পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে ৫ ডিসেম্বর আন্দোলনে নামছেন শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজি, এমপিওভুক্তদের যোগদানের আহ্বান
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক নেতা ও অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজি। তিনি আগামী ৫ ডিসেম্বর এই আন্দোলনে জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষক-কর্মচারীকে এই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজি এক বিবৃতিতে বলেন, “আমি সকল রক্তচক্ষু ও ভয়ভীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বঞ্চিত ও মজলুমদের কণ্ঠস্বর হয়ে আমৃত্যু সংগ্রাম চালিয়ে যাবো ইনশা-আল্লাহ। এজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে ৫ ডিসেম্বর পে-স্কেল বাস্তবায়নের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবো।”
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে তিনি সর্বদা সোচ্চার থাকবেন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজি তার এই কঠিন সময়ে পাশে থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদও জ্ঞাপন করেছেন।
দাবী আদায়ে এই গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।

এবার কি তাহলে মহা সমাবেশ হবে?
অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজি যে “আন্দোলন”-এর ডাক দিয়েছেন, তার সঠিক রূপ বা নাম (যেমন এটি কি ‘মহাসমাবেশ’, অবস্থান ধর্মঘট, নাকি বিক্ষোভ মিছিল) জোটের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কী ঘোষণা করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে, আপনার দেওয়া তথ্যে যখন বলা হচ্ছে যে তিনি “সকল রক্তচক্ষু ও ভয়ভীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে… আমৃত্যু সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার” কথা বলছেন এবং “জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে” অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন, তখন এটি ধরে নেওয়া যায় যে:
এটি একটি বড় ধরনের কর্মসূচি হবে। যখন একজন প্রধান শিক্ষক নেতা সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান এবং এটিকে “সংগ্রাম” হিসেবে উল্লেখ করেন, তখন এর উদ্দেশ্য থাকে একটি বিশাল জনসমাগম তৈরি করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, যা ‘মহা সমাবেশ’-এর চরিত্রের সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আন্দোলনের মাত্রা ব্যাপক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পে-স্কেলের মতো একটি কেন্দ্রীয় ও স্পর্শকাতর দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা জোটবদ্ধ হলে তার আকার সাধারণত ছোট হয় না, বরং এটি একটি বড় সমাবেশ বা ব্যাপক আন্দোলন হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করে।
সুতরাং, যদিও কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক নাম হয়তো কেবল ‘আন্দোলন’ বা ‘সমাবেশ’ হতে পারে, কিন্তু এর গুরুত্ব ও শিক্ষক-কর্মচারীদের অংশগ্রহণের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে এটি মহা সমাবেশের মতোই বিশাল আকার ধারণ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কেন সরকারি কর্মচারীদের মহা সমাবেশ করতে হচ্ছে?
সরকারি কর্মচারী, বিশেষ করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা (যেমন অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজি যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন) মহা সমাবেশ বা বড় ধরনের আন্দোলন করছেন মূলত তাদের গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক দাবি-দাওয়া দীর্ঘদিন ধরে পূরণ না হওয়ার কারণে।
এখানে আন্দোলনের প্রধান কারণগুলো বিশ্লেষণ করা হলো:
১. নতুন পে-স্কেল ও মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance) না পাওয়া
দীর্ঘদিন পে-স্কেল না হওয়া: ২০১৫ সালে সর্বশেষ অষ্টম পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর সাত-আট বছর পার হলেও নতুন কোনো নবম পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়নি। পে-স্কেল সাধারণত নির্দিষ্ট সময় পরপর নতুন করে ঘোষণা করা হয়।
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি: গত কয়েক বছরে (২০১৫ সালের পর) দেশের বাজারে মুদ্রাস্ফীতি অনেক বেড়েছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বেতন সমন্বয়হীনতা: মূল্যস্ফীতির তুলনায় বেতন বৃদ্ধি বা সমন্বয় না হওয়ায় সরকারি কর্মচারীদের, বিশেষ করে নিম্ন গ্রেডের (১১-২০তম গ্রেড) কর্মচারীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
দাবি: এই আর্থিক চাপ সামলাতে তারা অবিলম্বে পে-কমিশন গঠন করে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন এবং পে-স্কেল না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা (বা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন বৃদ্ধি) প্রদানের দাবি করছেন।
২. বেতন ও পদোন্নতিজনিত বৈষম্য
গ্রেড বৈষম্য: কর্মচারীরা বৈষম্যমুক্ত নবম পে-স্কেল দাবি করছেন। তাদের অভিযোগ, উচ্চ গ্রেডে শতাংশের হারে বেতন বাড়লে অনেক বেশি বাড়ে, কিন্তু নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা তুলনামূলকভাবে কম সুবিধা পান।
টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল: অষ্টম পে-স্কেলে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় বহু কর্মচারী পদোন্নতি এবং বেতন বৃদ্ধির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, যার ফলে তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
পদোন্নতির সুযোগ সীমিত: সচিবালয়ের বাইরের সরকারি কর্মচারী এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা (যাদের বেতন সরকার দেয়, কিন্তু জাতীয়করণ হয়নি) পদোন্নতি বা পদমর্যাদা বৃদ্ধির পর্যাপ্ত সুযোগ পান না। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ বা সরকারি কর্মচারীদের মতো সমহারে সুবিধা প্রদানেরও দাবি জানান।
৩. অন্যান্য আর্থিক ও নীতিগত দাবি
অন্যান্য ভাতা বৃদ্ধি: জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, শিক্ষা সহায়ক ভাতা ইত্যাদি পুনঃনির্ধারণের দাবি।
নিবর্তনমূলক আইন: অনেক কর্মচারী সংগঠন সম্প্রতি সরকারি কর্মচারীদের জন্য জারিকৃত কিছু অধ্যাদেশ বা আইন (যেমন চাকরিচ্যুতির শর্তাবলী) বাতিল করারও দাবি জানিয়েছেন, যা তাদের মতে কর্মচারীদের স্বার্থের পরিপন্থী।
মহা সমাবেশ বা বৃহত্তর আন্দোলন হলো এই দীর্ঘদিনের অপূরণীয় দাবিগুলোকে সরকারের উচ্চ মহলে জোরালোভাবে পৌঁছে দেওয়ার এবং দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল।


