ইত্যাদি । বিবিধ । ক্যাটাগরী বিহীন তথ্য

ভূমি জরিপ এবং বিভিন্ন ধরনের খতিয়ান । জমি পরিমাপের বিভিন্ন একক কোথায় পাওয়া যাবে?

ভূমি জরীপ করার সাথে ভূমি মাপঝোক করার বিষয়টি জড়িত–জমি মাপামাপির জন্য আপনাকে ভূমি ও ভূমির খতিয়ান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে- ভূমি জরিপ এবং বিভিন্ন ধরনের খতিয়ান

ভূমি জরিপ বা সার্ভে কি? ইংরেজি Servey শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে জরিপ। জরিপ শব্দ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হলেও ভূমি জরিপ বলতে বােঝায় মৌজা ভিত্তিক নকশা (Map) প্রণয়ন ও ভূমির মালিকানা সম্পর্কিত ভূমি রেকর্ড যা খতিয়ান প্রস্তুত কার্য প্রণালীকে বুঝায়। জরিপের সময় পুরাতন তৈরীকৃত নকশা ও রেকর্ড সংশােধন করে ভূমি বা জমির শ্রেণীর পরিবর্তনের সাথে মিল রেখে এবং মালিকানার পরিবর্তনের ধারাবাহিকতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে হালকরণ (Uptodate) করে মৌজার নকশা এবং রেকর্ড তৈরী করা হয় ।

ভূমি নিয়ে মামলা ভয়ের কিছু নেই? না। নেই। রেকর্ড বা খতিয়ান সংশোধনের জন্য আদালতে মামলা করার নিয়ম হচ্ছে, প্রত্যেক জেলার আদালতে ‘ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল’ নামে একটি ট্রাইবুনাল রয়েছে যেখানে আপনাকে খতিয়ান সংশোধনের মামলা দায়ের করতে হবে। সেখানে আপনার যে ভুলটি হয়েছে, সেটা সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে। এ সকল মামলা ভূমি অফিসে চলে তাই চিন্তার কিছু নেই।

কোন নির্দিষ্ট এলাকার প্রত্যেক ভূখন্ড সরেজমিনে পরিমাপ করে নির্দিষ্ট স্কেল অনুসারে এর অবস্থান এবং আয়তন সম্বলিত একটি মৌজা নকশা প্রণয়ন করে প্রত্যেক ভূখন্ডের মালিক, দখলদার, জমির পরিমাণ, মালিকানার পরিমান, জমির শ্রেণী ইত্যাদি সম্বলিত ভূমি রেকর্ড বা খতিয়ান প্রনয়ন করাই ভূমি জরিপ। সহজ কথায়, মৌজা নকসা প্রণয়ন এবং স্বত্বলিপি (RoR = Record of Rights) তৈরির কাজকে ভূমি জরিপ বলা হয়।

আর ও আর RoR= Record of Rights কি?  বাংলায় ইহাকে স্বত্বলিপি বলে। ভূমির স্বত্ব বা মালিকানা এখানে লিপিবদ্ধ থাকে বলে ইহাকে Record of Right (RoR) বা স্বত্বলিপি বলা হয়। এগুলো মূলত ভূমির খতিয়ানের একত্রিত রূপ। যেমন, সি,এস খতিয়ান; এস,এ খতিয়ান ইত্যাদি। ১৯৫৬ হতে ১৯৬২ পর্যন্ত সময়ে পরিচালিত (আর ,ও ,আর) এই কার্যক্রমের মাদ্যমে সর্বনিন্ম ভূমি মালিকের নাম ও তার জমির বিবরণাদি সম্বলিত একটি হাতেলেখা রেকর্ড প্রস্তুত করা হয় ।

সর্বশেষ ভূমি জরিপ ।  বাংলাদেশের ভূমি জরিপের ইতিহাস

দিয়ারা জরিপ হলো দরিয়া সম্পর্কিত জরিপ। জেগে উঠা নতুন ভূখন্ড (চর) জেলা প্রশাসকের চাহিদার ভিত্তিতে সিকস্তি পয়স্তির কারণে ভৌগলিক সীমারেখা ও স্বত্বের পরিবর্তন হলে নদী ও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় নতুন জরিপ করা হয়। এ সমস্ত জরিপে নকশা ও রেকর্ড প্রস্তুত করা হয়।

ভূমি জরিপ এবং বিভিন্ন ধরনের খতিয়ান ।

Caption: https://land.gov.bd

সার্ভে খতিয়ান । বাংলাদেশে বিভিন্ন জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে যে সকল খতিয়ান প্রস্তুত হয় তা  বর্ণনা দেখুন

  1. সি, এস, খতিয়ানঃ ১৮৮৮ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের তত্বাবধানে বাংলায় একটি ভূমি জরিপ হয় যাকে সি,এস, জরিপ বলে। কক্সবাজারের রামু থানা থেকে শুরু হয়ে দিনাজপুরে এ জরিপ শেষ হয়। প্রথম হলেও এ জরিপকে নির্ভুল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই জরিপের মাধ্যমে তৈরি নকশাকে সি, এস, নকশা; এবং খতিয়ানকে সি, এস, খতিয়ান বলা হয়। সি, এস, খতিয়ান বাংলাদেশে প্রচলিত খতিয়ানসমুহের মধ্যে প্রথম। অধিকাংশ সময় মামলা-মোকদ্দমায় কিংবা বিবাদ মিমাংশার ক্ষেত্রে এ খতিয়ানকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। (CS = Cadastral Survey)
  2. এস, এ, খতিয়ানঃ রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর মাধ্যমে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ হবার পর জমিদারদের নিকট থেকে অধিগ্রহনকৃত জমির হিসাব নির্ণন, বিলুপ্ত জমিদারীর ক্ষতিপূরন প্রদান, জমির দখলদার রায়তদের জমির মালিক হিসেবে সরকারের অধীনে আনয়ন ও মালিকানার স্বীকৃতি প্রদান প্রভৃতি কারনে ভুমি জরিপের প্রয়োজন দেখা দেয়। সি, এস, রেকর্ড সংশোধনের লক্ষে জমিদারদের নিকট থেকে কাগজপত্র সংগ্রহের পর ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৩ এর মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত জরিপের মাধ্যমে যে রেকর্ড প্রস্তুত হয়, তাকে এস, এ, জরিপ বা এস, এ, খতিয়ান বলে। সংক্ষিপ্ত সময়ে জমিদারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ জরিপের মাধ্যমে খতিয়ান প্রস্তুত হয় বলে এতে প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি পরিলক্ষিত হয়।রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ফলে মধ্যস্বত্ব প্রথার বিলোপ হয় এবং পরিবার প্রতি ভূমির সর্বোচ্চ সীমা ৩৭৫ বিঘা নির্ধারিত হয়। (SA = State Acquisition)
  3. আর, এস, খতিয়ানঃ-রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর পরবর্তী প্রস্তুতকৃত এস,এ, খতিয়ানে প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি পরিলক্ষিত হয় বিধায় তা সংশোধনের লক্ষে সরকার একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তেতে তৎকালিন সরকার ১৯৬৩ সাল থেকে যে সংশোধনী জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে খতিয়ান প্রস্তুত করে, তাই আর, এস, খতিয়ান নামে পরিচিত। ইতোমধ্যে দেশের অধিকাংশ এলাকায় এ জরিপ শেষ হয়েছে এবং কিছু এলাকায় এখনো চলছে।
  4. এখানে উল্লেখ্য যে, বি, এস, খতিয়ান; বি,আর,এস খতিয়ান; সিটি খতিয়ান মূলতঃ আর, এস, খতিয়ান এর অন্তর্ভুক্ত। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ আমলে জরিপ শুরুর পর এর মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত আর, এস, খতিয়ান অনেক অঞ্চলে বি, এস, খতিয়ান নামে পরিচিত এবং কোন কোন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সিটি খতিয়ান নামে পরিচিত। (RS = Revisional Survey, BS = Bangladesh Survey, BRS = Bangladesh Revisional Survey)

খতিয়ান সংশোধন করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে??

যে জমির রেকর্ড সংশোধন করতে চান সেই জমির মালিকানার সকল দলিলপত্র (যেমন মূল দলিলের সার্টিফাইড কপি, বায়া দলিল, পূর্বের খতিয়ানের কপি ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে।) চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত ভূল রেকর্ডের সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ডের ফটোকপি। নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে আপনি ভূমি অফিসে রেকর্ড সংশোধনী মামলা করতে পারবেন।

জমির রেকর্ড সংশোধন করার নিয়ম ২০২৩ । যে সকল ডকুমেন্ট লাগবে

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে admin@bdservicerules.info ঠিকানায় মেইল করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *