ইত্যাদি । বিবিধ । ক্যাটাগরী বিহীন তথ্য

জনস্বার্থে ব্যবহৃত ভূমি চিরস্থায়ীভাবে সংরক্ষিত ২০২৫ । নদী-খাল, পার্ক-মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন বা বন্দোবস্ত দেওয়া যাবে না—সরকারি নির্দেশ?

ঢাকা: সকল প্রকার জনগুরুত্বপূর্ণ ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন এবং ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক বন্দোবস্ত (লিজ/দখল) দেওয়া চিরতরে নিষিদ্ধ করে গুরুত্বপূর্ণ পরিপত্র জারি করেছে সরকার। নদী, খাল, বিল, রাস্তা, ঘাট, পুকুর, পার্ক, খেলার মাঠ, কবরস্থান, শ্মশানসহ জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত সকল প্রকার খাস জমিকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


মূল নির্দেশনার সারসংক্ষেপ

ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এই নতুন পরিপত্রে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত জমি—যেমন: নদী, খাল, বিল, রাস্তা, ঘাট, নালা, পয়ঃপ্রণালী, পুকুর, বাঁধ, কবরস্থান, শ্মশান, পার্ক, খেলার মাঠ, গোপাট (পশুর চলাচলের পথ), ডোবা, জলাশয় ইত্যাদি—এগুলো খাস জমি হলেও কোনো অবস্থাতেই সেগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন করা বা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া যাবে না।

চিরস্থায়ী সংরক্ষণ ও ক্ষমতা খর্ব

পরিপত্র অনুযায়ী, এই সকল জমি জনস্বার্থে চিরস্থায়ীভাবে সংরক্ষিত থাকবে। এর ফলে, জনস্বার্থবিরোধী যেকোনো পদক্ষেপ রোধ করা সম্ভব হবে।

  • বন্ধ হলো প্রস্তাবনা: জেলা প্রশাসক বা অন্য কোনো সংশ্লিষ্ট দপ্তর এই সংরক্ষিত জমি ব্যক্তিগতভাবে হস্তান্তরের জন্য কোনো প্রস্তাব ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারবে না।
  • উদ্দেশ্য: এই কঠোর নির্দেশনার মূল লক্ষ্য হলো জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি রক্ষা করা এবং ভূমিদস্যুদের হাত থেকে এই সম্পত্তিগুলোকে দখলমুক্ত রাখা।

প্রাকৃতিক পরিবর্তন ও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা

তবে যদি প্রাকৃতিক কারণে এসব জমির প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে যায় (যেমন নদী শুকিয়ে গেছে বা খাল ভরাট হয়েছে), সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের এই নতুন নির্দেশনার ফলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর অবৈধ দখল অনেকাংশে হ্রাস পাবে এবং সাধারণ মানুষের অধিকার সুরক্ষিত হবে।

সরকারি কোন জমিগুলো লিজ নেয়া যায়?

খাস জমি বলতে বোঝায় যে জমি সরকারের হাতে ন্যস্ত এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন, যা সরকার কর্তৃক প্রণীত পদ্ধতি অনুযায়ী বন্দোবস্ত (লিজ/পট্টন) দেওয়া যেতে পারে।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, প্রধানত দুই ধরনের খাস জমি শর্ত সাপেক্ষে লিজ নেওয়া যেতে পারে: কৃষি খাস জমি এবং অকৃষি খাস জমি। এখানে কোন কোন জমি লিজ নেওয়া যেতে পারে এবং কাদের দেওয়া হয়, তার একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা দেওয়া হলো:


১. কৃষি খাস জমি (Agricultural Khas Land)

কৃষি খাস জমি সাধারণত ভূমিহীন পরিবারকে বন্দোবস্ত (লিজ) দেওয়া হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো ভূমিহীন কৃষিনির্ভর পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করা।

  • কারা পান: কেবল ভূমিহীন পরিবার (যাদের বসতবাড়ি ও কৃষি জমি কিছুই নেই, বা ১০ শতাংশ পর্যন্ত বসতবাড়ি আছে কিন্তু কৃষিযোগ্য জমি নেই—এমন কৃষিনির্ভর পরিবার) এই জমি লিজের জন্য আবেদন করতে পারে।
  • উদ্দেশ্য: কৃষি কাজ, বসতবাড়ি নির্মাণ এবং জীবিকা নির্বাহ।
  • মেয়াদ: সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী (যেমন, ৯৯ বছরের জন্য) লিজ দেওয়া হয়।
  • নিয়ম: ভূমিহীন হিসেবে আবেদন করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে লিজ নিতে হয়।

২. অকৃষি খাস জমি (Non-Agricultural Khas Land)

অকৃষি খাস জমি বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে লিজ দেওয়া হয়, যা সাধারণত বাণিজ্যিক, শিল্প, দাতব্য বা বিশেষ সরকারি কাজে ব্যবহার করা হয়।

লিজ পাওয়ার ক্ষেত্রলিজের উদ্দেশ্যশর্ত ও নিয়ম (সংক্ষেপে)
ব্যক্তিগত/বাণিজ্যিকমেট্রোপলিটন এলাকা, পৌর এলাকা ও অন্যান্য শহর অঞ্চলে বাণিজ্যিক, শিল্প, বা ব্যক্তিগত অকৃষি ব্যবহারের জন্য।নিলামের মাধ্যমে: সাধারণত বাজারের প্রচলিত মূল্য অনুযায়ী সেলামি দিয়ে লিজ নিতে হয়।
সরকারি সংস্থাসরকারি দপ্তর বা সংস্থার অফিস, বাসস্থান বা অন্যান্য সরকারি কাজের জন্য।বাজার দর অনুযায়ী জমির উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ করতে হয়।
ধর্মীয় ও দাতব্যধর্মীয় উপাসনালয় (মসজিদ, মন্দির, গির্জা), এতিমখানা, কবরস্থান ও শ্মশানঘাট স্থাপনের জন্য।বিশেষ ছাড়: সাধারণত বাজার মূল্যের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ (যেমন ১০%) মূল্যে বন্দোবস্ত দেওয়া যায়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানশিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ) স্থাপনের জন্য।বিশেষ ছাড়: সাধারণত বাজার মূল্যের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ (যেমন ১০%) মূল্যে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়।
বিশেষ খামারগবাদিপশু বা দুগ্ধ খামার, হাঁস-মুরগীর খামার স্থাপনের জন্য (শহর অঞ্চলের বাইরে)।সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকল্পের অনুমোদন সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত জমি লিজ দেওয়া যেতে পারে।

🚫 যে জমিগুলো লিজ দেওয়া যায় না (স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত)

আপনার প্রথম প্রশ্নে উল্লিখিত পরিপত্র অনুযায়ী, জনসাধারণের ব্যবহার্য নিম্নলিখিত জমিগুলো লিজ/বন্দোবস্ত দেওয়া যাবে না এবং এগুলো স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত থাকবে:

  • নদী, খাল, বিল, ডোবা, জলাশয়, পুকুর, বাঁধ (প্রাকৃতিক জলাধার)।
  • রাস্তা, ঘাট, নালা, পয়ঃপ্রণালী, গোপাট (জনসাধারণের চলাচলের পথ)।
  • কবরস্থান, শ্মশান, পার্ক, খেলার মাঠ (জনকল্যাণমূলক স্থাপনা)।

এই জমিগুলো জনস্বার্থে ব্যবহৃত হওয়ায়, এগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন বা ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নামে লিজ দেওয়ার সুযোগ নেই।

সরকারি জমি লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে আবেদন প্রক্রিয়া, শর্তাবলী এবং সেলামির হার ইত্যাদি নীতিমালা ও পরিপত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিস্তারিত এবং হালনাগাদ তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক (DC) বা সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *