পেনশন সংক্রান্ত নতুন সুবিধা ও জটিলতা নিরসনের উদ্যোগ ২০২৫ । পেনশন পুন:স্থাপনের আগে মারা গেলেও পারিবারিক পেনশন পুন:স্থাপন হবে?
সরকার সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের পেনশন ভোগান্তি দূর করতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেওয়া এই সিদ্ধান্তগুলোর ফলে পেনশনভোগীরা এখন থেকে আরও বেশি সুবিধা পাবেন।
পেনশনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন
- দ্বিতীয় স্ত্রীর জন্যও পেনশন: নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মকর্তা পেনশন ভোগরত অবস্থায় যদি দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তাহলে তার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় স্ত্রী অথবা স্বামীও নিয়ম অনুযায়ী পারিবারিক পেনশন পাবেন। বর্তমান নিয়মে শুধু প্রথম স্ত্রী বা স্বামীই এই সুবিধা পেতেন।
- পেনশন পুনঃস্থাপনের সময় হ্রাস: শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী কর্মকর্তাদের জন্য পেনশন পুনঃস্থাপনের নির্ধারিত সময় ১৫ বছর থেকে কমিয়ে ১০ বছর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে যারা একসঙ্গে সম্পূর্ণ পেনশন তুলে নিয়েছেন, তারা দ্রুত মাসিক পেনশন সুবিধা ফিরে পাবেন।
- জটিল রোগের চিকিৎসা সহায়তা: এখন থেকে কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের মতো অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীরাও জটিল রোগে আক্রান্ত হলে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড থেকে চিকিৎসা সহায়তা পাবেন। আগে এই সুবিধা কেবল কর্মরতদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
এছাড়াও, বৈঠকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- পেনশন পুনঃস্থাপনের আগেই মৃত্যু: যদি কোনো শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী কর্মকর্তা পেনশন পুনঃস্থাপনের আগেই মারা যান, তাহলে তার স্বামী, স্ত্রী বা যোগ্য উত্তরাধিকারীরা পেনশন মঞ্জুরের বিষয়ে সুবিধা পাবেন। বিষয়টি অর্থ বিভাগ খতিয়ে দেখছে।
- প্রবাসীদের জন্য সুবিধা: বিদেশে বসবাসরত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যাতে সহজেই তাদের পেনশন সংক্রান্ত কাগজপত্র স্বাক্ষর ও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারেন, সে বিষয়েও সরকার ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ পর্যালোচনা করছে।
- উৎসব ভাতার ইনক্রিমেন্ট: ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের উৎসব ভাতা ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট হিসেবে দেওয়া হলেও, পেনশন পুনঃস্থাপনের পর এই ইনক্রিমেন্টের অর্থ যোগ হচ্ছে না। বৈঠকে এ সমস্যার সমাধানের জন্য অর্থ বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এসব উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায়। এটি পেনশনভোগীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, যা এখন বাস্তবায়নের পথে।
এ বিষয়ে কি কোন প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে?
না, এই বিষয়ে এখনও কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। প্রথমত, এসব সিদ্ধান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক একটি বৈঠকে গৃহীত হয়েছে। এরপর প্রস্তাবগুলো জাতীয় বেতন কমিশন এবং অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনার জন্য। বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো সাধারণত গেজেট আকারে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমেই কার্যকর হয়। যেহেতু প্রস্তাবগুলো এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে আছে, তাই প্রজ্ঞাপন জারির জন্য আরও কিছু সময় লাগতে পারে। সংক্ষেপে, এটি একটি প্রক্রিয়াগত ধাপ, যেখানে প্রথমে সিদ্ধান্তগুলো নীতিগতভাবে গৃহীত হয়, এরপর সেগুলোকে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আইন, বিধি বা প্রজ্ঞাপন তৈরির কাজ শুরু হয়।