জাতীয় বেতন কাঠামো সংস্কার ২০২৫ । আমলাতান্ত্রিক গতানুগতিক নয় বরং যৌক্তিক পে স্কেল চাই
১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকুরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরাম এর বেতন বৈষম্য ও পে স্কেল সংস্কারের দাবীতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। সৈরাচারি সরকার তাতে কোন কর্ণপাত করেনি-ব্রিটিশ আমলের পে স্কেল অনুসরণ জরে ২০১৫ সালে ব্যাপক বৈষম্যযুক্ত পে স্কেল জারি করেন-এতে উপরের কর্মকর্তারা অধিক সুবিধা পেয়েছেন যে বৈষম্য কোনভাবেই কাম্য নয়-জাতীয় বেতন কাঠামো সংস্কার ২০২৫
নতুন বাংলাদেশে বৈষম্যমুক্ত পে স্কেল? হ্যাঁ। সরকারি কর্মচারীগণ পূর্বের পে স্কেল অনুসরণ করে নতুন বেতন স্কেল চায় না। একদম নিরপেক্ষ এবং বৈষম্যমুক্ত নতুন ৯ম পে স্কেল চায় তারা। যেখানে হাস্যকর কোন টিফিন ভাতা ও যাতায়াত ভাতা থাকবে না। যেখানে সর্বনিম্ন বেতন বাজারের সাথে সঙ্গতি রেখে নির্ধারণ করা হবে। সচিবালয়, গণভবন ও জুডিশিয়াল এর ন্যায় পদ, পদবী ও পদোন্নতি বিধিমালা সারা দেশে কার্যকর হবে। আকাশ পাতাল বৈষম্য রেখে বাজার মূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে জাতীয় বেতন গ্রেড সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে।
হাস্যকর টিফিন ভাতা? হ্যাঁ। প্রতি মাসে ২০০ টাকা তাতে ২০ দিন অফিস করলে ১০ টাকা দৈনিক টিফিন ভাতা রাখা হয়েছে। ৩০ দিয়ে ভাগ করলে ৬ টাকা দৈনিক টিফিন ভাতা যা কোনভাবে মেনে নেয়া যায় না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জন্য বিলাশবহুল অফিস কক্ষ, সুবিধা ও অন্যান্য ব্যবস্থা রাখা হয় কিন্তু নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের হাত ধোয়ার শাবান পর্যন্ত বরাদ্দ রাখা হয় না। জাতীয় বেতন স্কেলের ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন বৈষম্য নিরসনসহ বিভিন্ন ধরনের দাবি নিয়ে “১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকুরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরাম” সকল সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন ভাতাদির মধ্যে একটি যৌক্তিক ভারসাম্য স্থাপনের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে, সেই সাথে যুগােপযােগী সংস্কারের মাধ্যমে সরকারি চাকুরিতে একটা শৃংখলা তৈরীর লক্ষ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যােগাযােগের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনে জোরালাে ভূমিকা রাখবে।
বেতন গ্রেড কমানো কতটা জরুরি? বেতন গ্রেডগুলো নিচের ধাপে এমন করা হয়েছে যে, পদোন্নতি পেলেও বেতন বৃদ্ধি পায় না। কোন কোন পদে ২০ বছর চাকরি করলেও কোন পদোন্নতি নেই। বেতন ভাতাদি ও পদোন্নতি বিধিমালা আধুনিক না করা হলে বৈষম্য ও সেবার মান উন্নয়ন করা সম্ভব হবে না। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও সরকারি অফিস গড়তে বেতন ভাতাদি ও সুযোগ -সুবিধায় বৈষম্য দূর করতে হবে। একমুখী সুবিধা বা আমলাতান্ত্রিক কর্তা ব্যক্তিদের বিলাশবহুল জীবন যাপন ও অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে জনতা ও কর্মচারীদের কাতারে আসতে হবে।
সরকারি কর্মচারীদের প্রাণের দাবী সমূহ ২০২৫ । ন্যূনতম বেতন ২০,০০০ টাকা হওয়া উচিৎ
১। স্থায়ী পে কমিশন গঠণ করে ৯ম পে-স্কেল ঘােষনার মাধ্যমে বেতন বৈষম্য নিরসনসহ গ্রেড অনুযায়ী বেতন স্কেলের পার্থক্য সমহারে নির্ধারণ ও গ্রেড সংখ্যা কমাতে হবে এবং পে-স্কেল বাস্তবায়নের পূর্বে অন্তবর্তীকালীন সময় যৌক্তিক পরিমানে মহার্ঘ ভাতা প্রদান করতে হবে।
২। এক ও অভিন্ন নিয়ােগ বিধি বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩। সকল পদে পদোন্নতি বা ০৫ (পাঁচ) বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করে ব্লক পােস্ট নিয়মিতকরণ করতে হবে।
৪। টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড পূনঃবহালসহ বেতন জ্যেষ্ঠতা বজায় রাখতে হবে।
৫। সচিবালয়ের ন্যায় সচিবালয়ের বাহিরে সকল দপ্তর, অধিদপ্তর এবং পরিদপ্তরে পদবী ও গ্রেড পরিবর্তন করতে হবে।
৬। সকল ভাতা বাজার চাহিদা অনুযায়ী পুনঃনির্ধারণ করতে হবে।
৭। নিম্ন বেতনভােগীদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে ও বিদ্যমান গ্র্যাচুইটি/আনুতােষিকের হার ৯০% এর স্থলে ১০০% পুনঃনির্ধারণ সহ পেনশন গ্র্যাচুইটির হার ১ টাকা = ৫০০ টাকা করতে হবে।
৮। কাজের ধরন অনুযায়ী পদের নাম ও গ্রেড একীভূত করতে হবে।
৬ সদস্যের চিকিৎসার জন্য মাসিক ১৫০০?
হ্যাঁ। একজন সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে যে টাকা চিকিৎসা বাবদ রাখা হয়েছে তা নিজের এবং পরিবারের ৫ সদস্যের জন্য খুবই অপ্রতুল। দেশের যে কোন হসপিটালে একবার ডাক্তার দেখিয়ে ফিরে আসতেই ৩-৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ডাক্তার ফি ৬০০-১৫০০ টাকা নিয়ে থাকেন এবং ন্যূনতম টেস্ট ব্যয় ৩-৫ হাজার টাকা নিয়ে থাকে। বৃদ্ধ বাবা-মা ও পরিবারের চিকিৎসা বাবদ যে খরচ হয় তা নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের বহন করা সম্ভব হয় না। ফলে ঋণগ্রস্থ কর্মচারীর নিকট হতে ভাল সেবা পাওয়ার প্রত্যাশা জনগণ করতে পারে না। বিভাগীয় পর্যায়ে ভাল হসপিটাল থাকলে যেখানে স্বল্প খরচে সরকারি কর্মচারীগণ চিকিৎসা নিতে পারে এমন ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসা ভাতা একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।
নতুন পে স্কেল কেমন হওয়া উচিত? নতুন পে স্কেল কেমন হওয়া উচিত, এই প্রশ্নের উত্তরে সরকারি কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে কিছু সাধারণ প্রত্যাশা ও সুপারিশ রয়েছে। মূলত, পে স্কেলের প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দ্রব্যমূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং বেতন বৈষম্য কমানো।দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায়, কর্মচারীদের জন্য একটি সম্মানজনক ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করা উচিত। অনেক কর্মচারী ২৫,০০০ টাকা ন্যূনতম বেতনের প্রস্তাব করছেন। পে স্কেলে গ্রেড সংখ্যা কমানো এবং গ্রেডগুলোর মধ্যে বেতন ব্যবধান যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। বর্তমানে ২০টি গ্রেড রয়েছে, যা কমিয়ে ১০ বা ১২টিতে নামিয়ে আনার প্রস্তাবনা রয়েছে।
বর্তমানে ৮ম পে স্কেলে ৯ম গ্রেডে মূল বেতন ২২,০০০ টাকা থেকে শুরু হয় এবং পদোন্নতির মাধ্যমে তা বাড়ে। তাদের প্রস্তাব, এই বেতন কাঠামোতে এমন পরিবর্তন আনা হোক যাতে পদোন্নতির সাথে সাথে বেতন বৃদ্ধি সন্তোষজনক হয়। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড সুবিধা বাতিল করায় অনেক কর্মচারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই সুবিধাগুলো পুনর্বহাল করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, এবং অন্যান্য ভাতাও বর্তমান বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। অনেকে বলছেন, দ্রব্যমূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে পে স্কেল নিয়মিত আপডেট করা উচিত। পেনশনারদের জন্যও একটি সম্মানজনক পেনশন সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নতুন পে স্কেল কেমন হওয়া উচিত, এই বিষয়ে সরকারি কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা ও প্রস্তাবনা চলমান রয়েছে। সরকারের কাছে তাদের প্রত্যাশা, একটি বাস্তবসম্মত ও যুগোপযোগী পে স্কেল ঘোষণা করা হোক, যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।
সূত্র: ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকুরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরাম
সরকারি কর্মচারীদের কর্মবিরতি ২০২৫ । সকল ডিপার্টমেন্টের চাকুরীজীবিরা মাঠে নেমেছে?