সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো ২০২৫ । নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার হুঁশিয়ারি দিলেন ভিপি নূর!
সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন ও যৌক্তিক বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে এবং সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বক্তব্য দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর। তিনি অভিযোগ করেছেন, পে কমিশন গঠনের সময় অর্থের হিসাব না করে, এখন বেতন দেওয়ার সময় সরকার কেবল অর্থের হিসাব দেখাচ্ছে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ভিপি নুরুল হক নূর সরকারের কাছে অবিলম্বে একটি যৌক্তিক বেতন কাঠামো ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অর্থের হিসাব না করে যখন পে কমিশন গঠন করা হয়েছিল, তখন কেন এত অর্থের হিসাব দেখানো হলো না? এখন সরকারি কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি মেটানোর সময় অর্থের হিসাব দেখিয়ে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।
🔔 ডিসেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশের দাবি
ভিপি নূর সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন ও যৌক্তিক বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশ করে সরকারি কর্মচারীদের দাবি মেনে নেওয়া হোক।
⚠️ রাস্তায় নামলে ফল ভালো হবে না: হুঁশিয়ারি
নির্বাচনের আগে বেতন কাঠামো নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে সরকারি কর্মচারীরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন। ভিপি নূর সরকারকে সতর্ক করে বলেন, কর্মচারীরা আন্দোলনে নামলে তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে এবং তখন সরকার কিছু বলতে পারবে না।
তিনি মনে করেন, সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হলে কেবল তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে না, বরং সরকারি দপ্তরের দুর্নীতি কমাতেও এটি সহায়ক হতে পারে।
ভিপি নূরের এই বক্তব্য সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা বেতন কাঠামোর দাবিকে সামনে নিয়ে আসলো। সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করে এই দাবি মেটায় কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সরকারি কর্মচারীরা মূলত একটি যৌক্তিক, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য একটি নতুন বেতন কাঠামো চান। তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সংগঠন ও নেতারা পে কমিশনের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি ও প্রস্তাব পেশ করেছেন।
সংক্ষেপে তাদের মূল দাবিগুলো নিম্নরূপ:
১. 💰 মূল বেতনের হার ও অনুপাত
সর্বনিম্ন বেতনের দাবি: বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন সর্বনিম্ন গ্রেডের (গ্রেড-২০) মূল বেতন ৩৫,০০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
বেতন বৈষম্য কমানো: বর্তমানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত প্রায় ১:১০। এই বৈষম্য কমিয়ে ১:৪ বা কাছাকাছি একটি যৌক্তিক অনুপাতে নামিয়ে আনার দাবি জানানো হয়েছে। (যেমন, সর্বনিম্ন ৩৫,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১,৪০,০০০ টাকা)
বেতন বৃদ্ধির হার: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় নিয়ে অনেকে বেতন ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন।
২. 🗓️ বাস্তবায়নের সময়সীমা
গেজেট প্রকাশের আলটিমেটাম: বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন পে-স্কেলের গেজেট প্রকাশ করে ১ জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর করার চূড়ান্ত সময়সীমা দিয়েছে। (ভিপি নূরও ডিসেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।)
দ্রুত বাস্তবায়ন: যেহেতু ২০১৫ সালের পর নতুন কোনো পে-স্কেল হয়নি এবং দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়েছে, তাই তারা কমিশনকে দ্রুত সুপারিশ জমা দিতে এবং সরকারকে অবিলম্বে তা বাস্তবায়ন করতে চাপ দিচ্ছেন।
৩. 📈 বাতিলকৃত সুবিধা পুনর্বহাল
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড: ২০১৫ সালের পে-স্কেলে বাতিল হওয়া টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড অবিলম্বে পুনর্বহাল করার দাবি জানানো হয়েছে।
বেতন জ্যেষ্ঠতা: বেতন জ্যেষ্ঠতা বা সিনিয়র বেনিফিট ফিরিয়ে আনার দাবি করা হয়েছে।
৪. 🏥 ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধি
চিকিৎসা ভাতা: বর্তমানের ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, বিশেষ করে অবসরোত্তর সময়ে বাড়তি সুবিধা যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষা ভাতা: কর্মচারীদের সন্তানদের শিক্ষা ভাতাও বাড়ানোর সুপারিশ রয়েছে।
পেনশন ও গ্র্যাচুইটি:
সব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পেনশনের পাশাপাশি গ্র্যাচুইটি চালু করা।
গ্র্যাচুইটি হার ৯০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করা।
পেনশন গ্র্যাচুইটিতে প্রতি ১ টাকার সমমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা।
মূলত, সরকারি কর্মচারীরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য একটি অর্থনৈতিকভাবে স্বস্তিদায়ক এবং দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা পদোন্নতি ও জ্যেষ্ঠতা সংক্রান্ত সমস্যা দূরীকরণের জন্য একটি যৌক্তিক ও বৈষম্যহীন পে-স্কেল প্রত্যাশা করছেন।




