বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ বহির্ভুত কারণে যেমনঃ ঋণগ্রহীতার মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী, মড়ক, নদী ভাঙ্গন, দুর্দশাজনিত কারণে বা বন্ধ প্রকল্প ইত্যাদি কারণে ব্যাংক কর্তৃক ঋণের সুদের সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ মওকুফ সুবিধা প্রদানের সুযােগ রয়েছে। সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বর্ণিত বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন গ্রাহকের অনুকুলে প্রায়শই সুদ মওকুফ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়
ঢাকা।
website: www.bb.org.bd
বিআরপিডি সার্কুলার নং- ০৬ তারিখঃ —২১ এপ্রিল ২০২২
ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী বাংলাদেশে কার্যরত সকল তফসিলি ব্যাংক
প্রিয় মহােদয়,
সুদ মওকুফ সম্পর্কিত নীতিমালা।
উপযুক্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ কর্তৃক ১৮ আগস্ট ১৯৯১ তারিখে জারিকৃত বিসিডি সার্কুলার লেটার নং-২৪ এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে। উক্ত সার্কুলার লেটারের ৩ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত নির্দেশনার আলােকে ব্যাংকসমূহ ঋণের সুদ মওকুফ করতে পারে। বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ বহির্ভুত কারণে যেমনঃ ঋণগ্রহীতার মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী, মড়ক, নদী ভাঙ্গন, দুর্দশাজনিত কারণে বা বন্ধ প্রকল্প ইত্যাদি কারণে ব্যাংক কর্তৃক ঋণের সুদের সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ মওকুফ সুবিধা প্রদানের সুযােগ রয়েছে। সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বর্ণিত বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন গ্রাহকের অনুকুলে প্রায়শই সুদ মওকুফ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এতে করে, সুদ মওকুফ সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে গ্রাহকদের মাঝে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকের পাওনা পরিশােধে অনাগ্রহ সৃষ্টি হতে পারে যা ব্যাংকিং খাতে সার্বিক ঋণ শৃঙ্খলার পরিপন্থী। ০২। বর্ণিতাবস্থায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকের পাওনা পরিশােধে গ্রাহকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি, সামগ্রিক ঋণ শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণকল্পে ব্যাংকিং খাতে ঋণের (ইসলামী শরিয়া ভিত্তিক ব্যাংকগুলাের ক্ষেত্রে বিনিয়ােগ) আরােপিত, অনারােপিতসহ সকল প্রকার সুদ (ইসলামী শরিয়া ভিত্তিক ব্যাংকগুলাের ক্ষেত্রে মুনাফা) মওকুফের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত নির্দেশনাসমূহ অনুসরণীয় হবেঃ
(ক) মূল ঋণ (আসল) মওকুফ করা যাবে না।
(খ) জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার ঋণ এর সুদ মওকুফ করা যাবে না।
(গ) ব্যাংকের আয় খাত বিকলন করে সুদ মওকুফ করা যাবে না।
(ঘ) ঋণের সুদ মওকুফ সুবিধা ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদ কর্তৃক অনুমােদিত হতে হবে। তবে, ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত মূল ঋণের সুদ মওকুফ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উপর অর্পণ করা যাবে।
(ঙ) সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে ব্যাংকের তহবিল ব্যয় আদায় নিশ্চিত করতে হবে। তবে, নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে তহবিল ব্যয় আদায় সংক্রান্ত শর্ত শিথিল করা যেতে পারেঃ
(১) ৩ (তিন) বছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে এরূপ প্রকল্পের ক্ষেত্রে;
(২) ঋণের জামানত, সহজামানত, প্রকল্প সম্পত্তি এবং প্রকল্প উদ্যোক্তাগণের ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রয় হতেও তহবিল ব্যয় আদায় করা সম্ভবপর না হলে;
(৩) পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে আইনগত ব্যবস্থাসহ অন্যান্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরও পাওনা আদায় করা গেলে;
(৪) ঋণগ্রহীতার মৃত্যু অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী, মড়ক, নদী ভাঙ্গন বা দুর্দশাজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতা যৌক্তিক কারণে ঋণ পরিশােধে অপারগ হলে। {তহবিল ব্যয় বলতে যে সময়ের বছরের সুদ মওকুফ করা হবে সে সময়ের/বছরের ৩১ ডিসেম্বর ভিত্তিক তহবিল ব্যয়কে বুঝাবে।
(ঙ) এ বর্ণিত এক বা একাধিক কারণে তহবিল ব্যয় আদায়ের শর্ত শিথিল করার যৌক্তিকতা নিশ্চিতকরণে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের মাধ্যমে নিরীক্ষা করত হেড অব ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স (এইচআইসিসি) এর মতামত গ্রহণ করতে হবে।
(ছ) যে সকল ঋণের ক্ষেত্রে আর্থিক বিবরণী (Financial Statements) প্রণয়নের আবশ্যকতা রয়েছে, সে সকল ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে ব্যাংক আবশ্যিকভাবে ঋণগ্রহীতার বিগত ৩ (তিন) বছরের আর্থিক বিবরণী পর্যালােচনা করবে। আর্থিক বিবরণী পর্যালােচনায় বিবেচনাধীন সময়ের সামষ্টিক কর পরবর্তী নিট মুনাফা অথবা সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী Owners’ Equity ইতিবাচক পরিলক্ষিত হলে সুদ মওকুফ করা যাবে না।
(জ) সুদ মওকুফ করা হলে ব্যাংকের নিজস্ব আর্থিক অবস্থার উপর কিরূপ প্রভাব পড়বে তা পর্যালােচনা করতে হবে। সেলক্ষ্যে ব্যাংকসমূহ নিজস্ব মূলধন পর্যাপ্ততা, Profitability সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সূচক বিবেচনায় নিয়ে অধিক মাত্রায় Due Diligence প্রয়ােগ করবে।
(ঝ) ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ২৮ এর পরিপালন নিশ্চিতকরণসহ অন্য কোন ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, এবং তার পরিবারের সদস্যবর্গ বা পরিচালকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমােদন গ্রহণ করতে হবে।
০৩। রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকসমূহ কর্তৃক সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে এ সার্কুলারে বর্ণিত নির্দেশনাসহ সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে জারিকৃত নির্দেশনা পরিপালনীয় হবে।
০৪। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিশেষ উদ্দেশ্যে বিশেষ খাতসময়ের জন্য সুদ মওকুফ সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা প্রদান করা হলে সে ক্ষেত্রে উক্ত নির্দেশনা পরিপালনীয় হবে।
০৫। এ নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিটি ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের অনুমােদনক্রমে সুদ মওকুফ সংক্রান্ত নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করবে। ০৬। ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৪৯(১)
(চ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হলাে। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
আপনাদের বিশ্বস্ত,
(মাকসুদা বেগম)
মহাব্যবস্থাপক
ফোনঃ ৯৫৩০২৫২
ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ সম্পর্কিত নীতিমালা ২০২২ : ডাউনলোড