সরকারি চাকরি হতে অপসারণ এবং বরখাস্ত এক বিষয় নয়। বরখাস্ত বলতে সাময়িক বরখাস্তকেই বোঝায় – সাময়িক বরখাস্ত বা স্থগিত ও চাকরিচ্যুত এক কথা নয় – ঠিক কি কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা যায়?
চাকরি হতে বরখাস্ত – সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ ব্যত্যয় ঘটলেই চাকরি হতে বরখাস্ত বা সাময়িক বরখাস্ত করা যায়। চাকরি হতে বরখাস্ত মানেই চাকরিচ্যুত বা চাকরি হতে অপসারণ নয়। যদি অনাকাংঙ্খিত কোন ঘটনা ঘরে তবে কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্ত করে থাকে। সাময়িক বরখাস্তকালে উক্ত ঘটনার তদন্ত পরিচালনা করা হয়। তদন্ত শেষে দোষী সাব্যস্ত হলে বিভাগ বা কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা করে থাকেন। সাময়িকভাবে বরখাস্ত কালে জিপিএফ এর মূল টাকা উঠানো যাবে।
সাময়িক বরখাস্তের মেয়াদ কত দিন? সাময়িক বরখাস্তের মেয়াদ নির্ধারিত হয় না। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্তকালে বিভাগীয় মামলা রুজু করে থাকে। বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত কাল চলমান থাকে। বিভাগ বা দাপ্তরিক তদন্ত শেষে কর্তৃপক্ষ যে শাস্তি নির্ধারণ করে তা দুই ধরনের হয়ে থাকে। লঘুদন্ড ও গুরুদন্ড এ দুই প্রকার দন্ডের মধ্যে লঘুদন্ডে চাকরি যায় না, গুরুদন্ডে চাকরি অবসায়ন বা চূড়ান্ত বরখাস্ত হয়ে থাকে। সাময়িক বরখাস্ত কালে তদন্ত শেষে সিদ্ধান্ত অনুসারে বরখাস্ত স্থগিত বা অবসান হয়। সাময়িকভাবে বরখাস্ত সংক্রান্ত ৯টি গুরুত্বপূর্ণ বিধান।
চাকরি চলে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত কারণ থাকতে হবে। ছোট খাত অপরাধের পুনরাবৃত্তি, রাষ্ট্রীয় ক্ষতিসাধণ, অর্থ কেলেঙ্কারী, দপ্তরে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিতি, নারী ঘটিত অপরাধ, অসদাচরণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে চাকরি চলে যেতে পারেন। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে যথাযথ অভিযোগ গঠন, অনুসন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং আত্মপক্ষ জ্ঞাপনের সুযোগ দিয়ে অপরাধ প্রমানিত হলে কর্তৃপক্ষ চাকরিচ্যুত করতে পারে।
সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের ২১-১১-১৯৭৮ তারিখের স্মারক নং ইডি(রগ-৬)-এস-১২৩/৭৮/১১৫(৫০০) মোতাবেক কোন সরকারী কর্মচারী গ্রেফতারের পর বা আত্মসমর্পনের পর জামিনে মুক্তিলাভ করলেও মামলার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায়ই থাকবেন। কোন সরকারী কর্মচারী গ্রেফতার হওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করতে হবে এবং বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত উক্ত আদেশ বহাল রাখতে হবে। এছাড়া কোন সরকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে অসদাচারণ, ডিজারসন বা দুর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ সমীচীন মনে করলে উক্ত কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবেন। সাময়িকভাবে বরখাস্ত কালীন সময় সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মচারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ব্যতীত কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না। সাময়িক বরখাস্তকালীন সময় সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মচারী অন্য কোন চাকুরী বা পেশা গ্রহণ করতে পারবে না। বরখাস্ত বা অপসারণের তারিখ হইতে বেতন বন্ধ।
সাময়িক বরখাস্তকালে করণীয় কি? / সাময়িক বরখাস্তকালে নির্দোষ প্রমানিত হলেই কি বেতন ভাতাদি চালু হবে?
সাময়িক ভাবে বরখাস্তকৃত কোন সরকারী কর্মচারী মামলার ফলাফলের আলোকে পেনশন পাওয়ার অধিকারী হলে এবং তার চাকরীকালীন সময়ের বিপরীতে অর্জিত ছুটি পাওনা থাকলে ভূতাপেক্ষ আদেশ জারীর মাধ্যমে LPR মঞ্জুর করা যাবে। এরূপ ক্ষেত্রে তার বয়স ৫৮ বৎসর অতিক্রান্ত হয়ে থাকলে বাস্তবে তিনি এল,পিআর ভোগ করতে পারবেন না, তবে এলপিআর কালীন সময়ের আর্থিক সুবিধা তাকে দেয়া যাবে। সাময়িক বরখাস্ত থাকার সময়ে যে সুযোগ সুবিধা পাইবেন না।
সাময়িক বরখাস্ত বেতন ভাতাদি প্রাপ্যতা । সাময়িক বরখাস্তকালীন প্রাপ্যও ও অপ্রাপ্যতা ২০২২
সাময়িক বরখাস্তের ক্ষেত্রসমূহ । যে সকল কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা যায়
- উর্ধ্বতন কর্মকর্তার আইনসংগত আদেশ অমান্যকরণ;
- কর্তব্যে অবহেলা প্রদর্শন;
- আইনসংগত কারণ ব্যতিরেকে সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশ অবজ্ঞাকরণ;
- কোনো কতৃপক্ষের নিকট কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে অসংগত, ভিত্তিহীন, হয়রানিমূলক, মিথ্যা অথবা তুচ্ছ অভিযোগ সংবলিত দরখাস্ত দাখিল;
- অন্য কোনো আইন বা বিধি বিধানে যে সমস্ত কার্য অসদাচারণ হিসেবে গণ্য হইবে ঐরূপ কোন কার্য সম্পাদন;
- পালায়ন করিলে;
- দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হলে;
- ফৌজদারী মামলায় কারাগারে গেলে;
- নাশকতামূলক কর্মে লিপ্ত হলে;
- দপ্তরের অর্থ কেলেংকারী বা নারী কেলেংকারীর কারণে;
সাময়িক বরখাস্তকালে অফিসে যেতে হবে কি?
অবশ্যই অফিসে যেতে হবে। এ সময় আপনি চাইলেই ছুটি নিয়ে বাসায় বসে থাকতে পারবেন না। কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে অর্জিত ছুটিও কাটাতে পারবেন না। সাময়িক বরখাস্তকালে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী কর্মস্থলেই অবস্থান করিবেন। তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতিক্রমে অন্য গমণ করিতে পারিবেন। (স্মারক নং (ED(Reg-VI)/S-93/79-87(500), তারিখ: ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৮০)। সরকার যেহেতু সাময়িক বরখাস্তকালে আপনাকে অর্ধ বেতন, পূর্ণ বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা প্রদান করবেন তাই দাপ্তরিক নির্দেশ অনুসারে আপনাকে অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে এবং কার্য সম্পাদন করতে হবে।
আমি দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে সেকশন অফিসার পদে চাকুরী করতাম। বোর্ড কর্তৃপক্ষ সরাসরি আমাকে চাকুরী থেকে চুড়ান্ত বরখাস্ত করে। কোন শোকজ নোটিশ ছাড়াই।এর পরে মহামান্য হাইকোর্ট এ রিট পিটিশন দায়ের করা। মহামান্য হাইকোর্ট বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করে। কিন্তু বোর্ড কর্তৃপক্ষ আমাকে যোগদান করাচ্ছেন না।এখন আমার করনীয় কি।জানানে উপকৃত হতাম।
কোর্টের কাগজপত্র দেখিয়ে আইনের আশ্রয় নিন।
আমার চেনা একজন সরকারি কর্মকর্তা ( পুলিশ) সে ২ বছর আগে এক্সিডেন্ট হওয়ার পর সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সত্ত্বে চাকুরীতে যোগদান না করে বাসায় থাকে এবং প্রতিমাসে বেতন রেশন সব পরিপূর্ণ ভাবে ভোগ করছে,, এক্ষেএে সে কি বরখাস্ত হওয়ার কাজ করছে না?
যদি তার ছুটি জমা থাকে সে কাটাতে পারে। অন্যথায় সাময়িক বরখাস্ত হতে পারে।
বরখাস্ত কালীন সময়ে মামলার নিষপত্তি না হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ সময় বিদেশে অবস্থান করা যাবে কি? দীর্ঘ সময় বিদেশে অবস্থান করার ফলে তিনি কি চাকুরী চুৎত হবেন?
৫ বছর অতিক্রম না করলে সাধারণ চাকরিচ্যুত করা হয়না। তবে বরখাস্তকালীন তদন্ত কমিটি বরখাস্তের সুপারিশ করলে বরখাস্ত হবেন।
সরকারি চাকরিজীবির পরিবার এর কার ও নামে যদি মামলা হয় যেমন স্ত্রী বা স্বামীর নামে যদি কোনো মামলা হয়। সে ক্ষেত্রে কি ঐ সরকারি চাকরি জীবির চাকরিতে কোনো সমস্যা হয়। জানালে উপকৃত হব
না।
চাকরি পেয়েছে বিনা টাকায়। কিন্তু আমার কাছে আমার স্ত্রী চাকরি বাবদ ১০/১৪ লক্ষ টাকা দাবি করে আসছে। সে নিজে এবং তৃতীয় পক্ষ দিয়ে। এখন আমি কি করতে পারি? দয়া করে জানাবেন ভাই।
অগ্রিম টাকা ছাড়া তো চাকরি হয় না। চাকরি তো হয়ে গেছে এখন আর কি করবেন।
সোকস এবং বিভাগীয় মামলা হওয়ার পর ইচ্ছা করলেই কি আমি চাকুরী থেকে ইস্তফা দিতে পারব???
না। বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তি হতে হবে।
যদি কোন সরকারি প্রাইমারি সহকারি মহিলা শিক্ষক ভিবিন্ন যৌন কার্যকলাপে জড়িত থাকে,এবং সে যদি মাদক আসক্ত ও হয় ,তাহলে কি তার চাকরি চলে যাবে?
বিভাগীয় মামলা হবে এবং প্রমানিত হলে চাকরি চলে যাবে।
কোন চাকরিজীবী যদি প্রতিষ্ঠানকে না জানিয়ে বিদেশে চলে যায় সেক্ষেত্রে তার চাকরির অবসান ঘটতে কতদিন লাগতে পারে। এবং পরে এসে কি সে আদালতের মাধ্যমে চাকরি ফেরত পেতে পারে।
বিভাগীয় মামলা হবে এবং পলাতক ঘোষণা করে ৬ মাসের মধ্যে যদি প্রতিবেদন আসে তবে চাকরি অবসান হবে অন্যদিকে প্রায় ৫ বছর পর্যন্ত চলতে পারে।