ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া হলে ৬.২৫ হারে সুদ যোগ হবে এবং যত বছরের কর বাকী থাকবে ততগুন সুদ বেশী হবে এবং মূল করের সাথে যুক্ত হবে – ভূমি কর মওকুফ দাখিলা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা জেনে নিন
মওকুফ দাখিলা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা কি? ২৫ বিঘা বা ৮.২৫ একরের কম জমির মালিকেরা ২ টাকার একটি মওকুফ দাখিলা পাবেন।একাধিক বছরের জন্য একটি মওকুফ দাখিলাই যথেষ্ঠ এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। মনে রাখতে হবে যে, একে ভূমি উন্নয়ন কর হিসাবে বিবেচনা করা হয়না বরং বিবিধ আদায় হিসাবে গণ্য হয়। এজন্য প্রতি বছর ২ টাকার মওকুফ দাখিলা সংগ্রহের প্রয়োজন নেই। স্পষ্টভাবে জেনে রাখুন, প্রতি বছরই মওকুফ দাখিলা সংগ্রহ করতে হবে।
ভূমির বিবরণ দাখিলে বাধ্যবাধকতা রয়েছে কি? হ্যাঁ। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত্ব আইন, ১৯৫০ এর ১৫১ ধারার ডি উপধারা অনুযায়ী কোনো কৃষি জমির মালিকের ২৫ বিঘার বেশী কৃষি জমির মালিক হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যেনির্ধারিত ফরমে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নিকট জমির বিবরণ দাখিল করতে বাধ্য থাকেন। আইনের ১৫১(ই) ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি ২৫ বিঘার বেশী কৃষি জমির মালিক হলে এবং উক্ত জমির বিবরনী দাখিল না করলে কিংবা ইচ্ছাকৃত ভাবে জমির তথ্য গোপন করলে তাকে ১০০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে৷ ১৫১ (এইচ) ধারাঅনুযায়ী বিবরনী বহির্ভূত জমি সরকার বরাবরে বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। কারো মালিকানায় ২৫ বিঘার বেশি সম্পত্তি রয়েছে মর্মে সন্দেহ হলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) উক্ত আইনের ৭৪(১) ধারা অনুযায়ী বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ দিতে পারেন। অবাধ্য হলে দন্ডবিধির ১৭৫ ও ১৭৬ ধারা অনুয়ায়ী দন্ডনীয় অপরাধে অপরাধী হবেন।
বিক্রি বা বন্টনের কারণে জমির বিবরণী কমিয়ে আনতে কি করতে হবে? বিবরণী দাখিলকারীর মৃত্যু অথবা জমি বিক্রয়, দান ওয়াকফ ইত্যাদির ফলে অথবা কোনো ভাবে জমি হস্তান্তরের ফলে জমির পরিমাণ ২৫ বিঘার নীচে নেমে গেলে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত্ব আইন, ১৯৫০ এর ১৫১ ধারার (আই) উপধারা মতে জমির মালিক অথবা তার উত্তরাধিকারীগণ সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নিকট ২৫ বিঘা জমিরবিবরণী কমিয়ে আনার জন্য তথা বিবরনী ভাংগার জন্য আবেদন করবেন।
জমি কমানো অনুমোদন না হওয়ার পর্যন্ত পূর্বের হার বহাল থাকবে? হ্যাঁ। ১ লা কার্তিকের পূর্বে আবেদন করতে হবে। উক্ত আবেদন পাবার পর সহকারী কমিশনার(ভূমি) প্রয়োজনীয় তদন্ত এবং শুনানীর ব্যবস্থা করে যথাযথ মনে করলে বিবরণী সংশোধন বা ভাংগার বা বিবরণী কমিয়ে আনার আদেশ দিবেন। আবেদনটি যদি মঞ্জুর হলে উক্ত আদেশটি ১লা কার্তিক হতে কার্যকর হয়। এজন্য পূর্বের বছরগুলোর করের সঙ্গে প্রথম ৬ মাসের কর পরিশোধ করতে হবে। আর কার্তিক মাসের পর আবেদন করলে চলমান পুরো বছরের কর পরিশোধ করতে হবে। তবে জমির পরিমাণ ২৫ বিঘার নীচে নেমে গেলেও তা কর্তৃপক্ষকে না জানানো পর্যন্ত জমির মালিককে ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পূর্বের বিবরণী মোতাবেকই দিতে হবে। অনেক কৃষি জমির মালিকই কর মওকুফের সুবিধা লাভের আশায় প্রতারণামূলক জমি বন্টন করে জমি ২৫বিঘার নীচে কমিয়ে আনলেও আইনগত ভাবে কর বা খাজনা মওকুফের সুবিধা পাওয়া যাবেনা। বিবরণভুক্ত কোনো মালিকের জমি কেউ ক্রয় করলে ক্রেতাকে তার নিজের নামে উক্ত জমির নাম জারী করে আলাদা না করা পর্যন্ত ক্রেতাকে পূর্বের বিবরণী মোতাবেকই উক্ত জমির খাজনা প্রদান করতে হবে। উত্তারাধিকার সূত্রে প্রাপ্তজমির বিবরণী ভাংগতে হলে ওয়ারিশদের মধ্যে আপোষ বণ্টনপূর্বক তা রেজিস্ট্রিকরে আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। এছাড়াও বিবরণীভুক্ত জমি কেনার আগে ঐজমির ভূমি উন্নয়ন কর বাকী আছে কিনা তা যাচাই করে নেয়া দরকার। এছাড়া বড় অংকের ভূমি উন্নয়ন করের সম্মুখীন হওয়াই স্বাভাবিক।
ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ পদ্ধতি । ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) । ভূমি উন্নয়ন কর আইন ২০২৩ । ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ অনলাইনেই এন্ট্রি করতে হবে
বর্তমানে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বা তহশিলদার ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করে থাকেন। আগেই বলা হয়েছে-এরা কোন অসৎঅর্জনের জন্য বেশি কর ধার্য করলে অথবা এতদসংক্রান্ত কোনো ব্যাপারে সমস্যা সৃষ্টি হলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরসঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। দাবী সম্পর্কে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)অথবা জেলা প্রশাসক এর কাছে ১৫ দিনের মধ্যে আপত্তি দাখিল করতে হবে। জেলাপ্রশাসকের আদেশে কোনো ব্যক্তি সন্তুষ্ট না হলে সেই আদেশের বিরুদ্ধে ৪৫ দিনের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের নিকট আপিল করা যাবে। বিভাগীয় কমিশনারের আদেশে কোন ব্যক্তি সন্তুষ্ট না হলে সেই আদেশের বিরূদ্ধেও ১৫ দিনের মধ্যেভুমি আপিল বোর্ডের নিকট আপিল করা যাবে।
Caption: Land Tax Rate 2015 Still Efective
বকেয়া খাজ হিসাব করার নিয়ম । একজনকৃষি জমির মালিককে প্রতি বছরে ১০০ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হলে আর তা বাংলা ১৪১৬ সন হতে বাংলা ১৪২১ পর্যন্ত ৬ বছর যাবত বকেয়া থাকলে তাকেবর্তমানে কত টাকা খাজনা পরিশোধ করতে হবে?
- এখানে ৬ বছরের মধ্যে শেষ বছরটিকে তথা ১৪২১ সালকে হাল সন ধরে পূর্বের ৫ বছরের করের সাথে জ্যামিতিক হারে সুদ দিতে হবে। সুতরাং ১০০ x ৬ = ৬০০ টাকা।
- ১৪২০ সাল বা ৫ম বছরের জন্য সুদ হবে = (১০০ x ৬.২৫% x ১) = ৬.২৫ টাকা।
- ১৪১৯ সাল বা ৪র্থ বছরের জন্য সুদ হবে = (১০০ x ৬.২৫% x ২) = ১২.৫০ টাকা।
- ১৪১৮ সাল বা ৩য় বছরের জন্য সুদ হবে = (১০০ x ৬.২৫% x ৩) = ১৮.৭৫ টাকা।
- ১৪১৭ সাল বা ২য় বছরের জন্য সুদ হবে = (১০০ x ৬.২৫% x ৪) = ২৫ টাকা।
- ১৪১৬ সাল বা ১ম বছরের জন্য সুদ হবে = (১০০ x ৬.২৫% x ৫) = ৩১.২৫ টাকা।
- সুতরাং ৬ বছরের জন্য মোট (৬০০+৬.২৫+১২.৫০+১৮.৭৫+২৫+৩১.২৫)= ৬৯৩.৭৫ টাকা বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে হবে।
কোন কোন ক্ষেত্রে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয়না?
২৫ বিঘার কম জমি থাকলে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয় না কিন্তু স্টেটমেন্টভূক্ত জমি ২৫ বিঘার কম হলেও কর দিতে হবে। তবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক বিবরণী ভাংগার আদেশ হলে ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফ হবে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী পর্যায়ে নিজে শারীরিকপরিশ্রম করে হাঁস-মুরগীর খামার/ডেইরী ফার্ম হিসাবে কোন জমি ব্যবহার করলে ভূমি খাজনা দিতে হয় না (০.৫০ হতে ১.৪৯ একর পর্যন্ত জমির মালিককে প্রান্তিক চাষী এবং ১.৫০ হতে ২.৪৯ একর পর্যন্ত জমির মালিককে ক্ষুদ্র চাষী বলা হয়)। ৫টির কম হস্তচালিত তাঁত জমির মালিক নিজে শারীরিক পরিশ্রম করে চালালে ভূমি কর বা খাজনা দিতে হয় না। মসজিদ, ঈদগাহ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা, কবরস্থান, শ্মশানঘাট এর ভূমিউন্নয়ন কর জেলা প্রশাসক মওকুফ করতে পারেন তবে এর জন্য তার কাছে আবেদন করতে হবে।
আস সালামু আলাইকুম। ধন্যবাদ আপনার পোস্টের জন্য। বর্তমানে ldtax.gov.bd এর মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে হয়। কর মওকুফ দাখিলা কি অনলাইনে নিতে হবে, না ভূমি অফিস থেকে নিতে হবে? ভূমি অফিসে এগুলো দিতে চায়না। এক্ষেত্রে কি করনীয়?
ধন্যবাদ।
রবিউল হাসান খান।
অনলাইনে এন্ট্রি দিয়েই হোল্ডিং নম্বর অনুমোদন পাওয়া যায়। ভূমি অফিসে গেলে যদি সহযোগিতা না পান তবে হেল্প লাইনে অভিযোগ করুন। ১৬১২২