সরকার চালাকি করে মহার্ঘ ভাতার নাম প্রনোদনা দিতে দিয়েছে যাতে করে পূর্বের কোন রেফারেন্স দিয়ে বেশি দাবী করা না যায় – সরকারি কর্মচারীদের ৫% প্রনোদনা প্রদানের ঘোষণা দেয় সরকার- ২০ হাজার টাকার উপরে মূল বেতন যাদের তাদের প্রতি বছরই প্রনোদনা ৫% হারে বাড়তে থাকে-কর্মচারীদের প্রনোদনা সেই ১০০০ টাকাই ২০২৪
ডিয়ানেস এলাউন্স কি? – মহার্ঘ ভাতা হল একটি অতিরিক্ত ভাতা। এটিকে ইংরেজীতে বলা হয় Dearness Allowance । হিসাবে বিজ্ঞানের ভাষায় মহার্ঘ ভাতা হচ্ছে কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ মালিক বা প্রতিষ্ঠানের নিকট একটি ব্যয় অন্যদিকে শ্রমিক বা কর্মীদের নিকট এটি একটি আয়। জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে ( দ্রব্য + নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম + যাতায়াত ব্যয় ইত্যাদি ব্যয় বৃদ্ধি) শ্রমিক বা কর্মচারীদের সাময়িক ভাবে মূল বেতনের সাথে যে অতিরিক্ত ভাতা বা অর্থ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয় তাই “মহার্ঘ ভাতা” বলে পরিচিত।
প্রনোদনা কি? প্রনোদনা হচ্ছে উৎসাহ দান বা প্ররোচন বা নিয়োজন যার মাধ্যমে কর্মচারীদের আপদকালীন সময়ে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা হয়। প্রনোদনা ভিন্নার্থে ব্যবহৃত হলেও এক্ষেত্রে মহার্ঘ ভাতা এবং প্রনোদনা একই অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী যাঁরা আছেন, তাঁদের বিশেষ বেতন হিসেবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ আপৎকালীন সময়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে এবং ৫ শতাংশ মূল বেতন বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হবে। তবে অর্থমন্ত্রণালয় বলছে এটি মূল বেতনের সাথে যোগ হবে না। মূল বেতনের ৫% হারে প্রদান করা হলে নিম্ন গ্রেড ৪১২ টাকা পাবে কিন্তু ১০০০ টাকার কম হবে না বলে মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তীতে এটিই কার্যকর হয়েছে। ২০২৩ সালে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হলেও এ বছর কর্মচারীদের এক টাকাও বাড়েনি কিন্তু কর্মকর্তাগণ যারা গত বছর ৩৫৫০০*৫% অর্থাৎ ১৭৭৫ পেয়েছেন। তাদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট হিসেবে ৫% যেমন বেড়েছে তেমন বিশেষ সুবিধা বা প্রনোদনা ১৭৭৫ *৫% হারে ২০২৪ সালে ৮৮.৭৫ টাকা বেড়ে ১৮৬৩.৭৫ টাকা প্রনোদনা পেয়েছেন। আজব দেশ এবং আজব সব বৈষম্য কৌশল যা অন্য কোথাও পাবেন না।
প্রনোদনা নাকি মহার্ঘ ভাতা কোনটিতে লাভবান কর্মচারীরা? যদি মহার্ঘ ভাতা বা প্রনোদনা যে নামেই প্রদান করা হোক না কেন মূল্যস্ফিতির বাজার এটি ৪০% পর্যন্ত হওয়া উচিৎ। গ্রেড ভেদে নিম্নগ্রেডে অধিক হারে এবং উচ্চ স্কেলের ক্ষেত্রে নিম্নহারে নির্ধারণ করা উচিৎ কিন্তু বাংলাদেশে পে স্কেল বা মহার্ঘ ভাতা বা প্রনোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে একটি এলিট শ্রেণী অধিক সুবিধা পেয়ে থাকে। তা না হলে জাতীয় বেতন স্কেল ১:১০ অনুপাতে নির্ধারিত হতো না এবং একই ভাবে নিম্নগ্রেডের জন্য টিফিন ভাতা, ধোলাই ভাতা, ভ্রমণ ও প্রশিক্ষণ ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে এমন বৈষম্য সৃষ্টি হতো না।
সরকারি কর্মচারী নিম্ন গ্রেডে ১,০০০ টাকা নির্ধারিত হারে বাড়বে / উচ্চ গ্রেডে ৩৯০০ টাকা বাড়বে।
মহার্ঘ ভাতার ২০০৯ সালে বৃদ্ধি করা হয়েছিল ১৫০০ টাকা এবং উচ্চ গ্রেডে সর্বোচ্চ ৬০০০ টাকা নির্ধারিত ছিল। প্রনোদনা বা বিশেষ সুবিধা একবার দেওয়ার হয়েছে কিন্তু ২০,০০০ টাকার উপরে মূল বেতন যাদের তাদের বিশেষ সুবিধা ৫% হারে বাড়তে থাকবে কিন্তু কর্মচারীদের সেই ১০০০ টাকাই। এ কেমন সুবিধা বন্টন প্রক্রিয়া তা কেবল আমলারাই জানে।
Caption: Motivational Allowance at least 1000 Tk. for Govt. Staff
সরকারি কর্মচারীদের ৫% প্রনোদনা ২০২৪ । প্রনোদনা কার্যকর হতে কোন গ্রেডে কত বাড়বে?
- ১ নং গ্রেডে ৭৮ হাজার হিসেবে ৩ হাজার ৯০০ টাকা।
- মূল বেতন ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা হিসেবে ২ হাজার ৮২৫ টাকা।
- চতুর্থ ধাপে বা গ্রেডে ২ হাজার ৫০০ টাকা।
- পঞ্চম ধাপে বা গ্রেডে ২ হাজার ১৫০ টাকা।
- ষষ্ঠ ধাপে বা গ্রেডে ১ হাজার ৭৭৫ টাকা।
- সপ্তম ধাপে ১ বা গ্রেডে হাজার ৪৫০ টাকা।
- অষ্টম ধাপে বা গ্রেডে ১ হাজার ১৫০ টাকা।
- নবম ধাপে বা গ্রেডে ১ হাজার ১০০ টাকা।
- ১০ হতে ২০ ধাপ বা গ্রেড ১০০০ টাকা।
প্রনোদনা টা কি মূল্যস্ফিতির সাথে সমন্বয় করে?
চলতি বছর জুনের মূল্যস্ফীতি ৯.৭৪% মাত্র। প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে সবার বেতন বৃদ্ধি হয় না। কারণ, এ বৃদ্ধি একটা পর্যায়ে এসে থেমে যায়। আবার কারও বাড়ে ৪, কারও সাড়ে ৪ শতাংশ। বাজেট উপস্থাপনের আগে গত ১৬ মে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে। সরকার যদি ৫% প্রনোদনা কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন বৈষম্য দূর করে কার্যকর করতো হবে কর্মচারীদের জন্য সুফল বয়ে আনতো কিন্তু এমন প্রনোদনায় কর্মচারীদের তেমন উপকারে আসবে না।
বি:দ্র: মহার্ঘ ভাতা দিলে ন্যূনতম ২০% দিতে হতো, প্রনোদনা আলাদা নামে এটি ৫% দিলেই হল। পার্থক্য এতটুকুই যে, ভিন্ন নামে একই জিনিস দেয়া হচ্ছে।
56000
সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছে যাওয়ার কারণে যাদের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কি হবে? কারো এক বছর কারো দুই বছর কারো তিন বছর কারো চার বছর পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বন্ধ হয়ে আছে। এরমধ্যে যারা পিআরএল এ চলে যাচ্ছেন তাদের বঞ্চনা আরও বেশি। কেননা পে স্কেল হলে মূল বেতন বৃদ্ধি পেত। নতুন করে পে ফিক্সেশন হত। ফলে আনুতোষিক বেড়ে যেত। অবসর ভাতা ও বেশি পাওয়া যেত। এখন রিটায়ারমেন্টে চলে গেলে আর কখনোই সেই সুযোগ জুটবে না। এটা বিবেচনা করা উচিত কর্তৃপক্ষের।
আদেশ অনুসারে তাদেরও বাড়বে।
অক্ষমতাজনিত কারণে কোন কর্মচারী অবসরে গেলে তিনি পিআরএল সুবিধা পাবেন কিনা জানা দরকার। সংশ্লিষ্ট আদেশের কপি বা বিধিসহ উত্তর হলে ভালো হয়।
অবশ্যই পাবেন ছুটি জমা থাকা সাপেক্ষে।