সার্ভিস রুলস । নীতি । পদ্ধতি । বিধি

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বদলির নিয়মাবলী: যোগদানকাল নিয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা

সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলির ক্ষেত্রে ‘যোগদানকাল’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদানের জন্য যে নির্দিষ্ট সময়সীমা প্রদান করা হয়, তাকেই যোগদানকাল বলা হয়। সম্প্রতি, সরকারি বিধিমালা (এফ আর-৯(১০)) অনুসারে এই যোগদানকাল সংক্রান্ত বিভিন্ন নিয়মাবলী এবং এর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা চলছে। সময়মতো যোগদান না করলে কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন, সে বিষয়েও বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

যোগদানকাল কখন প্রাপ্য হবেন?

সাধারণত, একজন সরকারি কর্মচারীকে নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে যোগদানকাল দেওয়া হয়:

  • এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে বদলি হলে।
  • ৪ মাসের কম সময়ের ছুটি থেকে ফিরে এসে অন্য স্টেশনে বদলি হলে।
  • ৪ মাসের বেশি ছুটি থেকে ফিরে আসার পর পর্যাপ্ত সময়ের নোটিশ ছাড়া বদলি হলে।
  • বিদেশে ৪ মাসের বেশি ছুটি কাটিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসার পর কর্মস্থলে ভ্রমণের জন্য।
  • দূর্গম বা দূরবর্তী স্থানে বদলি হলে।

যোগদানকাল হিসাবের পদ্ধতি

যোগদানকাল হিসাব করার জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে:

  • প্রস্তুতির জন্য ৬ দিন।
  • ভ্রমণের দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে অতিরিক্ত সময়: যেমন, রেলপথে প্রতি ২৫০ মাইল বা ৪০০ কিমি দূরত্বের জন্য ১ দিন। সড়ক পথে বা স্টিমারে ভ্রমণের জন্যও আলাদা হিসাব রয়েছে।
  • অনুমোদিত সাপ্তাহিক ছুটি বা সরকারি ছুটিগুলো যোগদানকালের অতিরিক্ত হিসাবে গণ্য হবে।

উল্লেখ্য, বদলিকৃত কর্মস্থলে দায়িত্ব হস্তান্তরের পরের দিন থেকে যোগদানকাল গণনা শুরু হয় এবং সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত এই সময়কাল প্রাপ্য হতে পারে।

যোগদানকালীন বেতন ও বিলম্বে যোগদানের ফলাফল

যোগদানকালে কর্মচারীরা কার্যরত অবস্থায় যে বেতন পেতেন, সেই হারেই বেতন প্রাপ্য হবেন। তবে, অসাধারণ ছুটি বা বিনা বেতনের ছুটির ক্ষেত্রে কোনো বেতন দেওয়া হবে না।

যদি কোনো কর্মচারী নির্ধারিত সময়ের পর নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেন, তবে তাকে গুরুতর পরিণতির সম্মুখীন হতে হতে পারে। বিলম্বে যোগদান করলে:

  • ওই সময়ের জন্য কোনো বেতন প্রাপ্য হবেন না।
  • বার্ষিক বর্ধিত বেতনের তারিখ পিছিয়ে যাবে।
  • ওই সময়কাল পেনশনযোগ্য চাকরি হিসেবে গণ্য হবে না।
  • ইচ্ছাকৃত বিলম্বকে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হতে পারে।

একই জেলায় বদলি হলে কি হবে?

এসআর ২৯৩ এবং বিএসআর ৮২ অনুযায়ী, একই স্টেশনের এক অফিস থেকে অন্য অফিসে বদলি হলে সরকারি কর্মচারী শুধুমাত্র ১ দিনের যোগদানকাল প্রাপ্য হবেন।

যোগদানকাল কি বাড়ানো যায়?

বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে, যেমন অসুস্থতার কারণে বা অন্য কোনো অনিবার্য পরিস্থিতিতে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে যোগদানকাল বাড়ানো যেতে পারে। তবে, কর্তৃপক্ষ চাইলে এই সময়সীমা কমাতে বা বাড়াতে পারেন।

সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বদলির এই নিয়মাবলী সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। কারণ, পারিবারিক ও অন্যান্য প্রস্তুতির জন্য সময় প্রয়োজন হলেও, বিলম্বে যোগদান করলে তা কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতিই নয়, সার্ভিস রেকর্ডকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই, প্রতিটি কর্মচারীর উচিত নিয়ম মেনে নির্ধারিত সময়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করা।

যোগদানকাল সর্বোচ্চ কত দিন পাওয়া যায়?

একজন সরকারি কর্মচারী সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত যোগদানকাল পেতে পারেন। এই সময় সাপ্তাহিক ছুটিসহ গণনা করা হয়।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *