পেনশনভোগীদের কান্না: মূল্যস্ফীতির বাজারে টিকে থাকা কঠিন
দেশের অগণিত পেনশনভোগীর জীবন আজ এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। বছরের পর বছর ধরে দেশের সেবা করার পর অবসর জীবনটা যখন একটু শান্তিতে কাটানোর কথা, তখন মূল্যস্ফীতি আর সীমিত আয়ের চাপ তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তাদের মাসিক পেনশন, যা একসময় জীবনযাত্রার খরচ মেটানোর জন্য যথেষ্ট ছিল, এখন তা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামের কাছে একেবারেই অপ্রতুল।– পেনশনভোগীদের কান্না: মূল্যস্ফীতির বাজারে টিকে থাকা কঠিন
আয়ের সাথে ব্যয়ের অসঙ্গতি? জি। বেশ কয়েকজন পেনশনভোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের মূল সমস্যা হলো সীমিত পেনশন দিয়ে বর্তমান বাজারের খরচ মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে। একজন পেনশনভোগীর মাসিক আয় যদি ৫,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা হয়, তাহলে তার পক্ষে বর্তমান বাজারদরে জীবনধারণ করা প্রায় অসম্ভব। তাঁদের অভিযোগ, সরকার প্রতি বছর যে ৫% বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেয়, তা দিয়ে মূল্যস্ফীতির সাথে তাল মেলানো যায় না। চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে সবজি, মাছ, মাংস—সবকিছুর দামই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
চিকিৎসা খরচ এক বিশাল বোঝা? হ্যাঁ। পেনশনভোগীদের জন্য আরেকটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ হলো চিকিৎসা খরচ। বয়স্কদের জন্য নিয়মিত ওষুধপত্র কেনা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। মাসিক ১৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা দিয়ে এই খরচ মেটানো হাস্যকর। অনেক পেনশনভোগী জানান, তাদের মাসে ১০,০০০ টাকার বেশি শুধু ওষুধের পেছনেই খরচ হয়। এই বিশাল খরচ মেটাতে গিয়ে তাদের পেনশনের বড় অংশই শেষ হয়ে যায়, যা তাদের খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি চাহিদা পূরণে বাধা সৃষ্টি করে।
সরকারের কাছে আবেদন কি? পেনশনভোগীদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জোরালো আবেদন, তাদের দুর্দশার দিকে নজর দেওয়া হোক। পেনশনের পরিমাণ বাড়ানো এবং চিকিৎসা ভাতা যুক্তিসঙ্গত করা এখন সময়ের দাবি। শুধু ৫% ইনক্রিমেন্ট নয়, বরং বর্তমান বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পেনশন কাঠামো নতুন করে সাজানো উচিত। একই সাথে, পেনশনভোগীদের জন্য সহজলভ্য ও উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দেশের হাজার হাজার পেনশনভোগীর জীবন আজ এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। বছরের পর বছর ধরে দেশের জন্য কাজ করার পর অবসর জীবনটা যখন শান্তিতে কাটানোর কথা, তখন সীমিত পেনশন এবং ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। পেনশনভোগীদের অভিযোগ, বর্তমান পেনশন গণনা পদ্ধতি এবং ভাতা তাদের জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট নয়।
১১-২০ গ্রেডের পেনশন চার্ট ২০২৫ । এই চার্টটি আপনার শেষ মূল বেতনের (Basic Pay) উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। একজন পেনশনভোগী তার শেষ মূল বেতনের ৪৫% পেনশন হিসেবে পান।
প্রবীণ এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। তারা তাদের জীবনের সেরা সময় দেশের জন্য উৎসর্গ করেছেন। এখন তাদের পাশে থেকে একটি সম্মানজনক ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। পেনশনভোগীরা আশা করেন, সরকার তাদের এই সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং তাদের মুখে হাসি ফোটাবে।

বাংলাদেশী পেনশনভোগীদের জন্য ১১ থেকে ২০ গ্রেডের একটি নতুন পেনশন চার্ট নিচে দেওয়া হলো, যেখানে পেনশন মূল বেতনের ৪৫% হারে গণনা করা হয়েছে এবং সাথে ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা যোগ করা হয়েছে। আপনার দেওয়া তথ্য সঠিক, এবং এটিই বর্তমানে নতুন পেনশনধারীদের জন্য প্রযোজ্য।
সর্বমোট মাসিক পেনশন ২০২৫-সরকারি কর্মচারী ১১-২০ গ্রেড যাদের তাদের মাসিক পেনশন কত?
- ৭,১০০ – ১৫,১০০ টাকা
- ৬,৬০০ – ১৩,৭৮৫ টাকা
- ৬,৪৫০ – ১৩,৪৫১ টাকা
- ৬,১০০ – ১২,৬১৬ টাকা
- ৫,৮৬৫ – ১২,০৭০ টাকা
- ৫,৬৯০ – ১১,৬০০ টাকা
- ৫,৫৫৬ – ১১,৩১০ টাকা
- ৫,৪৬০ – ১১,০৮৯ টাকা
- ৫,৩২৫ – ১০,৭৫৭ টাকা
- ৫,২১৪ – ১০,৫০৪ টাকা
৩০০০ টাকাও কি পেনশন পায়?
হ্যাঁ। সর্বনিম্ন পেনশন ৩০০০ টাকা যদি দুই বউ থাকে তবে সেটি আবার অর্ধেক হারে প্রাপ্য হইবেন। পেনশন গণনা আপনার পেনশন হিসাব করা হবে আপনার চাকরির শেষ মূল বেতনের ৪৫% হিসাবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার শেষ মূল বেতন ১২,৫০০ টাকা হয়, তাহলে আপনার মাসিক পেনশন হবে ১২,৫০০ × ৪৫% = ৫,৬২৫ টাকা। এর সাথে আপনার মাসিক চিকিৎসা ভাতা যোগ হবে। চিকিৎসা ভাতা বর্তমানে প্রতি পেনশনভোগীর জন্য মাসিক ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা নির্ধারিত আছে। সরকার যে নতুন জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা করবে, সেটি অনুযায়ী এই টেবিলের পরিমাণ বদলে যাবে। পেনশন হিসাবের সূত্র পেনশন = শেষ মূল বেতন× ৪৫% পেনশন=শেষ মূল বেতন×৪৫% অর্থাৎ মূল বেতন ৯০০০ টাকা হলে মাসিক পেনশন হবে ৪০৫০ টাকা। এডিশনাল হিসেবে ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পাবেন। সর্বমোট পেনশন ৫৫৫০ টাকা আসবে।
পেনশন গণনার জটিল হিসাব? না। বর্তমানে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একজন পেনশনভোগীর মাসিক পেনশন নির্ধারিত হয় তার চাকরির সর্বশেষ মূল বেতনের ৪৫% হারে। এই নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনো কর্মচারীর শেষ মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা হয়, তাহলে তার মাসিক পেনশন দাঁড়ায় মাত্র ৮,১০০ টাকা। এই সামান্য আয়ের সাথে মাসিক ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা যুক্ত হয়। পেনশনভোগীরা বলছেন, এই হিসাব বর্তমান বাজারদরের সাথে একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
| স্বল্প ভাতার বিপরীতে আকাশছোঁয়া খরচ মাসিক ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা বয়স্কদের জন্য অপ্রতুল। একজন পেনশনভোগীর নিয়মিত ওষুধপত্র এবং চিকিৎসার পেছনেই মাসে এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি খরচ হয়। যদিও নিয়ম অনুযায়ী, পেনশনভোগী এবং তার স্বামী বা স্ত্রী উভয়ই পেনশনভোগী হলে দু’জনই এই ভাতা পান, তবুও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। | পেনশনভোগীদের জন্য প্রতি বছর ৫% হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট যোগ করা হলেও এটি মূল্যস্ফীতির কাছে একেবারেই নগণ্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে এই সামান্য বৃদ্ধি কোনো কাজে আসছে না। ফলস্বরূপ, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। | আনুতোষিক: এককালীন স্বস্তি, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয় অবসরের সময় পেনশনভোগীরা এককালীন একটি বড় অঙ্কের টাকা পান, যা আনুতোষিক বা গ্র্যাচুইটি নামে পরিচিত। বর্তমানে, এটি শেষ বেতনের ২৫০ গুণ হিসেবে নির্ধারিত হয়। এই বড় অঙ্কের টাকা কিছু দিনের জন্য স্বস্তি দিলেও, এটি ভবিষ্যতের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানোর জন্য কোনো সমাধান নয়। মাসিক সীমিত পেনশনের কারণে তাদের দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না। |
সরকারের কাছে পেনশনভোগীদের জোরালো আবেদন, তাদের পেনশন কাঠামো এবং ভাতা পুনরায় বিবেচনা করা হোক। দেশের জন্য যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের শেষ বয়সে একটি সম্মানজনক এবং নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। পেনশনভোগীরা আশা করেন, সরকার তাদের এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।



