয়া না গেলে অথবা ক্ষতিপূরণ দাবিদারের মালিকানা নিয়ে কোনো আপত্তি দেখা দিলে ক্ষতিপূরণের অর্থ সরকারি কোষাগারে রাখা হবে। অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিপূরণ পরিশোধ হওয়ার ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে গেজেট জারির মাধ্যমে অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হবে।
অধিগ্রহণ সম্পত্তি পুনঃগ্রহণ করা হয় কি? স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও সম্পত্তি হুকুম দখল আইন, ২০১৭ এর ১৯ (১) ও (২) ধারা মোতাবেক প্রত্যাশী সংস্থার অনুকূলে অধিগৃহীত সম্পত্তি যে উদ্দেশ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে সে উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হলে বা বিক্রয়, লিজ, এওয়াজ বা অন্যকোনোভাবে হস্তান্তর করা হলে অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি জেলা প্রশাসক কর্তৃক পুনঃগ্রহণ করে সরকারি দাগ খতিয়ানে আনয়ন পূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। এখানে ভূমির মালিক যদি কোনো ক্ষতিপূরণ না নেন তবে তার এক ধরনের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়। প্রায়ই এমন দেখা যায়, যে উদ্দেশ্যে কোনো জমি হুকুমদখল করা হয় তা অন্য উদ্দেশ্যে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সরকারি পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার কখনো কখনো এটাও লক্ষ্য করা যায়, যতটুকু ভূমি হুকুমদখল প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি জমি হুকুমদখল করান এবং তা দীর্ঘদীন ফেলে রাখেন এতে ভূমির মতন বিরল সম্পদের উপর চাপ পড়ে।
বর্তমানে কার্যকর ভূমি আইনটি অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তির মালিকদের মনে একটু স্বস্তি ফিরিয়ে আনলেও ভূমি অধিগ্রহণ শাখার অনিয়ম-দুর্নীতি এবং আইনগত বেশ ফাঁক-ফোঁকড়ের ফলে জমির মালিকগণ সঠিক উপায়ে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারছেন না। জমি অধিগ্রহণ হলে এমনিতেই জমির মালিক হতাশায় ভোগেন, তার উপর যখন হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়, তখন তার আর্তনাদ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। বিশেষ করে অধিগ্রহণ শাখা থেকে বিভিন্ন রেকর্ডিয় মালিকের কাছে নোটিশ পাঠিয়ে বিষয়টি জটিল করে তোলা হয়। অনেকেই টাকার লোভে জমির প্রকৃত মালিক না হয়েও একে অন্যের বিরুদ্ধে আপত্তি দায়ের করেন। বর্তমান আইনে তখনই ক্ষতিপূরণের টাকা আটকে যায়। এর মাধ্যমে ঘুষের প্রথম অধ্যায় শুরু হয়। এমনও অনেকে আছেন যার শেষ সম্বল ওইটুকু জমি, যা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তাই ক্ষতিপূরণ যথাসম্ভব দ্রুত প্রদান করে তাদের পুনর্বাসন করা উচিৎ।
এল এ শাখা থেকে জমি অধিগ্রহনের টাকা উত্তোলনের সময় জমির মালিকের পাওনা
টাকা থেকে ভ্যাট কাটা হয় কি না?
হলে মোট প্রাপ্ত টাকার কত ভাগ?
দু:খিত। ভ্যাট নয়, আয়কর কেটে রাখা যেতে পারে।