বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

একনজরে ৮ম পে স্কেলে বৈষম্য ২০২৫ । ব্রিটিশদের মতো কিভাবে কর্মচারিদের রক্তচুষা হয়েছে?

বাংলাদেশে অফিস আদালাতে কর্মকর্তাদের আচরণ দেখলেই বুঝা যায় যে, রাজা প্রজা ব্যবস্থা এখনও বিরাজমান রয়েছে-৮ম পে স্কেলও সেভাবেই সাজিয়ে ১৪ লক্ষ কর্মচারীদের নিষ্পেষিত করা হয়েছে ব্রিটিশ শাসনের মতই– একনজরে ৮ম পে স্কেলে বৈষম্য ২০২৫

৮ম জাতীয় বেতন স্কেল কি কি অসঙ্গতি রয়েছে? অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে, যা নিয়ে সরকারি কর্মচারী ও বিভিন্ন মহল অসন্তুষ্ট। এই অসঙ্গতিগুলো হলো: টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করা হয়েছে, গ্রেডগুলোর মধ্যে বেতনের পার্থক্য যৌক্তিক নয়, এবং কিছু ক্ষেত্রে বাজার চাহিদা অনুযায়ী ভাতা নির্ধারণ করা হয়নি।পূর্ববর্তী বেতন কাঠামোতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থাকার কারণে কর্মচারীরা একটি নির্দিষ্ট সময় পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চতর গ্রেড পেতেন, যা অষ্টম বেতন স্কেলে বাতিল করা হয়েছে। গ্রেডগুলোর মধ্যে বেতনের পার্থক্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হয়নি, যা বৈষম্য সৃষ্টি করছে।

সরকারি কর্মচারীদের আর্থিকভাবে মারা হয়েছে? হ্যাঁ। কিছু ক্ষেত্রে বাজার চাহিদা অনুযায়ী ভাতা নির্ধারণ করা হয়নি, যা কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে সমস্যার সৃষ্টি করছে। কিছু ক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধি অপ্রতুল, যা দ্রব্যমূল্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কিছু কর্মচারী, যেমন- ১ জুলাই, ২০১৫ তারিখের আগে যারা অবসরে গিয়েছেন বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে ছিলেন, তারা নতুন বেতন স্কেলের আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখা যায়। নতুন পে-স্কেল কার্যকর করার ফলে কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, যেমন- বিভিন্ন ধরণের ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণে সমস্যা। এই অসঙ্গতিগুলোর কারণে সরকারি কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, এবং এগুলোর সমাধানে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি জানানো হচ্ছে।

৮ম পে স্কেলের ভাতাগুলো কি যুগোপযোগী? অষ্টম পে স্কেলের ভাতাগুলো বর্তমান প্রেক্ষাপটে কতটা যুগোপযোগী, তা নিয়ে সরকারি কর্মচারী এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ভাতাগুলো পর্যাপ্ত বলে মনে করা হলেও, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অনেকেই এটিকে যথেষ্ট মনে করছেন না। অষ্টম পে স্কেলে যাতায়াত ভাতা ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা বর্তমানে অপর্যাপ্ত বলে মনে করা হচ্ছে। বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের একটি অংশ, যা গ্রেডভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে, এই ভাতা জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে যথেষ্ট নয় বলে অনেকে মনে করেন।চিকিৎসা ভাতা আগের মতোই রয়েছে, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট নয়। অন্যান্য ভাতা যেমন শিক্ষা ভাতা, টিফিন ভাতা ইত্যাদিও দ্রব্যমূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। কিছু অর্থনীতিবিদ ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, অষ্টম পে স্কেলের ভাতাগুলো ২০১৫ সালের প্রেক্ষাপটে তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনা করে ভাতাগুলোর পুনর্বিন্যাস করা উচিত। তাদের মতে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান কমে যাচ্ছে। তাই, ভাতা বৃদ্ধি করা হলে কর্মচারীরা উপকৃত হবেন এবং তাদের কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

সরকারি কর্মচারীদের ১১-২০ গ্রেডের গ্রাফ বা বেতন স্টেজের চিত্র দেখুন/ কর্মকর্তাদের গড় ২০% অন্যদিকে কর্মচারীদের গড়ে ৩% গ্রেড ব্যবধান-এটি ব্রিটিশ রক্তচোষা বেতন কাঠামো ছাড়া কিছু নয়।

সরকারি কর্মচারীদের অনেকেই অষ্টম পে স্কেলের ভাতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে হলে ভাতা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য। বর্তমানে, নবম পে স্কেল নিয়ে আলোচনা চলছে এবং আশা করা হচ্ছে যে, নতুন পে স্কেলে ভাতাগুলোর একটি যৌক্তিক পুনর্বিন্যাস করা হবে। অষ্টম পে স্কেলের ভাতাগুলো যুগোপযোগী করার জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত, যাতে সরকারি কর্মচারীরা বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করতে পারে।

Caption: Pay Scale Details

পে-স্কেল ২০১৫ । যেভাবে ব্রিটিশদের মতো আচারণ কর্মচারিদের প্রতি বেতন কাঠামোতে করা হয়েছে।

  1. ২০ তম গ্রেড ৮২৫০×৩%=২৪৭.৫০ টাকা বৃদ্ধি করে ১৯ তম গ্রেড ২.৫০ টাকা দিয়ে রাউন্ড ফিগার ৮৫০০টাকা নির্ধারণ করেছে।
  2. ১৯ তম গ্রেডে ৮৫০০×৩%=২৫৫ টাকার সাথে ৪৫ টাকা যোগ করে ৮৮০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এভাবেই ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারিদের সাথে ২০১৫ পে-স্কেল জালিয়াতি করেছে।
  3. ১৫-২০ গ্রেড পর্যন্ত ১০ বছর পরে গ্রেড পরিবর্তন করলে ৩% বেতন বৃদ্ধি হয়।
  4. ১১ তম গ্রেড ১২,৫০০×২৮%= ৩৫০০ বাড়িয়ে ১৬,০০০ টাকা নির্ধারণ ।
  5. ১১ তম গ্রেড ১২৫৫×৭৬%= ৯,৫০০ টাকা বৃদ্ধি করে ৯ম গ্রেড ২২,০০০ টাকা নির্ধারণ বলা হয়েছে একজন কর্মচারীর বেতন ডাবল করেছে কিন্তু ভিতরে তাদের দিয়ে নীল চাষ করিয়ে নিয়েছে।
  6. প্রস্তাব ছিল ১৬ টি গ্রেড করে ৩ টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেডের পরিবর্তে ২ টি উচ্চতর গ্রেড দিবে কথা তিনি রেখেছেন ২ টি উচ্চতর গ্রেড দিলেন কিন্তু গ্রেড সংখ্যা ২০ টিই বহাল ছিল।
  7. অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিকদের দক্ষতাজনিত ২ টি ইনক্রিমেন্ট বাতিল করা হয়েছে।
  8. শেষ ধাপে পৌছে গিয়ে লক্ষ লক্ষ কর্মচারির বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
  9. সরকারি কর্মচারির ১০ বছরে পে-স্কেল বঞ্চিত যা কর্মচারিদের জীবনে অনেক ক্ষতি হয়েছে।

৯ম পে স্কেলে গ্রেড ব্যবধান সমান হতে হবে?

৯ম পে স্কেলে গ্রেড ব্যবধান সমান করা উচিত কিনা, এই বিষয়ে সরকারি কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কিছু কর্মচারী মনে করেন যে, গ্রেড ব্যবধান সমান হওয়া উচিত, যাতে বেতন কাঠামোতে স্বচ্ছতা থাকে এবং বৈষম্য কমানো যায়। অন্যদিকে, কিছু কর্মচারী মনে করেন যে, গ্রেড ব্যবধান সমান হলে উচ্চ গ্রেডের কর্মচারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, কারণ তাদের বেতন বৃদ্ধি কম হবে। বর্তমানে, বেতন গ্রেডগুলোর মধ্যে ব্যবধান সমান নয়। কিছু গ্রেডের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেশি, আবার কিছু গ্রেডের মধ্যে ব্যবধান কম। অনেক কর্মচারী চান যে, বেতন গ্রেডগুলোর মধ্যে ব্যবধান সমান করা হোক, যাতে বেতন কাঠামোতে স্বচ্ছতা আসে। সরকার এখনও এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে, ৯ম পে স্কেল ঘোষণার সময় এই বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে। কিছু কর্মচারী মনে করেন যে, প্রতি বছর বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও গ্রেড অনুযায়ী পার্থক্য থাকা উচিত, যাতে উচ্চ গ্রেডের কর্মচারীরা বেশি সুবিধা পান। সবকিছু বিবেচনা করে, ৯ম পে স্কেলে গ্রেড ব্যবধান সমান করা হবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

কর্মচারীদের গ্রেড ব্যবধানে বেতন বৃদ্ধি? সরকারি ১১-২০ গ্রেডের সকল কর্মচারী মূল বেতনের ১০টি গ্রেডের যোগফল দেখে নিই ১২৫০০ +১১৩০০ +১১০০০+ ১০২০০+ ৯৭০০+ ৯৩০০+ ৯০০০+ ৮৮০০+ ৮৫০০ +৮২৫০ = ৯৮,৫৫০ টাকা মাত্র এবং ১১-২০ গ্রেডের সকল কর্মচারী মূল বেতনের ১০টি গ্রেডের বেতন বৃদ্ধি জনিত যোগফল দেখে নিই ১৩১৩০+ ১১৮৭০+ ১১৫৫০+ ১০৭১০+ ১০১৯০+ ৯৭৭০+ ৯৪৫০+ ৯২৪০+ ৮৯৩০+ ৮৬৭০ = ১,০৩,৫১০ টাকা মাত্র। ইনক্রিমেন্ট হওয়ায় বেতনের সাথে পার্থক্য ১,০৩,৫১০-৯৮,৫৫০ = ৪,৯৬০ টাকা মাত্র। যা মূল বেতনের ৫.০৩% ।

কর্মকর্তাদের গ্রেড ব্যবধানে বেতন বৃদ্ধি কত?

০১-১০ গ্রেডের ৫ম বছরের সকল কর্মকর্তাদের মূল বেতনের ১০টি গ্রেডের যোগফল দেখে নিই ৭৮০০০+ ৬৬০০০+ ৫৬৬০০+৫০০০০+ ৪৩০০০+ ৩৫৫০০+ ২৯০০০+ ২৩০০০+ ২২০০০= ৪,০৩,১০০ টাকা মাত্র এবং ০১-১০ গ্রেডের ৬ষ্ঠ বছরের সকল কর্মকর্তাদের১০টি গ্রেডের মূল বেতনের যোগফল দেখে নিই ৭৮০০০ + ৬৮৪৮০+ ৫৮৭৬০+ ৫২০০০+ ৪৪৯৪০+ ৩৭২৮০+ ৩০৪৫০+ ২৪১৫০+ ২৩১০০+ ১
৬৮০০= ৪,৩৩,৯৬০ টাকা মাত্র। ইনক্রিমেন্ট হওয়ায় গত বছরের বেতনের সাথে পার্থক্য ৪,৩৩,৯৬০-৪,০৩,১০০ = ৩০৮৬০ টাকা মাত্র।যা মূল বেতনের ৭.৬৫% বেতন বৃদ্ধি । যেখানে ৭.৬৫-৫.০৩ = ২.৬২% বৈষম্য করা হয়েছে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *