বৈষম্য । দাবীর খতিয়ান । পুন:বিবেচনা

পে স্কেল সংস্কার ২০২৫ । ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমা ও ন্যূনতম বেতন ৩৫,০০০ টাকার দাবিতে আশাবাদী কর্মচারী নেতারা

পে স্কেল সংস্কার এবং নতুন বেতন কাঠামো কার্যকরের বিষয়ে পে কমিশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সঙ্গে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবিরের সাক্ষাৎ কর্মচারীদের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে। আজ বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে অনুষ্ঠিত এই সাক্ষাৎ শেষে বাদিউল কবির আলোচনাকে ‘ফলপ্রসু’ বলে উল্লেখ করেছেন।

কর্মচারী সংগঠনের মূল দাবি:

সাক্ষাতে বাদিউল কবির কমিশনকে তাদের পূর্বের দাবিগুলো পুনর্ব্যক্ত করেন। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়া।

  • বেতন গ্রেড কমিয়ে আনা।

  • ন্যূনতম বেতন ৩৫,০০০ টাকা নির্ধারণ করা।

কর্মচারী নেতা আরও জানান, বৈঠকে ১৫ ডিসেম্বরের আগেই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট প্রকাশের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

কমিশনের আশাব্যঞ্জক অবস্থান:

সুপারিশ জমা দেওয়া নিয়ে কমিশনের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে বাদিউল কবির জানান, চেয়ারম্যান ব্যক্তিগতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না, তবে তিনি যে অগ্রগতির কথা জানিয়েছেন, তাতে কর্মচারী নেতারা সন্তুষ্ট।

চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান নিশ্চিত করেছেন যে দাবিগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ চলছে এবং ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই রিপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

অতিরিক্ত সময় লাগার সম্ভাবনা:

তবে মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং দেশের আর্থিক তারল্য সংকটসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় কমিশন প্রয়োজনে এক থেকে দুই সপ্তাহ অতিরিক্ত সময় নিতে পারে বলেও চেয়ারম্যান ইঙ্গিত দিয়েছেন।

দীর্ঘদিন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো স্পষ্ট তথ্য না আসায় এবং নভেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমা না হলে কর্মচারীদের আলটিমেটাম দেওয়ার প্রেক্ষাপটে আজকের বৈঠকটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাদিউল কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে কমিশন চেয়ারম্যানের আশাব্যঞ্জক বক্তব্যকে কর্মচারী নেতারা একটি বড় সুসংবাদ হিসেবে দেখছেন। সার্বিকভাবে কমিশনের এই ইতিবাচক মনোভাব হতাশাগ্রস্ত কর্মচারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে।

সরকারি কর্মচারীগণ আন্দোলনে যাবে বলেই কি সরকারের নমনীয়তা প্রচার করা হচ্ছে?

সরকারি কর্মচারী ও পে কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে আপনার প্রশ্নটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। হ্যাঁ, বিভিন্ন তথ্য এবং প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে কর্মচারী সংগঠনগুলোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি এবং আলটিমেটাম কমিশনের তৎপরতা এবং আশাব্যঞ্জক বক্তব্যকে প্রভাবিত করেছে। এখানে বিষয়টির বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো:

১. কর্মচারীদের আলটিমেটাম ও আন্দোলনের হুমকি

  • ৩০ নভেম্বরের আলটিমেটাম: বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদসহ অন্যান্য কর্মচারী সংগঠন পে কমিশনকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সীমা (আলটিমেটাম) বেঁধে দিয়েছিল।

  • কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুপারিশ জমা না হলে ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি ছিল।

  • হতাশা: দীর্ঘদিন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো স্পষ্ট তথ্য না আসায় কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছিল।

২. কমিশনের চেয়ারম্যানের ‘নমনীয়তা’ ও আশ্বাস

  • ফলপ্রসূ আলোচনা: আলটিমেটামের ঠিক আগে বাদিউল কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে কমিশনের চেয়ারম্যান আলোচনাকে ‘ফলপ্রসু’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

  • দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা: তিনি বলেছেন যে দাবিগুলোকে ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ দেওয়া হচ্ছে এবং ‘৩০ নভেম্বরের মধ্যেই রিপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা চলছে’

  • অতিরিক্ত সময়ের ইঙ্গিত: যদিও তিনি মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক সংকটের কারণে এক-দুই সপ্তাহ অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তাড়াতাড়ি রিপোর্ট দেওয়ার চেষ্টার কথা বলা কর্মচারীদের চাপেরই ফল বলে মনে করা হচ্ছে।

সাধারণত, সরকারি সিদ্ধান্ত প্রণয়ন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় কর্মচারীদের আল্টিমেটাম এবং ৫ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশের হুমকি একটি গুরুত্বপূর্ণ চাপ সৃষ্টি করেছে।

কমিশন চেয়ারম্যানের আশাব্যঞ্জক বক্তব্যকে কর্মচারী নেতারা ‘সুসংবাদ’ হিসেবে দেখছেন। এটি স্পষ্টতই ইঙ্গিত করে যে আসন্ন কঠোর আন্দোলন এড়াতে এবং কর্মচারীদের হতাশা দূর করতে কমিশন দ্রুততার সঙ্গে সুপারিশ জমা দেওয়ার এবং দাবিগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে কিছুটা নমনীয়তা দেখাচ্ছে।

তাই, এ কথা বলা যেতে পারে যে কর্মচারীদের আন্দোলনমুখী মনোভাব পে কমিশনের কার্যক্রমের গতি বাড়াতে এবং কর্মচারী নেতাদের সাথে যোগাযোগে নমনীয়তা প্রচারের ক্ষেত্রে একটি প্রভাবক শক্তি হিসেবে কাজ করছে।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *