একজন সরকারি কর্মচারী সরকারের নিয়োগনীতি অনুযায়ী সাধারণত ১৮ হইতে ৩০ বৎসরের মধ্যে চাকুরীতে যোগদান করিয়া ৫৯ বৎসর পর্যন্ত জীবনের এই মূল্যবান সময়টুকু দেশের মঙ্গলের জন্য সরকারি কাজে ব্যয় করেন এবং সরকারি নিয়ম অনুসারে ৫৯ বৎসর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে তাহাকে অবসর গ্রহণ করিতে হয়। এই সময় তাহার কর্মদক্ষতা হ্রাস পায়। ফলে অন্য কোন পেশা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
একজন সরকারি কর্মচারী অবসর ভাতা ও আনুতোষিক পাইবার আশায় চাকুরী জীবনে তাহার উপর অর্পিত দায়িত্ব খুবই নিষ্ঠার সহিত পালন করে। একজন সরকারি কর্মচারীর চাকুরী শেষে নিজের ও পরিবারের জীবন ধারণের জন্য এই অবসর ভাতা ও আনুতোষিক খুবই উপকারে আসে।
তাছাড়া চাকুরীরত অবস্থায় অনেক সরকারি কর্মচারী বিভিন্ন কারণে চাকুরী করিতে অক্ষম হইয়া পড়েন বা ইন্তেকাল করেন। সরকারি কর্মচারীর আকস্মিক অক্ষমতাজণিত কারণে বা মারা যাওয়ার ফলে তাহার উপর নির্ভরশীল পরিবারটি একটি মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়ে। অক্ষম জীবিত বা মৃত কর্মচারীর পোষ্যদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে।
সরকারি কর্মচারীদের এবং তাহাদের নির্ভরশীল পোষ্যদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজনই বর্তমানে সরকার অবসর ভাতা, আনুতোষিক, মহার্ঘ ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা, চিকিৎসা সুবিধা, যৌথ বীমা ও কল্যাণ তহবিলের সুবিধা প্রবর্তনের ব্যবস্থা করিয়াছেন।
সরকারি কর্মচারীগণ যখন অবসর গ্রহণ করেন বা মারা যান, তখন তিনি তাহার পেনশন, পারিবারিক পেনশন এবং সরকার কর্তৃক প্রদত্ত আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পাইতে পূর্বে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হইত। এই সকল অসুবিধার কথা চিন্তা করিয়া সরকার বিগত ১-৬-১৯৯৪ইং তারিখে বেসামরিক সরকারি চাকুরেদের পেনশন মঞ্জুরী সংক্রান্ত প্রচলিত বিধি/পদ্ধতি সহজীকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়া একটি স্মারক জারি করিয়াছেন, ইহা সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
বৃটিশ ভারতে সরকারি কর্মচারীদের কাজের মান উন্নয়ন এবং বার্ধকের সময় উপযুক্ত আর্থিক সংস্থানের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত চাকুরী করিবার পর পেনশন প্রদানের নিয়ম চালু ছিল। বৃটিশ ভারতে তৎকালীন সরকারি কর্মচারীদের জন্য সিভিল সার্ভিস রেগুলেশনে বর্ণিত পেনশন সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হয় নাই। তখন একজন সরকারি কর্মচারীকে কেবল পেনশনই দেওয়া হইত, কোন গ্র্যাচুইটি প্রদান করা হইত না। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর বিগত ৩৬ মাসের বেতনের গড় করিয়া যে পেনশন দেওয়া হইত তাহার পরিমাণ ছিল খুব অল্প। তাহাছাড়া বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন রকমের পেনশনের ব্যবস্থা ছিল। কর্মচারী ও চাকুরীর প্রকারভেদে পেনশনের বৈষম্যমূলক আইন-কানুন প্রণয়ন করা হইয়াছিল এবং সেই অনুযায়ী আইনের প্রয়োগ হইত। ফলে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা সাধারণ পেনশন ছাড়াও অতিরিক্ত পেনশন ও সুযোগ-সুবিধা পাইতেন। ফলে নিম্ন পদস্থ কর্মচারীগণ উচ্চ পদস্থ কর্মচারীদের তুলনায় পেনশন ও অন্যান্য সুযোগ -সুবিধা হইতে বঞ্চিত হইত।
১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসনের অবসানের পর পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তৎকালীন সরকার পেনশন রুলের সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেন। পাকিস্তান আমলে সর্বপ্রথম সি,এস,আর-এর ৩৭১ রুলস ও বি,এস,আর পার্ট-১ এর ২৬৭ রুলস এর সংশোধন করা হয় এবং উহা ৪-৯-১৯৫২ইং তারিখের স্মারকমূলে উক্ত রুলের সংশোধন জারি করেন ও উহা ১৯৪৯ইং সনের ১ জানুয়ারি হইতে কার্যকর হইয়াছিল।
এই সংশোধনের পূর্বে অফিসিয়েটিং এবং অস্থায়ী চাকুরীজীবিগণ পেনশনের সুযোগ পাইতেন না। এই সংশোধনের ফলে অফিসিয়েটিং ও অস্থায়ী চাকুরী পেনশনের জন্য গণ্য হয়। ১৯৫২ সনের পে-কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার গ্র্যাচুইটি এবং পারিবারিক পেনশন স্কীম প্রণয়ন করেন। উক্ত স্মীম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার কর্তৃক মেমো নং এফ/আই/ইউ ১২-৬-৯৩ তারিখে ২-৯-৬৬ইং সনের ১ জুলাই হইতে বাস্তবায়িত হইয়াছিল (পরিশিষ্ট “ক”)।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৯ ডিসেম্বর পেনশন রুলের সর্ব প্রথম সংশোধণ করা হয়। পূর্বে প্রচলিত ৩৬ মাসের গড় বেতনের পরিবর্তে ১২ মাসের গড় বেতন করিয়া পেনশন নির্ধারণের ব্যবস্থা ছিল। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গঠিত পে এন্ড সার্ভিস কমিশনের সুপারিশক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়ন বিভাগ -এর ২১-১-৭৪ ইং তারিখের মেমো নং এমএফ (বা:সে:) ১১-১৪/৭৪ মারফত বার মাসের গড় বেতনের পরিবর্তে শেষ বেতনের শতাংশের উপর ভিত্তি করিয়া পেনশন নির্ধারণের ব্যবস্থা করে। এই শতাংশের রেট ১০ বৎসর হইতে ২৫ বৎসর বা তদূর্ধ্ব পর্যন্ত যথাক্রমে ২১% হইতে সর্বোচ্চ ৬০% শতাংশ ছিল। অত:পর ১৯৭৭ সনের ২০ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন বিভাগের মেমো নং এমএফ (বা:সে:) ১২/৭৭/৮৫৬ এর মাধ্যমে পারিবারিক পেনশন ও গ্র্যাচুইটির সংশোধন করিয়া নতুন পেনশন নীতি ঘোষণা করেন।
বর্তমানে সরকার বেসামরিক সরকারি চাকুরেদের পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে দূর্ভোগ লাঘবের জন্য বিগত ১-৬-৯৪ইং তারিখের স্মারক নং অম/বিধি/পেনশন/৩পি-২৬/৯৪/১৭ দ্বারা পেনশন মঞ্জুরী সংক্রান্ত প্রচলিত বিধি/পদ্ধতি সহজীকরণ -এর বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করিয়াছেন যাদ্বারা সরকারি চাকুরেদের পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হয়।
বর্তমানে পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০২০ জারি হওয়ার ফলে পেনশন পেতে এখন আর পায়ের জুতা ক্ষয় করতে হয় না, পেনশন সহায়তার জন্য কল্যাণ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে প্রতিটি দপ্তরে। ফলে পেনশন প্রাপ্তি এখন সহজতর হয়েছে। বর্তমানে সরকারি পেনশন কার্যক্রম অধিকতর সহজ করতে পেনশন ও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অফিস গঠন করেছে যার মাধ্যমে বৃদ্ধ ও বয়স্ক অবসরভোগীদের পেনশন প্রাপ্তিকে আরও সহজ ও আধুনিক করবে।
দৈনিক মুজুরী কমচারীর কমবন্টন ও নিতিমালা টা দিবেন
https://bdservicerules.info/%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%9c-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%87-%e0%a6%ae%e0%a6%9c%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%87-%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%a4/