ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫ । ক্রিমিনাল মামলার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততর সহ কি কি পরিবর্তন আনা হয়েছে?
ফৌজদারি কার্যবিধি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫, যা “The Code of Criminal Procedure (Amendment) Ordinance, 2025” নামে পরিচিত, ফৌজদারি মামলার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততর করার লক্ষ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং জামিন সংক্রান্ত কিছু বিধান সংশোধন করা হয়েছে। এছাড়াও, গ্রেফতার ও আটক প্রক্রিয়া এবং পুলিশি কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য কিছু ধারা যুক্ত করা হয়েছে– ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫
অপরাধ মামলার রায় কি দ্রুত হবে? হ্যাঁ। একটা মামলার রায় হয়ে যাওয়ার পর জারি মামলা করতে হতো সেই রায় কার্যকরের জন্য। এখন থেকে রায়ের মধ্যেই বাস্তবায়নের বিষয়টি যুক্ত করে দেওয়া হবে। বিভিন্ন কারনে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। সংশোধিত দেওয়ানি কার্যবিধিতে বলে দেওয়া হয়েছে, সর্বোচ্চ কতবার সময় নেওয়া যাবে। তালিকায় পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য কয়টা মামলা নেওয়া যাবে এবং আংশিক শুনানির জন্য কয়টা মামলা নেওয়া যাবে সেটাও ঠিক করে দেওয়া হবে।
ভূয়া মামলা কমে যাবে? হ্যাঁ। বিচারপ্রক্রিয়া অনেকাংশেই পুরনো পদ্ধতিতে রয়ে গেছে। আগের মতো আর সমন জারি হবে না। টেলিফোন, এসএমএস বা অন্যান্য আধুনিক যোগাযোগ পদ্ধতি অবলম্বন করে সমন জারি করা হবে। কাউকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য ভুয়া মামলা করার সুযোগ কমে যাবে। আগে ভুয়া মামলার শাস্তি ছিল ২০ হাজার টাকা, এখন সেটা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
আইন কি ডিজিটাল হলো? হ্যাঁ। বলা যেতে পারে। আগে সাক্ষীদের মৌখিকভাবে প্রধান সাক্ষ্য (examination-in-chief) দিতে হতো। এখন তা হলফনামা (affidavit) আকারে জমা দিতে হবে। তবে জেরা (cross-examination) আদালতে সরাসরি হবে, যাতে বিচারক সাক্ষীর আচরণ ও বিশ্বাসযোগ্যতা মূল্যায়ন করতে পারেন। এখন থেকে মোবাইল ফোন, এসএমএস, ভয়েস কল, হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে সমন পাঠানো যাবে। মামলার আবেদন করার সময় প্রতিপক্ষের মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং ইমেইল (যদি থাকে) উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫ / আগে ভুয়া মামলার শাস্তি ছিল ২০ হাজার টাকা, এখন সেটা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
সাধারণ মানুষ কি বলছে? সংশোধন হইছে কার্যকর কার্যকারিতা দেখার বিষয় কতটুকু হয় সত্যের ঘোষণার আপিল ভুয়া আরেকটি মামলায় দুই তিনটা মামলায় ভুগতেছি অর্থ সময় দুটোই ব্যয় হচ্ছে প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় পেরেশনের শেষ নাই। আইনটি যদি পুরোপুরি কার্যকর হয় তবে সাধারণ মানুষ হাফ ছেড়ে হয়রানি হতে মুক্ত হতে পারে।
Caption: ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫
ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫ । এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত হওয়ার পাশাপাশি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও হয়রানি কমার সম্ভবনা রয়েছে।
- অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অব্যাহতি: তদন্ত চলাকালীন সময়ে পুলিশের দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা বিচার প্রক্রিয়াকে দ্রুত করবে।
- জামিন সংক্রান্ত সংশোধন: জামিন মঞ্জুর বা বাতিলের ক্ষেত্রে কিছু নতুন বিধি যুক্ত করা হয়েছে, যা বিচারকের বিবেচনাবোধকে আরও স্পষ্ট করবে।
- গ্রেফতার ও আটক প্রক্রিয়া: পুলিশকে গ্রেফতারের সময় নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে এবং “মেমোরেন্ডাম অব অ্যারেস্ট” পূরণ করতে হবে, যা গ্রেফতারের প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ করবে।
- পুলিশের জবাবদিহিতা: গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির আইনি অধিকার নিশ্চিত করা এবং পুলিশের জবাবদিহিতা বৃদ্ধির জন্য কিছু ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
- ভুয়া মামলা ও হয়রানি রোধ: ভুয়া মামলা দায়ের এবং নিরপরাধ ব্যক্তিকে মামলায় জড়ানো রোধ করার জন্য কিছু বিধি সংযোজন করা হয়েছে।
শুধু শুনানী আর শুনানির ডেট চেয়ে দীর্ঘ করা যাবে না?
না। আগে আদালতের রায় (ডিক্রি) কার্যকর করতে আলাদা আবেদন করতে হতো। এখন আর্থিক ডিক্রিসহ কিছু ডিক্রি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে। আগে একতরফা রায় বাতিল করতে একাধিকবার আবেদন করা যেত। এখন থেকে একজন বাদী বা বিবাদী একবারের বেশি এ ধরনের আবেদন করতে পারবে না।Order 41 Rule 21 অনুযায়ী, পুনঃশুনানি এখন একবারের বেশি করা যাবে না। এছাড়া Rule 24-এ যে কার্যক্রমগুলো আগে ঐচ্ছিক ছিল, সেগুলো এখন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আগে একেকটি মামলায় ছয়বার পর্যন্ত মুলতবি (adjournment) চাওয়া যেত। নতুন সংশোধনী অনুযায়ী এখন চারবারের বেশি মুলতবি চাওয়া যাবে না। আমরা এই পরিবর্তনগুলোকে পজিটিভলি দেখছি।
ফৌজদারি অপরাধ (Criminal Offence) হল এমন কাজ বা আচরণ যা দেশের | প্রচলিত ফৌজদারি আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য। | এই ধরনের অপরাধের বিচার ফৌজদারি আদালতে হয়ে থাকে। |
সহজ ভাষায়, যা কিছু আইনত: অপরাধ এবং যার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে, তাই ফৌজদারি অপরাধ। | ||