Govt. Staff Training Manual 2025 । সরকারি কর্মচারীদের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৬০ ঘণ্টার নতুন প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল প্রকাশ?
নিয়োগ বিধি, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও আইসিটি মডিউল অন্তর্ভুক্ত করে বার্ষিক প্রশিক্ষণের রূপরেখা চূড়ান্ত- সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা ও পেশাগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও ট্রেনিং (সিপিটি) অনুবিভাগ কর্তৃক ‘বাৎসরিক ৬০ ঘণ্টাব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির’ নতুন ম্যানুয়াল (Training Manual 2025) প্রকাশ করা হয়েছে।
২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে প্রণীত এই ম্যানুয়ালটিতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বাধ্যতামূলক বার্ষিক প্রশিক্ষণের বিস্তারিত রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হলো কর্মচারীদের দাপ্তরিক কাজে আরও বেশি দক্ষ ও কার্যকর করে তোলা।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বিভাজন
ম্যানুয়াল অনুযায়ী, ১০ম থেকে ১৬তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত মোট ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণকে তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে:
প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ: ২৫ ঘণ্টা (প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠিত হবে)।
মাঠ পর্যায়ে ‘দক্ষতা নবায়ন প্রশিক্ষণ’: ২৫ ঘণ্টা (কর্মক্ষেত্রে হাতে-কলমে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য)।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক প্রশিক্ষণ: ১০ ঘণ্টা (আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জনের জন্য)।
গুরুত্বপূর্ণ মডিউল এবং বিষয়বস্তু
প্রশিক্ষণের মডিউলগুলোতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক, আর্থিক ও আইনি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা সরকারি কর্মচারীদের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অপরিহার্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় হলো:
১. সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত:
নিয়োগ বিধি প্রণয়ন, সংশোধন, ও অনুমোদন প্রক্রিয়া।
পদ সৃজন, সংরক্ষণ, স্থায়ীকরণ এবং অর্গানোগ্রাম প্রণয়ন ও অনুমোদন প্রক্রিয়া।
পদোন্নতি, উচ্চতর গ্রেড এবং ইনক্রিমেন্ট প্রদানের নীতিমালা ও পদ্ধতি।
জাতীয় নিরাপত্তা ও দাপ্তরিক গোপনীয়তা রক্ষায় অনুসরণীয় সতর্কতা।
দেওয়ানী মোকাদ্দমায় সরকারের স্বার্থ সংরক্ষণে করণীয়।
২. আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত:
দাপ্তরিক ক্রয় ব্যবস্থাপনা ও পদ্ধতিসমূহ।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (ADP) এবং বাজেট প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনা।
অডিট আপত্তির ব্রডশিট জবাব প্রস্তুত ও আপত্তি নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া।
পেনশন ও গ্রাচুইটি সম্পর্কিত বিধি বিধান ও নির্ধারণ পদ্ধতি।
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের ধারণা ও প্রকল্প চক্র (Project cycle) সম্পর্কে মৌলিক ধারণা।
এই নতুন এবং সুসংগঠিত প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল সরকারি কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি এবং দেশের প্রশাসনিক কাজে আরও বেশি গতিশীলতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পূর্বের প্রশিক্ষন ম্যানুয়ালের সাথে বর্তমান ম্যানুয়ালের পার্থক্য কি?
‘Training Manual 2025’ এবং গুগল অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে পূর্ববর্তী প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালের (যা ২০১৬ সালে প্রণীত হয়েছিল) সাথে বর্তমান ম্যানুয়ালের প্রধান পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো: যেহেতু পূর্ববর্তী ২০১৬ সালের ম্যানুয়ালটির সম্পূর্ণ পাঠ্য এখানে নেই, তাই পার্থক্যগুলো মূলত নতুন ম্যানুয়াল প্রণয়নের কারণ, উদ্দেশ্য এবং কাঠামোগত পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হলো।
পূর্ববর্তী ম্যানুয়ালের সাথে বর্তমান (২০২৫) প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালের প্রধান পার্থক্যসমূহ
| তুলনার বিষয় | পূর্ববর্তী প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল (মূলত ২০১৬ সালের ম্যানুয়াল) | বর্তমান প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল (নভেম্বর, ২০২৫) |
| ১. প্রণয়নের ভিত্তি/কারণ | এটি ২০১৬ সালে সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রণীত হয়েছিল। | এটি মূলত “প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা, ২০২৩”-এর আলোকে প্রণীত। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে আইন-কানুন, বিধি-বিধান এবং কার্য-পরিচালনার পদ্ধতি ও কৌশল পরিবর্তনের ফলে এটি হালনাগাদ করা হয়েছে। |
| ২. প্রশিক্ষণের সময়সীমা | প্রতি অর্থবছরে কর্মচারীদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের নির্দিষ্ট ৬০ ঘণ্টা সময়সীমা ছিল না বা এটি নতুন নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত ছিল না। | প্রতি অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ন্যূনতম ৬০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটি নীতিমালার প্রধান নির্দেশনা। |
| ৩. প্রশিক্ষণের স্তর ও বিভাজন | প্রশিক্ষণের বিভাজন (যদি থাকত) বর্তমান কাঠামোর মতো সুনির্দিষ্ট ছিল না। | ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণকে সুনির্দিষ্ট ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে: ১. প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ (২৫ ঘণ্টা), ২. মাঠ পর্যায়ে ‘দক্ষতা নবায়ন প্রশিক্ষণ’ (২৫ ঘণ্টা), ও ৩. আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ (১০ ঘণ্টা)। |
| ৪. প্রশিক্ষণের নাম পরিবর্তন | সম্ভবত “সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণ” (Sanjibani Training) নামে প্রশিক্ষণ চালু ছিল। | “সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণ” নামটি পরিবর্তন করে “দক্ষতা নবায়ন প্রশিক্ষণ” (Skill Upgradation Training) নামে অভিহিত করা হয়েছে। |
| ৫. কারিকুলামের বিষয়বস্তু | ২০১৬ সালের পুরোনো আইন, বিধি-বিধান ও দাপ্তরিক কার্যপ্রণালীর উপর ভিত্তি করে রচিত ছিল। | দাপ্তরিক কাজে পরিবর্তিত নতুন আইন, বিধি-বিধান, প্রযুক্তি ও কার্যপ্রণালী সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। যেমন: |
| * নতুন নিয়োগ বিধি প্রণয়ন প্রক্রিয়া। | ||
| * বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (ADP) এবং বাজেট প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনা। | ||
| * অডিট আপত্তির ব্রডশিট জবাব প্রস্তুতের হালনাগাদ প্রক্রিয়া। | ||
| ৬. প্রযুক্তির উপর গুরুত্ব | আইসিটি প্রশিক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট ও বাধ্যতামূলক সময়সীমা কম ছিল বা নাও থাকতে পারে। | আইসিটি জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বাধ্যতামূলক ১০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ডিজিটাল গভর্নেন্সের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। |
| ৭. টার্গেট গ্রেড | সম্ভবত ১০ম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ছিল, কিন্তু বর্তমান ম্যানুয়ালে ১০ম থেকে ১৬তম গ্রেড-এর কর্মচারীদের জন্য প্রশিক্ষণের মডিউলগুলো বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে (তবে বাজেট প্রাপ্তি সাপেক্ষে ২০তম গ্রেড পর্যন্তও প্রযোজ্য)। | ম্যানুয়ালের বেশিরভাগ মডিউল ১০ম থেকে ১৬তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে তাদের প্রশাসনিক ও আর্থিক জ্ঞান বৃদ্ধির উপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। |
সংক্ষেপে বলা যায়, বর্তমান ম্যানুয়ালটি (২০২৫) পূর্বের ২০১৬ সালের ম্যানুয়ালটির একটি হালনাগাদ ও কাঠামোগত সংস্কার, যা ২০২৩ সালের নতুন প্রশিক্ষণ নীতিমালার আলোকে তৈরি করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারি কর্মচারীদের জন্য বার্ষিক ৬০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করে আধুনিক প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের সাথে তাল মিলিয়ে তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করা।


