সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬% কোটা বিদ্যমান ছিল। দীর্ঘদিন ধরেই মেধাকে গুরুত্ব না দিয়ে কোটা ব্যবস্থায় নিয়োগ চলছিল। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ৮০% পর্যন্ত কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ চলতো। কোটা ব্যবস্থা এক রকম ৭% এ নামিয়ে এনে সরকারি এখন মেধাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে- নতুন কোটা প্রজ্ঞাপন জারি ২০২৫
কোটা মূলত কি? কোটা মূলত অনগ্রসর গোষ্ঠিকে এগিয়ে নেয়ার একটি মাধ্যম চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা রাখায় যাতে অনগ্রসর জনগোষ্ঠি তাদের জীবন যাপনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে না থাকে। এজন্য জেলা কোটা, নারী কোটা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু ছিল এবং এ কোটা ব্যবস্থা আন্দোলন সংগ্রামে তরুনদের জীবনের বিনিময়ে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে সরকার। কোর্টের রায়ের আলোকে কোটা ব্যবস্থাকে ৫৬% হতে কমিয়ে এখন ৭% এ আনা হয়েছে।
নতুন প্রজ্ঞাপনে কোটা ব্যবস্থা কেমন? সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান সহ কর্পোরেশনগুলোতেও সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯-২০ গ্রেডের সকল নিয়োগে ৭% কোটা অনুসরণ করা হবে এবং অবশিষ্টাংশ ৯৩% মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে। ৭% কোটার মধ্যে ৫% মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য রাখা হয়েছে এবং ১% প্রতিবন্ধী ও ৩য় লিঙ্গের মানুষদের জন্য এবং ১% ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য রাখা হয়েছে। এখানে নারী কোটা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্য কোন কোটা রাখা হয়নি। নতুন কোটার প্রজ্ঞাপনের অনতিবিলম্বে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ চলতি মাসের ২৩ তারিখ হতে কার্যকর হবে। এখন কোটা সংক্রান্ত পূর্বের সকল আদেশ /পরিপত্র বা যে কোন আইন বাতিল বলে গন্য হবে।
চলমান নিয়োগগুলো কি নতুন পরিপত্র মোতাবেক হবে? না। যেহেতু নতুন আইন চলতি মাস হতে কার্যকর হয়েছে তাই পূর্বের চলমান নিয়োগ পূর্বের কোটা পদ্ধতি অনুসারেই চলবে। সার্কুলারে উল্লেখিত শতার্বলী অনুসারে চলমান বা পূর্বের নিয়োগ গুলো কার্যকর হবে। নতুন আইন নতুন সার্কুলার বা সরাসরি নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে কার্যকর হইবে। যে সকল নিয়োগের রেজাল্ট হয়নি সেগুলোও পূর্বের নিয়োগ বিধি এবং কোটা বিধি অনুসানেই কার্যকর হবে।
কোটা নিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি ২০২৫ । ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ২৩ তারিখ হতেই নতুন কোটা পদ্ধতি চালু হয়েছে
নতুন কোটার প্রজ্ঞাপন ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। কোটা ব্যবস্থার কার্যকর হওয়া জরুরী ছিল যা রক্তাক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে।
Caption: quota info pdf link
কোটা প্রজ্ঞাপন ২০২৫ । ১ম শ্রেণী হতে ৪র্থ শ্রেণীর সকল গ্রেডের ক্ষেত্রে নতুন প্রজ্ঞাপন কার্যকর।
- সরকারি আধা-সরকারি, স্বাশাসিত, বোর্ড ও কর্পোরেশনের চাকরি ক্ষেত্রে নতুন প্রজ্ঞাপন কার্যকর হবে।
- মেধার ভিত্তিতে ৯৩% নিয়োগ করা হবে।
- মুক্তিযোদ্ধার ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫% কোটা থাকবে।
- প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১% কোটা থাকবে।
- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ১% কোটা কার্যকর থাকবে।
- প্রয়োজনীয় সংখ্যক কোটা পূরণ না হলে অবশিষ্টাংশও মেধা দিয়ে পূরণ করা হবে।
- নারী, মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনী ও জেলা কোটা থাকছে না।
সরকার কি চাইলে পরবর্তীতে কোটা সংস্কার করতে পারবে?
হ্যাঁ। সরকার যদি চায় তবে পরবর্তীতে আবার পরিবর্তন জারি করে কোটা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারেন। আপীল বিভাগ সরকারকে যে কোন সময় কোটা হার বা কোটা ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য ক্ষমতা দিয়েছে। এজন্য পুনরায় কোর্টকে জিজ্ঞসা করতে হবে না বরং সরকার স্বপ্রণোদিত হয়ে পরিপত্র জারি করে কোটা ব্যবস্থায় সংশোধনী বা সংস্কার আনতে পারবেন। এখন একই জেলা অর্থাৎ ঢাকা জেলা বা বিভাগ হতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী নিয়োগ পাবে বলে ধারণা করা যায়। যে জেলা শিক্ষার হার যত বেশি সেই জেলায় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ বেশি পাবে। জেলা কোটা বাতিল হওয়ার ফলে পিছিয়ে থাকা জেলা হতে কম লোক নিয়োগ পাবে। সরকার চাইলে জেলা কোটা বা নারী কোটা যোগ করতে পারে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পরিবর্তন বা সংস্কার আনতে পারে। এটি যেহেতু পলিসি নির্ধারণীর বিষয় তাই এটি পক্ষে বা বিপক্ষে কোন আইন প্রয়োগ করা যাবে না।
মেধা | মুক্তিযোদ্ধার সন্তান | মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনী | নারী কোটা | জেলা কোটা | ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী | আনসার কোটা ও অন্যান্য | পোষ্য কোটা | প্রতিবন্ধী ও হিজড়া |
৯৩% | ৫% | ০% | ০% | ০% | ১% | ০% | ০% | ১% |
যেই প্রজ্ঞাপন বা আদেশ রহিত করা হয়েছে, সেটা চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কিভাবে প্রয়োগ করা হবে? রহিত করা প্রজ্ঞাপন দিয়ে চলমান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা কি আইন বিরোধী হয় না? বিষয়টা একটু বুঝিয়ে বললে ভালো হতো।
আপনার কথায় কিছু যুক্তি আছে। কিন্তু সরকারি বিভিন্ন কাজে দেখা যায় চলমান যে কোন প্রক্রিয়া ঐ সময়ে বলবৎ আইন বা বিধি মোতাবেক সম্পন্ন হয়। সরকার হয়তো এ কারণেই প্রাথমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান নিতে পারেনি এবং কোর্টও পক্ষে রায় দিয়েছে।