এইচ. এস. সি পাশের পরই মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের চেষ্টা চলে একটি নিশ্চিন্ত ভবিষ্যতের জন্য সরকারি চাকরির। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাশের পর সে অব্যাহত চেষ্টা আরও তুমুল বেগে চালিয়ে যেতে হয়। আমাদের দেশে যেহেতু চাকরির বয়স ৩০ বছরের কোটায় সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে, সেখানে স্নাতকোত্তর পাশের পর পরিবার ও বয়সের চাপে কেউ কেউ হতাশায় পতিত হয়। এ সময় আপনাদের নিম্নবর্ণিত পরামর্শ দিতে চাই।
ধৈর্য্য ধরে সরকারি চাকরির চেষ্টা করুন
সদ্য পাশ করা বেকারদেরকে বলবো ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার সাথে পড়াশুনা চালিয়ে যান। মূলত যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে পড়াশুনা করে বের হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই পড়াশুনার চাপ না নিয়েই স্টুডেন্ট লাইফ শেষ করতে পারেন। বিশেষ করে তুলনামূলক কম মেধা সম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের বলবো আপনারা গত চার-পাঁচ বছরে যে পড়াশুনা করেছেন সমপরিমাণ পড়াশুনা করতে হবে মাত্র এক বছরে, তবেই আপনি চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবেন। এজন্য আপনাকে কঠোর ত্যাগ ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আপনি হয়তো ভাবছেন এ রকম পরামর্শতো অনেকেই দেয়। আসলে বাংলাদেশে সরকারি চাকরির পরিসর সীমিত, চাকরিপ্রত্যাশীর সংখ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। সুতরাং এ পরিপস্থিতিতে চাকরির পরীক্ষায় মেরিট তালিকায় নাম আনতে আপনাকে একটু বেশিই পড়াশুনা করতে হবে। আজকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরির জন্য একটি আসনের বিপরীতে ২০০-২৫০ জন লড়াই করছে সেখানে মাত্রাতিরিক্ত পড়াশুনার বিকল্প নাই।
এখন আসুন মেধায় কি আসলে চাকরি হয়?
আমি হতাশ, বেকার চাকরি প্রত্যাশীদের জোর গলায় বলতে চাই যে, সরকারি চাকরিতে কিছু ক্ষেত্রে ৯০% মেধায় চাকরি হয়। যেমন-বিসিএস উত্তীর্ণদের। অপর দিকে বিপিএসসির পরীক্ষায়ও মেধায় চাকরি হয় ৫০% এরও অধিক। সুতরাং পথ হারিও না, হাল ছেড়ো না বন্ধু এগিয়ে চলো, সাফল্য একদিন আসবেই। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ যেমন ভারতেও মেধায় চাকরি হওয়ার সংখ্যা আমাদের দেশের থেকে নেহায়েত বেশি নয়। জনসংখ্যাধিক্য ও পাশের হার বেশি বর্তমানে আমাদের দেশে। সরকারি চাকরিগুলোতে এখনও ১০-২০% চাকরিজীবী মেধার মাধ্যমেই উত্তীর্ণ হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে কারণ একটি সরকারি দপ্তর চালাতে কিছু যোগ্য লোক থাকতেই হবে, না হলে দপ্তর চলবে কি করে? যারা উৎকোচ বা ঘুষ বা তদবীরের জোরে চাকরি পেয়ে থাকে তারা একদিকে যেমন কাজের অযোগ্য অন্যদিকে দাপ্তরিক কাজ করতে অনাগ্রহী থাকে এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কাজ না করেও চাকরি টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। সুতরাং মেধাশুন্য চাকরির দৌড়ে ১০-২০% মেধার মূল্যায়ন আজীবনই থাকবে। আরেকটি কথা গ্রেড ১-১০ পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরির ক্ষেত্রে মেধার মূল্যায়ন অনেক বেশি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলবো এখানও ১ম ও ২য় শ্রেণীর পদের চাকরিতে ৭০% লোকের চাকরি হয় মেধায়। সবচেয়ে বেশি দূর্ণীতি হয় ১১-২০ গ্রেড অর্থাৎ ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর পদের চাকরির ক্ষেত্রে। এসব চাকরিতে সুযোগ পেতে হলে ঐ যে মেধায় উত্তীর্ণ ১০-২০% ব্যক্তির কাতারে উঠে আসতে হবে।
উৎকোচ ছাড়া কি চাকরি হয় না?
উৎকোচ বা ঘুষ ছাড়া রাজস্বখাতভূক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর পদের কর্মচারী নিয়োগে ১০-২০% চাকরি প্রত্যাশী লোকে চাকরি হয়। যারা কঠোর ত্যাগ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন। যাদের চাকরি হয় তাদের বেশির ভাগই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাকরি করে এমন ব্যক্তি ছেলে-মেয়ে বা আত্মীয় স্বজন। কেউ কেউ তাদের পেনশনের প্রাপ্য অর্থ থেকেও ছেলে মেয়েদের চাকরির ব্যবস্থা করে থাকে। বাহিরের লোক তদবিরের সুযোগই পায় না তেমন। এমনও দেখা যায় যে, সরকারি বাসায় যে ব্যক্তি বরাদ্দ পেয়েছেন তার দারা সেই বাসায় থাকত এবং পরবর্তীতে তার বাবার চাকরি হওয়ায় তার বাবা থাকতো এবং তারও পরবর্তীতে সে নিজে থাকে। একটি দপ্তরের খোজ নিলে দেখতে পারবেন ৭০% চাকুরীজীর দাদা, বাবা, ভাই সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ছিলেন। উৎকোচ ও ঘুষ দিয়ে আসছে ২০% লোক এবং বাকি ১০% লোক আসছেন মেধার ভিত্তিতে এবং তারাই অফিসটাকে সচল রেখেছেন। সুতরাং নতুন লিংক না খুজে ১০% ব্যক্তির অংশ বিশেষ হতে পড়াশুনায় মনোযোগ দিতে হবে।
ঘুষ ছাড়া সরকারি চাকরি হয় কোথায়?
হ্যাঁ, এবার আসুন মূল কথায়, ঘুষ ছাড়াও অনেক বেশি চাকরির সুযোগ রয়েছে বিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ যে সকল প্রতিষ্ঠান রাজস্বখাতভূক্ত নয় অর্থাৎ স্বায়ত্তশাসিত। অনেকেই আমরা এসব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি বলেই জানি। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান নিজেদের টাকায় নিজেরা চলে তাই এরা দক্ষ লোক নিয়োগ দিতে চেষ্টা করে। এ সকল প্রতিষ্ঠান সরকারি নীতিমালা ও বিধি অনুযায়ী চলে এগুলোর কিছু প্রতিষ্ঠানে মাসিক পেনশন চালু নাই, কিছু প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিজস্ব অর্থায়নের পেনশন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তবে সকল স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেই গ্রাচুইটি সুবিধা চালু রয়েছে, যেমন এককালীন সরকারি চাকুরেগন পেয়ে থাকেন। এসব প্রতিষ্ঠানের চাকরিও সরকারি চাকরির মতোই স্থায়ী, যখন তখন চাকরি চলে যায় না। নিচে এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেয়া হলো, যাদের মেধা ও দক্ষতা রয়েছে তারা সরকারি চাকরির হাল ছেড়ে এসব স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আমার জানা মতে এসকল প্রতিষ্ঠানে ৯০% লোকের তদবির বা ঘুষ ছাড়া চাকরি হয়।
- বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)
- জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা
- এনজিও বিষয়ক ব্যুরো
- বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)
- বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)
- বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)
- বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড)
- পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ)
- বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)
- বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)
- সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)
- বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিস্থান (বিআইডিএস)
- বাংলাদেশ পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ড
- বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)
- বাংলাদেশ কৃষি গবষেণা ইনস্টিটিউট (বারি)
- বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই)
- বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই)
- বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)
- কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস)
- কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ড্যাম)
- বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)
- বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান)
- হর্টিকালচার এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (হর্টেক্স ফাউন্ডেশন)
- অধিনস্থ দপ্তরসমূহের তালিকা
- বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন
- বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন
- রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো
- ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ
- যৌথ মূলধনী কোম্পানী ও ফার্মস নিবন্ধক
- আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের অফিস
- বাংলাদেশ চা বোর্ড
- বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট
- বিজনেজ প্রমোশন কাউন্সিল
- দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট এণ্ড ম্যানেজমেন্ট এক্যাউন্টস অব বাংলাদেশ
- দি ইনস্টিটিউট অব চার্টাড এক্যাউন্টস অব বাংলাদেশ
- ইনস্টিটিউট অব চার্টাড সেক্রেটারীজ অব বাংলাদেশ
- উপজেলা পরিষদ একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান।
- বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)
- বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)
- বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর
- বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট (বিপিআই)
- হাইড্রোকার্বন ইউনিট (এইচসিইউ)
- বিস্ফোরক পরিদপ্তর
- খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)
- পেট্রোবাংলার কোম্পানীসমূহ
- বাপেক্স
- ইসলামিক ফাউন্ডেশন
- বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট
- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
- Bangladesh Power Development Board
- পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ)
- বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন
- Bangladesh Space Research and Remote Sensing Organization
- বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট
- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
- Social Development Foundation (SDF)
- Centre for Policy Dialogue (CPD)
- বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট
- জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর
- বাংলাদেশ ন্যাশনাল সায়েন্টিফিক এন্ড টেকনিক্যাল ডকুমেন্টেশন সেন্টার
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভো থিয়েটার
- বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)
- বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন
- বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্ট
- বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট
- বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিঃ (বোয়েসেল)
- ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড
- বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)
- Bangladesh Hi-Tech Park Authority
- Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission
- Bangladesh Telecommunications Company Limited
- বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানী লিমিটেড (বিএসসিসিএল)
- Telephone Shilpa Sangstha (TSS) Ltd
- বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটালাইট কোম্পানি লিমিটেড
- বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানী লিমিটেড (বিএসসিসিএল)
- বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন
এছাড়াও আরো অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার তালিকার লিংক নিচে দেওয়া হলো।
চাকরির ক্ষেত্রে দূর্নীতি কি নির্মূল করা সম্ভব নয়?
এ প্রশ্নটি যদি আমাকে করেন তবে আমি বলবো এটি দূর করা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের রাজনীতির ধারা সুষ্ঠু নয়। তাছাড়া আমরা সংকর জাতি দূর্নীতি এখন আমাদের রন্ধ্রে রক্তে শিরায় শিরায় মিশে গেছে। আপনিও যে নীতি কথা বলছেন, সেই আপনাকে সরকারি চেয়ার বা ক্ষমতায় বসিয়ে দিলে আপনিও সুযোগ পেলে দূর্নীতি বা ঘুষ ছাড়বেন না। এটি আমরা দেখতে দেখতে বড় হয়েছি, এভাবেই দেখে দেখে শিখে ফেলেছি। আজ আপনি বিদ্যুৎ বিল লাইনে দাড়িয়ে দিতে গেলেও ২০০ জনের পিছনে থেকে চিন্তা করেন কিভাবে ১৯০ জনের আগে গিয়ে বিদ্যুৎ বিল দিতে পারেন। তাতে ১০০ টাকা বেশি খরচ হলেও ৩ ঘন্টা সময় আপনার বেচে যাবে। এভাবে প্রতিটি এক্ষেত্রেই বিলম্ব হবে ভেবেই আপনি চিন্তা করেন দ্রুত কিভাবে অল্প সময়ে কাজটি সম্পন্ন করা যায়। স্বয়ংসম্পন্ন জ্ঞানী ও দক্ষ জানুয়া লোকটি বিসিএস পাশ করে চিন্তুা করে যে কিভাবে দ্রুত বড় হওয়া যায় সে নীতি হোক বা দূনীর্তি দিয়ে। বর্তমানে দূর্নীতি দমন কমিশন জননেত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে দেশ থেকে দূর্নীতি দমনের অভিযান চালাচ্ছে। ধন্যবাদ দেশনেত্রী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা-কে।
তারপরও ব্যতিক্রম রয়েছে কিন্তু ব্যতিক্রম কখনও এক্সামপল হতে পারে না।
আরও দেখুন: বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তালিকা।
বিস্তারিত জানুন: স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পেনশন ও গ্র্যাচুইটির হিসাব।