সর্বশেষ প্রকাশিত পোস্টসমূহ

সৈনিকদের বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবি ২০২৫ । সেনাদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মূল্যায়ন ও গ্রেড উন্নীতকরণের আহ্বান আসছে?

দেশের প্রতিরক্ষা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার মতো অতীব ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৈনিক, সিপাহী ও কনস্টেবলদের বেতন বৈষম্য নিয়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আসন্ন ২০২৫-২৬ সালের নতুন পে-স্কেলে এই বৈষম্য দূর করে তাঁদের বেতন গ্রেড ১৩ থেকে ১৪-তে উন্নীত করার জোরালো দাবি উঠেছে।-সৈনিকদের বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবি ২০২৫

দীর্ঘ ১০-১১ বছর ধরে সৈনিক পদে ভর্তির ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে এইচএসসি (উচ্চ মাধ্যমিক) পাস গ্রহণ করা হলেও, তাঁদের বেতন স্কেল এখনো ১৭তম গ্রেডে নির্ধারিত, যা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সমতুল্য। জীবন বাজি রেখে যারা দেশের সেবা করেন, তাদের এই গ্রেডকে ‘চরম বৈষম্য’ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

গ্রেড ১৭-কে মার্জ করে ১৩-১৪-এর দাবি:

সৈনিকদের দাবি, যেহেতু গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এইচএসসি পাস প্রার্থীদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা ও কনস্টেবুলারি পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাই ১৭তম গ্রেডকে অবশ্যই ১৬তম বা ১৫তম গ্রেডের সাথে মার্জ করে একটি উচ্চতর গ্রেডে (বিশেষ করে ১৩ বা ১৪তম গ্রেড) নিয়ে আসা উচিত।

তাঁদের যুক্তিতে, সরকারি অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানে, যেমন বুয়েটসহ অন্যান্য সংস্থায় এইচএসসি পাসেও অপেক্ষাকৃত উচ্চতর গ্রেডে (যেমন গ্রেড ১৬ বা ১৪) চাকরির সার্কুলার দেওয়া হয়। সেখানে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের, যাদের জীবন সর্বদাই ঝুঁকির মুখে, তাদের চতুর্থ শ্রেণীর মর্যাদা দিয়ে বেতন দেওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

জীবনের ঝুঁকি বনাম বেতনের অবহেলা:

সৈনিকরা বলছেন, সরকারি চাকরির মধ্যে সবচেয়ে কঠোর পরিশ্রম, গুরুত্বপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তাঁরা। পিটি, প্যারেড, প্রশিক্ষণ, ফায়ারিং, দিন-রাত ডিউটি, আগুন, বন্যা মোকাবিলা, আন্দোলন, হামলা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম—এমন সমস্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে তাঁরাই সবার আগে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এত কিছুর পরও বেতনের ক্ষেত্রে এমন অবহেলা ও অবমূল্যায়ন মেনে নেওয়া যায় না।

এক জন সৈনিকের বক্তব্যে উঠে আসে, “আমরা এতো কষ্টো করি, কিন্তু ফ্যামিলির অভাব-অনাটন লেগেই থাকে। ঠিক মতো ফ্যামিলির ভরণ-পোষণ করতে পারি না। পরিবার আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু আমাদের খালি হাত।”

২০২৫-২৬ পে-স্কেলে প্রত্যাশা:

সৈনিকদের পক্ষ থেকে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে, ২০২৫-২৬ সালের পে-স্কেলে যেন এই বৈষম্য স্থায়ীভাবে দূর করা হয়। যদি বর্তমানে প্রচলিত ২০টি গ্রেড বহাল থাকে, তবে সৈনিকদের কমপক্ষে ১৩ বা ১৪তম গ্রেডে বেতন দিতে হবে। আর যদি গ্রেড সংখ্যা কমানো হয়, তবে কাজের গুরুত্ব ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন করে উপযুক্ত বেতন গ্রেড নির্ধারণ করতে হবে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে যারা দেশকে নিরাপদ রাখেন, নতুন বেতন কাঠামোতে তাদের ন্যায্য মূল্যায়ন করে একটি উন্নত জীবনযাত্রার সুযোগ দেওয়া হবে—এমনটাই প্রত্যাশা করছেন দেশের অগণিত সৈনিক ও তাঁদের পরিবার। সদ্য গঠিত সশস্ত্র বাহিনী বেতন কমিটি-২০২৫ এর কাছে এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবি জানানো হয়েছে।

১. গ্রেড উন্নীতকরণ (১৭ থেকে ১৩/১৪-তে):

  • দাবি: বর্তমানে সৈনিক, সিপাহী ও কনস্টেবলদের বেতন স্কেল যে ১৭তম গ্রেডে (চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সমতুল্য) আছে, তাকে কাজের গুরুত্ব ও শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে ১৩তম বা ১৪তম গ্রেডে উন্নীত করতে হবে।
  • যুক্তি:
    • বর্তমানে নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি (উচ্চ মাধ্যমিক) পাস চাওয়া হয়। সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে এইচএসসি পাসে বা সমমানের কাজে এর চেয়ে ভালো গ্রেড দেওয়া হয়।
    • তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিশ্রমের (যেমন: পিটি, প্যারেড, ট্রেনিং, ডে/নাইট ডিউটি, ফায়ার, বন্যা, সন্ত্রাসী মোকাবিলা), যা চতুর্থ শ্রেণীর কাজের সাথে তুলনীয় নয়।

২. পে-স্কেলে বৈষম্য নিরসন:

  • দাবি: আসন্ন ২০২৫-২৬ সালের পে-স্কেলে এই বেতন বৈষম্যের স্থায়ী সমাধান করা এবং তাদের সঠিক মূল্যায়ন করা।
  • লক্ষ্য: জীবনের ঝুঁকি ও দেশের প্রতি তাঁদের ত্যাগের সঠিক আর্থিক ও সামাজিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করা, যাতে তাঁরা পরিবারকে স্বচ্ছলভাবে ভরণপোষণ করতে পারেন।

৩. গ্রেড মার্জ করা (যদি গ্রেড কমে):

  • দাবি: যদি সরকার গ্রেড সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে আনে, তবে ১৭, ১৬, ১৫ গ্রেডকে মার্জ করে একটি উচ্চতর গ্রেডে (যা তাদের কাজের গুরুত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ) বেতন নির্ধারণ করতে হবে।

সারসংক্ষেপ:

সৈনিক সদস্যগণ মূলত এমন একটি বেতন কাঠামো চান, যেখানে তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা (এইচএসসি) এবং পেশার চরম ঝুঁকি ও গুরুত্ব সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়। ১৭তম গ্রেড থেকে কমপক্ষে ১৩ বা ১৪তম গ্রেডে উন্নীত হওয়াই তাঁদের প্রধান এবং জোরালো দাবি।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *