বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

১৫তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে আনসারদের পদোন্নতি ২০২৫ । ‘আমরা মাস্টার, তবুও অবহেলিত’ – ক্ষুব্ধ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক?

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর থানা/উপজেলা প্রশিক্ষক/প্রশিক্ষিকাদের ১৫তম গ্রেড থেকে সরাসরি ১০ম গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর পরপরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, সমযোগ্যতাসম্পন্ন অন্যান্য বিভাগের কর্মচারীদের গ্রেড ও মর্যাদা বাড়লেও দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি যারা, সেই প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত। একজন সহকারী শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষকদের পদোন্নতিতে ১৫তম থেকে ১০ম গ্রেড দেওয়া হলো, অথচ আমরা মাস্টার (স্নাতকোত্তর) হয়েও অবহেলিত। আমাদের দিকে কারও মনোযোগ নেই।”

আনসার ও ভিডিপিতে ১৫ থেকে ১০ গ্রেডে পদোন্নতি? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী অধিদপ্তর সম্প্রতি একটি পদোন্নতি আদেশ জারি করেছে। ১৪ অক্টোবর ২০২৫ তারিখের (২৯ আশ্বিন ১৪৩২) এই আদেশে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শক্রমে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী অধিদপ্তরের ১০৪ জন থানা/উপজেলা প্রশিক্ষক/মহিলা প্রশিক্ষিকাকে (গ্রেড-১৫) পদোন্নতি দিয়ে সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট/উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা/সহকারী অ্যাডজুট্যান্ট (গ্রেড-১০) পদে উন্নীত করা হয়েছে।

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ক্ষোভ ও দাবি কোথায়? আনসার সদস্যদের পদোন্নতির এই সিদ্ধান্তের পর প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকরা তাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরেছেন। বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে (১১,০০০ টাকা স্কেল) বেতন পান। অথচ দেশের বিভিন্ন সরকারি চাকরির এন্ট্রি পদে (যেমন, পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক) একই শিক্ষাগত যোগ্যতা (স্নাতক/স্নাতকোত্তর) থাকা সত্ত্বেও ১০ম গ্রেড দেওয়া হয়। শিক্ষকরা বলছেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পদে যোগদানের জন্য এখন স্নাতক ডিগ্রি আবশ্যক এবং বর্তমানে কর্মরত অধিকাংশ শিক্ষকেরই উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা (স্নাতকোত্তর) রয়েছে। মেধাবীরা এই পেশায় আসতে উৎসাহী হয় না শুধুমাত্র গ্রেড বৈষম্যের কারণে।

দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন তাদের এন্ট্রি পদ থেকে ১০ম গ্রেড এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের দাবি, বেতন গ্রেড ১০ম-এ উন্নীত করা কেবল আর্থিক সুবিধা নয়, এটি তাদের পেশাগত মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার জন্য অপরিহার্য। শিক্ষকরা মনে করেন, জাতির মেরুদণ্ড গড়ার কারিগরদের যদি তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর মতো অবহেলিত থাকতে হয়, তবে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।

শিক্ষক নেতারা অভিযোগ করেছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে তাদের ন্যায্য দাবি পূরণ হচ্ছে না। অন্য বিভাগের কর্মচারীদের গ্রেড পরিবর্তন হলেও শিক্ষকদের প্রতি সরকারের ‘মনোযোগের অভাব’ রয়েছে, যা তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি করেছে।

১৫তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে আনসারদের পদোন্নতি ২০২৫

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর থানা/উপজেলা প্রশিক্ষক/প্রশিক্ষিকা নিয়োগ বিধিমালা মোতাবেক কি উপজেলা এডজুট্যান্ট পদে পদোন্নতি পাওয়া যায়?

হ্যাঁ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর থানা/উপজেলা প্রশিক্ষক/প্রশিক্ষিকা (গ্রেড-১৫) পদ থেকে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা (যা সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট/সহকারী অ্যাডজুট্যান্ট নামেও পরিচিত এবং গ্রেড-১০ পদমর্যাদার) পদে পদোন্নতি পাওয়া যায়।

আপনার আপলোড করা ফাইলে (Binder1.pdf) যে সরকারি আদেশটি আছে, তা এই পদোন্নতির প্রক্রিয়াকেই নিশ্চিত করে। আদেশ অনুযায়ী:

  • পূর্বের পদ ও গ্রেড: থানা/উপজেলা প্রশিক্ষক/মহিলা প্রশিক্ষিকা (গ্রেড-১৫)।
  • পদোন্নতি প্রাপ্ত পদ ও গ্রেড: সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট/উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা/সহকারী অ্যাডজুট্যান্ট (গ্রেড-১০)।
  • পদোন্নতির ভিত্তি: বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (PSC) সচিবালয়ের পরামর্শের প্রেক্ষিতে এই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

সুতরাং, নিয়োগ বিধিমালা ও বিদ্যমান সরকারি প্রক্রিয়ায় থানা/উপজেলা প্রশিক্ষক/প্রশিক্ষিকাদের এই উচ্চতর গ্রেডের (১৫তম থেকে ১০ম) পদে পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *