⚡️ পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের জন্য স্বস্তির খবর: কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশ
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিদ্যুৎ বিভাগ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসমূহের (পবিস) সকল চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মীদের চাকরি নিয়মিতকরণ, চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল এবং সংযুক্ত ও সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মীদের পদায়নের বিষয়ে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে ।
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে (২২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২) বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জারি করা এক স্মারকে (২৭.০০.০০০০.০০০.০৫৩.৯৯.০০০২.২৫.৩৬৯) বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে (বাপবিবো) এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে ।
📝 প্রতিবেদনের মূল সুপারিশসমূহ:
বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক গঠিত কমিটি তাদের ২য় (পূর্ণাঙ্গ) প্রতিবেদনে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশসমূহ প্রদান করেছে:
মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জারদের জন্য পদক্ষেপ: চলমান চুক্তির মেয়াদ তথা ১২ বছর শেষ হওয়া এবং পরবর্তীতে অন্য পবিসে নিয়োগচুক্তির কার্যক্রম শুরুর মধ্যবর্তী সময় (কর্মহীন কাল) যথাসম্ভব কমিয়ে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।
অনিয়মিত/দৈনিক ভিত্তিতে কর্মরতদের নিয়মিতকরণ: বিভিন্ন পবিসে কর্মরত অভিজ্ঞ লাইনম্যান/শ্রমিকদের অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগাতে প্রযোজ্য বিধি-বিধানের আলোকে তাদের চাকরি লাইনম্যান/লাইন ক্রু পদে নিয়মিতকরণের বিষয়টি সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করা ।
চাকরিচ্যুতদের পুনর্বিবেচনা: ‘পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্মচারী চাকুরী বিধি, ১৯৯২ সংশোধিত ২০১২ ইং এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর আলোকে উক্ত বিধির ৫৪ ধারায় চাকরিচ্যুতদের পুনর্বিবেচনা/রিভিউয়ের বিষয়টি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বিবেচনা করতে পারে ।
মামলা প্রত্যাহার: কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১০ কর্তৃক বাপবিবোর পক্ষে দায়েরকৃত চান্দিনা থানা মামলা নং ৬ তারিখ ১৮.১০.২০২৫ থেকে আসামীদের অব্যাহতি দেওয়ায়, ঢাকায় খিলক্ষেত থানায় দায়েরকৃত একই প্রকৃতির মামলাভুক্ত ব্যক্তিরা আদালতের আদেশনামা/রায়ের বিষয়টি উপস্থাপন করে প্রতিকার পেতে পারেন ।
সংযুক্তিকরণ বাতিল: সংযুক্তকৃত ১৬ (ষোল) জন কর্মকর্তা, কর্মচারীর সংযুক্তি বাতিলপূর্বক অবিলম্বে উপযুক্ত পদে পদায়ন করা । এছাড়া, বিধি-৯২ (সংশোধিত ২০১২ ইং) হালনাগাদ না হওয়া পর্যন্ত এর ১৭ ধারার পরিপন্থিভাবে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সংযুক্ত না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্তকৃতদের পুনর্বহাল: সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা, কর্মচারিদের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের গত ১৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখের স্মারকের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে । অবশিষ্ট সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বাতিলপূর্বক তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের বিষয়ে বাপবিবোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে ।
আংশিক প্রতিবেদন বাস্তবায়ন: গত ২২ জুলাই ২০২৫ তারিখে কমিটি কর্তৃক দাখিলকৃত আংশিক প্রতিবেদনে প্রদত্ত সুপারিশও বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে ।
📈 অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল:
এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে প্রতি মাসে অগ্রগতি প্রতিবেদন বিদ্যুৎ বিভাগে দাখিল করতে হবে । এছাড়াও, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আইন, ২০১৩ এর ১১ ধারা অনুসারে, এই সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়টি বাপবিবো’র বার্ষিক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
উপসচিব মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন কর্তৃক স্বাক্ষরিত এই স্মারকে দ্রুত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে বিদ্যুৎ বিভাগকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয়েছে ।


পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের কেন বদলি করা হয়েছিল?
পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের বদলির প্রধান কারণ ছিল তাদের আন্দোলন ও কর্মসূচির সাথে জড়িত থাকা, যা কর্তৃপক্ষের মতে দাপ্তরিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী ছিল এবং কিছু ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটিয়েছিল। অনুসন্ধান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই বদলিকে অনেক কর্মচারী শাস্তিমূলক হয়রানি হিসেবে দেখছেন।
📅 মূল কারণসমূহ:
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা বা “ব্ল্যাক আউট”: কর্মচারীরা তাদের দাবির সমর্থনে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র বন্ধ, ফিডার শাটডাউন ও ফোর্স শাটডাউন দেওয়ার অভিযোগের কারণে কিছু কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও বদলি করা হয়। এটি “দাপ্তরিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ” হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
আন্দোলন ও কর্মসূচি:
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন, চাকরিচ্যুতির আদেশ বাতিল এবং অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিতকরণসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করা হয়।
এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি এবং গণছুটিতে থাকার কারণে অনেক কর্মীকে দূরবর্তী স্থানে শাস্তিমূলকভাবে বদলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রায় চার হাজার কর্মীকে হয়রানিমূলক বদলির শিকার হওয়ার দাবি করা হয়েছিল।
সংস্কার কার্যক্রমে বাধা: অভিযোগ আছে যে, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) বিদ্যমান সংকট সমাধানে সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য আন্দোলনের অজুহাতে কর্মীদের উপর দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে, যার মধ্যে বদলি একটি উপায়।
সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে কিছু বদলি রুটিন মাফিক ছিল এবং আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও পরে কিছু কর্মীকে আগের কর্মস্থলে বহালও করা হয়েছিল।
এসব বদলি, বরখাস্ত ও মামলার প্রতিবাদে কর্মীরা পরবর্তীতে গণছুটির মতো কঠোর কর্মসূচিতেও গিয়েছিলেন।



