সরকারি চাকরিতে বৈষম্য ২০২৫ । ১৭তম গ্রেডে কেন সেনাসদস্যরা? প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন?
সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন স্কেলে বিদ্যমান ব্যাপক বৈষম্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এক সেনাসদস্য। সামাজিক মাধ্যমে প্রেরিত এক খোলা চিঠিতে তিনি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মন্ত্রী এবং উপদেষ্টা মণ্ডলীর কাছে প্রশ্ন রেখেছেন যে, দেশের নিরাপত্তায় দিনরাত পরিশ্রম করা সত্ত্বেও কেন সামরিক বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের এত কম বেতন এবং কেন তাঁদের ১৭তম গ্রেড তথা চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে গণ্য করা হয়।
সেনাসদস্য তাঁর লেখায় উল্লেখ করেন যে, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশের সকল সদস্যকে বাধ্যতামূলকভাবে এইচএসসি (উচ্চ মাধ্যমিক) পাশ করতে হয়। কঠোর পরিশ্রম ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা দেশের জল, স্থল ও আকাশসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এবং দেশের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা সত্ত্বেও তাঁদের বেতন স্কেল কেন এত নিচে, তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বর্তমান পে-স্কেলে তাঁদের মূল বেতন ৯,০০০ টাকা এবং সর্বসাকুল্যে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এই সামান্য টাকায় একটি সংসার চালানো অসম্ভব বলে তিনি দাবি করেন।
তাঁর অভিযোগের মূল বিষয়গুলো হলো:
- গ্রেড বৈষম্য: এইচএসসি পাশ করা সত্ত্বেও সেনাসদস্যদের ১৭তম গ্রেডে (চতুর্থ শ্রেণীর সমতুল্য) রাখা।
- বেতন বৈষম্য: উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সিকিউরিটি ভাতা বাবদ যেখানে ১৬,০০০ টাকা দেওয়া হয়, সেই নিরাপত্তা প্রদানকারী বাহিনীর সদস্যদের মোট বেতন মাত্র ১৪-১৫ হাজার টাকা।
- সামাজিক সম্মান: অপর্যাপ্ত বেতনের কারণে সমাজে সম্মানের সাথে বাঁচতে না পারার উদ্বেগ।
তিনি স্পষ্টতই বলেছেন, “আজ আপনারা এমপি মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব, কর্মকর্তা হয়েছেন আমাদের নিরাপত্তার বলয়ে থেকে।” ফিলিস্থিনের গাজার উদাহরণ টেনে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর অপরিহার্যতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
এই সেনাসদস্য পার্শ্ববর্তী দেশের বেতনের সাথে তুলনা করার প্রবণতা নিয়েও সমালোচনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ভারতে যেখানে অষ্টম পে-স্কেলের ঘোষণা করা হয়েছে এবং একজন পিওনও (চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী) মূল বেতন ৩৬ থেকে ৪০ হাজার রুপি (সর্বসাকুল্যে ৮০,০০০ রুপি বা তার বেশি) পান, সেখানে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের এই সামান্য বেতন অগ্রহণযোগ্য।
তিনি সরকারের কাছে বৈষম্যমুক্ত একটি পে-স্কেল দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা বেশি চাইনি, আমরা ৩৫,০০০ টাকা চাই,” যা বর্তমান মূল বেতনের তুলনায় অনেক বেশি হলেও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বেতনের তুলনায় নগণ্য। তিনি আরও যোগ করেন, সরকার দেশের সম্পদ হিসেবে যেমন উচ্চপদস্থদের ১৪০,০০০ টাকা নেন, তেমনি বাহিনীর সদস্যদের অন্তত ৩৫,০০০ টাকা বেতন দেওয়া উচিত।
নিরাপত্তা বাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলস্বরূপ দেশ শান্তিতে আছে এবং অন্য দেশ দখল করতে পারছে না, এই বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি অবিলম্বে এই বৈষম্য দূর করার জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট মণ্ডলীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, সকল বাহিনীর সদস্যরাও দেশের সম্পদ এবং তাঁরা সমাজের মানুষের সাথে সম্মানের সাথে বাঁচতে চান।
সাধারণত, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জাতীয় বেতন স্কেল (National Pay Scale) অনুযায়ী বেতন পেয়ে থাকেন, যা সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য। তবে তাদের জন্য কিছু বিশেষ ভাতাও থাকে, যা সামরিক জীবনের ঝুঁকি ও দায়িত্বের সাথে সম্পর্কিত।
বেতন কাঠামো সম্পর্কিত কিছু সাধারণ তথ্য:
- জাতীয় বেতন স্কেল: সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেল (যেমন, ৮ম জাতীয় বেতন স্কেল, যা ২০১৫ সালে কার্যকর হয়) অনুযায়ী বেতন পান। এই স্কেলে ২০টি গ্রেড রয়েছে।
- পদবি ও গ্রেড:
- কমিশন্ড অফিসার: লেফটেন্যান্ট, ক্যাপ্টেন, মেজর, লেফটেন্যান্ট কর্নেল, কর্নেল, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, মেজর জেনারেল, লেফটেন্যান্ট জেনারেল, জেনারেল ইত্যাদি পদবিধারীরা উচ্চ গ্রেডে বেতন পান। তাঁদের প্রাথমিক বেতন সাধারণত ৯ম গ্রেড বা তার উপরের স্কেল থেকে শুরু হয়।
- জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (JCOs): ওয়ারেন্ট অফিসার, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার ইত্যাদি পদবিধারীরা সাধারণত ১০ম থেকে ১৪তম গ্রেডের মধ্যে বেতন পান।
- সৈনিক/নন-কমিশন্ড অফিসার (NCOs): সিপাহী, ল্যান্স কর্পোরাল, কর্পোরাল, সার্জেন্ট ইত্যাদি পদবিধারীরা সাধারণত ১৬তম গ্রেড বা তার নিচের গ্রেড থেকে শুরু করে বিভিন্ন গ্রেডে বেতন পান। একজন সিপাহীর প্রাথমিক বেতন সাধারণত সর্বনিম্ন গ্রেডের (যেমন, ১৭তম বা ১৬তম গ্রেড) কাছাকাছি থাকে।
- বিশেষ ভাতাদি: সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য কিছু বিশেষ ভাতাও প্রযোজ্য, যেমন:
- সামরিক ভাতা: সামরিক কাজের প্রকৃতির জন্য প্রদত্ত ভাতা।
- রেশন ভাতা: খাদ্য সামগ্রীর জন্য প্রদত্ত ভাতা।
- বাসস্থান ভাতা: সরকারি কোয়ার্টার না পেলে প্রদত্ত ভাড়া ভাতা।
- চিকিৎসা ভাতা: চিকিৎসার জন্য প্রদত্ত ভাতা।
- যাতায়াত ভাতা: কর্মস্থলে যাতায়াতের জন্য ভাতা।
- ঝুঁকি ভাতা: বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য প্রদত্ত ভাতা।
- পার্বত্য ভাতা (যদি প্রযোজ্য হয়): পাহাড়ী অঞ্চলে কর্মরতদের জন্য।
- জাতিসংঘ মিশন ভাতা: বিদেশে শান্তি মিশনে কর্মরতদের জন্য অতিরিক্ত ও উচ্চহারে ভাতা।
- বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট: প্রতি বছর চাকরিতে এক বছর পূর্ণ হলে বেতনের সাথে একটি নির্দিষ্ট হারে ইনক্রিমেন্ট যোগ হয়।
পদোন্নতি: পদোন্নতির সাথে সাথে বেতন গ্রেড এবং বেতনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।




অবশ্যই তার দাবি যৌক্তিক