আধুনিক প্রযুক্তি বাইক নম্বরপ্লেট ২০২৫ । রেট্রো-রিফ্লেক্টিভ নম্বরপ্লেট ও আরএফআইডি ট্যাগে মোটরযানের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা?
দেশের মোটরযান ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং নিরাপত্তা জোরদার করতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্তৃক প্রবর্তিত রেট্রো-রিফ্লেক্টিভ নম্বরপ্লেট ও রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (RFID) ট্যাগ সংযোজন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যদিও এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো চুরি প্রতিরোধ, অপরাধে ব্যবহৃত মোটরযান শনাক্তকরণ এবং ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীকে চিহ্নিত করা, তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে কিছু অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে।
প্রযুক্তির সুবিধা ও প্রক্রিয়া
রেট্রো-রিফ্লেক্টিভ নম্বরপ্লেট: এটি এমন একটি প্লেট যা রাতের বেলায় বা কম আলোতেও সহজে দৃশ্যমান হয়।
আরএফআইডি (RFID) ট্যাগ: এটি উইন্ডশিল্ডে সংযুক্ত একধরনের অত্যাধুনিক স্টিকার। এর মধ্যে মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন নম্বর, চেসিস নম্বর ইত্যাদি সংক্রান্ত কোড থাকে।
কার্যকারিতা: ট্যাগযুক্ত মোটরযান কোনো আরএফআইডি স্টেশন অতিক্রম করলে, স্টেশন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোটরযানের যাবতীয় তথ্য কেন্দ্রীয় সার্ভারে পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে গাড়ির অবস্থানসহ অন্যান্য তথ্য দৃশ্যমান হয়।
বিআরটিএ জানিয়েছে, ২০১২ সাল থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং মোটরযান মালিকদের ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস হালনাগাদ সাপেক্ষে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হয়।
অ্যাপয়েন্টমেন্ট ও সংযোজন পদ্ধতি
ঢাকা মেট্রো ও চট্ট মেট্রো সার্কেল অফিসে নম্বরপ্লেট সংযোজনের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্টের প্রয়োজন হয়।
প্রযোজ্য ফি জমা দেওয়ার পর মোটরযানের রেট্রো-রিফ্লেক্টিভ নম্বরপ্লেট ও আরএফআইডি ট্যাগ তৈরি হলে মালিকের মোবাইলে এসএমএস-এর মাধ্যমে জানানো হয়।
এসএমএস পাওয়ার পর, মালিককে অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে NP A [পছন্দের তারিখ] লিখে ২৬৯৬৯ নম্বরে পাঠাতে হয়। (যেমন: ১১ তারিখের জন্য NP A 11)।
ফিরতি এসএমএস-এ তারিখ ও সময় প্রাপ্তির পর, ফি জমা রশিদ, রেজিস্ট্রেশন/ফিটনেস সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি এবং মূল কাগজপত্রাদিসহ মোটরযান নিয়ে বিআরটিএ অফিসে হাজির হতে হয়।
গুরুত্বপূর্ণ: মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে মূল মালিকের উপস্থিতি ছাড়া নম্বরপ্লেট ও আরএফআইডি ট্যাগ সংযোজন করা হয় না।
অন্যান্য সার্কেল অফিসে সাধারণত মোবাইলে এসএমএস প্রাপ্তির পর মোটরযান হাজির করে কাগজপত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে নম্বরপ্লেট সংযোজন করে দেওয়া হয়, সেখানে অ্যাপয়েন্টমেন্টের প্রয়োজন নেই।
কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন
এই ডিজিটাল প্রযুক্তির জন্য মোটরসাইকেল মালিকদের ৳২,২৬০ টাকা (প্রায়) এবং চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে ৳৪,৬২৮ টাকা (প্রায়) দিতে হলেও, ভুক্তভোগী মোটরযান মালিকরা অভিযোগ করেছেন যে, চুরির ঘটনায় গাড়ি উদ্ধার বা ট্র্যাকিং-এ এই প্রযুক্তি তেমন কোনো কাজে আসছে না। অনেকে অভিযোগ করেছেন যে, টাওয়ার বা কারিগরি সহায়তার ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
মোটরযান মালিকদের দাবি, ডিজিটাল নম্বরপ্লেট এবং আরএফআইডি ট্যাগের সুবিধা যদি না পাওয়া যায়, তবে সরকারের উচিত প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে জনগণের ভোগান্তি কমানো।

রেট্রো-রিফ্লেক্টিভ নম্বরপ্লেট ও আরএফআইডি ট্যাগ কি?
🚦 রেট্রো-রিফ্লেক্টিভ নম্বরপ্লেট (Retro-Reflective Number Plate): এটি মূলত এক ধরনের উচ্চ-নিরাপত্তা সম্বলিত ডিজিটাল নম্বরপ্লেট যা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মোটরযানে ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে।
১. নম্বরপ্লেট কী?
এটি সাধারণ নম্বরপ্লেট থেকে ভিন্ন, যা অ্যালুমিনিয়াম ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি।
এতে ব্যবহৃত অক্ষর ও সংখ্যাগুলো এমবস্ (Embossed) করা থাকে, অর্থাৎ অক্ষরগুলো প্লেটের উপরে উত্তোলিত অবস্থায় থাকে।
এই প্লেটে উচ্চ-প্রযুক্তির রেট্রো-রিফ্লেক্টিভ উপাদান ব্যবহার করা হয়।
২. প্রধান কাজ ও সুবিধা
উজ্জ্বলতা ও দৃশ্যমানতা: এই প্লেট কম আলোতে বা রাতেও আলোর প্রতিফলনের কারণে খুব সহজে দৃশ্যমান হয়, যা দূর থেকে ট্রাফিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা ক্যামেরা দিয়ে শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
জালিয়াতি প্রতিরোধ: এতে বিভিন্ন নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য (Security Features) যুক্ত থাকে, যেমন হলোগ্রাম বা লেজার-মুদ্রিত কোড, যা নকল নম্বরপ্লেট তৈরি করা কঠিন করে তোলে।
শনাক্তকরণ: জাল নম্বরপ্লেট এবং চুরি যাওয়া মোটরযান শনাক্ত করতে এই প্রযুক্তি অত্যন্ত কার্যকর।
🏷️ আরএফআইডি ট্যাগ (RFID Tag) – রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ট্যাগ: আরএফআইডি ট্যাগ হলো এক ধরনের ছোট ইলেকট্রনিক স্টিকার বা চিপ, যা মোটরযানের উইন্ডশিল্ডে বা নির্দিষ্ট স্থানে সংযুক্ত করা হয়।
১. আরএফআইডি ট্যাগ কী?
RFID-এর পূর্ণরূপ হলো Radio Frequency Identification (বেতার তরঙ্গ শনাক্তকরণ)।
এটি একটি মাইক্রোচিপ এবং অ্যান্টেনা সম্বলিত একটি স্টিকার।
ট্যাগের মধ্যে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর, চেসিস নম্বর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কোড আকারে সংরক্ষিত থাকে।
২. প্রধান কাজ ও সুবিধা
স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাকিং: মোটরযান যখন কোনো আরএফআইডি রিডার স্টেশন (যেমন: টোল প্লাজা, পুলিশ চেকপয়েন্ট বা গুরুত্বপূর্ণ সড়কের গেট) অতিক্রম করে, তখন রিডার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্যাগের তথ্য স্ক্যান করে কেন্দ্রীয় সার্ভারে পাঠিয়ে দেয়।
সময় সাশ্রয় ও শৃঙ্খলা: এর ফলে ম্যানুয়াল চেকিং বা টোল আদায়ের প্রয়োজন হয় না, যা সময় বাঁচায় এবং সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন: নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে রিয়েল-টাইমে মোটরযানের গতিবিধি এবং অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা যায়। এর ফলে চুরি যাওয়া বা অপরাধে ব্যবহৃত মোটরযান দ্রুত শনাক্ত করা সহজ হয়।
ইন্টিগ্রেটেড ব্যবস্থাপনা: ভবিষ্যতে এটি স্বয়ংক্রিয় টোল কালেকশন (Automatic Toll Collection) এবং ট্রাফিক জরিমানা (E-Challan) ব্যবস্থাপনার জন্যও ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সংক্ষেপে, এই দুটি প্রযুক্তি একত্রে মোটরযানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে এবং ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থার অংশ হিসেবে কাজ করে।



