সর্বশেষ প্রকাশিত পোস্টসমূহ

সরকারি দপ্তরে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগে নতুন নিয়ম ২০২৫ । কাজের দিন ও বেতন পরিশোধ নিয়ে কড়াকড়ি নির্দেশনা?

সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে ‘দৈনিক ভিত্তিতে’ কাজ করা সাময়িক শ্রমিকদের নিয়োগ, কাজের সময়সীমা এবং বেতন পরিশোধের বিষয়ে নীতিমালা সংশোধন করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগ থেকে এই পরিপত্র জারি করা হয়।সংশোধিত এই নীতিমালায় শ্রমিকদের মাসে কত দিন কাজে রাখা যাবে এবং কবে বেতন দিতে হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মাসে সর্বোচ্চ কাজের সময়সীমা নির্ধারণ নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন সাময়িক শ্রমিককে দৈনিক ভিত্তিতে মাসে সাধারণত ২২ (বাইশ) দিনের বেশি নিয়োগ দেওয়া যাবে না। তবে যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি সপ্তাহে মাত্র ১ (এক) দিন, সেই সকল প্রতিষ্ঠানে একজন শ্রমিককে মাসে সর্বোচ্চ ২৬ (চব্বিশ) দিন পর্যন্ত কাজে রাখা যাবে।

শ্রমিক নিয়োগে ৩ সদস্যের কমিটি বাধ্যতামূলক সংশোধিত নীতিমালায় অনিয়মিত শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে নতুন নিয়ম যুক্ত করা হয়েছে। এখন থেকে অনিয়মিত শ্রমিক নিয়োগ করতে হলে ৩ সদস্যের একটি কমিটির অনুমোদন নিতে হবে।

  • মন্ত্রণালয় বা বিভাগের ক্ষেত্রে এই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্মসচিব।

  • অধস্তন দপ্তরগুলোর ক্ষেত্রে নেতৃত্বে থাকবেন দপ্তর প্রধান। প্রয়োজন বিশেষে কমিটিতে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রতিনিধিও রাখা যাবে।

মৌসুমি শ্রমিক ও বেতন পরিশোধের সময়সীমা পরিপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানে মৌসুমি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়, সেখানে মৌসুম শেষ হওয়ার পর কোনোভাবেই তাদের অতিরিক্ত সময়ের জন্য আর কাজে রাখা যাবে না।

শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়েও সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাজেট বরাদ্দ থাকা সাপেক্ষে শ্রমিকদের মজুরি পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই পরিশোধ করতে হবে।

বাজেট বরাদ্দের নতুন ছক সাময়িক শ্রমিক নিয়োগের জন্য বাজেট প্রস্তাব পাঠানোর নিয়মেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে অর্থ বিভাগে বাজেট প্রস্তাব পাঠানোর সময় ‘তফসিল-ক’ অনুযায়ী নির্ধারিত ছকে আবশ্যিকভাবে তথ্য প্রেরণ করতে হবে। এই ছকে শ্রমিকের সংখ্যা, ধরণ, মজুরির হার এবং বিদ্যমান বালেটের তথ্য বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে।

অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার স্বাক্ষরিত এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।


জনস্বার্থে ও প্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই ‘দৈনিক ভিত্তিতে সাময়িক শ্রমিক নিয়োজিতকরণ নীতিমালা, ২০২৫’ এর এই সংশোধন আনা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মূল সংশোধণ বা পরিবর্তনটা কি?

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ নীতিমালায় আনা মূল সংশোধনী বা পরিবর্তনগুলো তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:

১. কাজের দিন সংখ্যা সুনির্দিষ্টকরণ- আগের নিয়মে কিছুটা অস্পষ্টতা থাকলেও, নতুন নীতিমালায় কাজের দিনের সংখ্যা স্পষ্টভাবে বেঁধে দেওয়া হয়েছে:

  • সাধারণত: একজন দৈনিক শ্রমিককে মাসে সর্বোচ্চ ২২ (বাইশ) দিনের জন্য নিয়োগ দেওয়া যাবে।

  • ব্যতিক্রম: যেসব প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে মাত্র ১ দিন ছুটি থাকে, সেখানে সর্বোচ্চ ২৬ (ছাব্বিশ) দিন পর্যন্ত কাজে রাখা যাবে।

২. শ্রমিক নিয়োগে কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক

অনিয়মিত (Irregular) শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও তদারকি নিশ্চিত করতে নতুন নিয়ম যুক্ত করা হয়েছে: এখন থেকে অনিয়মিত শ্রমিক নিয়োগের আগে অতিরিক্ত সচিব/যুগ্মসচিব (মন্ত্রণালয়/বিভাগ) বা দপ্তর প্রধানের নেতৃত্বে গঠিত ৩ (তিন) সদস্যের একটি কমিটির পূর্বানুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক।

৩. মজুরি পরিশোধের সময়সীমা নির্দিষ্টকরণ

শ্রমিকদের মজুরি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন: শ্রমিকদের পাওনা মজুরি পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে (বাজেট বরাদ্দ সাপেক্ষে)। এই পরিবর্তনগুলোর মাধ্যমে দৈনিক শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা ও মজুরি পরিশোধের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতা আনা হয়েছে।

দৈনিক ভিত্তিতে সাময়িক শ্রমিক নিয়োজিতকরণ নীতিমালা ২০২৫

Alamin Mia

আমি একজন সরকারী চাকরিজীবি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চাকুরির সুবাদে সরকারি চাকরি বিধি বিধান নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিএসআর ব্লগে সরকারি আদেশ, গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র পোস্ট করা হয়। এ ব্লগের কোন পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকলে বা ব্যাখ্যা জানতে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *