জাতীয় পে-কমিশন ২০২৫ । নতুন বেতন কাঠামো সুপারিশে গ্রেড বৈষম্য অবসানের প্রত্যাশা কর্মচারীদের?
জাতীয় পে-কমিশন, ২০২৫ (National Pay Commission, 2025) এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সুপারিশ পেশ না করলেও, সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে প্রত্যাশা বাড়ছে যে এবারের কমিশন বেতনের অনুপাত, গ্রেড সংখ্যা হ্রাস এবং সর্বনিম্ন বেতন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধির মতো মৌলিক বিষয়গুলিতে সুপারিশ করবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, যদি কমিশন এই ধরনের সাহসী পদক্ষেপ নেয়, তবে বিদ্যমান বেতন কাঠামোর বৈষম্য বহুলাংশে দূর হবে এবং নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা একটি স্বাভাবিক ও সম্মানজনক জীবন যাপন করতে সক্ষম হবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের মধ্যে যে বিশাল অনুপাত বিদ্যমান, তা সামাজিক বৈষম্যকে আরও গভীর করছে। একাধিক পে-স্কেল প্রণয়ন করা হলেও এই অনুপাতের উল্লেখযোগ্য হ্রাস ঘটেনি। যদি জাতীয় পে-কমিশন, ২০২৫ এই অনুপাতকে একটি যৌক্তিক সীমার মধ্যে নিয়ে আসার সুপারিশ করে—যেমন ১:৫ বা ১:৬—তবে উচ্চ ও নিম্ন স্তরের কর্মচারীদের মধ্যকার আর্থিক দূরত্ব কমবে।
এছাড়াও, পে-স্কেলের গ্রেড সংখ্যা নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন রয়েছে। অনেকে মনে করেন, বর্তমানে প্রচলিত ২০টি গ্রেড অত্যন্ত বেশি এবং এটি প্রশাসনের অভ্যন্তরে নানা জটিলতা সৃষ্টি করে। গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে আনা, বিশেষ করে উচ্চ স্তরের কিছু গ্রেডকে একীভূত করে সংখ্যাটি ১২ বা ১৪-তে নামিয়ে আনলে পদোন্নতি এবং বেতন কাঠামো আরও সরল হবে।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সর্বনিম্ন বেতন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণের জোর দাবি উঠেছে। যদি কমিশন সর্বনিম্ন বেতন এমনভাবে নির্ধারণ করে যা একজন নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীর পরিবারকে শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান এবং পুষ্টিকর খাবারের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষম করে, তবেই তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বস্তি পাবেন।
অর্থনীতিবিদ ড. এ কে আজাদ এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন, “পে-কমিশনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত সমতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা। যদি বেতনের অনুপাত ঠিক করা হয়, গ্রেড সংখ্যা হ্রাস করা হয় এবং সর্বনিম্ন বেতন একটি ‘লিভিং ওয়েজ’ (Living Wage) এর কাছাকাছি নিয়ে আসা হয়, তবে কেবল কর্মচারীরাই উপকৃত হবেন না, এটি সমাজে অর্থনৈতিক গতিশীলতা এবং উৎপাদনশীলতাও বাড়িয়ে তুলবে। এই সুপারিশগুলি বাস্তবায়িত হলে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান ঘটবে এবং তারা সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবেন।”
যদিও কমিশন এখনও কোনো সুপারিশ পেশ করেনি, সরকারি কর্মচারী সমিতিগুলো আশা প্রকাশ করেছে যে কমিশন তাদের সমস্যাগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে এবং এমন একটি বেতন কাঠামো সুপারিশ করবে যা বৈষম্যহীন, আধুনিক এবং সময়োপযোগী। এই প্রত্যাশিত সুপারিশগুলোই পারে সরকারের বিশাল সংখ্যক নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের নিশ্চয়তা দিতে।
দ্রষ্টব্য: এটি একটি অনুমিত পরিস্থিতি নিয়ে লেখা সংবাদ প্রতিবেদন। ব্যবহারকারী প্রদত্ত ছবিতে ১২টি গ্রেডের একটি ‘প্রস্তাবিত’ কাঠামোর উল্লেখ রয়েছে, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি আলোচনার বিষয়। তবে অনুরোধটি ছিল ‘যদি এই ধরণের সুপারিশ করে’ তার উপর ভিত্তি করে নিউজ তৈরি করা।

জাতীয় পে-কমিশন, ২০২৫ (National Pay Commission, 2025) নিয়ে সরকারের বক্তব্য ও সিদ্ধান্তসমূহ । নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের সময়সীমা
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ স্পষ্ট জানিয়েছেন যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই গ্যাজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে না। আগামী মার্চ বা এপ্রিল, ২০২৬ থেকে এটি কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর জন্য চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটেই তহবিল বরাদ্দ রাখা হবে।
পে কমিশন গঠন ও দায়িত্ব
- ২০২৪ সালের ২৪ জুলাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্য জাতীয় পে কমিশন, ২০২৫ গঠন করা হয়েছে।
- কমিশনের চেয়ারম্যান হলেন সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান।
- কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে (অর্থাৎ ডিসেম্বরের মধ্যে) সরকারের কাছে তাদের সুপারিশ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিশন চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করেছেন যে নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা প্রতিবেদন জমা দিতে পারবেন।
- প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কমিশনকে বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি যৌক্তিক বেতন কাঠামো নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি স্বাস্থ্যবীমার বিষয়েও জোর দিয়েছেন।
কাঠামোগত বিষয় ও অনুপাত (কমিশন পর্যায়ে আলোচনা) । যদিও কমিশন এখনও চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেয়নি, তাদের প্রাথমিক আলোচনা ও পর্যালোচনায় যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে:
- বেতনের অনুপাত: বর্তমানে সর্বোচ্চ (গ্রেড-১) ও সর্বনিম্ন (গ্রেড-২০) বেতনের অনুপাত প্রায় ১০:১। কমিশন এই অনুপাতকে ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে রাখার সুপারিশ করতে পারে, যা প্রতিবেশী দেশগুলিতেও প্রচলিত আছে।
- গ্রেড সংখ্যা: গ্রেডের সংখ্যা কমানো হতে পারে (যেমন ২০ থেকে ১২ বা ১৩-তে), কিন্তু সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত একই রাখার চিন্তা করা হচ্ছে।
- ভাতা বৃদ্ধি: চিকিৎসা ভাতা (অবসরোত্তর সময়ে বাড়তি সুবিধা সহ) এবং কর্মচারীদের সন্তানদের শিক্ষা ভাতা বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
- অন্যান্য বিষয়: মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বেতন সমন্বয়, বিশেষায়িত চাকরির জন্য আলাদা বেতন কাঠামো, সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিলের মতো বিষয়গুলো নিয়েও কমিশন কাজ করছে।
সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন-কাঠামো নির্ধারণের জন্য পে-কমিশন গঠন; ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ নতুন পে কমিশন গঠন; ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ | Pay Commission Brief ভিডিওটি নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য জানতে সাহায্য করবে।
| ক্রমিক নং | প্রস্তাবিত গ্রেড | চলমান গ্রেড | বেতন |
| ১ | ১ ম গ্রেড | ১ ম গ্রেড | ২৫,০০০.০০ |
| ২ | ২ য় গ্রেড | ২ য় গ্রেড | ৮৫,০০০.০০ |
| ৩ | ৩ য় গ্রেড | ৩ য় গ্রেড | ৭৭,০০০.০০ |
| ৪ | ৪ র্থ গ্রেড | ৪ র্থ গ্রেড | ৭০,০০০.০০ |
| ৫ | ৫ ম গ্রেড | ৫ ম গ্রেড | ৬০,০০০.০০ |
| ৬ | ৬ ষ্ঠ গ্রেড | ৬ ষ্ঠ গ্রেড | ৫২,০০০.০০ |
| ৭ | ৭ ম গ্রেড | ৭ ম গ্রেড | ৫০,০০০.০০ |
| ৮ | ৮ ম গ্রেড | ৯ ম ও ৯ ম গ্রেড | ৪৩,০০০.০০ |
| ৯ | ৯ ম গ্রেড | ১০ ম ও ১১ তম গ্রেড | ৩৫,৫০০.০০ |
| ১০ | ১০ ম গ্রেড | ১২, ১৩ ও ১৪ তম গ্রেড | ৩১,০০০.০০ |
| ১১ | ১১ তম গ্রেড | ১৫, ১৬ ও ১৭ তম গ্রেড | ২৮,৫০০.০০ |
| ১২ | ১২ তম গ্রেড | ১৮, ১৯ ও ২০ তম গ্রেড | ২৬,০০০.০০ |



