পেনশন । লাম্পগ্র্যান্ট I পিআরএল

পেনশন নির্ধারণ পদ্ধতি ২০২৫ । অবসর সুবিধাদি ও পেনশন হিসাব কিভাবে করবেন?

পেনশন হলো একটি আর্থিক সুবিধা যা সাধারণত কর্মীরা তাদের কর্মজীবন শেষে অবসর গ্রহণের পর পান। এটি একটি নিয়মিত আয়ের উৎস যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য নিরাপত্তা প্রদান করে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। সাধারণত, কর্মীরা তাদের বেতন থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ পেনশনের জন্য জমা রাখেন এবং অবসরের পর সেই সঞ্চিত অর্থ থেকে নিয়মিত ভাতা পান- পেনশন নির্ধারণ পদ্ধতি ২০২৫

সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন হিসাব কিভাবে? সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন হিসাব করার জন্য, মূল বেতন এবং চাকরির মেয়াদের উপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট হার প্রযোজ্য হয়। সাধারণত, চাকরির মেয়াদ যত বেশি, পেনশনও তত বেশি হবে। তবে, সর্বনিম্ন ৫ বছর চাকরি না করলে পেনশন পাওয়া যায় না। পেনশনের হিসাব করার জন্য কর্মচারীর সর্বশেষ মূল বেতন (বেসিক পে) ধরা হয়। চাকরির মেয়াদের উপর ভিত্তি করে পেনশনের হার নির্ধারিত হয়। সাধারণত, চাকরির মেয়াদ যত বেশি হবে, পেনশনের পরিমাণও তত বাড়বে। পেনশন হার ৫ বছর চাকরি করলে ২১%, ৬ বছরে ২৪%, ৭ বছরে ২৭% এবং ৮ বছরে ৩০% হারে পেনশন পাওয়া যায়। চাকরির মেয়াদ ৫ বছরের কম হলে, কর্মচারী প্রতি বছরের জন্য ০৩ মাসের মূল বেতন পাবেন। কর্মচারী মারা গেলে তার স্ত্রী বা স্বামী এবং সন্তানরা পারিবারিক পেনশন পাওয়ার অধিকারী হন। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী কর্মচারীগণ অবসর গ্রহণের তারিখ থেকে ১৫ বছর পর মাসিক পেনশন সুবিধা পান। মূলবেতন ৩৪০১০/- টাকা হলে প্রাপ্য পেনশন =(৩৪০১০ x ৯০%) ÷ ২ টাকা= ৩০৬০৯ ÷ ২ টাকা= ১৫৩০৪.৫ টাকা (মাসিক পেনশন)। সর্বশেষ মূলবেতন x অর্জিত ছুটি (১৮ মাস) টাকা সুতরাং ল্যাম্পগ্রান্ট পাবেন = ৩৪০১০ x ১৮ টাকা= ৬,১২,১৮০ টাকা। বেসিকের ৪৫%x ২৩০= ১৫৩০৪.৫ x ২৩০ = ৩৫,২০,০৩৫ টাকা (এককালীন)। বেসিক বেতন x শতকরা হার) ÷ ২ + চিকিৎসা ভাতা = মাসিক পেনশন অর্থাৎ ১৫৩০৪.৫ + ১৫০০ টাকা= ১৬৮০৪.৫ টাকা (প্রতিমাস প্রাপ্য)।

ছুটি বিক্রির টাকা কিভাবে হিসাব করা হয়? এককালীন পেনশন হিসাব (lump-sum pension calculation) মানে হল, অবসর গ্রহণের সময় একজন কর্মচারী যে আনুতোষিক (gratuity) পান, তার হিসাব। এটি সাধারণত পেনশনের শুরুতে এককালীন পাওয়া যায়। লাম্পগ্র্যান্ট বা গ্র্যাচুইটি সাধারণত শেষ বেতনের সাথে ১৮ দিয়ে গুণ করে হিসাব করা হয়, কিন্তু এটি চাকরির বিধি ও কর্তৃপক্ষের উপর নির্ভর করে। পেনশন হিসাব করার কয়েকটি সাধারণ নিয়ম নিচে দেওয়া হল: লাম্পগ্র্যান্ট (lump-sum payment/gratuity): এটি সাধারণত শেষ বেতনের সাথে ১৮ গুণ করে হিসাব করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার শেষ Basic বেতন ২৮,০০০ টাকা হয়, তাহলে লাম্পগ্র্যান্ট হবে ২৮,০০০ x ১৮ = ৫,০৪,০০০ টাকা।

মাসিক পেনশন কিভাবে হিসাব হয়? মাসিক পেনশন সাধারণত শেষ বেতনের একটি অংশ যা চাকরির মেয়াদের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, এটি শেষ বেতনের একটি অংশ (যেমন, ৯০%) এবং চাকরির মেয়াদের উপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে (যেমন, ২ দিয়ে ভাগ করে) হিসাব করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার চাকরির মোট সময় ৩০ বছর হয়, তবে মাসিক পেনশন হতে পারে যদি বেসিক ২৮,০০০ x (মোট চাকরির জন্য পেনশনের নির্ধারিত হার) / ২ = মোট মাসিক পেনশন অর্থাৎ মূল বেতনের ৪৫% হবে মাসিক পেনশন।

পেনশন হিসাব ক্যালকুলেটর ২০২৫ । সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন হিসাব

সরকারি কর্মচারীর মৃত্যুর পর কি পরিবার পেনশন পায়? হ্যাঁ, সরকারি কর্মচারীর মৃত্যুর পর তার পরিবার পেনশন পাওয়ার অধিকারী। একে পারিবারিক পেনশন বলা হয়। যদি সরকারি কর্মচারী চাকরিরত অবস্থায় মারা যান অথবা অবসর গ্রহণের পর মারা যান, সেক্ষেত্রে তার পরিবার এই পেনশন সুবিধা পেয়ে থাকে। পারিবারিক পেনশন সাধারণত মৃত কর্মচারীর স্ত্রী (বা স্ত্রীগণ, যদি একাধিক থাকে) এবং সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য। মৃত কর্মচারীর স্বামীও (যদি তিনি মহিলা কর্মচারী হন) এই সুবিধার অধিকারী হতে পারেন।

পেনশন নির্ধারণ পদ্ধতি ২০২৫

পেনশন নির্ধারণের পদ্ধতি ২০২৫ । মাসিক পেনশন কিভাবে হিসাব করবেন? যে হারে মাসিক পেনশন ও আনুতোষিক প্রাপ্য হবেন তাহা উদাহরণ হিসাবে দেখানো হইলে।

  1. সর্বশেষ মূলবেতন X সর্বমোট চাকুরীর জন্য নির্ধারিত হার (%) + ২ = মোট টাকা। আনুতোষিক নির্ধারণের পদ্ধতিঃ- মূলবেতন x সর্বমোট চাকুরীর জন্য নির্ধারিত হার (%) = ২x আনুতোষিক হার= মোট টাকা।
  2. একজন সরকারী কর্মচারীর জন্ম তারিখ – ০১/০৬/১৯৫৭খ্রি: তিনি ১৪/১২/১৯৮৯ খ্রি: তারিখে চাকুরীতে যোগদান করিয়াছেন। তিনি ০১/০৬/২০১৭ তারিখে পেনশনে গমন করিবেন। তাহার মূল বেতন ৩৪০১০/- তিনি মোট চাকুরী করিয়াছেন ২৭ বছর ৫ মাস ১৭ দিন। তিনি কোন বিনাবেতনে ছুটি ভোগ করেন নাই।
  3. মাসিক পেনশন ৩৪,০১০/- X ৯০% + ২ = ১৫,৩০৪/৫০ টাকা + চিকিৎসা ভাতা ১৫০০/- সর্বমোট= ১৬,৮০৪/৫০ প্রতি মাস। (মূল বেতন ধরা হয়েছে)
  4. আনুতোষিক = ৩৪,০১০ X ৯০% ÷ ২ = ১৫,৩০৪ / ৫০ x ২৩০ = ৩৫,২০,০৩৫/- টাকা (পয়ত্রিশ লক্ষ বিশ হাজার পয়ত্রিশ) টাকা।
  5. ৬৫ বৎসর এবং তদুর্ধ্ব বয়সী পেনশনারগণ জাতীয় বেতনস্কেল/২০১৫ অনুযায়ী ০১/৭/২০১৬ তারিখ হইতে ২৫০০/- টাকা হারে চিকিৎসা ভাতা প্রাপ্য হবেন।

সরকারি কর্মচারীর মৃত্যুর পর কি নাতি পেনশন পায়?

হ্যাঁ। সরকারি কর্মচারীর মৃত্যুর পর তার নাতি সাধারণত পেনশন পাওয়ার অধিকারী হন না। সাধারণত, কর্মচারীর স্ত্রী, সন্তান (যদি তারা নির্ভরশীল হয় এবং কিছু শর্ত পূরণ করে) এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন পেনশন পাওয়ার অধিকারী হন। নাতি-নাতনিরা সাধারণত এই সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হন না, তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন যদি কর্মচারীর কোনো সন্তান না থাকে এবং নাতি-নাতনিরা নির্ভরশীল হন, তাহলে শর্তসাপেক্ষে তারা পেনশন পেতে পারেন। সরকারি কর্মচারীর মৃত্যুর পর তার পরিবার, সাধারণত স্ত্রী এবং সন্তানরা (২৫ বছরের কম বয়সী পুত্র এবং অবিবাহিত কন্যা) পারিবারিক পেনশন পাওয়ার অধিকারী হন। যদি কোনো কর্মচারী প্রতিবন্ধী সন্তান থাকে, তবে সেই সন্তানের আজীবন পেনশন পাওয়ার অধিকার থাকে, এমনকি যদি তার বয়স ২৫ বছরের বেশিও হয়। যদি কোনো কর্মচারী নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান এবং তার আর কোনো উত্তরাধিকারী না থাকে, তবে নাতি-নাতনিরা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে পেনশন পাওয়ারও একটি সম্ভাবনা থাকতে পারে, তবে এটি সাধারণত একটি ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি। যদি কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আপনি জানতে চান, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (যেমন – পেনশন ও ফান্ড ব্যবস্থাপনা বিভাগ বা অর্থ বিভাগ) সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানতে পারেন।

সরকারি কর্মচারীর অবসর জনিত সুবিধাদি কি কি? একজন সরকারি কর্মচারী অবসর গ্রহণের পর বেশ কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে মূল সুবিধাগুলি হল: পেনশন, আনুতোষিক (Gratuity), এবং ছুটি নগদায়ন (Leave Encashment)। এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে পারিবারিক পেনশন এবং অন্যান্য ভাতাও পাওয়া যায়। 

পেনশন: এটি অবসর গ্রহণের পর একটি নিয়মিত মাসিক আয় যা কর্মচারী তার চাকরির মেয়াদের উপর ভিত্তি করে পান।আনুতোষিক: এটি অবসর গ্রহণের সময় এককালীন একটি বড় অংকের অর্থ যা পেনশনযোগ্য চাকরির জন্য গণনা করা হয়।ছুটি নগদায়ন:
কর্মচারীরা তাদের জমানো ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ পেয়ে থাকেন।
ফ্যামিলি পেনশন: কর্মচারীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী বা নির্ভরশীল পরিবার-সদস্যরা এই সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হন।অন্যান্য সুবিধা: কিছু ক্ষেত্রে, কর্মচারীরা চিকিৎসা ভাতা, আবাসন ভাতা, বা অন্যান্য সুবিধা পেতে পারেন।এই সুবিধাগুলো সরকারি কর্মচারী (অবস󠄀র) আইন, ২০১৮ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রদান করা হয়।
জিপিএফ জমাকৃত অর্থ সুদ সহমৃত্যুর পর পরিবার ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও ২ হাজার টাকা মাসিক কল্যাণ ভাতা।মৃত্যুর পর দাফনকাফন বাবদ ৩০,০০০ টাকা।

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *