আয়কর । ভ্যাট । আবগারি শুল্ক

চলতি করবর্ষ ২০২৫-২০২৬ । আয়কর স্ল্যাব এবং এলাকা ভিত্তিক ন্যূনতম কর কত দিতে হবে?

সাধারণত প্রতি বছর আয়কর দিতে হয়, তবে এটি নির্ভর করে আপনার আয় এবং অন্যান্য কিছু শর্তের ওপর। সংক্ষেপে বলতে গেলে, একজন করদাতা যদি আয়কর আইন অনুযায়ী করযোগ্য হন, তাহলে তাকে প্রতি বছর তার অর্জিত আয়ের ওপর কর দিতে হয় এবং কর রিটার্ন জমা দিতে হয়– চলতি করবর্ষ ২০২৫-২০২৬

কর বর্ষ ও আয় বর্ষ কি? কর বর্ষ (Assessment Year) এবং আয় বর্ষ (Income Year) দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা আয়কর ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয়। এই দুটি ধারণার মধ্যে পার্থক্য বোঝা একজন করদাতার জন্য খুবই জরুরি। আয় বর্ষ হলো সেই সময়কাল, যে সময়ে একজন করদাতা তার আয় অর্জন করেন। বাংলাদেশে সাধারণত ১লা জুলাই থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী বছরের ৩০শে জুন পর্যন্ত এই ১২ মাসের সময়কালকে আয় বর্ষ হিসেবে ধরা হয়। এই সময়ের মধ্যে অর্জিত সকল আয়ের উপর কর নির্ধারিত হয়।

উদাহরণ: যদি কোনো ব্যক্তির আয়বর্ষ হয় ১লা জুলাই ২০২৪ থেকে ৩০শে জুন ২০২৫, তাহলে এই সময়ের মধ্যে তিনি যে আয় করেছেন, সেই আয়ের হিসাব তাকে দিতে হবে। কর বর্ষ হলো সেই সময়কাল, যে বছরে করদাতা তার পূর্ববর্তী আয় বর্ষে অর্জিত আয়ের উপর কর প্রদান করেন। অর্থাৎ, আয় বর্ষের ঠিক পরের বছরটিই হলো কর বর্ষ। এই বছরেই করদাতা তার আয়কর রিটার্ন জমা দেন এবং কর পরিশোধ করেন।

উদাহরণ: যদি কোনো ব্যক্তির আয়বর্ষ হয় ১লা জুলাই ২০২৪ থেকে ৩০শে জুন ২০২৫, তাহলে তার করবর্ষ হবে ২০২৫-২০২৬। অর্থাৎ, ২০২৫-২০২৬ সালের মধ্যে তাকে ২০২৪-২০২৫ সালের আয়ের উপর কর দিতে হবে।সংক্ষেপে, আয় বর্ষ এবং কর বর্ষের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো: আয় বর্ষ: যে বছর আয় করা হয়। কর বর্ষ: যে বছর সেই আয়ের উপর কর হিসাব করে জমা দেওয়া হয়।

২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে কত টাকা আয় হলে কর দিতে হবে না? ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের জন্য আয়করমুক্ত আয়ের সীমা বিভিন্ন শ্রেণির করদাতার জন্য ভিন্ন ভিন্ন। একজন সাধারণ করদাতার জন্য বার্ষিক ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত। নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী করদাতা: এই শ্রেণির করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা হলো ৪,০০,০০০ টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি: তাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৪,৭৫,০০০ টাকা। গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা: এই শ্রেণির করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সর্বোচ্চ সীমা ৫,০০,০০০ টাকা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনি অভিভাবক: যদি কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা ও মাতা উভয়েই করদাতা হন, তাহলে যে কোনো একজন অতিরিক্ত ৫০,০০০ টাকা করমুক্ত আয়ের সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ, একজন সাধারণ করদাতার ক্ষেত্রে, তার বার্ষিক আয় যদি ৩,৫০,০০০ টাকার নিচে হয়, তবে তাকে কোনো কর দিতে হবে না। তবে, যদি আয় এই সীমার বেশি হয়, তাহলে অতিরিক্ত আয়ের উপর নির্দিষ্ট হারে কর প্রযোজ্য হবে। এই তথ্যগুলো ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের জন্য প্রযোজ্য, যা ২০২৫-২০২৬ কর বছরে কার্যকর হবে।

টিআইএন সার্টিফিকেট আছে মানেই আপনাকে প্রতি বছর রিটার্ন দাখিল করতে হবে তা আপনার আয় থাকুক বা না থাকুক। তবে করযোগ্য আয় থাকলে ন্যূনতম কর পরিশোধ করতে হবে আপনি যে এলাকায় থাকেন বা চাকরি করেন সেই অঞ্চল বা এরিয়া অনুসারে এটি নির্ণয় করা হয়।

মূলত, যাদের আয় করমুক্ত সীমার উপরে, তাদের কর দিতে হবে। বাংলাদেশের আয়কর আইন অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণির করদাতাদের জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক, এমনকি যদি তাদের আয় করমুক্ত সীমার নিচেও হয়।

Caption: আয়কর আইন ২০২৪-২৫ ডাউনলোড করুন

আয়কর রিটার্ন ২০২৫ । কিছু উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো, যাদের জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক:

  1. যাদের বার্ষিক আয় নির্দিষ্ট করমুক্ত সীমার (যেমন: সাধারণ করদাতার ক্ষেত্রে ৩,৫০,০০০ টাকা) বেশি।
  2. যাদের একটি ১২-সংখ্যার টিআইএন (Taxpayer Identification Number) সার্টিফিকেট আছে। টিআইএন থাকলে সাধারণত প্রতি বছর রিটার্ন জমা দিতে হয়, এমনকি যদি আপনার আয় করযোগ্য না-ও হয় (এই ক্ষেত্রে “শূন্য রিটার্ন” জমা দেওয়া যায়)।
  3. যাদের একটি গাড়ি আছে।
  4. যারা সিটি কর্পোরেশন বা জেলা শহরে একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিক।
  5. যারা কোনো পেশাদারী কাজে যুক্ত (যেমন: ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী)।
  6. কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার বা পরিচালক।
  7. ঠিকাদার বা সরকারি টেন্ডারে অংশ নেওয়া ব্যক্তি।

আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় কখন?

কোম্পানি ব্যতীত অন্যান্য করদাতার জন্য প্রতি বছর ১লা জুলাই থেকে ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। এই সময়সীমাকে “করদিবস” বলা হয়। যদি কোনো কারণে এই সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা যেতে পারে। সুতরাং, যদি আপনার আয় করযোগ্য সীমার উপরে থাকে অথবা যদি আপনি উপরের উল্লিখিত কোনো শর্তের আওতায় পড়েন, তাহলে আপনাকে প্রতি বছরই আয়কর দিতে হবে এবং রিটার্ন জমা দিতে হবে।

একজন সরকারি কর্মচারীর আয়কর কিভাবে হিসাব করতে হয়?

২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের করযোগ্য আয় নির্ধারণের নিয়ম:

  • মূল বেতন: এটি সম্পূর্ণ করযোগ্য।
  • বোনাস: (যেমন: উৎসব ভাতা ও নববর্ষ ভাতা) এটি সম্পূর্ণ করযোগ্য।
  • বাড়ি ভাড়া ভাতা: মূল বেতনের ৫০% অথবা মাসিক ২৫,০০০ টাকা (যেটি কম) পর্যন্ত করমুক্ত। এর অতিরিক্ত অংশ করযোগ্য।
  • চিকিৎসা ভাতা: বার্ষিক ১,২০,০০০ টাকা অথবা বার্ষিক মূল বেতনের ১০% (যেটি কম) পর্যন্ত করমুক্ত। এর অতিরিক্ত অংশ করযোগ্য।


ধরি কর্মচারীর মূল বেতন ২৫,৩২০ টাকা। এর ওপর ভিত্তি করে বার্ষিক আয়ের হিসাব নিচে দেওয়া হলো:

১. করযোগ্য আয় গণনা:

  • বার্ষিক মূল বেতন: ২৫,৩২০ টাকা × ১২ = ৩,০৩,৮৪০ টাকা
  • বার্ষিক বাড়ি ভাড়া ভাতা: মূল বেতনের ৫০% = ১২,৬৬০ টাকা (মাসিক)। বার্ষিক ১,৫১,৯২০ টাকা। করমুক্ত অংশ: ২৫,০০০ টাকা × ১২ = ৩,০০,০০০ টাকা। যেহেতু আপনার প্রাপ্ত ভাতা করমুক্ত সীমার কম, তাই বাড়ি ভাড়া ভাতা বাবদ কোনো করযোগ্য আয় হবে না।

  • বার্ষিক চিকিৎসা ভাতা: ১,৫০০ টাকা (মাসিক)। বার্ষিক ১৮,০০০ টাকা। করমুক্ত অংশ: মূল বেতনের ১০% = ৩,০৩,৮৪০ × ১০% = ৩০,৩৮৪ টাকা অথবা ১,২০,০০০ টাকা (যেটি কম)। যেহেতু আপনার প্রাপ্ত চিকিৎসা ভাতা করমুক্ত সীমার নিচে, তাই এটিও সম্পূর্ণ করমুক্ত থাকবে।
  • উৎসব ভাতা: ২৫,৩২০ টাকা × ২ = ৫০,৬৪০ টাকা (এটি সম্পূর্ণ করযোগ্য)।
  • নববর্ষ ভাতা: ২৫,৩২০ টাকার ২০% = ৫,০৬৪ টাকা (এটি সম্পূর্ণ করযোগ্য)।

মোট করযোগ্য আয়: ৩,০৩,৮৪০ টাকা (মূল বেতন) + ৫০,৬৪০ টাকা (উৎসব ভাতা) + ৫,০৬৪ টাকা (নববর্ষ ভাতা) = ৩,৫৯,৫৪৫ টাকা


২. প্রদেয় করের হিসাব

এখন এই করযোগ্য আয়ের ওপর কর নির্ণয় করা হবে। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের জন্য সাধারণ করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা হলো ৩,৫০,০০০ টাকা।

  • প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা: করমুক্ত।
  • অবশিষ্ট আয়: ৩,৫৯,৫৪৫ – ৩,৫০,০০০ = ৯,৫৪৫ টাকা।
  • অবশিষ্ট আয়ের ওপর কর: ৯,৫৪৫ টাকার ৫% = ৪৭৭.২৫ টাকা

৩. কর রেয়াত ও চূড়ান্ত করের হিসাব

আপনি প্রতি মাসে ৩,০০০ টাকা জিপিএফ-এ জমা দেন, যা বছরে ৩৬,০০০ টাকা। এই বিনিয়োগের জন্য আপনি ১৫% হারে কর রেয়াত পাবেন।

  • কর রেয়াতের পরিমাণ: ৩৬,০০০ টাকা × ১৫% = ৫,৪০০ টাকা

এখন, মোট প্রদেয় কর থেকে কর রেয়াত বাদ দিতে হবে।

  • মোট প্রদেয় কর: ৪৭৭.২৫ টাকা।
  • কর রেয়াত: ৫,৪০০ টাকা।

যেহেতু আপনার প্রদেয় করের চেয়ে কর রেয়াত বেশি, তাই আপনাকে কোনো কর দিতে হবে না। এক্ষেত্রে প্রদেয় করের পরিমাণ হবে শূন্য। তবে শুন্য কর হলেও ন্যূনতম কর ৩০০০ বা ৫০০০ টাকা দিতে হবে কর অঞ্চল অনুসারে যা আপনার জন্য প্রযোজ্য হইবে। এই হিসাবটি ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের আয়কর আইন অনুযায়ী করা হয়েছে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *