সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে বড় সংস্কার ২০২৫ । ই-জিপি-তে ডকুমেন্ট দাখিল বাধ্যতামূলক, সরলীকরণ হলো টু-স্টেজ টেন্ডার প্রক্রিয়া?
ঢাকা, ১২ নভেম্বর ২০২৫: সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও গতি আনতে বড় ধরনের সংশোধন এনেছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অধীনস্থ সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) সম্প্রতি এক পরিপত্র জারির মাধ্যমে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬’ এবং ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’-এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিধান কার্যকর করেছে।
গত ১২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে জারি করা এই পরিপত্রে মূলত চারটি বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার প্রধান লক্ষ্য হলো ডিজিটাল পদ্ধতির (ই-জিপি) ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে সরল করা।
১. ই-জিপি-তে ডকুমেন্ট দাখিল বাধ্যতামূলক
পরিপত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ বা তার পরে প্রকাশিত সকল দরপত্র/কোটেশন বিজ্ঞপ্তি বা আগ্রহব্যক্তকরণের অনুরোধ (ইওআই) সম্পর্কিত যাবতীয় ডকুমেন্ট শুধুমাত্র ই-জিপি সিস্টেমের মাধ্যমেই দাখিল করতে হবে।
ঘোষণায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে এসব ডকুমেন্টের কোনো প্রকার হার্ড কপি বা ভৌত কপি গ্রহণ করা হবে না। এর ফলে সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে কাগজপত্রের ব্যবহার কমে আসবে এবং প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি ডিজিটালাইজড হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২. টু-স্টেজ টেন্ডার (TST) প্রক্রিয়া সরলীকরণ
দ্বি-পর্যায়ের দরপত্র বা টু-স্টেজ ইওআই (EOI) এর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ বা তার পরে প্রকাশিত যে সকল ক্রয় প্রক্রিয়ায় প্রথম ধাপের মূল্যায়নে শুধুমাত্র একজন যোগ্য দরদাতা/পরামর্শক/প্রতিষ্ঠান টিকে থাকবে, তাদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধাপের আর্থিক বা কারিগরি প্রস্তাব দাখিলের জন্য সরাসরি আমন্ত্রণ জানানো যাবে।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ক্রয়কারী সংস্থা প্রধান (HOPE) বা তার অনুমোদিত কর্মকর্তার অনুমোদন নিতে হবে। এই সরলীকরণের ফলে টু-স্টেজ প্রক্রিয়ায় অপেক্ষাকৃত কম প্রতিযোগিতা থাকলে সময়ক্ষেপণ ছাড়াই দ্রুত ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
৩. পুরোনো দরপত্র প্রক্রিয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা
যে সকল ক্রয় প্রক্রিয়া ই-জিপি বাধ্যতামূলক হওয়ার পূর্বেই প্রকাশিত হয়েছিল এবং এখনও চলমান বা মূল্যায়নাধীন রয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে একটি ট্রানজিশন পথ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এসব পুরোনো দরপত্রের ক্ষেত্রে দরদাতা/পরামর্শকরা চাইলে নোটারি পাবলিক কর্তৃক হলফনামা দাখিলের মাধ্যমে তাদের দরপত্র/প্রস্তাব/ইওআই প্রত্যাহার করে নিতে পারবেন। তবে কেউ প্রত্যাহার না করলে বিদ্যমান মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পূর্বের নিয়মেই চলতে থাকবে।
৪. প্রাক-যোগ্যতার (Pre-qualification) মেয়াদ বহাল
পরিপত্রে আরও নিশ্চিত করা হয়েছে যে, ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬’ ও ‘বিধিমালা, ২০০৮’ অনুযায়ী কোনো নির্দিষ্ট সেক্টর বা অঞ্চলের জন্য পূর্ব-যোগ্যতা (Pre-qualification) অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের সেই যোগ্যতা তাদের মঞ্জুরিকৃত সময়কাল (expiry date) পর্যন্ত বহাল থাকবে।
সিপিটিইউ-এর এই পদক্ষেপ সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, সময় সাশ্রয় এবং ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সহায়ক হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে। পরিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন প্রধান নীতি কর্মকর্তা (সচিব) ড. এস. এম. জাকির উদ্দিন আহমেদ।

এখন কি ই জিপি ছাড়া টেন্ডার বা আরএফকিউ হবে না?
হ্যাঁ, পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী সেটাই নিশ্চিত করা হয়েছে। সাধারণত যে সকল ক্রয় প্রক্রিয়ায় দরপত্র (Tender) বা কোটেশন বিজ্ঞপ্তি (RFQ/Request for Quotation) বা আগ্রহব্যক্তকরণের অনুরোধ (EOI) প্রকাশ করা হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ বা তার পর থেকে ডকুমেন্ট দাখিলের পদ্ধতি নিম্নরূপ:
ডকুমেন্ট দাখিল বাধ্যতামূলকভাবে ই-জিপি (e-GP) সিস্টেমের মাধ্যমে করতে হবে।
কোনো প্রকার ফিজিক্যাল বা হার্ড কপি আকারে ডকুমেন্ট দাখিল করা যাবে না।
সুতরাং, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এমন সাধারণ টেন্ডার বা আরএফকিউ (RFQ) এর ক্ষেত্রে এখন আর ই-জিপি সিস্টেম ছাড়া ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার সুযোগ নেই। এই নিয়মটি মূলত সরকারি ক্রয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিকে শতভাগ কার্যকর করার লক্ষ্যেই আনা হয়েছে।
পূর্বের ম্যানুয়াল টেন্ডার ও আরএফকিউ পদ্ধতি বাতিল?
মূলত নতুন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে পূর্বের ম্যানুয়াল টেন্ডার ও আরএফকিউ দাখিল পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি দুটি ভাগে বুঝতে হবে:
১. নতুন টেন্ডার/আরএফকিউ (RFQ)-এর ক্ষেত্রে:
হ্যাঁ, বাতিল। ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ বা তার পর থেকে প্রকাশিত সকল বিজ্ঞপ্তি (টেন্ডার, আরএফকিউ, ইওআই) এর বিপরীতে ডকুমেন্ট দাখিলের ক্ষেত্রে ম্যানুয়াল বা হার্ড কপি পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে বাতিল ও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন থেকে শুধুমাত্র ই-জিপি সিস্টেমের মাধ্যমেই ডকুমেন্ট দাখিল করতে হবে।
২. পুরোনো (বিদ্যমান) টেন্ডার/আরএফকিউ-এর ক্ষেত্রে:
না, বাতিল নয়। যে সকল টেন্ডার/আরএফকিউ বিজ্ঞপ্তি ই-জিপি বাধ্যতামূলক হওয়ার পূর্বে ম্যানুয়ালি প্রকাশিত হয়েছিল এবং সেগুলোর মূল্যায়ন এখনও চলছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে ম্যানুয়াল মূল্যায়ন প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়নি।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, দরদাতারা চাইলে হলফনামার মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিতে পারবেন। কিন্তু যদি কেউ প্রত্যাহার না করেন, তবে বিদ্যমান ম্যানুয়াল মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পূর্বের নিয়মেই চলতে থাকবে যতক্ষণ না সেই নির্দিষ্ট ক্রয় প্রক্রিয়াটি শেষ হয়।
সারসংক্ষেপ: সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে পুরোপুরি ম্যানুয়াল দাখিল পদ্ধতি এখন আর নেই, এটি ই-জিপি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে।



