সরকারি চাকরি মানেই লক্ষ লক্ষ টাকা বেতন এমনটি নয়। ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের চাকরি শুরুতে বেতন ৮২৫০ টাকা দিয়ে শুরু হয় সব মিলিয়ে ১৫ হাজার টাকার মতন বেতন পায়-যাদের চাকরির বয়স ১০ বছর তাদের বেতন ভাতাদি সব মিলিয়ে ২০-২২ হাজার টাকা মাত্র-সরকারি চাকরিতে ১৫,০০০ টাকা বেতন ২০২৪
বিগত সরকারের আমলে সুযোগ সুবিধা কমছে? হ্যাঁ। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় হতে ২০০৯ সালের পে স্কেল পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট ধাপ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে বেতন বৃদ্ধির সুবিধা ছিল এবং পদোন্নতি না পেলেও টাইম স্কে পাওয়া যেত। ফলে বেতন ভাতাদি বৃদ্ধি যেমন থেকে যেত না ঠিক একই ভাবে চাকরির শেষ পর্যায়ে গিয়ে বেতন ভাতাদি সন্তোষজন পর্যায়ে পৌছে যেত এবং পদোন্নতি বঞ্চিত পদে থেকে ভাল বেতনে চাকরি শেষ করা যেত। অষ্টম জাতীয় পে স্কেল ২০১৫ জারি হওয়াতে শুধু দ্বিগুন বেতন বৃদ্ধি পেয়ে স্লোগান ছাড়া নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীগণ কিছুই পায়নি বরং বিভিন্ন সুবিধা সংকুচিত করে তাদের ঠাকানো হয়েছে।
মাথাপিছু স্বীকৃত আয়ের চেয়েও সরকারি বেতন কম? হ্যাঁ। রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে পরিবার নিয়ে ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। বাংলাদেশে বছরে মাথাপিছু ২ হাজার ৭৮৪ ডলারের সমপরিমাণ অর্থাৎ ১২০ টাকা ডলার হিসেবে ৩,৩৪,০৮০ টাকা সে হিসেবে ১২ দিয়ে ভাগ করলে প্রতি মাসে সর্বনিম্ন বেতন ২৭,৮৪০ টাকা হওয়া উচিত। ২০ গ্রেডের একজন সরকারি কর্মচারী সর্বনিম্ন বেতন কিভাবে মাথাপিছু আয় থেকে কম হতে পারে সেটি সভ্য সমাজের ভেবে দেখা উচিত। একজন অটো চালক থেকে দিন মজুর গড়ে মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করছে সেখানে একজন সরকারি কর্মচারীর সর্বনিম্ন সাকুল্য বেতন কিভাবে ১৫ হাজার টাকা হতে পারে সেটি আমার বোধগম্য নয়। এখন মহার্ঘ ভাতা দেওয়া কথা উঠছে সেখানে আলোচনা আসছে ২০ শতাংশ বা ২০০০ টাকা জন প্রতি নিম্নগ্রেডের কর্মচারীদের দেওয়া হতে পারে। বর্তমান বাজার বিবেচনা করে কোনভাবে মাথাপিছু আয় হতে সর্বনিম্ন মোট বেতন নির্ধারিত থাকা মানেই দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা।
সর্বনিম্ন বেতন ত্রিশ হাজার টাকা হওয়া উচিত? হ্যাঁ। ২০১৫ সালে ৮ হাজার ২০০ টাকা মূল বেতনে চাকরি শুরু করা একজন নিম্ন পদের কর্মচারী মাসে সব মিলিয়ে ১৫ হাজার ৩০০ টাকা বেতন পান। সেই একই কর্মচারী ২০২৪ সালে ১২ হাজার ২৪০ টাকা মূল বেতনে মাসে সব মিলিয়ে এখন ২১ হাজার টাকা বেতন পান। এ হিসাব আবার ঢাকার বাইরে আরও কম। এর ভেতর প্রায় ১০ বছর অতিবাহিত হয়েছে। এই সময়ে বাজারমূল্য, ডিজেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির তুলনা করলে এই কর্মচারীর বেতন কমে গেছে। মাথা পিছু আয় এবং বর্তমান বাজার পরিস্থিতি চিন্তা করে সর্বনিম্ন বেতন অবশ্যই ৩০ হাজার টাকা করা উচিৎ যাতে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীগণ মৌলিক চাহিদা পূরণ করে সাধারণ দুর্নীতিমুক্ত জীবন যাপন করতে পারে।
পে স্কেল নাকি মহার্ঘভাতা দেওয়া উচিৎ?
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ২০২০/২১ সালেই আমাদের পে–স্কেল দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কদিন পরই ২০২৫ সাল। পে–স্কেল নেই। মুদ্রাস্ফীতির চাপ সামলাতে সব রকম পরিবেশ–পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার কথা জানায়। অনেক সরকারি চাকরিজীবী মুখে রুমাল বেঁধে টিসিবির গাড়ি থেকে পণ্য কেনেন। সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল বেতনে সর্বসাকল্যে ১৫ হাজার টাকা আসে। এই ১৫ হাজার টাকা দিয়ে কেমন করে একটা পরিবার চলে! যদি রাষ্ট্র বাজারমূল্য, ডিজেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম ২০১৫ সালের মতো করে দিতে পারে, তবে ১০-২০ গ্রেডের সরকারি কর্মচারীরা নতুন পে-স্কেল বা মহার্ঘ ভাতা বা অন্য কিছুই চাইবেন না।