সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত ২০২৫ । অনিশ্চয়তা কাটিয়ে শুরু হচ্ছে বার্ষিক পরীক্ষা?
শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ও বার্ষিক পরীক্ষার গুরুত্ব বিবেচনা করে অবশেষে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (বাসমাশিস)। এই সিদ্ধান্তের ফলে ঢাকাসহ সারাদেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে চলমান অচলাবস্থা কেটে গিয়ে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) থেকে নিয়মিত সূচি অনুযায়ী বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
চার দফা দাবিতে গত সোমবার (১ ডিসেম্বর) থেকে লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছিলেন সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকেরা। এর ফলে দুদিন ধরে দেশের অধিকাংশ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা ও অন্যান্য একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়।
শিক্ষকদের সিদ্ধান্তের মূল কারণ
মঙ্গলবার রাতে বাসমাশিস থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা ও শিক্ষাজীবনকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনা তাদের অন্যতম দায়িত্ব। বার্ষিক পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক কার্যক্রম অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা যে মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন, তা অনুধাবন করেই শিক্ষকেরা সাময়িকভাবে কর্মবিরতি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
দাবি আদায়ে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান
কর্মবিরতি স্থগিত হলেও শিক্ষকদের চার দফা দাবি বহাল রয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে সমিতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়াগুলো দ্রুত সমাধানের পথে এগিয়ে নিতে কার্যকর উদ্যোগ কামনা করেছে। শিক্ষকেরা আশা প্রকাশ করেছেন, আলোচনার মাধ্যমে তাদের দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান হবে এবং ভবিষ্যতে শিক্ষা কার্যক্রম যাতে আর বাধাগ্রস্ত না হয়।
শিক্ষকদের মূল চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে:
সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করে নবম গ্রেডসহ পদসোপান নির্ধারণ এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেট প্রকাশ।
বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন কার্যকর করা।
সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী বকেয়া টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের অনুমোদন প্রদান।
২০১৫ সালের মতো সহকারী শিক্ষকদের জন্য ২ থেকে ৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বেতন-সুবিধা পুনর্বহাল করে গেজেট প্রকাশ।
কর্মবিরতি স্থগিতের এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এখন দেখার বিষয়, শিক্ষক সমিতির দাবিগুলো আদায়ে সরকার দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেয় কিনা। সংগঠনের পরবর্তী সিদ্ধান্ত আলোচনা সাপেক্ষে দ্রুত জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালন করছিল কেন?
সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকেরা মূলত চার দফা দাবি আদায়ের জন্য কর্মবিরতি পালন করছিলেন। তাদের প্রধান দাবিগুলো ছিল:
সহকারী শিক্ষকদের নবম গ্রেডসহ পদসোপান নির্ধারণ: সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করে নবম গ্রেডসহ পদসোপান নির্ধারণ করা এবং এ সংক্রান্ত মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেট প্রকাশ করা।
শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ ও পদোন্নতি: বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন কার্যকর করা।
বকেয়া টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড: সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী বকেয়া টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের অনুমোদন প্রদান।
অগ্রিম বেতন-সুবিধা পুনর্বহাল: ২০১৫ সালের মতো সহকারী শিক্ষকদের জন্য ২ থেকে ৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বেতন-সুবিধা পুনর্বহাল করে গেজেট প্রকাশ করা।
সংক্ষেপে, এটি ছিল তাদের পদমর্যাদা, নিয়োগ, পদোন্নতি এবং বেতন-ভাতা সংক্রান্ত বকেয়া ও দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানের জন্য চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল।



